ভূমিকা
১৯৭১
সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ নামের একটি দেশের নাম বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায়। এই দিনের নতুন
সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা হয়। এই স্বাধীনতা দিবসের
আনন্দঘন মুহুর্তে প্রথমেই যে কথাটি মনে
আসে তা হলো এদেশের
অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহীদের আত্মত্যাগ। আজ বাঙালি স্বাধীন।
না ব্রিটিশ, না পাকিস্তানি, না
জমিদারি এর আওতায়।
প্রতি
বছর গৌবময় এ দিনটি পালন
করতে গিয়ে আমাদের ধর্মে স্বাধীন হওয়া স্বাধীন স্বপ্ন ও সাধ আমরা
কতটুকু তুখোড় করতেছি, জাতীয় আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভার অবস্থান
আমাদের অবস্থান কতটুকু । এদিক থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর আমাদের
আত্মসমলোচনার দিন, আত্মজিজ্ঞাসার দিন।
জয়ের ৫৩ বছর পর বাংলাদেশ
বাংলাদেশের
মতো একটি নতুন দেশের যাত্রা ছিল কণ্টকাকীর্ণ এবং নানা দিক থেকে বিপজ্জনক। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ অন্য দিকে স্বাধীনতার বিরোধী বিপক্ষের বাঙালী। ভৌত অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতু, যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোনসহ প্রায় সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রশাসন অগোছালো ও অনুপস্থিত।
বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীন। নিঃস্ব, অসহায় কোটি শরণার্থীর প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ।
বৈশ্বিক মন্দা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্য সংকট, সামাজিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি।
স্বাধীনতা
যুদ্ধে যারা একসাথে যুদ্ধ করেছিল তাদের মধ্যে তীব্র বিভাজন। চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, রক্তক্ষয়ী গুম ও খুন। কারখানায়
অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
মুনাফাখোর,
মজুতদার ও চোরাকারবারীদের অত্যাচার
এবং তার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি। অবশেষে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। হতবাক জাতি। স্বাধীনতার প্রথম ২-৪ বছর ছিল একটি দুর্বিষহ সময় যার সঠিক ও বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন
কখনোই অকপটে করা হয়নি।
অন্তত
এই ৫০ বছরে আমাদের
অর্জন খুব একটা কম নয়, এক
কথায় অসামান্য। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয় তখন এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ বিশ্বে ছিল দ্বিতীয় । মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ ছিল
দারিদ্র্যসীমার নিচে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর
আজ তা ১৫ শতাংশের
নিচে নেমে এসেছে যা দেশের অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
কিন্তু
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও, এখনও একটি সম্পূর্ণ সম্পদ বৈষম্য আছে. অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের অগ্রগতি জানতে হলে ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সামষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির
বিষয়ে দেশের অবস্থান বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের জিডিপি ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার। কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে, আনুমানিক জিডিপি ৯০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
১৯৭১ সালে
মাথাপিছু গড় আয় ছিল $১২০, ২০১৮-২০১৯ সালে $1,909 এবং ২০২০ সালে $2,064 হয়েছে। 1972-1973 সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, 2019-2020 সালে তা ছিল ৫ হাজার ৬৪ কোটি। ২০২০-২০২১ সালে বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
১৯৭২-৭৩ সালে উন্নয়ন
উন্নয়নের নজির ছিল ৫০১ কোটি টাকা যা ২০২০-২১
কোটি টাকা হয়েছে। সর্বময় কিছুর প্রতিফল বিদুৎপ্রচার, গ্রামীণ নিরাপত্তার নিদর্শন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে। সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ৫৩ বছর অগ্রগতি
স্বস্তিদায়ক। যেমন সার্বিক সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, গড় আয়ু, ইপিআই নারীর সক্ষমতা, জন্ম ও মৃত্যুহার হ্রাস
ইত্যাদি অগ্রগতির উল্লেখ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে
পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে। সত্তরের দশকের শেষ দিকে এই শিল্প রপ্তানিমুখী
খাত হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্প। ২০১৯ সালে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০১৮ সালে, বাংলাদেশ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
জেনেভায়
এক সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) একথা জানিয়েছে।১৯৮১-৮২সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই শিল্পের অবদান
ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে
