পৃথিবীতে কয়টি মহাকাব্য আছে।মহাকাব্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি।মহাকাব্য কয়টি

হাকাব্য প্রধানত দুই প্রকার। এক- জাত মহাকাব্য (Authentic Epic) দুই - সাহিত্যিক মহাকাব্য (Literary Epic)। যুগে যুগে বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা লেখকের হাত ধরে সর্বশেষ একজনের মাধ্যমে যে বৃহৎ কাব্যে একটি জাতির নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য শিল্পরূপ লাভ করে তা-ই জাত মহাকাব্য। রামায়ণ, মহাভারত, The Iliad, Odyssey এই শ্রেণির মহাকাব্য।

আমাদের পৃথিবীতে মোট চারটি মাত্র মহাকাব্য আছে। রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড ও ওডিসি। এদের আদি মহাকাব্যও বলা হয়। রামায়ণ ও মহাভারত এই দুটি মহাকাব্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো। কোন তথ্য জানা থাকলে জানাবেন। সংযোজন করে দেব।

1. সংস্কৃত সাহিত্যে কোন দুটি গ্রন্থকে এপিক বলা হয়?

উঃ রামায়ণ ও মহাভারত।

2. ‘রামায়ণ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় কর।

উঃ রাম + অয়ন (আশ্রয়) অর্থাৎ রাম+ষ্ণায়ন+ক্লীবলিঙ্গের একবচনে ‘রামায়ণম’ হয়েছে। অর্থ হল রামকে অধিকার করে কৃত গ্রন্থ।

3. আদিকবি নামে কে পরিচিত? তার গ্রন্থের নাম কি?

উঃ বাল্মীকি, তার লেখা গ্রন্থের নাম হল রামায়ণ।

4. রামায়ণের কয়টি কাণ্ড? কী কী?

উঃ ৭ টি। যথা- বালকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড, উত্তরকাণ্ড।

5. রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা কত?

উঃ ২৪০০০ টি।

6. রামায়ণের প্রথম শ্লোকটি উল্লেখ কর।

উঃ মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।

যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবকধীঃ কামমোহিতম।।

7. রামায়ণের কটি সংস্করণ পাওয়া যায়?

উঃ ম্যাকডোনাল্ড এর মতে রামায়ণের তিনটি সংস্করণ পাওয়া যায়। ১। পশ্চিম ভারতীয় বা কাশ্মীরী সংস্করণ ২। বঙ্গদেশীয় সংস্করণ ৩। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্করণ।

8. হিন্দু মতানুসারে রামায়ণের কয়টি অধ্যায়?

উঃ ৫০০ টি অধ্যায়।

9. রামায়ণ অবলম্বনে রচিত ভাসের নাটকগুলির নাম লেখ।

উঃ প্রতিমা, অভিষেক।

10. রামায়ণ অবলম্বনে রচিত ভবভূতির নাটকগুলির নাম লেখ।

উঃ মহাবীরচরিত, উত্তররামচরিত।

11. রামায়ণের কাহিনী অবলম্বনে রচিত সংস্কৃত মহাকাব্যগুলির নাম লেখ।

উঃ রঘুবংশ- কালিদাস,

ভট্টিকাব্য- ভর্ত্তৃহরি,

জানকীহরণ-কুমারদাস,

রামচরিত-সন্ধ্যাকর নন্দী,

রামচরিত-অভিনন্দ,

সেতুবন্ধ’-প্রবর সেন,

রামাভ্যুদয়-নরসিংহ,

জানকীজীবন-ডঃ রাজেন্দ্র মিশ্র

ভারতী শবরী মহাকাব্য-জগন্নাথ সরকার।

12. পালি ভাষায় রচিত কোন কোন প্রাচীনগ্রন্থে রামায়ণের কাহিনীগুলি বর্ণিত আছে?

উঃ পালি জাতকের কাতক কত্থবন্ননা, এবং সুত্তপিটকের খুদ্দকণিকায়।

13. প্রাকৃত ভাষায় রচিত কোন কোন প্রাচীনগ্রন্থে রামায়ণের কাহিনীগুলি বর্ণিত আছে?

