কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা
রাফিয়া
সুলতানা
কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১৮৬১ খৃষ্টাব্দে ৮ই মে জন্মগ্রহণ
করেন। চৌদ্দটি ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ছিলেন কবি ও দার্শনিক , মেজদাদা
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তদনিন্তন শেতাঙ্গপ্রধান ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের প্রথম ভারতীয় সদস্য। নতুনদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলে সঙ্গীত স্রষ্টা ও নাট্যকার ও
এক দিদি স্বর্ণকুমারী
দেবী ছিলেন সাহিত্যিক। বংশের এই ধারা শিশু
রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও বিদ্যমান ছিলো। মাত্র আট বছর বয়সে
তিনি প্রথম কাব্য রচনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর এর শৈশব জীবন
আর পাঁচটা বালকের মত ছিলো না।
প্রধানতঃ ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানেই কেটে ছিলো তাঁর শৈশব।স্কুলে যাওয়া ছাড়া অন্যসময় বাড়ির বাইরে বেরনোয় কড়াকড়ি ছিলো। জমিদার বাড়ির বিশালাকার দালানের রহস্যময় পরিবেশে কারারুদ্ধ জীবন তাঁকে বিষন্ন ক'রে তুলতো।
শ্যাম বলে একজন ভৃত্য একটি
গন্ডী কেটে সেখানে তাঁকে আটকে রাখতো ও সেখান থেকে
বেরোলে যে কি ভয়ানক
বিপদ হতে পারে তা বোঝানোর জন্য
রামায়ণের সীতাহরণের কাহিনী ও নানা রক্তপিপাসু
ডাকাতের গল্প শুনিয়ে তাঁকে ভয় দেখিয়ে রাখতো
।বাড়ির বাইরে বেরনোয় নিষেধ থাকায় গৃহে আবদ্ধ জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলো তাঁর শৈশব। বাইরের প্রকৃতির নৈস্বর্গিক আবেদন তাঁকে প্রায়শঃই হাতছানি দিতো।
ছোটবেলায় নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি, ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল ও পরিশেষে সেন্ট
জেভিয়ার্স ইত্যাদি বিভিন্ন স্কুলে পড়লেও স্কুলজীবনের প্রতি তাঁর ছিলো তীব্র অনীহা। তাই অচিরেই তিনি স্কুল পরিত্যাগ করেন। তখন থেকেই বাড়িতে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে চলে তাঁর পড়াশোনা। এছাড়াও জুডো, কুস্তি, শরীরচর্চা ,গঙ্গায় সাঁতারকাটা এগুলিও পাশাপাশি চলতে থাকে।
শৈশবে
তিনি তাঁর পিতৃ সংস্রবে আসেননি বললেই চলে। কারণ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তখন প্রায় উত্তর ভারত ও ইউরোপের দেশগুলিতে
পরিভ্রমণে ব্যস্ত থাকতেন। তেরো বছর বয়সে পিতার সঙ্গে প্রথম বেড়ানোর সুযোগ আসে তাঁর। প্রথমে তাঁরা যান শান্তিনিকেতনে। সেখানকার আম্রকুঞ্জ পরিবেষ্টিত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আকৃষ্ট করে তাঁকে। তারপর সেখান থেকে তাঁরা যান পাঞ্জাবের অমৃতসরে। সেখানকার একটি গুরুদ্বোয়ারায় কিছুকাল অতিবাহিত ক'রে, পরে
