তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা। নতুন রচনা তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে

শিক্ষা প্রবন্ধে এখন দুটো গরুত্বপূর্ণ বিষয় সবচেয়ে আলোচিত তার মধ্যে 

1. একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন শিক্ষা, 

2. দুই কেন্দ্রের শিক্ষানীতি ।

***প্রথম- তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন শিক্ষা । অনলাইন শিক্ষার মূল দুই চাবিকাঠি যন্ত্র বা ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সংযোগ যাকে আমরা বলি তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ( ICT - Information and communications technology ) ।এই মাধ্যমগুলিকে একই ছাতার তলায় যদি নিয়ে আসি তাহলে দেখব এর মধ্যে দূরসঞ্চার ,বেতার ,গণকযণ্ত্র, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ,অডিও, ভিডও,কেবল নেটওয়ার্ক প্রভৃতি বিষয়গুলো চলে আসে ।এমনকি একটি যোগাযোগ তারের মাধ্যমে টেলিফোন নেটওয়ার্ক এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সংযুক্তি ঘটে । ফলে বেতার ,দূরদর্শন ,সেলফোন, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, হার্ডওয়ার, স্যাটালাইট সিস্টেম প্রভৃতি প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা ভিডিও কনফারেন্সিং এবং ডিস্ট্যানস লার্ণিং বিষয়গুলো সহজেই করতে পারি ।

আইসিটির মাধ্যমে আমরা তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, প্রেরণ এবং গ্রহণ কাজগুলোকে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ , পার্সোনাল কম্পিউটার ,ডিজিটাল টেলিভিশন ,ইমেল, রোবটস প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যবাহারিক জগৎকে এক ছন্দময় জগতে উপস্থিত করতে পারছি । 5জি প্রযুক্তি এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন দোরগোড়ায় । অ্যাপের মাধ্যমে পড়শোনা করা এখন স্মার্ট ওয়ে । অ্যাপের ইন্টারফেস ব্যবহার করার টেকনিক মনোগ্রাহী হওয়ায় পড়ুয়াদের আগ্রহ বেশী । অ্যানড্রয়েড এবং আই ও এস( আই ডিভাইস অপারেটিং সিস্টেম )প্রভৃতি ক্ষে্ত্রে অনেক ধরণের অ্যাপ আছে যার মাধ্যমে শেখা যায় অঙ্ক, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষা, সোশ্যাল স্টাডিজ সবকিছু । আবার হায়ার স্টাডিজের জন্য ইকোনমিক্স, ফিজক্স, কেমিস্ট্রি ইত্যাদি বিষয়ের উপরও গবেষণালব্ধ তথ্যবহুল অ্যাপও পেয়ে যাবেন ।এই সব অ্যাপে ভিডিয়ো ,অডিয়ো দ্বারা শেখানো হয় নানা বিষয় ।রয়েছে নিয়মিত অনুশীলন ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা ।সন্তানের কতদূর শেখা হল তাও যাচাই করা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে ।প্রাথমিক লেভেলে বিনামূল্যেই এডুকেশনাল অ্যাপ ডাউনলোড করা যায় । 

আরও গভীরে পড়াশোনা করতে চাইলে টাকা দিয়ে এগোতে হবে । শুধু পড়াশোনা নয় অ্যাপের মাধ্যমে ভাষা শেখা ,কার্টুন, পোর্ট্রেট ,অরিগ্যামি ক্রাক্ট ও ক্লে মডেলিং, ডায়াগ্রাম সব শেখা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাউনলোড করে । অ্যাপ লার্নিং করতে গিয়ে সারাক্ষণ স্ক্রিণের সামনে বসে থাকলে চোখে, নার্ভে ও মস্তিষ্কেরও সমস্যা হতে পারে । ফলে পড়াশোনা দুই মাধ্যমেই চলুক । অভিভাবককে সচেতন হতে হবে এ ব্যাপারে ।অ্যাপ ইনস্টলেশন করে সরাসরি তা সন্তানের হাতে না তুলে দিয়ে নিজের হাতে রাখুন । প্রয়োজনে অ্যাপ নিজে ব্যবহার করে সন্তানের গাইড হওয়ার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে । এতে পড়াশোনাও চলবে ঠিক ভাবে । আবার সন্তানও অ্যাপনির্ভর হয়ে পড়বে না ।ছুটির আনন্দ তখনই পাওয়া যায় যখন পড়াশোনাও তার একটা অঙ্গ । তাই অনলাইন শিক্ষার সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষার অনুশীলন ,খেলার মাঠ ,অভিভাবক, শিক্ষকদের সাহচর্য এগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ । রুম্পা দাস ।আনন্দ বাজার পত্রিকা ।