উঃ বিমলসুরির ‘পউচরিঅ’, গুকণভদ্রের ‘উত্তর পুরাণ’, হেমচন্দ্রের ‘ত্রিষষ্টিসলাকাপুরুষ’ ও ‘সীতারাবণ কথানক’, জিনদাসের ‘রামদেবপুরাণ’, ভীমদাসের ‘রামচরিত’, বিজয় গণির ‘রামচরিত’, সোমপ্রভের ‘লগুত্রিষষ্টিসলাকাপুরুষ’ প্রভৃতি গ্রন্থে।

14. থাইল্যাণ্ড ও মালয়েশিয়ার রামায়ণ কাহিনী কী নামে পরিচিত?

উঃ থাইল্যাণ্ডের রামায়ণ কাহিনী ‘রাম কিয়েন’ ও মালয়েশিয়ার রামায়ণ কাহিনী ‘হিকাকত শেরিরাম’।

15. বাল্মীকি রচিত রামায়ণের কয়েকটি প্রসিদ্ধ টীকাকারের নাম উল্লেখ করে তাদের টীকাগুলির নাম লেখ।

উঃ রামানুজ- রামানুজীয় টীকা,

বিদ্যানাথ দীক্ষিত- রামায়ণ দীপিকা,

বেঙ্কট কৃষ্ণাধবরী- সর্বার্থসার,

ঈশ্বর দীক্ষিত- বৃহদ্বিবরণ ও লঘুবিবরণ,

গোবিন্দরাজ- রামায়ণভূষণ,

মাধবযোগী- রামায়ণ কথক।

16. বাল্মীকির রামায়ণ অবলম্বনে রচিত চারটি রামায়ণের নাম লেখ।

উঃ অধ্যাত্ম রামায়ণ, অদ্ভুত রামায়ণ। যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণ ও আনন্দ রামায়ণ।

17. রামায়ণে কোন বংশীয় রাজাদের কাহিনী বর্ণিত আছে?

উঃ ইক্ষ্বাকু বংশীয়।

18. সীতাকে জানকী বলা হয় কেন?

উঃ সীতা মিথিলার রাজা জনকের কন্যা ছিলেন বলে সীতাকে জানকী বলা হয়।

19. রামায়ণ মহাকাব্যে নায়ক ও নায়িকা কে?

উঃ নায়ক শ্রী রামচন্দ্র ও নায়িকা সীতা।

20. সীতা শব্দের অর্থ কী?

উঃ সীতা শব্দের অর্থ লাঙলের ফলা। সীতা লাঙলের ফলায় উঠেছিলেন বলে তার সীতা নাম রাখা হয়েছে।

21. কে বাল্মীকিকে কোন ছন্দে রামায়ণ রচনার নির্দেশ দেন?

উঃ দেবর্ষি নারদ অনুষ্টুপ ছন্দে বাল্মীকিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

22. ব্রহ্মাণ্ডপুরাণের অন্তর্গত কোন রামায়ণ?

উঃ অধ্যাত্ম রামায়ণ।

23. রামায়ণ অবলম্বনে রচিত চম্পূকাব্যগুলির নাম লেখ।

উঃ ভোজরাজের চম্পূরামায়ণ, চক্রকবির লেখা জানকীপরিণয়।

24. রামায়ণ অবলম্বনে বাংলাভাষায় রচিত কয়েকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম লেখ।

উঃ কৃত্তিবাসের রামায়ণ, অদ্ভুত আচার্যের অদ্ভুত রামায়ণ, রামশঙ্করের রামায়ণ, চন্দ্রাবতীর রামায়ণ, গিরিশ্চন্দ্রের সীতাহরণ, রাবণবধ, লক্ষ্মণবর্জন, দিজেন্দ্রলাল রায়ের পাষাণী ও সীতা, মধুসূদন দত্তের মেঘনাথবধ কাব্য, রবীন্দ্রনাথের কালমৃগয়া, বাল্মীকি প্রতিভা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সীতার বনবাস প্রভৃতি।

25. নারদ শব্দের অর্থ কী?

উঃ নারদ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল যিনি অজ্ঞান (নার) দূর করে জ্ঞান দান করেন।

26. মহর্ষি বাল্মীকি কে?