অধুনা জম্মুকাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশের
সীমানায় , হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত হিমালয়ের শৈলশহর ডালহৌসীতে পরিভ্রমণ
করেন।সেখানকার প্রায় ২,৩০০ মিটার
উচ্চতায় অবস্থিত বক্রোটা পাহাড়চুড়ায় অবস্থান কালে সেখানকার নৈস্বর্গিক পরিবেশে মহানন্দে কাটতে থাকে কিশোর রবীন্দ্রনাথের অবসর ও পড়াশোনা। এই
সময় তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি , বেঞ্জামিন ফ্র্যান্কলিনের জীবনী ও এডওয়ার্ড গিবন
রচিত " দ্য হিস্ট্রি অফ দ্য ডিক্লাইন
এন্ড ফল অফ দ্য
রোমান এম্পায়ার" ইত্যাদি অনেক গ্রন্থ অধ্যায়ন করেন।
সেখানে
প্রায় দুমাস অতিবাহিত করে অবশেষে কলকাতায় ফেরেন তাঁরা। রবীন্দ্রনাথের জীবনের এই অংশ পরবর্তী
কালে তাঁর জীবনে একটি গুরুত্বপুর্ণ ছাপ রেখে যায়।
রবীন্দ্রনাথ,
গীতাঞ্জলি এবং নোবেল প্রাপ্তি
দেবব্রত হাজরা
১৯১৩
সালের ১৩ নভেম্বর। সুদূর
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম শহর থেকে সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার’-এর একটা ছোট্ট
টেলিগ্রাম সারাপৃথিবীর সঙ্গে ভারতবর্ষে পৌঁছল। তাতে চমকপ্রদ খবরটি ছিল এরকম—
“Stockholm, Thursday, Nov. 13, The Nobel Prize for
Liturature for 1913 has been awarded to the Indian Poet Rabindra Nath Tagore.”
খবরটি
এই যে, ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তারপরে শুরু হয়ে গেল সারা বাংলাদেশ জুড়ে রবীন্দ্র-ভজনা।
১৯০১
সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির আগে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ইউরোপ মহাদেশেরই বিভিন্ন রাষ্ট্রের ১২ জন সাহিত্যিক
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছিলেন।
এঁরা হলেন জার্মানির চারজন, ফ্রান্সের দু’জন এবং
একজন করে সুইডেন, নরওয়েজিয়ান, পোলিশ, ইতালিয়ান, বেলজিয়ান ও ইংরেজ গুণিজন।
১৯১৩
সালের ১৩ নভেম্বর রয়টারের
টেলিগ্রামের দিনই ‘Empire’ নামে একটা ইংরেজি সান্ধ্য দৈনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির খবরটি কলকাতায় প্রথম প্রকাশ করে। হ্যাঁ, অখ্যাত, অনামা, পরাধীন ভারতবর্ষের এক কবি তাঁর
গান এবং কবিতার বই ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’
(Song Offerings)-র জন্য ইউরোপ মহাদেশের বাইরে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেলেন, যা ভারত ও
ভারতের বাইরে ছিল অকল্পনীয়।
সুইডিশ
অ্যাকাডেমির কাছে রবীন্দ্রনাথের ঠিকানা ছিল না। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাঁর বইয়ের প্রকাশক ‘ম্যাকমিলান’-এর কাছ থেকে
ঠিকানা জোগাড় করে জোড়াসাঁকোর ঠিকানায় একটি টেলিগ্রাম পাঠায়—
“Swedish Academy Awarded you Nobel Prize Literature. Please
wire Acceptation, Swedish Minister.”
