নজরুল
: বাংলা গানে গজল
আমরা
প্রায় সকলে জানি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন ইউরোপীয় সাহিত্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন , সেক্ষেত্রে নজরুল ফার্সি সাহিত্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং বাংলা সাহিত্যে এক অন্যধারা নিয়ে
এসেছিলেন অর্থাৎ বাংলায় ফার্সি সাহিত্যের ফ্লেবার । কিন্তু কোথাও
আমাদের মনে হয়নি এগুলো বিদেশি অর্থাৎ নজরুল খুব সুন্দর ভাবে এগুলোকে বাংলাকরণ করেছিলেন যারজন্য অচিরেই এগুলো বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান অঙ্গ হয়ে উঠেছিল ।
প্রসঙ্গক্রমে
বলে রাখি ছেলেবেলাতেই নজরুল তাঁর কাকা কাজী ফকিরুদ্দিন আহমেদের কাছে আরবী , ফার্সি ও উর্দু ভাষায়
তালিম নিয়েছেন অর্থাৎ তখনই এই তিনটি ভাষার
বীজ তাঁর মধ্যে রোপণ হয়ে গেছিল । পরবর্তীকালে করাচি
সেনানিবাসে অবস্থানকালে এক মৌলভী সাহেবের
কাছে ফার্সি সাহিত্য অধ্যায়ন করেন ও তখন থেকেই
তিনি ফার্সি সাহিত্যে অনুপ্রাণিত হন । পরবর্তীকালে ফার্সি কবি ওমর খৈয়াম ও হাফিজের রুবাইয়াত
বাংলায় অনুবাদ করে দুটো কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন ।
যাক এখন আসল গল্পে আসা যাক , সালটা ১৯২৫ অর্থাৎ কবির তখন বয়স মাত্র ২৬ বছর , সবে
গান রচনা করতে শুরু করেছেন । প্রথমেই নিয়ে
আসলেন বাংলায় গজল গান । কবি ও
গীতিকার দিলীপ কুমার রায় ( কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র ) নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং কবির গজল গান তৈরি ও প্রচারের ক্ষেত্রে
দিলীপ রায়ের প্রভাব ঘটেছিল । ওইসময় একদিন
কবি দিলীপ রায়ের বাড়িতে আমন্ত্রিত হলেন ও দুজনে আড্ডায়
মশগুল । তখন সেখানে
গ্রামোফোনে একটি ফার্সি গজল বাজছিল । গানটি শেষ
হলে দিলীপ রায় কবির কাছে আবদার ধরে বসলেন - কাজীদা এই ফার্সি গজলের
আঙ্গিকে তুমি আমাকে একটি বাংলা গান লিখে দাও , আমি গ্রামোফোন কোম্পানিতে রেকর্ড করবো । কবি বললেন
এই ধরনের গান অর্থাৎ গজল গান বাংলায় চলবে না , তুমি খামেখা জিদ ধরছো । উত্তরে দিলীপ
রায় বললেন - তুমি লিখে তো দাও , তারপর
আমি দেখছি । যাক কবি
বন্ধুর পীড়াপীড়িতে ও তার আবদার
ফেলতে না পেরে ফার্সি
গজলটি আরও দু'বার শুনে
কাগজ পেন নিয়ে লিখতে বসলেন বাংলায় গজল গান । সেই প্রথম
বাংলায় গজল গান নজরুলের হাত ধরে । তারপর তিনি
লিখে গেছেন প্রায় ১২০০ র উপর গজল
গান অর্থাৎ আমরা যেগুলো নজরুলের প্রেমের গান বলি সেগুলো অধিকাংশই গজল ।
সেদিন গ্রামোফোনে যে ফার্সি গজল
টি দিলীপ রায়ের বাড়িতে বেজেছিল সেটি এরূপ -
' গুলশান
কো চুম চুম কহেতি বুলবুল
রুক্সারা
সে বেদরদি বোরখা খুলখুল
হাসতি
হ্যায় হোস্তা মস্ত হো জা দোস্তা
শিরীন
সিরাজি সে হো জা
বেহুঁশ জা ... '
আর সেটি শুনে
কবি যে বাংলা গজল
গানটি লিখেছিলেন ( সুর
অপরিবর্তিত রেখে ) সেই গানটি হলো -
' ঝরা
ফুল দলে কে অতিথি
সাঁজের
বেলায় এলে কানোন বীথি
চোখে
কি মায়া ফেলেছে ছায়া
যৌবন
মদির দোদুল কায়া ... '
-সৈয়দ সওকাত হোসেন