উঃ বাল্মীকি হল প্রচেতার দশম পুত্র। ব্রহ্মাণ্ডপুরাণের মতে তিনি চ্যবনের পুত্র। তিনি জগতের আদিকবি এবং রামায়ণের রচয়িতা।

27. বাল্মীকি নাম হল কেন?

উঃ কবি প্রথম জীবনে দস্যু রত্নাকর ছিলেন। ব্রহ্মার কঠিন তপস্যা করার সময় তার সমস্ত শরীর বল্মীক বা উইঢিবিতে ঢেকে যায় তাই তিনি বাল্মীকি নামে পরিচিত।

28. রাম শব্দের অর্থ কী?

উঃ তিলক টীকায় বলা হয়েছে যোগীরা যাতে আনন্দ পায় তিনিই রাম। ভূষণ টীকায় বলা হয়েছে গুণরাজির দ্বারা যিনি সকলকে আনন্দ দেন তিনিই রাম। শিরোমণি টীকায় বলা হয়েছে অপরিমিত দান অথবা কর্ম, ভক্তি ও জ্ঞানযোগীরা যেখানে প্রীতি লাভ করেন তিনিই রাম।

29. রামের সঙ্গে সীতার বনে গমনকে কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উঃ পৌরাণিক কাহিনী রোহিণীর (নক্ষত্রের) সঙ্গে স্বামী চন্দ্রের তুলনা করা হয়েছে।

30. গুহকের সঙ্গে লক্ষ্মণ, সীতাসহ রাম কোথায় গিয়েছিলেন?

উঃ চিত্রকুট পর্বতে।

31. রামচন্দ্র দণ্ডকারণ্যে কোন কোন ঋষির সঙ্গে দেখা করে কী কী মূল্যবান অস্ত্র লাভ করেন?

উঃ ঋষি শরভঙ্গ, সুতীক্ষন, অগস্ত্য ভ্রাতা ইধ্মবাহ এবং পূজ্য অগস্ত্যের সঙ্গে দেখা করে অগস্ত্যের আদেশে ঐন্দ্রধনু, খড়্গ, অক্ষয়বাণ ও দুটি তূণীর গ্রহণ করেন।

32. দণ্ডকারণ্যে রাম-লক্ষ্মণ কাদের হত্যা করেন?

উঃ শূর্পনখার নাক কেটে বিকৃত করে দেন ,এবং বিভিন্ন রাক্ষস যেমন খর, ত্রিশরা, দূষণ সহ মোট ১৪০০০ রাক্ষস বধ করেন।

33. সীতার খোঁজে হনুমান কার কথায় কী করেছিলেন?

উঃ শকুনি সম্পাতির কথায় শত যোজন বিস্তীর্ণ সমুদ্র পার হয়ে লঙ্কায় গিয়েছিল।

34. রামচন্দ্র কত বছর রাজত্ব করেন?

উঃ নারদের মতে রামচন্দ্র ১০ হাজার ১০ শত বছর অর্থাৎ ১১০০০ হাজার বছর রাজত্ব করে ব্রহ্মলোকে যাবেন।

35. মহর্ষি বাল্মীকি কখন কোথায় ক্রৌঞ্চমিথুন কে দেখলেন?

উঃ একদিন মহর্ষি স্নানে এসে তমসা নদীর তীরে নির্ভীকভাবে বিচরণশীল নয়নাভিরাম দুটি ক্রৌঞ্চ পাখির যুগ্মরূপ দর্শন করলেন।

36. বাল্মীকি ব্যাধকে কেন এবং কী অভিশাপ দিলেন?

উঃ স্ত্রীর সঙ্গে সম্ভোগরত অবস্থায় ক্রৌঞ্চকে হত্যা করা এবং ক্রৌঞ্চীর করুণ বিলাপ শুনে শোকে কাতর মহর্ষি ব্যাধকে অভিশাপ দেন সে কখনো প্রতিষ্টা লাভ করতে পারবে না ( মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ)

37. রামায়ণ সম্পর্কে ব্রহ্মা কী ভবিষ্যৎবাণী করেন?

