স্বাধীনতা দিবসের কবিতা। স্বাধীনতার নতুন কবিতা।২৬ শে মার্চ এর কবিতা

তেজস্বী বীর
ফারুক আহম্মেদ জীবন 

আমি আজ কাব্যের ভাষায় 
শ্রদ্ধা ভক্তি আর নিবেদিত গভীর ভালোবাসায়
বিশ্বজয়ী এক নেতার কথা বলবো,
বলো, শুনবে কি তোমরা..? 
আমি আজ এক তেজস্বী বীর বিপ্লবী ছেলের
ইতিহাস তুলে ধরতে কলম ধরবো।
হ্যাঁ, আমি লিখবো আমাকে যে লিখতেই হবে
ইতিহাসটাকে জাগ্রত রাখতে,
আগামীর নবীন প্রজন্মের মাঝে তা ছড়াতে।
বলো, বলো, শুনবে কি তোমরা...?
তাহলে সব শোন বলছি....
১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে রক্তক্ষয়ী সেই পলাশীর প্রান্তে 
নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ে
স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য হয়েছিল যা চির অস্তমিত,
তা- প্রায় দুইশত বছর হয়েছিল দীর্ঘায়িত।
তারপর...একসময় বৃটিশ শাসন অবসানের পর
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির কারণে
ভারতবাসীরা স্বাধীনতার নব্য আস্বাদন পেলেও
উদিত হলেও তাদের স্বাধীনতার সূর্য 
সে আস্বাদন মেলেনি পূর্ব বঙ্গবাসী বাঙালীদের
সে আলোর বিকিরণ ঘটেনি পূর্ব বাংলায়,
তখনো আঁধারে নিমজ্জিত বাংলা পরাধীনতায়।
আর তারপর...তারপর...এক সময়
পশ্চিম পাকিস্তান আর এই পূর্ব বাংলার অখণ্ডে
গোপালগঞ্জের টুংঙ্গী পাড়ার ভূখণ্ডে
স্বাধীনতা পুনরুজ্জীবিত করতেই জন্ম নিয়েছিল 
শেখ মুজিবুর রহমান খোকা নামের ছেলে,
যে পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলে
সেসময় বহুবার গিয়েছিল জেলে।
যার বজ্র কন্ঠে বেজে উঠেছিল স্বাধীনতার ডাক
তারই নেতৃত্বে নেমেছিল জনতার ঢল
দল বেঁধে বাংলার দামাল বাঙালী নও জোয়ানরা 
২৬শে মার্চে পড়েছিল যুদ্ধে ঝাপায়,
সুদীর্ঘ নয় মাস অস্ত্র শক্তি আর কৌশল বুদ্ধি বলে
পশ্চিমা খানেদের পরাস্ত করে 
১৬ই ডিসেম্বরে লাভ করেছিল কাংক্ষিত বিজয়।।

তাং-১৯/৩/২০২৪/ইং

হে স্বাধীনতা!
ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।


স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে

তিরিশ লক্ষের খুনে,

স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে

মুজিবের কন্ঠ শুনে !

স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে

গীতা কুরআন চুমে,

স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে

ধানক্ষেতে শিশুর ঘুমে !

তোমায় পেতে হলো কত মা

স্বামী সন্তান হারা,

তোমায় পেতে নববধূর

মেহেদী রক্তের ধারা !

তোমায় পেতে কাঁধে তুলে নিলো

রাইফেল স্টেন এসএলআর,

তোমায় পেতে রাত কাটালো

মা বোনেরা ক্ষেতখামার  !

তোমার জন্য মসজিদ মন্দিরে

ধর্ষিত হলো মা-মেয়ে,

সতীত্ব রক্ষায় রেহাই পেলো না

উপসনালয় আশ্রয় নিয়ে  !

তোমার জন্য কত কিশোর

গ্রেনেড তুলে নিলো হাতে,

নিক্ষেপ করলো জান্তার ক্যাম্পে

নির্ভয়ে আঁধার রাতে  !

স্বাধীনতা তোমায় রুখতে পারে নাই

"টিক্কার" অপারেশন সার্চ লাইট,

সেচ্ছায় দিলো না মাগো তোমায়

আনতে হলো করে ফাইট!

