ক্ষুদিরাম বসু রচনা ।ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কেন হয়েছিল।ক্ষুদিরাম বসু জীবনী

প্রবন্ধ :- "অগ্নিশিশু শহীদ ক্ষুদিরাম বোস "
লেখক :- গোপাল চন্দ্র মুখার্জী

                        ###

/১২/১৮৮৯ দেশের জন্য বলিপ্রদত্ত এক বীরশিশু, যিনি নিজেকে সহাস্য উৎসর্গ করলেন ফাঁসির দড়িতে, সেই আত্মত্যাগী বীর শহীদ ক্ষুদিরাম বোসের আজ জন্মদিন। তাই,আজ বীর শহীদ ক্ষুদিরাম বোসকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে অর্পণ করলাম সশ্রদ্ধ প্রণাম।

  দেশকে পরাধীনতার কারণে লজ্জ্বার গ্লানী থেকে মুক্ত করার জন্য এক স্বাভিমানী বালকের ভারতীয় স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় যোগদান এবং সেই জন্য ফাঁসির সাজা মাথায় নিয়ে সহাস্য ফাঁসির মঞ্চে জীবন বলিদান দিয়ে শহীদ হলেন এক বালক ক্ষুদিরাম বোস, এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে স্তম্ভিত হল সারা বিশ্ব সংসার! দেশের জন্য বালক ক্ষুদিরামের জীবন উৎসর্গ করার ঘটনায় উৎপ্রেরিত হয়ে অদম্য গতিপ্রাপ্ত করেছিল দেশের স্বতন্ত্রতার আন্দোলন। স্রেফ তাই নয়, বালকের জীবন উৎসর্গ এবং দেশে পরিব্যাপ্ত উগ্র আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকারকে কুন্ঠিত,ভয়ভীত এবং লজ্জিত হতে হয়েছিল। জীবন পল্লবিত হবার পূর্বমুহুর্তে দেশপ্রেমের যজ্ঞে মাত্র প্রায় ১৯ (১৮ বছর মাস দিন) বছরের অসামান্য দুঃসাহসিক দেশপ্রেমী বালকের ভয়শূন্য হয়ে ফাঁসির সাজাকে বরণ করে ফাঁসির দড়িতে সহাস্য মৃত্যু বরণ করে জীবন উৎসর্গ করাতে সম্পুর্ণ ভারত তথা বিশ্বে সমালোচিত হয়ে নিন্দিত হতে হয়েছিল ভারত শাসনকারী ব্রিটিশ সরকারকে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সম বালক ক্ষুদিরামের জীবন আহুতির কারণে ব্রিটিশ সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছিল যে কোন বিচার বিমর্ষ না করেই যে কাউকে যখন খুশী দেশদ্রোহী ঘোষণা করতে আরম্ভ করল। এমন কি খেলাধুলা করে এমন বয়সের বাচ্চাদের বাদ দিল না। এরকম অমানবিক কর্মকান্ডের ফলে সম্পূর্ণ ভারত অশান্ত হয়ে উগ্র স্বতন্ত্রতার আন্দোলনে উত্তাল তথা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। ভারতের সুপুত্র এবং বাংলার গৌরব বীর শহীদ ক্ষুদিরামের স্মরণে কবির হৃদয় গেয়ে উঠেছিল গান,রচিত হয়েছিল কত ছড়া!