উঃ যতদিন ধরাতলে পর্বতরাজি ও নদীসমূহ থাকবে ততদিন সপ্তলোকে রামায়ণ কথা প্রচলিত থাকবে।

38. গুহক কে? রামের সঙ্গে তার কোথায় সাক্ষাৎ হয়েছিল?

উঃ নিষাদরাজ গুহক হলেন সিংহবেরপুরের রাজা। রামের সঙ্গে তার গঙ্গাতীরে সাক্ষাৎ হয়।

39. কবন্ধ কে?

উঃ কবন্ধ হল বিকৃত রূপধারী ভয়ঙ্কর রাক্ষস।

40. রামচন্দ্রের ভগিনীর নাম কি ছিল?

উঃ শান্তা।

41. অদ্ভুত রামায়ণ কয়টি কাণ্ডে বিভক্ত?

উঃ ২৭ টি।

42. যোগবাশিষ্ট রামায়ণে কটি প্রকরণ আছে ? কী কী? প্রত্যেকটি প্রকরণে সর্গ সংখ্যা কত?

উঃ ৬ টি প্রকরণ – বৈরাগ্য প্রকরণ (৩৩ সর্গ), মুমুক্ষ ব্যবহার প্রকরণ (২০ সর্গ), উৎপত্তি প্রকরণ (১২২ সর্গ), স্থিতি প্রকরণ (৬২ সর্গ), উপশম প্রকরণ (৯৩ সর্গ) ও নির্বাণ প্রকরণ (৩৪৪ সর্গ)।

43. যোগবাশিষ্ট রামায়ণে শ্লোক সংখ্যা কত?

উঃ মোট শ্লোক সংখ্যা ২৭৬৮৭।

44. তত্ত্বসংগ্রহ রামায়ণ কার লেখা?

উঃ ব্রহ্মানন্দ কবির।

45. মহাভারতে রামকাহিনী কী নামে পরিচিত?

উঃ মহাভারতের শান্তিপর্বে রামায়ণ কাহিনী ‘ভার্গব গীত’ নামে পরিচিত।

46. বাল্মীকি স্বয়ং তার রামায়ণকে কোন শ্রেণীর রচনা বলে উল্লেখ করেছেন?

উঃ সংহিতা, আখ্যান, পুরাবৃত্ত, ইতিহাস ও কাব্য রূপ্র উল্লেখ করেছেন।

47. মহাভারত কোন ভাষায় রচিত?

উঃ সংস্কৃত ভাষায়।

48. মহাভারতের রচয়িতা কে?

উঃ ব্যাসদেব।

49. মহাভারতের ভাগগুলিকে কী নামে অভিহিত করা হয়? এদের সংখ্যা কত?

উঃ ‘পর্ব’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এদের সংখ্যা ১৮ টি।

50. মহাভারতের কয়টি পর্ব ও কী কী?

উঃ ১৮ টি পর্ব। সেগুলি যথাক্রমে – আদিপর্ব, সভাপর্ব, বনপর্ব, বিরাটপর্ব, উদ্যোগ পর্ব, ভীষ্ম পর্ব, দ্রোণ পর্ব, কর্ণ পর্ব, শল্য পর্ব, সৌপ্তিক পর্ব, স্ত্রী পর্ব, শান্তি পর্ব, অনুশাসন পর্ব, অশ্বমেধিক পর্ব, আশ্রমবাসিক পর্ব, মৌষল পর্ব, মহাপ্রস্থানিক পর্ব, স্বর্গারোহন পর্ব।

51. ভিন্টারনৎস এর মতে মহাভারত কয় শ্রেণীর রচনায় সমৃদ্ধ ও কী কী?

উঃ তিন শ্রেণীর। সৌতি রচনা, ব্রাহ্মণরচনা ও ভিক্ষু বা শ্রমণগণের রচনা।

52. কাকে কেন শতসাহস্রী সংহিতা বলা হয়?

53. উঃ মহাভারতকে শতসাহস্রী সংহিতা বলা হয়। যেহেতু মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা শত সহস্র বা একলক্ষ। তাই এই মহাকাব্যকে শত সাহস্রী সংহিতা বলা হয়।

54. মহাভারতের অপর নাম কী?

