মহাযোগী বাবা লোকনাথ
গোপাল চন্দ্র মুখার্জী
আধুনিক
বিজ্ঞান অথবা যান্ত্রিক যুগে যেখানে লোকে বিনা যুক্তি প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুকেই সহজে মানতে রাজী হয় না অথবা
বিশ্বাস মোটেই করে না। সেই তাদের জন্য বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর নামই একটা বিস্ময়! ! যাঁর বয়সও একটা নিদর্শন! , বাবার জন্ম ১৭৩০ খ্রী. এবং তিরোভাব ১৮৯০ খ্রী. মোট ১৬০ বছর। লোকনাথ বাবার কাছে জগতের সকলেই ওনার সন্তান, কোন জাত পাত উঁচু নীচুর ভেদাভেদী নেই। তাই তো বাবা তাঁর
মহানির্বাণের সময় সন্তানদের উদ্দেশ্য করে অভয় দিয়ে বলেছেন "আমি নিত্য জাগ্রত"। "তোদের সুখেই সুখী, তোদের দুঃখেই দুঃখী"। "আমার বিনাশ নেই, আমি অবিনশ্বর। আমি আছি -আছি -আছি"। শুধু তাই
নয়, উনি আরও বলেছেন "শুধু সুখের সময় নয়, রণে বনে,জলে,জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিও। আমিই রক্ষা করিব"। যেটা আজকের
দিনেও চরম সত্যি, মানুষের অভয় মন্ত্র! এখনও দেখা যায় - যদি সত্যি সত্যি মন দিয়ে বাবা
লোকনাথকে স্মরণ করা যায়, অকাট্য সত্যি এটাই যে তৎক্ষণিক বিপদ
থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। ভক্তিভরে বিশ্বাস করে কেবল মাত্র নাম স্মরণ করাতেই এই ফল পাওয়া
যায়। যেটা আধুনিক যুগেও একটা আশ্চর্য্য সত্যি অথবা চমৎকার! !
ত্রিকালদর্শী
মহাযোগী বাবা লোকনাথ মাত্র ১১ বছর বয়সে
সন্যাস গ্রহণ করেন। তখন থেকেই আরম্ভ হয় তাঁর কঠিণ
ব্রহ্মচর্য্য , দীর্ঘ উপবাসের , সাধনা , হঠযোগের সাধনা। হিমালয়ের প্রান্তরে দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে
কঠোর সাধনা করে আয়ত্ব করলেন ভক্তিযোগ , কর্মযোগ ,জ্ঞানযোগ আদি এবং উপলব্ধ করলেন যোগের পরম তত্বকে। শুধু হিন্দু ধর্মই নয় মক্কা ও
মদিনা ভ্রমণের সময় মুসলমান ধর্মের জ্ঞানী মোল্লার কাছে পবিত্র কোরান সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান অর্জন করে কাশী ফিরে এলেন এবং কিছু দিন পর চলমান শিব
তৈলঙ্গ স্বামীর সঙ্গে আরব , ইসরাইল , আফগানিস্তান হয়ে ইউরোপ আদি দেশ এবং বিশ্ব পরিক্রমা করে দেশে ফিরে এলেন।
মহাযোগী
লোকনাথ বাবার কীর্তির অথবা অলৌকিক প্রভাবের ক্ষমতার লোক পরিচিতি হল বারদী গ্রামে
(বাংলাদেশ) এসে। একবার কিছু ব্রাহ্মণ পৈতেতে ( যজ্ঞ উপবিতে ) গ্রন্থী দিতে গিয়ে জট পাকিয়ে ফেলেন।
কিছুতেই জট ছাড়াতে পারছিলেন
না। তখনি বাবা লোকনাথ মাত্র গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতেই মুহূর্তে
খুলে গেল সেই জট! সেই থেকেই বাবা প্রসিদ্ধ হয়ে গেলেন বারদী গ্রামে। শুধু তাই নয় , আজকের দিনেও মানুষ এর জীবনে যত
জটীল জট আছে , সব
মহানাম স্মরণ করলেই খুলে যায়। এটা একটা আশ্চর্য্য সত্যি!
অনেক
আশ্চর্য্য ছিল বাবার মধ্যে, যেটা সাধারণত বিরল!বাবার চোখদুটি ছিল অদ্ভুত!
ওনার
এক চোখের (ডান চোখ) দৃষ্টি উর্দ্ধ মুখী এবং অন্য চোখের (বাম চোখ) দৃষ্টি নিন্ম মুখী! অতি আশ্চর্য্য! এর মানে , বাবা
এক চোখে উর্দ্ধলোক দর্শন করছেন এবং অপর চোখে নিম্ন অর্থাৎ মর্তলোকে কৃপাময় দৃষ্টি প্রদান করে অহরহ জীব জগতের কল্যাণ করছেন!
জয়
বাবা লোকনাথ॥
মহাযোগী বাবা লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবসে বাবার শ্রীচরণে প্রণাম এবং শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করছি॥