হিজড়া
মঞ্জুশ্রী
মণ্ডল
প্রকৃতির
নিয়মে সৃষ্ট মানব জাতির মধ্যে এমন এক ধরনের মানুষের
সৃষ্টি যাদের সমাজে সকল মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না।হ্যাঁ আমি যাদের কথা বলছি তারা হলো হিজড়া। এরা মানুষ তবে এরা না পুরুষ না
স্ত্রী। তাই এদের তৃতীয় লিঙ্গ বলা হয়।
সে
যাই হোক, আমাদের সমাজে নতুন শিশু জন্মালে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম কিংবা
বাড়িতে যেভাবেই হোক না কেন এই
হিজড়ারা ঠিকই খবর পেয়ে যায় এবং এক মাসের দু
মাসের মধ্যেই নবজাত শিশুটিকে নাচাবার জন্য বাড়িতে পৌঁছে যায়। দু চারজন মিলে
যায় । সঙ্গে ঢোল
থাকে, বিভিন্ন ভঙ্গিমায় শিশুটিকে কোলে নিয়ে কিংবা চালের রেকাব সহ নাচে এবং
নাচায়। সাথে নিজেদের তৈরি গানগায়। দেখতে মজা লাগে ভালো। শিশু নাচাবার হিজড়া আসার খবর পেলেই পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে ভিড় করে মজা লুটতে থাকে।
কিন্তু
এই নাচাবার উদ্দেশ্য থাকে হিজড়াদের উপার্জন।যেমন বাড়িতে যায় তাদের আর্থিক কাঠামো দেখে বিভিন্ন রকম অর্থ মূল্য দাবি করে। বহু পূর্বে দশ ,কুড়ি , পঞ্চাশ একশো, দুশো, পাঁচশো টাকা পর্যন্ত ছিল কিন্তু এখন হাজার ,দু
হাজার, পাচ হাজার, দশ হাজার পর্যন্ত
দাবি থাকে। কন্যা শিশু ও পুত্র শিশুদের
আলাদা দর হয়।
চাকরিজীবী
পরিবার হলে সেখানে অনেক বেশি দাবি করে। সামর্থ্যে না কুলালে বা
দিতে অসমর্থ হলে নানারকম গালিগালাজ করে। অভিশাপ ও দিতে থাকে।
এরকম উদাহরণ আমার চোখের সামনে দেখা। এরা অল্পেতে কিছুতেই খুশি হয় না।
এটি
গেল একটা দিক। এবার আসি অন্যদিকে। ট্রেনে তে প্রায়শই বেশ
সাজ পোশাক করে যাত্রীদের কাছে দে বাবা দে
মা এইসব বলে মাথায় হাত বুলায়। দু-এক টাকায়
মন ধরে না। দশ,কুড়ি, পঞ্চাশ
টাকা দিলে তবে সেখান থেকে যায়। টাকা দেওয়ার পর মাথায় এমন
হাত বোলায় যেন দেবতার আশীর্বাদ।
জানি
এরা পেটের দায়েই এইভাবে মানুষের কাছ থেকে অর্থ উপার্জন করে। না দিলে অভিশাপ
দিতে থাকে বলে
অনেক
মানুষ ভয়ে ভয়েই দেয়।
এখন
বিষয়টা হলো পেটের দায় সব মানুষেরই থাকে।
সব মানুষই কোনো না কোনোভাবে পরিশ্রম
করে পেটের ভাত জোগার করে। কিন্তু এই তৃতীয় লিঙ্গের
মানুষরা তথা হিজড়ারা এইভাবে নবজাতককে নাচানোর দোহাই এ কিংবা ট্রেনের
যাত্রীদের আশীর্বাদ করার দোহাইয়ে বিনা শ্রমে জোরপূর্বক অর্থ উপার্জন করাটা কি সত্যিই যুক্তিসঙ্গত?
গায়ে
গতরে খেটে বা পরিশ্রম করে
এরাতো রোজগার করতে পারে। সরকারি বা প্রশাসনিকভাবে এই
হিজড়া দের জোরপূর্বক অর্থ উপার্জন বন্ধ করা অবশ্যই দরকার।
নবজাতককে
না নাচালে কোন ক্ষতি হয় বলে তো আমার মনে
হয় না।শুধু শুধু হাজার হাজার টাকা মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করে। এটা অন্যায় নয় কি?