উঃ ভারত সংহিতা।

55. মহাভারত রচনার কয়টি স্তর ও কী কী?

উঃ তিনটি স্তর।

জয় – শ্লোকের সংখ্যা ৮৮০০

ভারত – শ্লোক সংখ্যা ২৪০০০

মহাভারত – ১,০০০০০।

56. ভারত ও মহাভারতের উল্লেখ কোথায় আছে?

উঃ আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্রে।

57. মহাভারতের কোন পর্বে শ্রীমদ্ভাগবদ গীতা আছ?

উঃ ভীষ্ম পর্বের ২৫ থেকে ৪২ অধ্যায়ে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা।

58. মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত ভাসের নাটকগুলির নাম লেখ।

উঃ কর্ণভাত, দূতবাক্য, দূতঘটোৎকচ, মধ্যম ব্যায়োগ, ঊরুভঙ্গ, পঞ্চরাত্র, বালচরিত।

59. মহাভারতের কোন কোন পর্বে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের উল্লেখ আছে?

উঃ কর্ণ, ভীষ্ম, দ্রোণ, শল্য, সৌপ্তিক ও স্ত্রী পর্বে।

60. মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত সংস্কৃত মহাকাব্যগুলির নাম লেখ।

উঃ মাঘ – শিশুপালবধ

ভারবি – কিরাতার্জ্জুনীয়ম্‌

শ্রীহর্ষ – নৈষধচরিত

ক্ষেমেন্দ্র – ভারত মঞ্জরী

61. মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা কত?

উঃ এক লক্ষ।

62. মহাভারতের কয়েকজন টীকাকারের নাম করে তাদের টীকাগুলির নাম লেখ।

উঃ দেববোধের - উত্তান দীপিকা

অর্জুন মিশ্রের - অর্থদীপিকা

নীলকণ্ঠের - ভারতভাব প্রদীপ

হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীষের - ভারত কৌমুদী।

63. শ্রীমদ্ভাগবদ গীতা কী?

উঃ শ্রীমদ্ভাগবদ গীতা ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের ২৫ থেকে ৪২ অধ্যায়। এটি ১৮ টি অধ্যায়ে নিহিত এবং ৭০০ শ্লোক সমন্বিত। জ্ঞান, কর্ম ভক্তির সমন্বয় সাধন এখানে আলোচিত হয়েছে।

64. গীতার অধ্যায়গুলির নাম লেখ।

উঃ গীতার অধ্যায় সংখ্যা ১৮। সেগুলি হল – অর্জুন-বিষাদযগ, সাংখ্যযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, সন্ন্যাসযোগ, ধ্যানযোগ, জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগ, অক্ষরব্রহ্মযোগ, রাজবিদ্যা রাজগুহ্যযোগ, বিভূতিযোগ, বিশ্বরূপদর্শনযোগ, ভক্তিযোগ, ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ, গুনত্রয়বিভাগযোগ, পুরুষোত্তমযোগ, দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ, শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ ও মুখ্যযোগ।

65. মহাভারতের অন্তর্গত অন্যতম দার্শনিক গ্রন্থটি কী?

উঃ শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা।

66. হরিবংশ কী?

উঃ হরিবংশ হল ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের খিল বা পরিশিষ্ট অংশ। এটি খিলপর্ব নামে পরিচিত।

67. হরিবংশ পুরাণে শ্লোকের সংখ্যা কত?

উঃ ১৬৩৭৪ টি।

68. হরিবংশ পুরাণে কয়টি পর্ব ও কী কী?

উঃ তিনটি পর্ব। হরিবংশপর্ব (৫৫ টি অধ্যায়), বিষ্ণুপর্ব (১২৮ টি অধ্যায়) ও ভবিষ্যপর্ব (১৩৫ টি অধ্যায়)।

69. গীতার শ্লোক সংখ্যা কত?

উঃ ৭০০ টি।

70. হরিবংশ পুরাণে অধ্যায় সংখ্যা কত?

উঃ ৩১৮ টি।

71. মহাভারতে পাঠপ্রণালী কয় প্রকার ও কী কী?

