স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রচনা।মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

স্বাধীনতার তাৎপর্য কোথায়
রেশমা

একটি স্বাধীনতা অর্জন একটি বিস্ময়কর ঘটনা। একটি ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতা অর্জনকারী বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা একটি লাল সবুজের পতাকা বিশ্ব মানচিত্রে এঁকে দিয়েছি।

স্বাধীনতা পেলাম আমরা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে,

কিন্তু আজ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতার যথার্থ মূল্যায়ন করতে! এরকম বহুবিধ প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিবেকের দর্পণে।

লাখো প্রাণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, রক্তে রঞ্জিত আমাদের এই পতাকা---যার দৃষ্টান্ত বিশ্বের কম জাতির আছে। এক বিজয়ী জাতি হিসাবে গৌরবের দিক্ নিশানা জ্বালিয়েছি বিশ্ব দরবারের বুকে।

স্বাধীনতা আমাদের অফুরন্ত দানে সমৃদ্ধ করেছে, অনেক ঋণে ঋণী হয়েছি আজ আমরা কিন্তু যথার্থ অর্থে প্রশ্ন আসে আমরা কি কিছু দিতে পেরেছি? দেওয়ার পালা যে শূন্যের কোঠায় তাও বলা সমীচিন নয়; তারপরও মানসপটে উদ্ভাসিত হয় সময় তো অনেক হয়েছে তবু কেন এত অসঙ্গতি, এত অসহনীয় সামাজিক কাঠামো!

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের সর্ব সার্বিক

স্তরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে, যা ঘুণপোকার ধ্বংসের ন্যায় জাতির মেরুদণ্ডকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

দৃষ্টি যেদিকে যায় সেদিকে চোখে ভাসে কত অনাহত, বীভৎস, বিকৃত দুঃখজনক চিত্র। যুবসমাজের প্রতি শিরায়, ধমনীতে মূল্যবোধের ধ্বংসস্তূপ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, কত আর দেখবো রক্তের হোলিখেলা, হানাহানি, উশৃংখল অসঙ্গতির চিত্রসম।

স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা দুর্মূল্য ত্যাগের বিনিময়ে কিন্তু আজও সমাজে শ্রেণী বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে যার প্রতিফলনে সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নারী সমাজের অবস্থা- পরিমণ্ডল আরো নিদারুণ, করুণ বিপর্যস্ত রুপরেখায় পর্যবসিত হচ্ছে, আর কত কিশোরী ধর্ষণ- ব্যভিচার, শ্লীলতাহানি দেখতে হবে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।তনু দের তালিকা আর যেন বৃদ্ধি না পায় মিনতি করছি সর্বস্তরের জনগণের সমীপে।

আজও হয়নি জাতীর মেরুদন্ড শিক্ষা ব্যবস্থার সুনিদৃষ্ট, পুনর্গঠিত পুনঃবিন্যাস, সুরাহার পথ কি নেই কোন?

এই সর্ববৃহৎ অধ্যায়ের অমীমাংসিত প্রশ্নে জাতি আজ দুদুল্যমান পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা কি তাহলে ধাপে ধাপে হোঁচট খাচ্ছে? এরকম নানাবিধ প্রশ্নের বানে জর্জরিত হচ্ছে প্রতিদিন অন্তর্দৃষ্টি।

দুর্নীতির সর্ব গ্রাসী আগ্রাসন গিলে ফেলছে সমাজ কাঠামোর আপাদমস্তক। এই চরম মূল্যবোধের দুর্গতি থেকে বের হওয়ার পথ কি আমরা দেখছি না? অবশ্যই এর সমাধান প্রয়োজন অবিলম্বে, অন্যথায় জাতি হিসাবে গৌরবের উচ্চশিখরে অধিষ্ঠিত হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

বেকারত্বের তালিকায় আমরা চ্যাম্পিয়ন! কম্পিত একটি সমাজ অবকাঠামো বহন করছি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ধাপ গুলি সমান্তরালে আসছে না কেন??

যদিও বিভিন্ন স্কিম এর মাধ্যমে সমাজের বেকারত্ব হ্রাসের প্রচেষ্টা হচ্ছে কিন্তু জনসংখ্যার গানিতিক হিসাবে আজকেও সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।

বিভিন্ন বিশ্লেষণে পরিলক্ষিত হয় দুর্নীতি চূড়ান্ত শিখরে প্রতিটি শাখায় শাখায় অভিশাপ হয়ে ধরা দিয়েছে।

জাতির কপালে কলঙ্ক টিকা এঁকে দিয়েছে দুর্নীতির অভিশাপ।

স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা, রজত জয়ন্তী পালন করবো আর কিছুকাল সময় পর কিন্তু হতদরিদ্র জনসংখ্যার

দুর্ভাগ্য গোছানোর কোন সমাধান বৃহৎ অর্থে দেখতে পাচ্ছি না। এর অসঙ্গতির পশ্চাতে শ্রেণী বৈষম্যের কারণ উদ্ভাসিত হয়।

তাহলে কি আমরা দুর্লভ মহা-অর্জন স্বাধীনতার মূল্যায়নকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলছি?

শিক্ষাঙ্গনের বীভৎস চিত্র, দৃশ্যপট ভাসলে খেই হারিয়ে ফেলি আমরা কি স্বাধীন একটি জাতি? এত রক্তপাত হিংস্রতা বীভৎসতা কেন? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বাতলানো অনতিবিলম্বে আবশ্যক। ছাত্ররাই জাতির মেরুদন্ড তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সুসংগঠিত কাঠামোর মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে, অন্যথায় মহান অর্জিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হতে পারে।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের উত্থান কিভাবে হল? এর মুল শিকড়ে অনুসন্ধানের জন্য পৌঁছাতে হবে আমাদের সর্বশক্তি সামর্থ্য নিয়ে।

এসব অনাহত অসংশোধিত ঘটনা প্রবাহের কারণে বিশ্বের দরবারে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা নত হয়ে আসছে। সম্মান গৌরবের স্থানটি ম্লান হয়ে যাচ্ছে দিনে

 দিনে।

সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য আমরা জঙ্গী প্রতিরোধ এবং নিধনের ক্ষেত্রে বহুলাংশে প্রশংসনীয় অর্থের সফল হয়েছি।

অবশ্যই একটি সম্মানের জায়গায় আমরা পৌঁছেছি স্বাধীন জাতি হিসেবে কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় আমাদের সফলতা অনেকাংশে দুর্বল ম্লান হয়ে পড়ছে ক্রমান্বয়ে।

আমরা বিজয়ের জাতি; আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচবো, এই প্রত্যাশায় আমাদেরকে মহান মূল্যে অর্জিত স্বাধীনতাকে সঠিক অর্থে মূল্যায়ন করতে হবে।

স্বাধীনতা অর্জন যত কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।

আমরা বিজয়ের জাতি-- আমরা কোনো প্রতিকুলতা, বাধাবিঘ্ন দেখলে পরাভুত হবো না, জয় আমাদের সঠিক অর্থে ছিনিয়ে আনতে হবে।দৃঢ় সংকল্পতার মাধ্যমেই সকল অনিশ্চয়তা, প্রতিবন্ধকতাকে আমরা অতিক্রম করবো। স্বাধীন জাতি হিসেবে এটাই আমাদের অস্থিমজ্জায় মূলমন্ত্র হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেন আমরা সর্বক্ষেত্রে সর্ব পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার মূল্য অক্ষত রাখতে পারি।


ঢাকা, মোহাম্মদপুর,

বাংলাদেশ।

Post a Comment