স্বাস্থ্য সুরক্ষা রচনা।স্বাস্থ্য সচেতনতা টিপস।শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়

স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে আমার ভাবনা অভিজ্ঞতা  
নাজমুস সাকিব

পূর্বাভাস -

স্বাস্থ্য মানে শরীর মনের সুস্থতা। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী, কারো শরীর স্ফীত হলে বলা হয় যে, তার স্বাস্থ্য ফিরেছে। কিন্তু সত্যি কী তাই? অনেক সময় দেখা যায় যে, শরীরটা দেখতে চমৎকার কিন্তু হাজারো ব্যাধিতে আক্রান্ত।

স্বাস্থ্য-বোধ -

যে কখনও মারাত্মক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় নি এবং ভুগান্তির কবলে পড়ে নি, সে কখনও সুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। অসুস্থ হলে যে কী অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশার শিকার হতে হয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানে; অন্য কেউ তা অনুভব করতে পারবে না। তাই সুস্থ থাকতে থাকতে সুস্থতার বোধ অর্জন করতে পারলে অসুস্থতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

শরীর মনের একাত্মতা -

শরীর মনের সম্পর্ক নিবিড়। শরীরের মধ্যেই মনের বাস। তাই শরীর অসুস্থ হলেই মনও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ শরীর নিজের জন্য যেমন বোঝা, জগতের সকলের কাছেও তেমনই বোঝা। অসুস্থ শরীর দিয়ে না নিজের কোন কল্যাণ সাধন করা সম্ভব, আর না অন্য কারো। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের সকলেরই বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া জরুরী।

স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় সম্পর্কে আমার ভাবনা অভিজ্ঞতা -

)     নির্লোভ হওয়া -

          স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে নির্লোভ হওয়া জরুরী। কারণ নাগালের মধ্যেই রয়েছে মুখরোচক অজস্র খাবারের লোভনীয় হাতছানি! কিন্তু যেগুলো আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো যতই সুস্বাদু হোক না কেন -- তা আপনাকে এড়িয়ে চলতেই হবে।

)     রিচ ফুড এড়িয়ে চলা -

          বিশেষত বয়স বেশি হলে যত রিচ ফুড এড়িয়ে চলা যাবে,ততই মঙ্গলজনক। শরীর একটি যন্ত্র বিশেষ। তারও আছে কর্মের সীমাবদ্ধতা। যতখুশি অঢেল খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করার পূর্বে নিজের শরীরের হজমের সক্ষমতা   কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনার সচেতন থাকা জরুরি। তবেই শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব হবে।

)     ভাজা-পোড়া খাদ্য এড়িয়ে চলা -

          আপনি যত ভাজা-পোড়া খাদ্য এড়িয়ে যাবেন, ততই সুস্থ থাকার সম্ভাবনাই প্রবল। ভাজা-পোড়া খাদ্য অম্বল সৃষ্টির সহায়ক। অম্বল থেকে অজীর্ণতা পাতলা পায়খানার জন্ম। ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয় মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। তাই, শরীরকে অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করে ভাজা-পোড়া খাদ্য এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

)     পর্যাপ্ত পরিমাণে সব্জি ফল গ্রহণ -

          বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই প্রচণ্ড গরমের সময়, ভালো খাবার বলতে লোকজন ব্রয়লার মুরগির মাংসের বিরিয়ানি, অত্যন্ত ঠাণ্ডা বাজারজাত পানীয় (কোকাকোলা,স্প্রাইট,7আপ ইত্যাদি) অথবা উচ্চ মশলাযুক্ত বিয়ে বাড়ির খানা-কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এগুলি আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত। বিশেষত চর্বিযুক্ত খাবার, তেল মসলা দ্বারা গুরুপাক খাবার -- এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এইসব এর পরিবর্তে আমরা যদি শাকসবজি তরিতরকারি ভাত ডাল মাছ অতিরিক্ত মসলা ছাড়া মাংস এবং ফলমূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে শরীর সুস্থ থাকা অসম্ভব নয়।

)     স্বাস্থ্য ভালো রাখার মহৌষধ পর্যাপ্ত ঘুম -

          শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে চাই পর্যাপ্ত ঘুম। প্রতিদিন একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কমসে কম ছয় থেকে আট ঘণ্টা (যার যেমন শরীর) ঘুমানো দরকার। এই ঘুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। হজম ক্ষমতা ঠিক রাখে। শরীরের মানসিক শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সর্বোপরি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের অপর্যাপ্ত ঘুম তাকে ক্রমান্বয়ে অসুস্থ রোগীকে পরিণত করবে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে শরীরের প্রয়োজনমতো ঘুমানো জরুরী।