উঃ দুই প্রকার। উত্তর ভারতীয় ও দক্ষিণ ভারতীয়।

72. মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত কয়েকটি নাটকের নাম উল্লেখ কর।

উঃ ভাস – দূতঘটোৎকচ, কর্ণভার, দূতবাক্য, মধ্যমব্যায়োগ, উরুভঙ্গ ও পঞ্চরাত্র।

কালিদাস – বিক্রমোর্বশীয়ম্‌ ও অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‌।

রাজশেখর – বালভরত।

বৎসরাজ – সমুদ্রমন্থন।

73. মহাভারত অবলম্বনে রচিত চম্পূকাব্যগুলির নাম লেখ।

উঃ ত্রিবিক্রমভট্ট বা সিংহাদিত্যরচিত নলচম্পূ ও অনন্তভট্টের ভারতচম্পূ।

74. মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত কতকগুলি বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের নাম লেখ।

উঃ কাশীরাম দাস – মহাভারত (ভারত পাঁচালী)

কবীন্দ্র পরমেশ্বর – পাণ্ডববিজয়।

শ্রীকর নন্দী – অশ্বমেধ কথা।

75. বাংলা সাহিত্যে মহাভারত নিয়ে রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখ।

উঃ মধুসূদন – বীরাঙ্গনা ও শর্মিষ্ঠা।

হেমচন্দ্র – বৃত্রসংহার কাব্য।

গিরিশ ঘোষ – পাণ্ডববিজয়, পান্ডবের অজ্ঞাতবাস ও জনা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – চিত্রাঙ্গদা, কর্ণকুন্তী সংবাদ ও গান্ধারীর আবেদন।

নবীনচন্দ্র সেন – রৈবতক।

ব্রজেন্দ্রনাথ দে – গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম।

বিদ্যাসাগার – শকুন্তলা।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – কৃষ্ণচরিত্র।

76. মহাভারতের মুখ্যরস কী?

উঃ মুখ্যরস-শান্ত, বীররস এর অঙ্গীরস।

77. মহাভারতের বীজ কী?

উঃ ঋগ্বেদে সংবাদ সূক্ত, আখ্যান সূক্ত এবং নারাশংসী।

78. মহাভারতের ভূমিকায় দেখা যায় ব্যাসদেব স্বয়ং তার পাঁচ শিষ্যকে পাঠ বা আবৃত্তি শিক্ষা দেন-সেই পাঁচ শিষ্যের নাম কী?

উঃ সুমন্ত, জৈমিনি, পৈল, বৈশম্পায়ন, শুক।

79. মহাভারতের ১৮ টি পর্বে মোট কটি অধ্যায় আছে?

উঃ ১৮ টি পর্বে মোট ১৯২৩ টি অধ্যায় আছে।

80. মহাভারতের পঞ্চম পর্বের নাম কী? এই পর্বের অধ্যায় ও শ্লোক সংখ্যা কত?

উঃ পঞ্চম পর্বের নাম উদ্যোগপর্ব। অধ্যায়ের সংখ্যা ১৭৬ টি। শ্লোক সংখ্যা ৬৬৯৮ টি।

81. কোন তিন প্রকার দোষ ভয়ঙ্কর ও কেন?

উঃ পরধন হরণ, পরস্ত্রী ধর্ষণ ও বন্ধুবর্জন, কারণ এগুলি ব্যক্তির বিনাশ ডেকে আনে।

82. কোন দুপ্রকার ব্যক্তি লোকের বিশ্বাসভাজন হয়?

উঃ যে স্ত্রী কান্তকেই কামনা করে এবং যে পুরুষ নিজের বুদ্ধি ছাড়া পূজিত ব্যক্তিকে পূজা করে। এরা পরের উপর বিশ্বাস করে থাকে।

83. উন্নতিকামী ব্যক্তির পক্ষে কোন ছয়টি দোষ পরিত্যাগ করা উচিত?

উঃ নিদ্রা, তন্দ্রা, ভয়, ক্রোধ, আলস্য এবং দীর্ঘসূত্রতা।

84. ‘পঞ্চাগ্নোয় মনুষ্যেণ পরিচর্য্যাঃ প্রযত্নতঃ’-পাঁচটি অগ্নি কী কী?