পোশাক শিল্প থেকে। সময়ের সাথে সাথে পোশাক শিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে
পোশাক শিল্প অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০.৪৫ লাখ
শ্রমিক কর্মরত। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
2019 সালে,
প্রবাসীরা 18.12 বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন, যা আগের বছর
16.42 বিলিয়ন ডলার ছিল। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় $19.8 বিলিয়ন যা আগের বছরগুলোর
মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রত্যাশার শীর্ষে।
এমন
প্রবৃদ্ধির ফলে পদ্মসেতুর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান।
স্বাধীনতার -তেপান্ন বছরে পদ্মসেতুর বাস্তবায়ন দেশের
অগ্রগতিতে বিশ্বের দরবারে এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়। প্রায় ২১টি জেলার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ভারী শিল্প। কর্মসংস্থান বাড়ছে যা অনেকের বেকারত্ব
দূর করেছে।
স্বাধীনতার
পঞ্চাশ বছরে স্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, অসংখ্য সেতু, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন, রেলওয়ে উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন সড়ক নির্মাণ। পুরনো রাস্তাঘাট সংস্কার, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
অর্জনের সক্ষমতা অর্জন করলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি।
মৌলিক
অধিকার পূরণ হয় না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা হোক। যাতে সাধারণ নাগরিক মাথা উঁচু করে বলতে পারে স্বাধীনতা অর্জনের মৌলিক প্রত্যাশা পূরণে আমাদের ত্যাগ বৃথা।
আমাদের
ক্রীড়াবিদরা সাফ গেমসে সোনা জিতেছে। তাহমিনা আনাম-মনিকা আলীর বই বিশ্বে প্রশংসিত
হচ্ছে, ডাঃ মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছেন, ডাঃ জাহিদ হাসান হিগস বোসন আবিষ্কারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। জাওয়াদ করিম ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন, আয়মান সাদিক 10 মিনিট স্কুল নামে একটি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সালমান খান খান একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের অবদানের ফলে বিশ্ববাসী উপকৃত হচ্ছে। অবদানের ফলে বিশ্ববাসী উপকৃত হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছর: অর্ধ শতাব্দীতে বাংলাদেশের হাইলাইট এবং অর্জন
১৫মার্চ১৯৭2: বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
৭ মার্চ ১৯৭৪: স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৪ মার্চ ১৯৭৬: বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন।
২৩ মার্চ ১৯৭৯: বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কর্পস প্রতিষ্ঠিত হয়।
২২ মার্চ ১৯৯৬: ঢাকার সেগুন বাগিচায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশের প্রথম জাদুঘরের উদ্বোধন। বর্তমানে জাদুঘরটি আগারগাঁওয়ে অবস্থিত।
২ মার্চ ১৯৯৭: গ্রামীণ আদালত প্রতিষ্ঠা।
২৬ মার্চ ১৯৯৭: গ্রামীণফোন বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল অপারেটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৮ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়।
১ মার্চ ২০০০: আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০ মার্চ, ২০০০: বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন।
১৩ মার্চ ২০০১: জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন।দেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
১ মার্চ ২০০২: সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ
নিষিদ্ধ করা হয়।যা এখনো বিদ্যমান
১৩ মার্চ ২০০৫: পাবলিক প্লেসে এবং বিমান ও যানবাহনে ধূমপান
নিষিদ্ধ করার বিল সংসদ পাস করে।
৬ মার্চ ২০০৭: দেশের সপ্তম সরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) হিসেবে আদমজী ইপিজেড উদ্বোধন করা হয়।
2শে
মার্চ, 2007: বাংলাদেশ উপমহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে বি-লীগ নামে
একটি পেশাদার ফুটবল লীগ শুরু করে।
16 মার্চ
2010: দেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট টেলিফোন পরিষেবা চালু হয়।
5 মার্চ,
2011: খুলনা শিপইয়ার্ডে দেশের প্রথম যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের উদ্বোধন।
14 মার্চ
2012: ঢাকায় রাজস্ব জটিলতা নিরসনের জন্য "বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা" আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
10 মার্চ
2014: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়।
27 মার্চ
2014: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে।
9 মার্চ
2015: একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে 15 রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে পৌঁছায়।
21 মার্চ
2015: সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন এবং পোলিও ভ্যাকসিন যোগ করা হয়েছে।
