প্রকৃতিপ্রেম রচনা।প্রকৃতিপ্রেম অনুচ্ছেদ।প্রেম কি?

প্রকৃতিপ্রেম
সাদিয়া আফরিন মুক্তা

প্রেম মানে আসক্তি বা মানসিক অনুভূতি। মানুষের হৃদয়ের ভাললাগা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। যখন কোন ছেলে বা মেয়ে অন্য কোন ছেলে বা মেয়ের প্রতি আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে তখন তাকে আমরা প্রেম বলে থাকি।প্রেমের সংজ্ঞা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন রকম। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়, একটি হলো জ্ঞান এবং অপরটি হচ্ছে প্রেম।নন্দিত গল্পকার হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন,যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছুই পরিকল্পনা মতো হয়না।আর এই প্রেম যখন কোন মানুষের সাথে না হয়ে প্রকৃতির সাথে হয় তখন একে বলে প্রকৃতিপ্রেম।প্রেমে কামনার অভিসন্ধি পরিলক্ষিত কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমে আছে শুধু আনন্দ আর আনন্দ এবার জেনে নেয়া যাক প্রকৃতি আসলে কী?প্রকৃতি হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপরূপ সৃষ্টি। প্রকৃতি সাধারণত মাটি,বায়ু,আকাশ,গাছপালা,পানি,পশুপাখি, পাহাড়,পর্বত,নদী,সাগর-মহাসাগর,চাঁদ,সূর্য, গ্রহ,নক্ষত্র, তারকাপুঞ্জ, ছায়াপথ ইত্যাদি উপাদান নিয়ে গঠিত।প্রকৃতি বলতে এই পৃথিবী তথা সমগ্র সৃষ্টিকে নির্দেশ করে।প্রকৃতি হলো জাগতিক বিশ্বের মানবসৃষ্ট নয়, এমন দৃশ্য-অদৃশ্য বিষয় এবং জীবন প্রাণকে বুঝায়।অন্য অর্থে প্রকৃতি মানে বৈশিষ্ট্য। যেমন মানবপ্রকৃতি(মানুষের বৈশিষ্ট্য)।অপূর্ব এই নৈসর্গিক প্রকৃতির সাথে মানবজীবন নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।আর মানুষ জীবনযাপনের জন্যে বিভিন্নভাবে প্রকৃতির নিকট ঋণী।প্রকৃতির উপাদান মাটিতে মানুষ বসবাসের জন্যে বসতি স্থাপন করে নিরাপদে কালযাপন করে,শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্যে জীবনদায়ী অক্সিজেন আমরা বায়ু থেকে পেয়ে থাকি,পানির অপর নাম জীবন,শুধু মানুষ নয় পানি ছাড়া কোন প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, মানুষের পরম বন্ধু গাছপালা আমাদের ফুল,ফল,কাঠ,ছায়া,অক্সিজেন দেয়,এমনকি ভয়ানক সব প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। পশুপাখি পরিবেশকে সুন্দর রাখে,আর চাঁদ-সূর্যের আলো ছাড়া তো এই পৃথিবী অন্ধকার ইত্যাদি। এককথায় প্রকৃতি ছাড়া মানবজীবন অপরিপূর্ণ। শুধু যে প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয় তা নয়,আমাদের চারপাশে যে চোখ ধাঁধানো সব সৌন্দর্য্য রয়েছে তাতে মানুষ এর চেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়।এই প্রকৃতিপ্রেমের দৃষ্টান্ত  ইতিহাসে বিরল।স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু  গাছ নিয়ে ভাবতে ভাবতে একদিন বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক হয়ে যান,গাছ থেকে আপেল পড়ার দৃশ্য অবলোকন করে বিজ্ঞানী নিউটন আবিষ্কার করেন পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি।চাঁদের রূপে মুগ্ধ হয়ে মানুষ চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে,বর্তমানে  সূর্যের রহস্য উদঘাটনের জন্যে এখন সূর্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ। প্রকৃতিকে ভালবেসে মানুষ বৈষ্ণবী,বাউল,মুসাফির হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়, প্রকৃতিকে জানার প্রয়াসে ঋষি -সন্ন্যাসী হয়ে মানুষ বনে-বাদাড়ে  বা পাহাড়-পর্বতে একাকী বসবাস করে, প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে  বিভোর হয়ে মানুষ কবি,সাহিত্যিক হয়ে উঠার উদাহরণ  আমাদের সমাজে অসংখ্য অগণিত।বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ।কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। সবুজেঘেরা শস্য-শ্যামলীমায় ভরপুর এদেশের নদীনালা,খালবিল,পাহাড়,ঝর্ণা, সাগর,সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বন,দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত,বিস্তীর্ণ বেলাভূমি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইত্যাদি এর সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। একারণে যুগ যুগ ধরে দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিয়াসী লোকেরা বিলাসী সময় কাটানোর জন্যে এখানে আসেন।এদেশের সৌন্দর্য্য ঐশ্বর্যে মুগ্ধ হয়ে একসময় বিদেশী বণিক,জাতি পেশাজীবি পর্যটকদের আগমন ঘটেছে এদেশে।বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ।ছয়টি ঋতুতে এদেশের প্রকৃতি সাজে ভিন্ন ভিন্ন রূপে,রঙে কারুকাজে।তাই সারা বছর এদেশের মানুষের মন থাকে প্রাণবন্ত প্রফুল্ল। এর জন্যে এখানে কবি,সাহিত্যিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মহাকবি কালিদাসের প্রকৃতি বন্দনা রয়েছে পুরো মেঘদূত জুড়ে। জীবনানন্দ দাসের বাংলায় ফিরে আসার একমাত্র কারণ ছিল প্রকৃতিপ্রেম।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যসামরাজ্যে  প্রকৃতিপ্রেম বিশেষভাবে সমালোচিত। পরিশেষে বলা যায় প্রকৃতির কল্যাণেই আমরা চিরকাল সুখ,শান্তি সৌন্দর্য্য অনুভব করি।ভাবতে, অনুধাবন করতে,শিক্ষতে অন্যের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারি ।সুতরাং প্রকৃতি নিঃসন্দেহে  সাধনার দাবিদার।

Post a Comment