অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত এর উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা
আমরা
ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি শিক্ষা নাকি জাতির মেরুদন্ড। আর এই মেরুদন্ড
আজকে টাকার কাছে বিক্রি। একে নিয়ে চলে প্রতিবছর কাঁটা ছেড়া আর গবেষণা। কিন্তু
দিনের শেষে ফল শুন্য।
আমাদের
পূর্বের বংশধর যারা এইসব semester, nep, cbcs কি জানতো না।
না ছিল কোনো বইয়ের সম্ভার না ছিল কোনো
আদিখেত্তা, না ছিল নাকের
গোড়ায় গোড়ায় কোচিং সেন্টার। তাও তাঁরা দশম শ্রেণী পর্যন্ত যা অর্জন করেছে
এখন PhD করেও তার ধারে কাছে আসতে পারে না।
উদাহরণ স্বরূপ আমার নিজের দাদু ঐ সময় ১০
কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে
মেট্রিক পাস করেছিলেন। সেই মেট্রিক পাশের দক্ষতা যা ছিল তার
সাথে বর্তমান প্রজন্ম বা আমাদের প্রজন্মা
মেলাতে যাই তাহলে হয়ে গেলো...আকাশ
পাতাল পার্থক্য। দাদু না ফেরার দেশে
সুখে থাকুক। তখন জানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। বেশিরভাগ পথ ঐ ১১
নম্বর বাসে করে অর্থাৎ পায়ে হেঁটে পেরোতে হতো। উনি কাঁচরাপাতে railway officer
ছিলনে। তাঁকে এত ভালোবাসতো সবাই
আর সম্মান করতো যে রিসিভ করার
জন্য ১০ কিলোমিটার পথ
হেঁটে পাড়ার লোকেরা অপেক্ষা করতেন। শিক্ষার প্রতি মানুষের এই যে সম্মান
ছিল তখনকার সময় তাকে কুর্নিশ জানাই। যেটুকু ছিল খাঁটি, কোনো edit করা ছিলোনা। সবটাই আসল। তাই উনারা এত সফল হয়েছিলেন।
তখন
semester ও ছিল না, এত সুযোগ ও
ছিল না, কিন্তু ছিল কঠোর তপস্যা। যার কোনো বিকল্প হয় না। সময়ের
সাথে পরিবর্তন হওয়া ভালো, কিন্তু সেই পরিবর্তন আমার পক্ষে নাকি বিপক্ষে সেটা আমরা বিচার করি না।
বিশেষকরে
এখনকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় রোজ রোজ পরিবর্তন। আসলে কি যে ভালো
কি যে মন্দ সব
যেন hybrid হয়ে গিয়েছে। শিক্ষাতেও জঘন্য রাজনীতি।
সাম্মানিক
স্তরে আমি যতদূত থেকে জানি প্রথমে ৩ বছর পড়তে
হতো। প্রথম দুটো বছর কে part -I এবং শেষের দুটো বছর part -II. পরে এলো 3 tier সিস্টেম। এটাই বেশ ভালো ছিল। ছাত্রছাত্রীরা কিছু শিখতো। যতটুকু শিখতো পুরোটাই খাঁটি সোনা।
এরপরে
এলো CBCS system। খুব ভালো
অল্প অল্প পড়বে, অল্প অল্প করে পরীক্ষা দেবে, no পাবে, ওতেই খালাস। এ যেন পড়াশোনার
diet chat, অল্প অল্প খাও, ঘন ঘন খাও
নাহলে মোটা হয়ে যাবে। শরীর স্বাস্থ্য আর পড়াশোনার নিয়ম
সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
এর
পরে এলো NEP অর্থাৎ national education
policy মানে জাতীয় শিক্ষানীতি। শিক্ষানীতিতে ও রাজনীতি। একটা
নতুন কিছু করতে হলে সেটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিৎ। হটাৎ করে মন হলো শিক্ষা
ব্যবস্থা পরিবর্তন। উচ্চমাধ্যমিক পড়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি
নিয়ে পড়বে সে কিছুই বুঝতে
পারছে না।
একটা
প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে বা মেয়ে যে
নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে কিছুই জানে না সেতো ভয়
পাবেই। এমনিতে পড়তে চাইনা তার ওপরে গাদা গুচ্ছের কোর্স। কি পড়বে, না
পড়বে বুঝতে বুঝতে পরীক্ষা এসে গেলো। এত দেখি পরিবর্তন
করতে গিয়ে অপবর্তন।
অন্যান্য
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখানে চালু করতে যাবো কেন? এদিকে দেশ ভক্তির গলা ফাটিয়ে আসল জায়গায় আর দেশ ভক্তি
নেই। আমাদের যা রিসোর্স আছে
সেটার ওপরে কি করা যাই
ওটাই আসল। আর বাকিটা হলো
শুধু লোক দেখানো আর ফটো তোলা।
যেটা এখন বড়ো ভাইরাস। কাজ কম দেখানো বেশি।
এখন
কলেজ গুলো এত ফাঁকা কেন??
একবার নিজেরা নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন। Syllabus এ যা আছে
সেটাকে করাতে গেলে যা যা দরকার
তার কিছুই নেই। যেমন উদাহরণ স্বরূপ.. আমি যেমন কেমিস্ট্রি এর কথা বলছি..
যেখানে lab এ সাধারণ রাসায়নিক
নেই সেই lab কে বলছে spectrophotometric analysis, HPLC ইত্যাদি ইত্যাদি। এ যেন কোনো
অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধে নেমে পড়া। আহলে তো হার নিশ্চিত
হবে..
এখন
শিক্ষা ব্যবস্থা যেন ঋতু পরিবর্তনের মতো, যখন যা মনে হলো
তাই করে দিলাম.. আসলে এটা পরিবর্তনের নামে অপবর্তন।
যাইহোক
সবাই ভালো থাকবেন। আমার কথাই কাওকে খারাপ লাগলে ক্ষমাপ্রার্থী।
এই
বিষয় নিয়ে ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা আমার সহকর্মী যারাই আছেন তাঁরা আপনাদের মতামত জানাবেন.... দিনের শেষে একটাই কথা আমরা আধুনিক হতে গিয়ে নিজেদের ভীতটাকে দুর্বল করে ফেলেছি,...
- - Sk Sarfaraj Ali