রবীন্দ্রনাথ
তখন শান্তিনিকেতনে। টেলিগ্রামটি জোড়াসাঁকোয় পৌঁছতেই জামাই নগেন্দ্রনাথ মতান্তরে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সেটি পাঠিয়ে দিলেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ, পুত্র রথীন্দ্রনাথ সহ কয়েকজন অধ্যাপক
ও ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে রেল লাইনের পূর্বদিকে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। সেদিন ছিল ১৬ নভেম্বর। বাঁকুড়ার
ওয়েসলিয়ান কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক এডোয়ার্ড টমসন সুইডিশ অ্যাকাডেমির টেলিগ্রামটি হস্তাগত করে পথের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তুলে দেন।
একপলক
দেখে তিনি ইংরেজির অধ্যাপক নেপালবাবুর হাতে তুলে দিয়ে বলেন, “নিন, নেপালবাবু আপনার ড্রেন তৈরি করার টাকা।” নোবেল বিজয়ী কবির এটাই ছিল প্রথম অভিব্যক্তি। কবির এই উক্তির কারণ
ছিল এই যে, তখন
শান্তিনিকেতনে একটা কাঁচা ড্রেন পাকা করার কাজ চলছিল আর তা অর্থের
অভাবে থমকেছিল। শিক্ষক নেপালবাবু (নেপাল রায়) ছিলেন ড্রেন তৈরির তদারকিতে।
১৯১৩
সালের নভেম্বর মাসে নোবেল প্রাপ্তির আগে আমাদের ফিরে যেতে হবে তাঁর ইংরেজি গীতাঞ্জলি বা Song Offerings-এর নির্মাণ কাহিনিতে।
কবিগুরুর ভাষায়, প্রদীপ জ্বালাবার আগে সলতে পাকানোর পর্বে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের বাংলা গীতাঞ্জলির হুবহু ইংরেজি অনুবাদ, কিন্তু Song Offerings নয়। বাংলা গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ১৫৭টি কবিতার মধ্যে ৫৩টি, কাব্যগ্রন্থ ‘গীতিমাল্য’র ১৬টি, ‘নৈবেদ্য’র ১৬টি, ‘খেয়া’র ১১টি, ‘শিশু’র তিনটি ও
একটি করে ‘চৈতালি’, ‘কল্পনা’, ‘উৎসর্গ’ ও ‘স্মরণ’ কাব্যগ্রন্থের
কবিতার অনুবাদ, এছাড়া অচলায়তন নাটকের একটি গান ইংরেজি গীতাঞ্জলি (Song
Offerings)-তে স্থান পেয়েছে। মোট ১০৩টি কবিতার (নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের দু’টি কবিতা
একটি কবিতা হিসেবে অনুদিত হয়েছে) অনুবাদ নিয়ে ইংরেজি গীতাঞ্জলি বা Song Offerings।
রবীন্দ্রনাথ
বড় জল ভালোবাসতেন। ১৯১১
সালে শিলাইদহে তাঁর প্রিয় পদ্মার বুকে বজরায় ভেসে শুরু করেন ইংরেজি গীতাঞ্জলি তথা Song Offerings-এর নির্মাণপর্ব। শেষ
করেন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ‘City Of Glasgow’ নাম জাহাজের কেবিনে। মাঝে হাওড়া থেকে বম্বে, রেলগাড়ির কামরায়।
১৯১২
সালের ২৪ মে, পুত্র
রবীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা
দেবী সহ, রবীন্দ্রনাথ বম্বাইয়ের পথে লন্ডনযাত্রা করলেন। ১৬ জুন লন্ডন
পৌঁছলেন। ওঠেন ‘ব্লুমসবেরি হোটেলে’। হোটেলে যাওয়ার
পথে ঘটে এক বিপত্তি। ইংরেজি
গীতাঞ্জলি-র পাণ্ডুলিপি লন্ডনের
টিউব রেলে হারিয়ে যায়। পরেরদিন পুত্র রথীন্দ্রনাথ টিউব রেলের লস্ট প্রপার্টির অফিস থেকে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করেন।
Song Offerings-এর
পাণ্ডুলিপিটি চিত্রকর রোথেনস্টাইন (Rothenstine)-এর লন্ডনের বাড়িতে
গিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর হাতে তুলে দেন। উইলিয়াম রোথেনস্টাইন, লন্ডনের প্রখ্যাত চিত্রকর, যাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আগেই কলকাতার জোড়াসাঁকোতে দেখা হয়েছিল ১৯১১ সালের জানুয়ারি মাসে। রোথেনস্টাইন, অবন ঠাকুর ও গগন ঠাকুরের
আমন্ত্রণে জোড়াসাঁকোর শিল্প সংগ্রহশালা দেখতে আসেন। আর সেখানেই দেখা
পেলেন রবীন্দ্রনাথের। আগ্রহভরে পড়লেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ইংরেজি পত্রিকা ‘Modern Review’-তে অনূদিত ‘পোস্ট
মাস্টার’ গল্পটি। মুগ্ধ হলেন, রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করলেন লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য টাইম, নেশন, ম্যাকমিলান ইত্যাদিতে তাঁর রচনা প্রকাশের। রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বজনীন করার ক্ষেত্রে রোথেনস্টাইনের ভূমিকাটুকু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন। তার ফলস্বরূপ Song Offerings উৎসর্গ করেন উইলিয়াম রোথেনস্টাইনকেই।
শেষপর্যন্ত
১৯১২ সালের ১ নভেম্বর কবি
ডব্লিউ বি ইয়েটসের ভূমিকা
সহ ‘Song Offerings’-এর প্রথম প্রকাশ
হল লন্ডনের India Society-র হাত ধরে।
ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উইলিয়াম রোথেনস্টাইন। ইন্ডিয়া সোসাইটি অবশ্য কোনও প্রকাশনা সংস্থা ছিল না। এটা ছিল অ্যাসোসিয়েশনের মতো। যেখানে কয়েকজন ইংরেজ এবং ভারতীয় ভদ্রলোকের উদ্যোগে Song Offerings কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ হয়। ছাপা হয়েছিল মোট ৭৫০ কপি। সাধারণ্যে বিক্রির জন্য ছিল ২৫০ কপি। Song Offerings প্রকাশ পাওয়ার পর ইংল্যান্ডের নামিদামি
পত্রিকাগুলি কাব্যগ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করে। ফলে, ১৯১২ সালের শেষের দিকে নামি প্রকাশনা সংস্থা ‘ম্যাকমিলান’ Song Offerings
ছাপানোর দায়িত্ব নেয়।
১৯১৩
সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের চূড়ান্ত ২৮ জন কবি/সাহিত্যিকের নাম বিখ্যাত মানুষদের সুপারিশ সহ সুইডিশ অ্যাকাডেমির
কাছে পাঠানো হয়েছিল। শুধুমাত্র ইংরেজ কবি Thomas Hardy-র নাম ইংল্যান্ডের
রয়্যাল সোসাইটির ৯৭ জন সদস্য
নোবেল কমিটির কাছে সুপারিশ করেন। Thomas Hardy ছাড়াও নোবেল কমিটির কাছে সুপারিশ সহ উল্লেখযোগ্য নামগুলি
ছিল স্পেনের বেনিটো পেরেজ গোলডাস, ফ্রান্স থেকে আরনেট লেভিস, সুইৎজারল্যান্ডের কার্ল স্পিটলে, ইতালি থেকে গ্রাজিয়া দেলেদ্দা, জার্মানি থেকে আনাতোল ফ্রঁস প্রমুখ। আর রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে
Song Offerings-এর জন্য একজন মাত্র ইংরেজ কবি T. Sturge Moore, নোবেল কমিটির কাছে খুবই সাদামাটা ভাষায় সুপারিশ করেছিলেন—
To
The secretary of the nobel committee of
the Swedish Academy, Stockholm.
Sir,
As a fellow of Royal society of literary of literacy of the
United Kingdom, I have the honour to the propose of the name of Rabindra Nath
Tagore.
As a person qualified, in my opinion, to the awarded the
Nobel Prize in Literature.
