মানবজীবনে কৃষি ও শিল্পের গুরুত্ব
নাজমুস সাকিব
(কবি-সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, গীতিকার)
ভূমিকা
:-
মানবজীবনে কৃষি এবং শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম । কৃষি ছাড়া
শিল্প অচল, শিল্প ছাড়া সভ্যতা অচল । কৃষি হলো
সভ্যতার বুনিয়াদ । অন্যদিকে শিল্প
হলো সভ্যতার পরিপূরক ।
মানব
জীবনে কৃষির অবদান :-
মানব জীবনে চাষ-বাসের গুরুত্ব যে সীমাহীন তা
আর বলার অপেক্ষা রাখে না । বেঁচে
থাকার জন্য মানুষের যে সকল অত্যাবশ্যকীয়
জিনিসের প্রয়োজন হয়, তার সিংহভাগই আসে কৃষি থেকে । অন্ন, বস্ত্র,
বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের অবদান অনস্বীকার্য । ধান, গম,
যব, ভুট্টা, সর্ষে, আখ, তিসি, সূর্যমুখী, শাকসবজি, ফলমূল -- আমাদের
খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে । কার্পাস তুলো,
শিমুল তুলো প্রভৃতি গাছের তুলো থেকে স্বাস্থ্যসম্মত সুতির জামা-কাপড় তৈরি করা যায় । কী
গগণচুম্বী ইমারত, কী পর্ণকুটির -- সব
ক্ষেত্রেই গাছের অংশ বা গাছ নির্মাণোপকরণ
। স্বাস্থ্য রক্ষায় কৃষির অবদান অসামান্য । সুস্থ শরীরে
বেঁচে থাকার জন্য চাই রোগ-নিরাময়যোগ্য ওষুধ । আর তা
আসে উদ্ভিদ থেকেই । এডুকেশন সিস্টেমটাই
অকেজো হয়ে পড়তো কাগজ আবিষ্কার ব্যতীত । আর ঐ
কাগজের মূল উপাদানও আসে সেই কৃষি থেকেই । চাষবাস শুধু
যে আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে তা নয় -- এর
ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে । অর্থাৎ প্রাণিজগতের
বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন
হয়, তা গাছেরাই সরবরাহ
করে । তারাই পরিবেশকে
উষ্ণতর হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ।
মানব জীবনে শিল্পের গুরুত্ব :-
কৃষির মতই শিল্পও মানব জীবনে সমান গুরুত্বের দাবী রাখে । শিল্প না
হলে হাজার হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচবে না । তারা
কোথায় কাজ করবে ? সেজন্য চাই শিল্প-কারখানা । চাই উৎপাদন
-- যা বেচে মালিকও উপকৃত হবে এবং শ্রমিক তার শ্রমের বিনিময়ে নগদ অর্থ পাবে । ফলে সমাজের
মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচবে । এ জন্য
কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প এবং বৃহৎ শিল্প -- সবরকম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে মানুষের কাজ পেতে সহায়ক হয় । আজ কোটি
কোটি মানুষ বেকার । উপযুক্ত অর্থ,
অর্থাৎ সংসার সাবলীলভাবে চালানোর মতো অর্থ, রোজগারের ক্ষেত্র তারা পাচ্ছে না । তাই
দেশের মানব-সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারার কারণে
তারা বিপদে পরিণত হচ্ছে । যদি উপযুক্ত
শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায় এবং অর্থকরী শিল্পোৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয় -- তাহলে দেশের জনগণ আর দেশের জন্য
বোঝা হয় না । কিন্তু
রাজনীতিকগণ সেদিকে অল্প-ই নজর দিয়ে
থাকেন, যদিও দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক তারাই ! তাই, দেশ ও সমাজের উন্নয়ন
করতে সংকীর্ণ রাজনৈতিক চিন্তা ছেড়ে লাভজনক শিল্পে মনোনিবেশ করা দরকার ।
কৃষি
ও শিল্প পরস্পরের পরিপূরক :-
কৃষি এবং শিল্পের মধ্যে সম্পর্ক ওতপ্রোত এবং নিবিড় । এদের একটি
ব্যতীত অন্যটি অচল । বিশেষত কৃষি-নির্ভর শিল্প কৃষি উৎপাদন ছাড়া চলতেই পারে না । যেমন-
চিনি শিল্প, চাউল শিল্প, রবার শিল্প, তৈল শিল্প, বিড়ি শিল্প, কাতাদড়ি শিল্প, বস্ত্রশিল্প, পাট শিল্প ইত্যাদি । এই সমস্ত
শিল্প কৃষিজাত পণ্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল । অনেক কুটির
শিল্প আছে যার কাঁচামাল আসে কৃষিজাত দ্রব্য থেকেই । যেমন- ঝোড়া-ঠ্যাঁকা শিল্প, ঘুনি-মুগরি শিল্প, ছই শিল্প, পাখা
শিল্প ইত্যাদি । আবার কৃষিও
শিল্পের দ্বারা প্রভাবিত । লৌহ ইস্পাত
শিল্পের দ্বারা বর্তমানে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত । পূর্বতন গোরু-টানা লাঙলের স্থলে চাষের ক্ষেত্রে এসেছে কলের লাঙ্গল ট্রাক্টর -- যা পুরোপুরি লৌহ
নির্মিত । ধান গম
ইত্যাদি শস্য কর্তন করতে লোহার তৈরি কাস্তের দরকার হয় । এছাড়া নিড়ানি-যন্ত্র, ধান ঝাড়াই মেশিন -- সবই তো লৌহ-শিল্পের
অবদান ।
উপসংহার
:-
তাই মানব জীবনে কৃষি-শিল্প কোনটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়
। উর্বর জমি, যেখানে যে চাষ ভালো
হয়, সেখানে শিল্প না করে সেই
চাষ করাই লাভজনক । এতে চাষী
বাঁচবে । চাষী বাঁচলে
কৃষি সমৃদ্ধ হবে । কৃষির সমৃদ্ধিতে
শিল্পো সমৃদ্ধ হবে । ফলে অর্থনীতি
চাঙ্গা হবে । মানুষ স্বনির্ভর
হবে । অন্যদিকে যেখানে
যে শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর, সেখানে সেই শিল্প গড়ে তোলা-ই বুদ্ধিমানের কাজ
। তাতে মানুষের কর্মসংস্থান হবে । কোনো স্থানে
কৃষি ও শিল্প -- দুটোরই
সম্ভাবনা থাকলে, দেখতে হবে কোনটি সামগ্রিক বিচারে বেশি ফলদায়ী এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গাকারী । সেইমতো কৃষি
অথবা শিল্প গড়তে হবে । তাহলেও বেরোজগারী
দূরীভূত হবে । মানুষ দুমুঠো
অন্নের সংস্থান করতে সক্ষম হবে । মানুষের দারিদ্র্য
দূরীভূত হবে । মানুষ স্বস্তির
হাসি হাসতে পারবে।