25 মার্চ,
2015: সোরাওয়ান উদ্যানে আপনার দেশের প্রথম এবং প্রথম ইভেন্ট ভূস্থ জাদুঘর স্বাধীন জাদুঘর জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়। এর স্থপতি হলেন
কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম।
বর্ডার
গার্ড ফোর্স গঠন: বাংলাদেশ রাইফেলস 3 মার্চ, 1972 সালে একটি স্বাধীন সীমান্তরক্ষী হিসেবে গঠিত হয়। 29 জুন 1795 সাল থেকে প্রতিষ্ঠার সময় এর নাম ছিল
রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন। 23 জানুয়ারী, 2011 সাল থেকে এই বাহিনী বর্ডার
গার্ড বাংলাদেশ নামে কাজ করছে।
উন্নয়নশীল
দেশ হিসেবে বাংলাদেশ: 1975 সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তারপর থেকে, দেশটি অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত তিনটি শর্ত বা সূচক পূরণ
করতে তিনবার ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু অবশেষে 2018 সালে সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যারা তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। জাতিসংঘ, যদিও এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য তিনটি সূচকের যেকোনো দুটি অর্জনের শর্ত রয়েছে।
জাতিসংঘের
অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের
অধীনে উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটির 20তম ত্রিবার্ষিক সভা
12-16 মার্চ 2018 তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণ
করে বাংলাদেশ এই প্রথম সরকারীভাবে
স্বীকৃতি পেল।
মায়ানমারের
সাথে সামুদ্রিক সীমানার জয়: বাংলাদেশ মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলা ১৪ মার্চ ২০১২
তারিখে প্রদান করে। জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইনের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেয়।
সমুদ্রসীমা সমস্যা সমাধানে আদালত মিয়ানমারের দাবির বিচার ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী রায় ঘোষণা করেন। ফলে বাংলাদেশ তার সামুদ্রিক দাবি জিতে নেয়।
এই
রায়ের মাধ্যমে তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে
দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়েছে।
গিনেস
বুক অফ রেকর্ডসে সোনার
বাংলা: বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২৬শে মার্চ, ২০১৪ তারিখে 'লাখো কণ্ঠে সোনার' শিরোনামে দেশের ৪৩তম স্বাধীনতা দিবসে একযোগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ডের আয়োজন করে। সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় বাংলা'। যান্ত্রিক গণনা
অনুযায়ী, সেদিন ঢাকার শেরে বাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে জড়ো হয়েছিল ২,৫৩,৬৮১
জন।
সেই ঘটনার 14 দিন পর, 9 এপ্রিল, 2014 তারিখে, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ওয়েবসাইট সর্বাধিক সংখ্যক লোক একসাথে জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ডে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়ন:
সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ১৮ হাজার ১৭৫ জন মানুষ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পেতে পারে। মিঃ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ২ হাজার ৪টি ইউনিয়নে ওয়াইফাই রাউটার স্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৩টি ইউনিয়ন সংযুক্ত করা হয়েছে। নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে। আমরা এখন 4G ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছি, 5G আসছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন করা হয়েছে। কয়েকদিন পর ঘরে বসেই ভোট দিতে পারব।
ই-কমার্স ও ডিজিটাল প্রযুক্তির
উন্নয়ন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। 2010 সাল থেকে, সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে
ই-সেবার সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ডিজিটাল উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
কৃষি উন্নয়ন: কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া: স্বাধীনতা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ধানের উৎপাদন তিনগুণ, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন প্রায় দশগুণ। শেখ হাসিনা সরকারের সমসাময়িক পরিকল্পনার পাশাপাশি পরিশ্রমী কৃষক, মেধাবী কৃষিবিদ ও সম্প্রসারণ কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কৃষিতে উপযুক্ত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এ সাফল্য এসেছে। এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: বাংলাদেশের মালিকানাধীন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম গর্ভকালীন যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ৫ম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করল। এটি 11 মে 2018 এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
শেখ
হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনে আজ বিশ্বে বাংলাদেশের
