শান্তির দূত বুদ্ধদেব।গৌতম বুদ্ধের জীবনী ও শিক্ষা।গৌতম বুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?

শান্তির দূত বুদ্ধদেব 
গোপাল চন্দ্র মুখার্জী

       বিশ্ব সংসারে অহিংসা এবং বৌদ্ধধর্মের প্রণেতা শান্তিদূত ভগবান গৌতম বুদ্ধদেবের আবির্ভাব তিথিতে বুদ্ধদেবের শ্রীচরণে প্রণাম এবং শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন।

যতদিন চিত্ত শুদ্ধ হয়ে একাগ্র ,সংস্কারমুক্ত না হবে ততদিন "বোধ" এর উদয় হতেই পারে না। মনকে তৈরী করতে হবে নির্লিপ্ত , উদার , সমদর্শী অথবা সমব্যাথী। হতে হবে মোহ-মায়া মুক্ত। রপ্ত করতে হবে "তিতীক্ষা" র। তবেই মন হবে দরদী , সর্বজন কল্যাণকারী এবং সমাজ সংস্কারক। চোখ থাকলেই সর্বদর্শী হওয়া যায় না , কারণ , মন থাকে মায়া মোহতে অন্ধ হয়ে, মুগ্ধ সীমিত জ্ঞানের গণ্ডিতে। যেমন , নির্মল আকাশে পূর্ণ চন্দ্র ! মায়ার জাল ছড়িয়েছে চাঁদের জ্যোৎস্না ! গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় সবাই উপভোগ করছে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে স্নিগ্ধ চন্দ্রলীলা ! এদের সকলের সম্পর্ক স্রেফ চন্দ্র এবং তার মায়াময় স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার সঙ্গে। কত গল্প , কত ছড়া-গানের উর্ধে আর কিছুই নয় ! কিন্তু , কেউ আরেক জন এসবের সঙ্গেও দেখল আরও অন্য কিছু। মায়া মোহের বাইরের সৌন্দর্যকে ! দেখল ,দুটি সাদা বক উড়ে গেল চন্দ্রের পাস দিয়ে শুভ্র জ্যোৎস্নায় স্নাত হয়ে ! কী অপরূপ চিত্রপট দর্শন বা উপভোগ করতে করতে চিত্ত আনন্দে পরিপূর্ণ করল ! এটাই হল দেখার তফাৎ ! সেরকম অন্তরের গভীরতম স্থান থেকে একান্ত বোধের উদয় না হলে বোধবান অথবা বুদ্ধ হওয়া যায় না ! বোধের উদয় তাঁরই হয় যাঁর চিত্ত নিত্য শুদ্ধ ! সেজন্যেই তো ঠাকুর পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন "নিত্য শুদ্ধ বুদ্ধ ভব" জগতে যার বিশুদ্ধ বোধের উদয় হয়ে "বোধীত্ব" লাভ হয়েছে তিনিই তো "বুদ্ধ"! তবেই তো অবতার রূপে ব্রহ্মাণ্ডে পূজ্য ! ভগবান বুদ্ধদেব খ্রী.পূ .৫৬৩ - ৪৮৩ সময় কালের জন্য আবির্ভূত হয়ে পূর্ণিমার নির্মল জ্যোৎস্নার সঙ্গে বিশ্বশান্তির মধুরতাকেও উপভোগ করলেন ! বিশ্বশান্তিরদূত , অহিংসক ধর্মের সংস্থাপক মুক্তবোধের বা চৈত্যন্যের অধিকারী অথবা সোজা কথায় "সম দর্শনের" শিক্ষা দাতা এবং প্রচারক ভগবান গৌতম বুদ্ধ বা বুদ্ধদেব। অবতার।

