বাস স্টপে মিনিট -পাঁচেক হাবিবুল হক চয়ন

বাস স্টপে মিনিট পাঁচেক
হাবিবুল হক চয়ন

হঠাৎ তোমাকে দেখলাম

অতি পরিচিত তবুও পরিচিত নয়

এই নান্দনিক শহরের বাস স্টপে,

মুহূর্ত কাল হয়তো  মিনিট পাঁচেক,

কিন্ত তুমি ছিলে গতকাল স্বপ্নে বহুক্ষণ,

তুমি ছিলে বিঁধে সুতীক্ষ্ম কাঁচের টুকরোর মতন,

স্বপ্নের সিন্ধুপারে ঠিক দিকচিহ্নহীন বিষুব রেখায়,

র্নিলিপ্ত সময়ের ঘড়ির ঘণ্টার কাঁটার মতন,

পঞ্চাশোর্ধ  তীর্থের এক শরীর,

 হাওয়ার ভেতরে

তোমাকে দেখেছি কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ

 স্বপ্নের নীল দুঃসময় সূতিকাগারে।

 

শুনেছিলাম তুমি নাকি গিয়েছিলে-

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে,

ফিরে এসেছো কি তবে আজ?

ঢেউহীন শব্দহীন স্বপ্নের সমুদ্র

কি যে এক ভয়ংকর রূপ তার,

মনে হলো কদিন পরেই আত্মঘাতী হবে,

হারানো আংটির মতন তুমি দূর দিগন্তে,

দুই জঙ্ঘা সমেত উরু অব্দি ডুবে ছিল

নীল জলে,

কনে দেখা আলোয় তোমাকে দেখে মনে হলো

এলোমেলো উদ্ভ্রান্ত মাতালের সঙ্গিনীর মতন,

কিন্তু তুমি একা ছিলে,

ঘোরতর স্বপ্নের বিভোরে সম্পূর্ণ একাকী।

 

এই একটি বছর আমি জেগে জেগে কাটিয়ে দেবো,

স্মৃতির সমুদ্রের জল সেঁচে  খুঁজে নেবো

জীবনে হারানো সময়ের হীরে মুক্তো মানিক,

আমি আর ঘুমাবো না এই একটি বছর,

দুঃস্বপ্ন দেখে ভোরে সিক্ত কপালের ঘাম মুছে,

প্রকাশ করবো না নিজের অযাচিত মূর্খতা,

বরং বিস্মৃতি থাকাই ভালো,

পোশাকের মধ্যে যেমন ঢেকে রাখা যায় নগ্ন শরীর লজ্জাহীনতায়,

আমি এই একটি বছর আর ঘুমাবো না,

একটি বছর স্বপ্নহীন জেগে-

পঞ্চাশোর্ধ  তীর্থের মতন

তোমার কথা ভেবে ভেবে পূর্ণ্যবান হবো।

 

বাসের জানালার কাছে তোমার সেই সহাস্য মুখ,

আজ যাই বাড়িতে আসবেন?

রৌদ্রের চিৎকারের ভেতর সব শব্দ হারিয়ে গেল,

আলো ঝলমলে দিনের কোলে নেমে এল

অমাবস্যার অন্ধকারের হীন নীচতা,

“একটু দাঁড়াও” কিংবা চলো ভার্সিটি চত্ত্বরে

নয়তো চল যাই আজ চারুকলা বকুল তলে,

মনে ভেতর থেকে কেউ যেন এই কথা বলেছিল,

ততক্ষণে উর্ধ্বশ্বাসে বাস ছেড়ে চলে গেছে

তার গন্তব্য সূদূরে,

মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল অস্ফুট নীরবতায়,

বাস স্টপের সেই মিনিট পাঁচেক,কাল স্বপ্নে তুমি ছিলে বহুক্ষণ।

________________________

©® পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত।

Post a Comment