কেন্দ্রীয় সমীক্ষা বলছে দেশের আশি শতাংশ মানুষ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সুযোগ হতে বঞ্চিত । কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধিকাংশ পড়ুয়ার নিকট অনলাইন শিক্ষার সরঞ্জাম নেই ।তদুপরি নুন্যাধিক বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যা দেশের সর্বত্র বিদ্যমান । অনলাইন -অফলাইন দুটো পরস্পরের সম্পূরক । অনলাইনের উন্নতি দরকার । তার সঙ্গে স্কুলবাড়ি, বইখাতা ,ডেস্ক, বেঞ্চ, মাস্টার মহশয়ের শিক্ষাদানের উপাদানও প্রয়োজন । পরিবর্তিত মাধ্যমে যথাযথ যন্ত্র বা ইন্টারনেটের সংযোগ ব্যতীত লেখাপড়া অসম্ভব। স্মরণে রাখতে হবে গ্রামাঞ্চলে এবং শহরের দরিদ্র পরিবারগুলিতে এই উপাদানের ভীষণ ঘাটতি ।সম্পাদকীয় ।আনন্দ বাজার পত্রিকা ।19.09.2020

জাতিসংঘের দুটি সংস্থা অনলাইন শিক্ষার দিকে বড় আকারের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছে যে এটি আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে আরও গভীর করবে এবং সতর্ক করেছে যে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলি শিশুদের যৌন শোষণের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। ইউনেস্কো এবং ইউনিসেফের পরামর্শগুলি ভারতের জন্য একটি বিশাল তাৎপর্য বহন করে, যেখানে লকডাউনে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনলাইন শিক্ষার প্রচারের প্রচেষ্টা শুরু করেছে, যেখানে উচ্চ শিক্ষার অনলাইন পদ্ধতিগুলির জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ইউনেস্কো, জাতিসংঘের শিক্ষা শাখা মূল সুপারিশ প্রকাশ করে বলেছে যে অনলাইন শিক্ষাই সবার জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ বলে মনে করা একটি বিভ্রম। কমিশনের মতে দূরবর্তী ওয়েব-ভিত্তিক শিক্ষার দিকে একটি স্থানান্তর। শুধুমাত্র দরিদ্র দেশগুলিতে নয়, বিশ্বের ধনী অংশগুলিতেও বৈষম্যকে আরও গভীর করবে। এটি সুপারিশ করেছে যে দেশগুলি তাদের ছাত্র -ছাত্রীদের লকডাউনের পরে মুখোমুখি শেখার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আসা আবশ্যক এবং তার সঙ্গে অনলাইন লেনদেনের সাথে জড়িত গোপনীয়তার হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একটি আইআইটি কমিটির মতামতের সাথে একমত হয়ে জোর দিয়েছিলেন যে ভারতের মতো একটি দেশে অনলাইন শিক্ষার দিক পরিবর্তন করা হলে দরিদ্র ছাত্রদের বাদ দেওয়া হবে। দ্য টেলিগ্রাফ, 20.04.2020, বসন্ত কুমার মোহান্তি )

Two UN AGENCIES have warned against any large scale shift towards online education saying it would deepen socio-economic inequalities and warning that virtual platforms can leave children vulnerable to sexual exploitations. The UNESCO AND UNICEF advisiories carry a huge significance for India ,where the lockdown has triggered efforts to promote online teaching from primary school to universities , while long term planning are made for online modes of higher education . The UNESCO , the Un’s education arm has released key recommendations from an independent futures of education commission which said it is an illusion to think that online learning is the way forward for all. According to commission a shift towards remote web- based learning will deepen inequalities not just in the poor nations but also in the richer parts of globe. It has recommended that nations have their students recommitting to teachers for face to face learning after the lockdown and warned about the threat to privacy that online tranctions involve . teachers from several universities an IITs agreed with the committee’s views stressing that in a country like India a switch to online education would exclude poor students. The Telegraph, 20.04.2020, Basant kumar Mohanty.

রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি অন্যতম শাখা হলো ইউনেস্কো ।এর মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত দেশগুলোতে আইসিটির মাধ্যমে দূরশিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে ।শিক্ষা এবং শিক্ষণ জগতে এক গুণগত মানের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে ।শুধু তাই নয় শিক্ষা পরিচালন, প্রশাসন ,তথ্যের সমাহারে ছাত্রছাত্রী শিক্ষক- শিক্ষিকাদের একসাথে অনেকগুলো কাজকে অনেক সহজভাবে কম সময়ের নিষ্পন্ন করার সহজ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে । যোগাযোগ, তথ্য ,শিক্ষা, বিজ্ঞান বিষয়গুলো একত্র সংযুক্তিকরণে শিক্ষাজগত এক অভাবনীয় সাফল্যে সমৃদ্ধি হয়ে চলেছে ।

আইসিটির মাধ্যমে বিজ্ঞান এবং অঙ্কের মতন বিষয়গুলোকে অডিও ভিস্যুয়ালের মাধ্যমে বারম্বার উপস্থাপনে যেমন সহজভাবে বুঝে নেওয়াতে সম্ভব হচ্ছে সেখানে পুরণো পদ্ধতিতে শিক্ষক- শিক্ষিকারা একবার বিষয়টি পড়ানোর পরে তাকে পুনরায় উপস্থাপনের মানসিক পরিশ্রমের মতন বিষয়টি থাকার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না ।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো মোবাইল কাভারেজ এবং ইন্টারনেটের মেলবন্ধনে পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে গেছে ।এই স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলেন বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা 2000 সালে ।সেই সময় তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন 2015 সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির এই অভাবনীয় সাফল্য যেন সারা বিশ্বের মানুষ ছুঁতে পারেন ।তাই নাইক ফুয়েল ব্যাণ্ড ,স্মার্ট টিভি, গুগুল টিভি, ডেস্ক টপ আজ অতীত ।

ইউনেস্কোর মোবাইল লার্নিং উইক 2017 র নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিলেন । যেখান যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলোর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছনোর অসুবিধে আছে নানাবিধ কারনগুলোর জন্য সেখানে সেলুলার ডাটা কাভারেজে সেলুলার মোবাইল ফোনের ব্যবহারে আইসিটি এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করলেও এখনো সারা বিশ্বে 450 মিলিয়ন মানুষ এই সুবিধে থেকে বঞ্ছিত ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নতুন তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষার সাফল্য বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্বের সব জায়গায় এই প্রযুক্তির মেলবন্ধন ও লভ্যতার সীমাবদ্ধতায় । যার ফলে এই প্রযুক্তিকে যথাযথ ব্যবহারের অনুপযুক্ততায় পুরনো শিক্ষক বা শিক্ষিকারা যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাবে সমানভাবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন না ।

উপসংহারে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় সরকার যদিও অনলাইন সিস্টেমে সবার জন্য স্মার্ট ক্লাসরুম শিক্ষার ব্যবসথা করেন তবুও অফলাইনে শিক্ষকদের প্রয়োজন এই অনলাইন শিক্ষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য ।কারণ অনলাইনে শিক্ষাপদ্ধতিকে বারম্বার রিউইন্ড করে জটিল জায়গাগুলো বোঝনোর জন্য শিক্ষক- শিক্ষিকাদের অতি অবশ্যই যেমন প্রয়োজন তেমনি তাদের স্বয়ং উপস্থিতিতে অন্য অনেক বিষয়ের সরস আলোচনা মেধাকে উন্নত করে একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না ।তাছাড়া বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, ক্লাসরুম, খেলার মাঠ, কালচারাল প্রোগ্রাম প্রভৃতি শিক্ষক- শিক্ষিকাদের উপস্থিতি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে যা অনলাইনে সম্ভব নয় কোনদিনও ।প্রযুক্তি মানুষকে সহয়তা করে তার শ্রম লাঘব করে । তার চাকুরী খুইয়ে পথের ভিখারী করার জন্য যদি কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তবে সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করা প্রয়োজন ।