বুদ্ধদেবের জীবনীই তাঁর বাণী এবং উপদেশের পর্যাপ্ত উদাহরণ। বুদ্ধদেবের মূল উপদেশ অথবা শিক্ষাই হল অহিংসা এবং সমদর্শন। এই মতবাদ যদি সত্যি সত্যি বিশ্বে প্রতিপালিত হয় ,তবে ,সমগ্র বিশ্বে শান্তি , মৈত্রীর সহঅবস্থান অনিবার্য হয়ে বিশ্বে সর্বকল্যাণের সাথে সাথে নিশ্চিত উন্নয়ন হতে বাধ্য হবেই। যেমন স্বয়ং বুদ্ধদেব বলতেন "যেরকম আমি নিজে , অপরজন্যও সেরকমই। অনুরূপ ,অন্যজন যেরকম , আমিও সেই একই রকম। অপর সবাইকে নিজেরমত করে ভেবে নিয়ে না নিজে কাউকে হত্যা কর , না তো অপর জনকে হত্যা করার জন্য উৎসাহিত কর।" অহিংসাই পরম ধর্ম।

   শুধু অহিংসার কথাই নয় বুদ্ধদেব জগতের মানুষকে জানিয়েছেন কিভাবে মানসিক অশান্তির থেকে দুরে থাকা যায় এবং ভ্রাতৃত্ববোধ অক্ষুন্ন রেখে সহিষ্ণুতা এবং সহযোগের মনভাবকে সঙ্গী করে সহাবস্থানে জীবন যাপন করা যায়। যাতে জগতের আবহাওয়া প্রেমময় হয়ে অহিংস এবং আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক ধর্মগত অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং তীব্র আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারনে বিশ্বে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই কারনে উদাসীনতার ব্যাপকতা! ! আত্মহত্যার প্রবণতায় বৃদ্ধি হয়ে হিংস্রতার বৃদ্ধির কারক। অধৈর্য অশান্ত বিশ্ব!! !

 লোক শিক্ষায় বুদ্ধদেব উদহরণে বলেছেন - যদি কেউ গালাগালী করে তবে তার প্রতিবাদ না করে প্রত্যুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া যায় , তাহলে যে গালাগালী করছে , সে ক্লান্ত হয়ে অবাক হয়ে চুপ হয়ে যাবে। তাতে শান্তি অক্ষুন্ন থাকবে। প্রতিস্পর্ধাহীন অবাধ বিশ্বশান্তি সংস্থাপনের পথ এরকমই হওয়া উচিৎ। সেই পথেই হবে আত্মার উন্নতি এবং বিশ্বকল্যাণ। এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচারিত বৌদ্ধধর্ম। এই ধর্মের মূল সিদ্ধান্তই হল অহিংসা , ক্ষমা , দয়া , ভাতৃত্ব , সহাবস্থানবোধ।

 ইতিহাস অধ্যয়নে দেখা যায় যে -  বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর চিরতরে হিংসার পথ পরিত্যাগ করে বিভিন্ন দেশ - মহাদেশে অহিংসার নীতি এবং ভাতৃত্ববোধে সমৃদ্ধ বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রচার প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং এবং বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছিলেন বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য দূত হিসাবে নিজের ছেলে এবং মেয়ে সহ অন্যকে। নিজেই বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে বিশ্বে অহিংস্র স্থায়ী শান্তির স্থাপনা হোক।

  কিন্তু , বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে বৌদ্ধধর্মী কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্র হিংসার আশ্রয়ে আশ্রিত হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্বে ত্রাস সৃস্টি করে মানুষ এবং প্রাণীদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে চলেছে! ।বিষয়টি আশ্চর্যজনক হওয়া সত্বেও সত্য !

আসুন এই উপযুক্ত পরিস্থিতিতে নিজস্বার্থে এবং বিশ্বকল্যাণে বিশ্বের সমস্ত প্রাণি উচ্চকন্ঠে সমস্বরে উচ্চারণ করি "বুদ্ধম শরনম গচ্ছামি " !

                  জয়তু : বুদ্ধদেব।

Post a Comment