T. Sturge Moore
সেবছর
নোবেল কমিটির সদস্য ছিলেন ১৮ জন। সদস্যদের
মধ্যে একজন ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য, তিনি হেনরিক ভিলহেলম্ ট্যাগনার। তিনি ভাষাতাত্ত্বিক এবং সুইডেনের বিখ্যাত কবি অ্যাসিয়াস ট্যাগনারের নাতি। আরও বড় পরিচয় তিনি
বাংলা জানতেন। মূল বাংলা গীতাঞ্জলি তিনি পড়েছিলেন। সেবছর নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে ১৩ জন ভোট
দিয়েছিলেন এবং ১৩ জনের মধ্যে
১২ জন সদস্যই ভোট
দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের Song
Offerings (ইং গীতাঞ্জলি)-এর পক্ষে।
এর
পরপরই শুরু হল বঙ্গদেশে কবির
বিড়ম্বনা। Song
Offerings মোট ১০৩টি কবিতার ৮০ পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থ।
১৬ পৃষ্ঠা জুড়ে সূচি, উৎসর্গ, ইয়েটস-এর ভূমিকা ইত্যাদি
আর মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠায় কবিতাগুলি—
এরকম একটা চটি বই আর তার
স্কুল-কলেজের ছাপ্পাহীন রচয়িতা কীভাবে নোবেল প্রাইজ পেলেন, সেসময়ের কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি। আর ব্যাপারটি মেনে
নিতেও কষ্ট হয়েছিল। আরও বিড়ম্বনা শুরু হল, যখন কলকাতা থেকে ২৩ নভেম্বর (১৯১৩)
৫০০ জন নরনারী স্পেশাল
ট্রেনযোগে হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতনে কবিকে নোবেল প্রাপ্তি উপলক্ষে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত হলেন। ওই সমাবেশের উদ্দেশ্যে
অভিমানভরে বলেছিলেন, “আজ আপনারা আদর
করে সম্মানের যে সুরাপাত্র আমার
সম্মুখে ধরছেন তা আমি ওষ্ঠের
কাছ পর্যন্ত ঠেকাব, কিন্তু এ মদিরা আমি
অন্তরে গ্রহণ করতে পারব না।”
তবে
রবীন্দ্রনাথ সুইডিশ অ্যাকাডেমির নোবেল পুরস্কারবাবদ ১,২০,০০০
(৮ হাজার পাউন্ড) টাকা নেপালবাবুর হাতে শান্তিনিকেতনের নর্দমা সংস্কারের কাজে দেননি, কৃষক দরদি রবীন্দ্রনাথ তাঁর জমিদারিতে মহাজনদের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে অল্পসুদে কৃষি ও কুটির শিল্পে
ঋণ দেবার জন্য ১৯০৫ সালে স্থাপিত পাতিসর সমবায় কৃষি ব্যাঙ্কে নোবেল পুরস্কারের টাকা জমা রাখেন।
সারাজীবন
ধরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় এ পৃথিবীর যাবতীয়
পৌত্তলিক অথবা অপৌত্তলিক ধর্মের প্রচলিত ধারণা বা সীমারেখা পেরিয়ে
গড়ে তুলেছিলেন এক নিজস্ব অপার
ঈশ্বরবোধ, আর ছিল সেই
পরমেশ্বরের প্রতি তাঁর একান্তে আত্মনিবেদন, যার পরিপূর্ণ প্রকাশ ‘কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি’।
When my play was with thee
I never questioned who thou wert.
I knew nor shyness nor fear,
my life was boisterous.
In the early morning thou wouldst call me
from my sleep like my own comrade
and lead me running from glade to glade.
On those days I never cared to know
the meaning of songs thou sangest to me.
Only my voice took up the tunes,
and my heart danced in their cadence.
Now, when the playtime is over,
what is this sudden sight that is come upon me?
The world with eyes bent upon thy feet
stands in awe with all its silent stars.
(Poem No. 97, Song Offernings)
তথ্যসূত্র:
১।
রবীন্দ্র জীবনী (২য় খণ্ড) – প্রভাত
কুমার মুখোপাধ্যায়।
২।
রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির ইতিবৃত্ত – দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়।
৩।
একত্রে রবীন্দ্রনাথ – অমিতাভ চৌধুরী।
৪।
নানা রবীন্দ্রনাথের মালা – পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
৫।
ইংরাজী গীতাঞ্জলি প্রসঙ্গে – কল্যাণ কুণ্ডু (পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা – রবীন্দ্র সংখ্যা – ১৪০৫)।
৬। The Editor of Encyclopedia Britanica, Update upto 2019.