***দ্বিতীয় : কেন্দ্রের শিক্ষানীতি 2020

সদ্য প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ছাত্র- ছাত্রীরা বৃত্তিমুখী শিক্ষার পাঠ্যক্রম বেছে নিতে পারবে ।খুব ভালো প্রস্তাব ।এবার প্রশ্নগুলো করা যেতে পারে ।

এক- একটা বারো বছরের কিশোর বা কিশোরীর মেধার যোগ্যতা না অর্থনৈতিক দৈন্যতা বাধ্য করবে অতি অল্প বয়েসে বৃত্তমুখী শিক্ষার পাঠ্যক্রম বেছে নিতে । তাদের পছন্দসই বৃত্তিমূলক বিষয় কে ঠিক করে দেবেন । পরিকাঠামো বা প্রশিক্ষক কি সব বিদ্যালয়ে থাকবে । সরকার কি এই সমস্ত ব্যবস্থা নিজে করতে পারবে । না প্রচুর টাকা দিয়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়তে হবে ।এ ব্যাপারে সরকার নিরুত্তর । সরকারের শিক্ষা বাজেট এখনো সেই দিশা দেখাতে পারে নি ।

দুই- এই অল্প বয়েসে বৃত্তিমুখী শিক্ষার প্রচলন হলে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে যাবে । অসাম্য কম করাই যেখানে শিক্ষার আদর্শ হওয়া উচিৎ সেখানে এর উল্টো হতে চলেছে । নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার বা গরিবের সন্তান যখন ওয়েল্ডিং’এর ভোকেশনাল ট্রেনিং নেবে তখন হয়তো শহরের পাঁচতারা স্কুলে পড়া কোন ছেলে বা মেয়ে করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোর্স । ছেলেমেয়েরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি পড়াশোনা ছেড়ে দেয় কিছু যায় আসবে না রাষ্ট্রের । দিন আনি দিন খাই শ্রমিক মজুরের সন্তান আর ডাক্তার ,ইজ্ঞিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না । সে স্বপ্ন তোলা থাকবে সমাজের ওপরের দিকের জন্য । বাবার মতন অদক্ষ বা স্বল্প দক্ষ শ্রমিক হয়ে দুটো পয়সা রোজগার করলেই বেঁচে যাবে ।

তিন –এই শিক্ষানীতিতে শিল্প ,সংস্কৃতি, সাহিত্য, প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য নিয়ে যত কথা আছে সেই তুলনায় অনেক কম আলোচনা বিজ্ঞান নিয়ে ।

চার- এই শিক্ষানীতিতে তিন বছরের বদলে চার বছরের আণ্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স ।পাঁচমিশেলি আণ্ডারগ্র্যাজুয়েটের শেষ বছরে একটা গবেষণাপত্র লিখে এক লাফে পিএইচডি করতে চলে যাবে । মাস্টারসটা বাধ্যতামূলক নয় । এম ফিলও তুলে দেওয়া হল। এর ফলে ছাত্রের গবেষণার বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান আর রিসার্চ মেথডসে জ্ঞান কোনটাই ঠিক মতো হবে না । মার্কিন মডেলের যান্ত্রিক অনুসরণ তাও পুরোপুরি নয় । আমেরিকায় চার বছর আণ্ডারগ্র্যাজুয়েটে নানা বিষয়ে পড়ার পর গবেষণা করতে চাইলে দু বছরের মাস্টার্স কোর্স একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়তে হবে ।

পাঁচ – এই শিক্ষানীতিতে প্রচুর বিষয় থাকবে প্রত্যেকে পছন্দমতো বেছে নেবে । কার্যত ব্যাপারটা দুভাবে সীমিত হবে । প্রথমতঃ কোনও প্রতিষ্ঠান এতগুলি চয়েস দিতে পারবে না ।এত শিক্ষক, এত পরিকাঠামো, এত জটিল রুটিন করা সবটাই সেই ঘুরে ফিরে আগের ব্যবস্থায় ফিরে আসা ।