অবস্থান ঈর্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ, এটি ধান উৎপাদনে তৃতীয়, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, চা উৎপাদনে নবম
এবং পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যাশা
আমরা
এমন একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই যেখানে দিনরাত স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার ভয় নেই, যেখানে আমরা যে কোনো সময়
নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে আচ্ছন্ন নই, যেখানে গাড়ির ধাক্কা বা আগুনে নিহত
হওয়া থেকে আমাদের জীবন মুক্ত।
সেই
বাংলাদেশ এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে দেশের যুবসমাজকে চাকরির সন্ধানে অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়াতে হবে না, যেখানে চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় হবে না, যেখানে শিক্ষা হবে প্রকৃত মানুষ গড়ার হাতিয়ার, জনশক্তি হবে সৎ ও কঠোর-
কর্মঠ, নীতিবান ও একক মন
যারা দেশকে দূর্নীতির কবল থেকে মুক্ত রাখবে।
শহরগুলো
হবে সবুজ ও পরিকল্পিত, যানজটমুক্ত,
দূষণের কোনো চিহ্ন ছাড়া নদী হবে।
সেই
বাংলাদেশ এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে দেশের যুবকদের চাকরির সন্ধানে অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না, যেখানে চিকিৎসার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় হয় না, যেখানে শিক্ষা প্রকৃত মানুষ গড়ার হাতিয়ার, জনশক্তি সৎ ও পরিশ্রমী,
নীতিবান। এবং এককভাবে যারা দেশকে দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত করে। রাখবো
শহরগুলো হবে সবুজ ও পরিকল্পিত, যানজটমুক্ত, দূষণের চিহ্ন ছাড়া নদী।
চিকিত্সা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা প্রকাশ পেয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের এই মহোৎসব তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা কঠোরভাবে দমন না করলে থামানো যাবে না।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা
আশা করি সরকার আমাদের দেশে খাদ্য বিক্রির পদ্ধতি পরিবর্তন করবে। গরিব মানুষ যাতে তাদের সর্বনিম্ন খরচে সব খাবার সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য মজুদ করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। মাছ-মাংস ফ্রিজে না রেখে সবাই যাতে অল্প দামে একটু একটু করে পায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই এই দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ।
নারীর ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা
বাঙালি জাতি নারীদের সম্মান দিতে পারে না, সমান অধিকারও দিতে পারে না। প্রতিদিনই চলছে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যা। এ জাতি নারীকে পণ্যে পরিণত করছে। বাস বা সিএনজি কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগুলোও আজ নারীদের জন্য অনিরাপদ। আশা করছি ২১ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কিছুটা সহনীয় হবে।
বেকারত্ব দূরীকরণ
বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্ব একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, সরকার বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এদেশের লাখ লাখ বেকার যুবকের ভাগ্য খুলে যাবে। হাসির জোয়ার ফিরবে। স্বাধীনতার 50 বছরের এই বছরটি বেকারদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠুক।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি দৃশ্যমান ছিল। এই দুর্নীতি ছোট থেকে বড় খাতেও ছিল। করোনার সময় মাস্ক, পিপিই নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, পাপিয়া-সম্রাটদের দুর্নীতির গল্প। শুধু তাই নয়, এদেশের মানুষ বালিশের কেস ও পর্দার কেস ভুলতে পারেনি। যদিও শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ় হস্তে তা দমন করে এবং এখনো করে চলছে।
জনসংখ্যা
সমস্যা মোকাবেলা
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে, অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহকে নিরুৎসাহিত ও বন্ধ করতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ
একটি স্বপ্নের নাম। বাংলাদেশ বহু মানুষের স্বপ্নের দেশ। এদেশে যে সব সমস্যা
আছে, সব একসঙ্গে সমাধান
করতে হবে। এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা
করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি
হলে আমাদের পথ হবে বিভক্তি
নয়, ঐক্যের মাধ্যমে দেশ গড়ার। তাই আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ দেশ ও
এদেশের মানুষের জন্য কাজ করি।
হয়তো
একদিন সব স্বপ্ন পূরণ
হবে। বাংলাদেশ যেভাবে চেয়েছিল আমরাও তাই পেতে পারি। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের প্রার্থনা আমরা যেন মানুষ হয়ে উঠি। বাংলাদেশ হয়ে উঠুক যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানসম্মত, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ।
তবেই আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য সফল ও অর্থবহ হবে।