উঃ পিতা, মাতা, অগ্নি, আত্মা ও পুত্র।

85. ‘দ্বাবিমৌ পুরুষৌ রাজন’-বিদুর এই দুপ্রকার পুরুষ সম্বন্ধে কী বলেছেন?

উঃ যিনি শক্তিশালী হয়েও ক্ষমাবান এবং যিনি দরিদ্র হয়েও দানশীল, এই দুইপ্রকার পুরুষ স্বর্গেরও উপরে থাকে।

86. কোন সাতটি ব্যাসন রাজার ত্যাগ করা উচিত?

উঃ স্ত্রীসম্ভোগ, দ্যূতক্রীড়া, মৃগয়া, মদ্যপান, বাক্‌পারুষ্য, দণ্ডপারুষ্য এবং অর্থদূষণ।

87. নিত্য সুখী কারা?

উঃ নিরোগ, নির্ভয়ে বসবাসকারী, স্বাধীন জীবিকা সম্পন্ন ব্যক্তি, সজ্জন সংসর্গকারী, অপ্রবাসী এবং অঋণী-এই ছয় প্রকার ব্যক্তি।

88. নিত্য দুঃখী কারা?

উঃ ঘৃণাপরায়ণ, ঈর্ষাপরায়ণ, কোপনস্বভাব, অসন্তোষপরায়ণ, নিত্য আশঙ্কাপরায়ণ এবং পরভোগ্য উপজীবী-এই ছয় প্রকার ব্যক্তি।

89. কোন ছয়টি গুণ কখনো ত্যাগ করা উচিত নয়?

উঃ সত্যপরায়ণতা, অসূয়াশূন্যতা, আলস্যহীনতা, দান, ক্ষমা এবং ধৈর্য – এই ছয়টি গুণ।

90. কোন আট প্রকার গুণ মানুষকে প্রফুল্ল রাখে?

উঃ বুদ্ধি, সত্য, ইন্দ্রিয়দমন, শাস্ত্রজ্ঞান, পরাক্রম, মিতভাষিতা, যথাসাধ্য দান, কৃতজ্ঞতা – এই আটটি গুণ।

91. কোন দুজন পুরুষ জনসমাজে শোভিত হয় না?

উঃ নিশ্চেষ্ট গৃহস্থ ও ধর্মতৎপর ভিক্ষু।

92. কাকে কেন পঞ্চমবেদ বলা হয়?

উঃ মহাভারতকে। কারণ – কালক্রমে বৈদিক সাহিত্য জনগণের কাছে কঠিন হয়ে পরে, তখন ইতিহাস ও পুরাণের মাধ্যমে বেদার্থ বোঝার ব্যবস্থা হয়। ইতিহাস ও পুরাণকে পঞ্চমবেদ বলা হত কারণ এগুলিতে সকলের সমান অধিকার ছিল, বেদে ছিল না। বিবিধ কাহিনীযুক্ত ও ইতিহাস, পুরাণের লক্ষণযুক্ত মহাভারতকে তাই পঞ্চমবেদ বলা হয়।

93. মহাভারতের প্রসিদ্ধ বাঙালী টীকাকার ও তার টীকার নাম লেখ।

উঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ, তাঁর টীকার নাম ভারতকৌমুদী।

94. মহাভারতের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ টীকার নাম কী? তার রচয়িতা কে?

উঃ ভারতভাবদীপ, টীকাকারের নাম নীলকন্ঠ চতুর্ধুরী।

95. মহাভারতের সবচেয়ে প্রাচীন টীকার নাম ও কাল উল্লেখ কর।

উঃ পরিব্রাজক দেববোধ বা দেবস্বামী রচিত উত্তানদীপিকা বা জ্ঞানদীপিকা। একাদশ শতাব্দীতে রচিত বলে মনে হয়।

96. হরিবংশের কাহিনী কে কাকে শুনিয়েছেন?

উঃ বৈশম্পায়ন মহারাজ জনমেজয়কে শুনিয়েছেন।

সংগৃহীত ও সংযোজিত


Post a Comment