ছয় – উঠে যাচ্ছে ইউজিসি, এআইসিটিআইর মতো সংস্থা । তার জায়গায় হবে হেকি । যদি সব বিষয় হায়ার এজুকেশন কমিশনের ছাতার তলায় থাকে তবে প্রত্যেক শাখার স্বাধীন পরিচালন ব্যবস্থা থাকা জরুরি ।সবকিছু একাকার হয়ে গেলে বিষয়গুলোর ক্ষতি হবে সর্বাধিক ।

সাত – ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউণ্ডেশন রিসার্চের উপর প্রবল খবরদারি করবে ।সরকারের পছন্দ না হলে গবেষণা বন্ধ হবে । কিছুদিন ধরেই চেষ্টা চলছে কেবল কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বা ক্ষেত্রে গবেষণা সীমাবদ্ধ রাখতে ।কেন্দ্রীয় সরকারের ইমপ্রেস ,ইমপ্রিনট প্রভৃতি রিসার্চ ফাণ্ডিং স্কিম গুজরাতের মতন দু একটা রাজ্য সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ভারতে বিদ্যাচর্চার পক্ষে খুব দুর্দিন আসবে ।

আট - এই শিক্ষানীতিতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিনটে গ্রেডে ভাগ হচ্ছে । এক- রিসার্চ ইউনিভার্সিটি, দুই- টিচিং ইউনিভার্সিটি, তিন- অটোনমাস কলেজ । উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই শ্রেণিবিভাগ ভুল পন্থা ।গবেষণার ব্যাপারে সারা বিশ্বে অগ্রণী আমেরিকা ।আমেরিকাতে রিসার্চ এবং টিচিংকে কখনও আলাদা করা হয় না ।আলাদা হলে শিক্ষা আর বাস্তবের মেলবন্ধন সম্ভব নয় । আমেরিকার যত নোবেল লরিয়েট আছেন তাঁরা সকলে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত ।

পরিশেষে একটা কথা বলতেই হয় যে শিক্ষাব্যবস্থা যতই আধুনিক ও আন্তর্জাতিক গুনসম্পন্ন হোক যদি অতি অল্প বয়স থেকে ছাত্র- ছাত্রীর মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতার যাচাই না করা হয় তবে সেই শক্ষা ব্যবসথায় গোড়য় গলদ । তার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আই কিউ যাচাই করতে হবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ।তা না করে তাকে গড় পড়তা বিষয়ের দিক ঠেলে দিলে রাষ্ট্র কখনো বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ও উদ্ভাবনী শক্তিতে বিকশিত ছাত্র -ছাত্রী পাবে না । সাফল্যের হার নিম্নগামী থাকবেই ।শুধু শিক্ষাকে অতি সাধারণ শিক্ষা হিসাবে নিলে হবে না ।শিক্ষাকে জাতির প্রকৃত মেরুদণ্ড করতে হলে সবাইকে ভাবতে হবে পরিবারের আর্থিক সক্ষমতাকে সামনে রেখে কিভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা যাচাই করে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত এক একটা সবল সুস্থ নাগরিক তৈরি করা যায় ।দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই ব্যাপারে খুব সামান্য কাজ হয়েছে সরকারি স্তরে।আসলে ইচ্ছেটাই নেই ।পুরোটাই হারাধনের দশটি ছেলের মতন ।যে কোন রাজনৈতিক দলের কিছু দুষ্কৃতি ,গুণ্ডা, বদমায়েস , মূর্খ , অর্ধশিক্ষিত নিম্নগামী জনবল দরকার ।দেশ রসাতলে যাক । মেকি দেশপ্রেম দেখিয়ে জনগনের টাকা লুট করে ক্ষমতায় থাকা হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য ।এই হচ্ছে সারসত্য । এই দেশকে স্বয়ং ভগবানও বাঁচাতে পারবেন না । তবু আশা হারানো পাপ ।

-অসীম 

Post a Comment