   ক্ষুদিরামের বাল্যকালেই মা এবং বাবার স্বর্গবাস হবার কারণে অনাথ শিশুকে তাঁর বড়দিদির আশ্রয়ে লালিত পালিত হতে হয়েছিল। দেশপ্রেম এবং রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বালক ক্ষুদিরামের জীবন অধ্যয়নে পরিলক্ষিত হয়, যে কারণে বালক ক্ষুদিরাম নবম শ্রেণীতেই অধ্যয়নের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, বালক ক্ষুদিরাম মাত্র ১৩/১৪ বছর বয়সেই মহান বিপ্লবী ঋষি অরবিন্দ ঘোষ এবং ভগিনী নিবেদিতা অংশ নিতেন এমন গোপনীয় বিপ্লবী সভায় ভাগ নিতেন। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আয়োজিত সভা এবং মিছিলে বালক ক্ষুদিরাম সক্রিয় অংশগ্রহণ করে নির্ভীকভাবে প্রচার করতেন এবং শ্লোগান দিতেন। মহান বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথের অনুগামী নির্ভিক ক্ষুদিরাম স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় ভাগ নিয়ে " বন্দে মাতরম" এবং "সোনার বাংলা" ইত্যাদি নামে বৈপ্লবিক বিষয় সংক্রান্ত পমপ্লেট এবং পোষ্টার বিতরণ বা প্রচার করতেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে উনি পুলিশ স্টেশনে বোম রাখেন। সক্রিয় সদস্যতা গ্রহণ করেন বিপ্লবী সংস্থা " রিব্যুল্যাশনরি পার্টি" ,"তে। ১৯০৬ সালে ওনাকে দুইবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। প্রথমবার তো যাহোক পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হলেন বালক ক্ষুদিরাম, কিন্তু, দ্বিতীয়বার পুলিশ ওনাকে গ্রেফতার করেও সাবধানবাণী দিয়ে ছেড়েদিতে বাধ্য হল কারণ, প্রথমত নাবালক এবং দ্বিতীয়ত সাক্ষীর অভাব। তবুও আন্দোলের অভিযান থেকে বিরত হলেন না ভয়শূন্য বীর বালক ক্ষুদিরাম। ১৯০৭-০৮ সালে ইংরেজ শাসনের উপর দ্বিতীয়বার বোমার হামলা করেই ছাড়লেন ক্ষুদিরাম। 

  ইংরেজ প্রশাসনের বঙ্গভঙ্গ নীতির মত ক্রুর নীতির বিরোধে প্রতিবাদকারীদের উপর নির্মম অত্যাচারকারী এবং কঠিণ দণ্ডাধিকারী ম্যাজিস্ট্রেট ছিল কিংসফোর্ড। এই কিংসফোর্ড কে হত্যা করতে পণবদ্ধ হলেন বিপ্লবী দল।

              এদিকে,নিষ্ঠুর অত্যাচারী কিংসফোর্ডের কার্যপ্রাণালীতে প্রসন্ন ইংরেজ সরকার কিংসফোর্ডকে সত্ৰ ন্যায়াধীশের পদে পদোন্নত করে মুজফ্ফরপুরে পদস্থ করল।

  সেই অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে মৃত্যুদন্ড দেবার গুরুদায়িত্ব নিলেন বালক ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকী, বাংলার দুই বীর বিপ্লবী আত্মত্যাগী সন্তান। কিন্তু, ওনাদের ছোঁড়া বোমার হামলায় বেঁচে গেল অত্যাচারী কিংসফোর্ড। দুর্ভাগ্যবশত: মারা গেল দুইজন নির্দোষ বিদেশী মহিলা।

   এই ঘটনায় মর্মাহত বীর বিপ্লবী প্রফুল চাকী নিজে নিজেকে গুলিবিদ্ধ করে আত্মহত্যাকরে বীরগতি প্রাপ্ত করে শহীদ হলেন, কিন্তু,দুর্ভাগ্য, পুলিশের হাতে ধরাপরে গেলেন বালক ক্ষুদিরাম বোস।

নির্দয়, ত্রাসীত ইংরেজ শাসন বা বিচার ব্যবস্থা বালক ক্ষুদিরাম কে ফাঁসির আদেশ দিল। নির্ভিক দেশপ্রেমী বালক ক্ষুদিরাম! এই নিষ্ঠুর আদেশের কোনও প্রভাবই প্রভাবিত করতে পারল না বীর বালক ক্ষুদিরামকে! ১১/০৮/১৯০৮ তারিখে হাস্যমুখে বরণ করে নিলেন ফাঁসির ফাঁসকে মাল্যরূপে!

এই ঘটনায় বিস্মিত, শোকার্ত হয়ে হতবাক হল সম্পূর্ণ ভারত তথা বিশ্ব। নিন্দিত হয়ে তিক্ত আলোচনার সম্মুখ হল ব্রিটিশ সরকার।

 উগ্র থেকে উগ্রতর হয়ে উঠল স্বাধীনতার বৈপ্লবিক আন্দোলন। নির্ভিক কবি কন্ঠ গেয়ে উঠল প্রচুর দেশভক্তিমূলক গান। ভয়ভিত হল ব্রিটিশ প্রশাসন, উগ্র হল জনান্দোলন।

 জয়তু: বীর শহীদ ক্ষুদিরাম বোস।

  বন্দেমাতরম, জয় হিন্দ।


Post a Comment