বাংলা লোক সংস্কৃতির একাল সেকাল
প্রদীপ বাগ
পৃথিবীর
প্রত্যেক জাতির নিজস্ব জীবন ধারা,পরম্পরা আচার অনুষ্ঠানের বাহক হলো সংস্কৃতি। বাংলার তেমনি নিজস্ব অনুষ্ঠান "লোক সংস্কৃতি"।অর্ধশতাব্দী আগে হ্যাচাকের আলোয় রামযাত্রা,পতুল নাচ,কবির লড়াই তরজাগান হতো, সোঁদা মাটির গন্ধ,নির্মল বাতাসে সেকালের বাংলার জীবন বৈচিত্রের রূপরেখা মানুষ বিনোদন হিসেবে উপভোগ করতো এবং মনের গভীরে সেই আবেশ দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকতো।অন্য দিকে কবি/সাহিত্যিকগন তাঁদের লেখনীতে বিভিন্ন ভাবধারায় বাংলার ছবি চিত্রায়িত করতেন।প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতায়ন মনে আন্দোলিত হতো।ফলে একটি পরিতৃপ্ত হার্দিক সামাজিক বন্ধন ছিল।ক্রম বিবর্তনে আধুনিক বিজ্ঞানের অপার মহিমায় পাশ্চাত্য সভ্যতার গ্রাসে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি আজ অনেকটাই মলিন
ঔজ্জ্বল্য হীন । কংক্রিটের শহরে
ঝলমলে আলোয় মানুষের জীবন যাত্রা বদলের সাথে সাথেই চিন্তা চেতনা রুচি পরিবর্তন হতে বাধ্য। এখন মানুষ নিত্য নতুন চাহিদার পিছনে উদভ্রান্ত মরিচীকার মতো ছুটছে অন্যের দিকে তাকাবার সময় নেই। আত্মীয়তা প্রতিবেশী সুলভ মানসিকতা প্রায় উঠে গেছে। সামাজিক বন্ধন হ্রাস হয়েগেছে। এখন শিক্ষা সংস্কৃতি গান বাজনা থিয়েটার কবিতা আবৃত্তি প্রভৃতির প্রতি মানুষের আন্তরিক টান টা সেভাবে নাড়া
দেয় না।সবটাই তাৎক্ষণিক ভালোলাগা। জীবন এখন অনেক দ্রুত গতিতে চলে। আজকালকার সংস্কৃতি অনেকটাই ফেসবুক,টিভি সিরিয়াল, রিয়েলিটি শো উপর
নির্ভর, যাত্রা থিয়েটার সিনেমা প্রায় উঠে যাবার মুখে। আবৃত্তি প্রতিযোগিতা কবিগুরুর জন্মদিন প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এসব আর তেমন হয়না।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় তরুণ/তরুণী আজ উদ্দাম গড্ডালিকা
প্রবাহে বাহিত।প্রতিযোগিতার জীবন সবাই ব্যস্ত ভালো করে খবরের কাগজ পড়ার সময় নেই তো গল্পের বই
কবিতার বই পড়া দূর
অস্ত যা আমার দৃষ্টি
তে সমাজের বুকে একটা গভীর দগদগে
ঘা সৃষ্টি হয়েছে।তবুও টিমটিম আলোর মতো জ্বলে চিরন্তন বাংলার সংস্কৃতি, এখনও কিছু সংখ্যক ব্রাত্য মানুষ স্বর্ণালী যুগের গান পচ্ছন্দ করেন বিশেষতঃ উৎসব অনুষ্ঠানে যখন পুরোনো দিনের গান বাজে, এখন ও টিভি তে
পুরোনো দিনের সিনেমা মানুষের মনে ছাপ রেখে যায় যার সাথে আজকের দিনের গান গল্প সিনেমা কোনো তুলনা ই চলে না।
আজকের যে সকল সৃষ্টি
তা স্বল্প মেয়াদী কারণ তার মধ্যে অন্তরের ছোঁয়া নেই বললেই চলে যা আজকের বাস্তব
জীবনের প্রতিচ্ছবি।আসলে সমাজিক দর্শনটাই পরিবর্তন হয়েগেছে।ফলে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
সংস্কৃতির
শিকড় মানুষের মননের গভীরে যুগযুগান্তর প্রোথিত থাকে তাই মানুষের মন কে সহজেই
আকর্ষিত ও আন্দোলিত করে
যা সুষ্ঠ শৃঙ্খলাবদ্ধ আদর্শ সমাজ কে পরিচালনা করে।
একালের
বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতি ভাষা চিন্তা চেতনার সাথে প্রতিনিয়ত এক অসম লড়াই
চলছে।যত ই বাইরে চাকচিক্য
থাকুক সোনার মূল্য দুঃসময়ে বোঝা যায়।
সত্য
সূর্যের মতো আশা রাখি আগামী দিনে অন্তরের অন্তঃস্থলে হৃদয়গ্রাহী শিক্ষা সংস্কৃতির নির্যাস মানুষ কে সুস্থ চেতনার
আলোকে ধাবিত করবে এবং স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থার আবার পথপ্রদর্শক করে তুলবে।
পরিশেষে
আমার উপলব্ধি অনুযায়ী আমার কথায় "Coulture is
the face of the society."
'সমাপ্ত'