সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা রচনা।সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা প্রবন্ধ

সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা
সাদিয়া আফরিন মুক্তা

পৃথিবী নশ্বর,মানুষ নহে অমর।আর এই নশ্বর পৃথিবীটা সত্য-মিথ্যা,আলো-অন্ধকার,সুন্দর -অসুন্দর, সৎ-অসৎ, ন্যায়-অন্যায়,খাঁটি-ভেজাল,ভালো-মন্দ, সাধু-অসাধু ইত্যাদি এই দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত। আলোর পাশে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি সত্যের পাশে চিরকাল মিথ্যার অবস্থান বিদ্যমান।তবে মিথ্যার বেসাতি বা বেড়াজাল  যত বড়ই হউক না কেন,কিন্তু অবশেষে সত্যের জয় অবসম্ভাবি।ইংরেজি প্রবাদে আছে,Honesty is the best policy.অর্থাৎ সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।আসলে বাস্তব জীবনেও তাই।সততা পরম ধন,একটি বিমূর্ত ধারণা। তবে এটি একটি কাঙ্খিত ইতিবাচক প্রত্যয়।মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণের স্বরূপ।সততা অর্থ সাধুতা,সত্যবাদীতা,সরলতা,অকপটতা।সাধারণ অর্থে সততা বলতে সাধুতা বা সত্যবাদীতাকে বুঝায়।সততা সম্পর্কে থমাস জেফারসন বলেছেন,সততা হলো জ্ঞানের বইয়ের প্রথম অধ্যায়।উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন, সততা হলো সেরানীতি। আমরা যদি আমার সম্মান হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো।কথায় আছে,সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস করে।কেন না সত্য চিরকাল কাঁচের মতো স্বচ্ছ, ঝকঝকে আর মিথ্যা অতি নগণ্য।মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব বটে কিন্তু একটা সময় সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে যায় অর্থাৎ এই জন্ম মৃত্যুর কালসমুদ্রে মানুষ একটি ভাসমান তৃণ।আর জন্ম-মৃত্যুর মধ্যকার সময়টুকু যারা সত্য ন্যায়ের পথে ব্যয় করে তারাই জীবনে সফল সার্থক।আর যারা লোভ বা ভুলের বসতি হয়ে মিথ্যার পথে পা বাড়ায় তারা জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না।নিজ লক্ষ্যে যদি কেউ পৌঁছেও যায়, তথাপি তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না।কেন না মিথ্যাবাদীকে কেউ পছন্দ করে না,সম্মান করে না বরং সকলে তাকে ঘৃণা করে।অপরপক্ষে সত্যবাদী চিরদিন সম্মানের পাত্র,বিশ্বস্ত সকলের ভালোবাসা পছন্দের পাত্র।এজন্যে যেকোন দেশের শাসক,রাজনীতিবীদ,ব্যবসায়ী,সমাজতান্ত্রিক, শিক্ষাসহ সকল প্রকার পেশাদারী ব্যক্তিবর্গদের সৎপথ অবলম্বন করা উচিত। কেননা এতে দেশ দশের মঙ্গল নিহিত।আমাদের মহানবী(সা:)ছিলেন সত্যের এক মূর্ত পথিক। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খুবই নম্র-ভদ্র, শান্ত,সত্যবাদী উত্তম চরিত্রের অধিকারী।তাঁর সত্যবাদীতায় মুগ্ধ হয়ে তখনকার আরববাসীরা তাঁকে আল-আমীন বা বিশ্বাসী বলে ডাকতো।১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে মাত্র একটা মিথ্যার কারণে বাংলার উদীয়মান সূর্য সেদিন অস্তমিত হয়েছিল।একমাত্র সততার কারণেই আমেরিকা বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সর্বউন্নত সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে আজ বিশ্বরাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়ার সাহস ক্ষমতা অর্জন করেছে।

ইতিহাসে আছে,অগ্নিবীণার কবি কাজী নজরুল ইসলাম খুবই দরিদ্র লোক ছিলেন।হাজার দুঃখকষ্টে দিনযাপন করলেও কখনো কবি এই দারিদ্রতার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়  কোন অসৎপথ অবলম্বন করেননি।অতএব, যেকোন দেশ, রাষ্ট্র জাতির উন্নয়ণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সততা এবং মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা সত্যহীনতার পরিণাম হয় খুবই ভয়াবহ মর্মান্তিক। সত্যহীনতার কারণে রক্তের বন্ধনও ছিন্ন হয়ে যায়, আপন বন্ধু হয়ে যায় শত্রু,ভালবাসার সম্পর্কে ধরে ফাটল, আত্নীয়ের সম্পর্ক আর সম্পর্ক থাকে না ইত্যাদি। আজকের দিনে সৎ-অসৎ, সুন্দর -অসুন্দর, ভালো-মন্দ ইত্যাদির মধ্যকার পার্থক্য যেমন একাকার হয়েগেছে। তেমনি একজন সৎ মানুষ সমাজের দুর্লভ।সততার গুণ অর্জন ছাড়া মানুষ পশুতে রূপান্তরিত হয়।তাই মানবজীবন চলার পথে সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা বা নীতি এতে কোন সন্দেহ নেই।

Post a Comment