)     স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা -

          বাস্তব জীবনে আমি দেখেছি, খালি পেটে মর্তমান কলা খাওয়া আর বিষ খাওয়া একই ব্যাপার। কারণ খালি পেটে মর্তমান কলা খেলেই মারাত্মক এসিডিটি ফরম করে। সঙ্গে সঙ্গে বমি পায়খানা ইত্যাদি হতে পারে। আর একটা ব্যাপার হলো অনেকেই ভাবেন যে খালি পেটে ডাব খেলে নাকি খুবই ভালো। পেট ঠান্ডা করে। কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রমাণ হয়েছে যে, খালি পেটে ডাব খাওয়া বিষের মতই ক্ষতি করে। অপর্যাপ্ত জল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। অনেকে কাজের ধুমে থাকেন। সারাদিনে কমসে কম তিন চার লিটার জল খাওয়া তাদের অনেক সময় হয়ে ওঠে না। কিন্তু নিয়মমাফিক জল না খেলে কিডনি ফাংশন ঠিক থাকেনা। রক্তে জলের ভাগ কমে যায়। রক্ত চলাচলেরও সমস্যা হতে পারে।

)     শরীর সুস্থ রাখার জন্য আরো কয়েকটি বিষয় :

          )     মাঝে মাঝে কালমেঘ সেবন করা যেতে পারে। এর উপকার বলে শেষ করা যায় না।

          )     মাঝে মাঝে খালি পেটে মুড়ির সঙ্গে বা অন্য কোনোভাবে এক কুয়ো কি দু কুয়ো রসুন খাওয়া যেতে পারে। এটি সর্দি কাশি এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে কার্যকরী।

          )     সকাল বেলা খালি পেটে চা বিস্কুট না খেয়ে মৌরির পানি বা ছোলার পানি অথবা এক গ্লাস জলে আধখানা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেই পানিটা খেয়ে নেওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী।

          )     আমলকি হরিতকী বয়ড়া -এই তিনটি ফলের চূর্ণ যদি সেবন করা যায় সে এক মহৌষধ। স্বাস্থ্যের পক্ষে অসাধারণ উপকার।

           )     শরীর সুস্থ রাখার জন্য সকালবেলায় টিফিন হিসেবে ভেজানো ছোলা, আর দশটা খুরমা ভিজানো মুড়ির সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।

          )     দৈনিক মধু সেবন এর উপকার বলে শেষ করা যায় না। এক টেবিল চামচ মধু সকাল রাত্রিতে যদি সেবন করা যায় তাহলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা শরীরে অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে যদি তুলসী পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

উপসংহার -

শরীরের বড় আর কিছুই নেই। নিজের শরীর সুস্থ থাকলে পৃথিবীর সবকিছুই ভালো লাগে। নচেৎ গোটা দুনিয়া- হয়ে ওঠে বিষাদময়। তাই কিভাবে নিজের শরীর সুস্থ রাখবো সেটা নিজেকেই ঠিক করতে হবে। অসুস্থ হয়ে ঘরে বসে থাকবে রোজগার বন্ধ হলে বাড়ির কেউ তোমায় ক্ষমা করবে না। কারণ তোমার উপর নির্ভর করছে গোটা পরিবার। পরিবার গুলোর উপর নির্ভর করে গ্রাম। গ্রামের উপর নির্ভর করে অঞ্চল। এইভাবে হিসাব করে দেখলে তোমার উপর গোটা পৃথিবী কিনতে নির্ভরশীল। আর তুমিও নির্ভরশীল গোটা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের উপর। পৃথিবীর সব মানুষ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাহলে কে কী করবে! গোটা সমাজটাই পঙ্গু হয়ে যাবে! এইজন্য চাই সুস্বাস্থ্য, সুখাদ্য। আর এই স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেসব নিয়মকানুন মানা প্রয়োজন তা আমাদের মেনে চলা একান্তই দরকার। কেননা শরীর অসুস্থ তো গোটা দুনিয়া আমার কাছে নীরস দুঃখ-ঘন। তাই আসুন, স্বাস্থ্যরক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য রক্ষায় মনোযোগ দিই। হলে নিজে বাঁচব এবং জগৎ বাঁচবে। রক্ষা পাবে তামাম সভ্যতা।

Post a Comment