স্বাধীনতা তোমায় আনতে হলো

মা-বোনের ইজ্জত দিয়ে,

ইজ্জত, রক্তে কিনেছি তোমায়

যেতে পারবে না কেউ কেড়ে নিয়ে !

স্বাধীনতার খোঁজে
মোঃ রেজওয়ান রাফি

ভয় করোনা ওগো মুসলিম,

বিজয়ের নিশান উড়াবেই একদিন৷

এগিয়ে যাও দুর্বার গতিতে,

ভরে যাবে কাফেলা সাথীতে।

জালিমের জুলুম আর সইবোনা,

হাত গুটিয়ে ঘরে রইবোনা।

বন্দী থাকবোনা আর পরাধীনতায়,

বাঁচবো এবার উচ্চ-শিরে স্বাধীনতায়।

অধিকার আদায়ে নেই ভয়,

সত্যের হবেই হবে জয়।

ভেঙ্গে ফেলো শত্রুর আবাসন,

ছিনিয়ে নাও নিজেদের সিংহাসন।

 

স্বাধীনতার ডাক
মোহাম্মদ আককাস আলী

পাকিস্তানের জুলুম নির্যাতর অত্যাচারের বিরুদ্ধে

মুক্তির সংগ্রামে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান;

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।

সেই ডাকে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে

সাংবাদিক,পুলিশ,শিল্পী,অভিনেতা

দেশ প্রেমিকেরা এসেছিল ছুটে

লাল সবুজের পতাকা না নিয়ে ফিরবে না তারা ঘড়ে।

ঘরে শত্রুু বাহিরে শত্রুু

চারিদিকে দানবদের অট্রহাসি

সব কিছু পেরিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা

ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতার যুদ্ধে।

মা-বোনের সম্ভ্রম  হারিয়ে ছিলো

রক্তের বন্যা বইছিলো,তবুও থামেনি তারা

ছিনিয়ে এনেছিলো বিজয়,

উপহার দিয়েছিলো লাল সবুজের পতাকা সারভৌমত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ।

ছেলে হারা দুঃখনি মায়ের কান্না

ইজ্জত হারা মেয়ের হতাশার কান্না

সব কিছু ভুলে মা এখন হাসে

লাল সবুজের পতাকা নিয়ে।


স্বাধীনতার জন্মদিন
সৈয়দ সওকাত হোসেন


স্বাধীনতার জন্মদিন

স্বাধীনতা , সবাই বলছে

তোমার নাকি আজ জন্মদিন

সবাই পরেছে আজ তিরাঙ্গা

তবে তুমি কেনো আজ নাঙ্গা ...

দেখো দেখো

কত রঙ বেরঙের বেলুন নিয়ে এসেছে

শুধু তোমারই জন্যে

তবুও তোমার মুখ কেনো পানসে ...

দেখো দেখো

লাল নীল আবির উড়ে আকাশে

শুধু তোমরই জন্যে

তবুও তোমার চোখটা আজ ফ্যাকাশে ...

তোমার নগ্ন বুকে দাঁড়িয়ে

দেশপ্রেমের সুরা পিয়ে

সমস্বরে গাই তোমারই গুনগান

তারা নাকি তোমারই সন্তান ...

দুঃখ করো না , আজকের রাতটা

তোমার কোলেই মাথা রেখে ঘুমাবো

নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে

তোমার মুখে একমুঠো হাসি ফোটাবো ...

একরত্তি ছেলেটা হাতে পতাকা নিয়ে

মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠে

মা , ও মা , আমার স্বাধীনতা চাই না

চাই শুধু এক মুঠো গরম ভাত ... ।।


শৃংঙ্খ‌লিত স্বাধীনতার আর্তনাদ
মনোয়ারুল মিনা

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মাথা মু‌ড়ি‌য়ে ঘোল ঢে‌লে যা‌দের এ‌দেশ থে‌কে তা‌ড়ি‌য়ে দি‌তে ব‌লে‌ছি‌লেন-

তা‌দের দোসররা আজও বহাল ত‌বিয়্য‌তে বিচরণ কর‌ছে প্রগ‌তিশীল আর দেশ‌প্রেমের তকমা গা‌য়ে এ‌কে।

৪৭, ৫২, ৬৯ কিংবা ৭১ আগষ্ট বিপ্লব ‌কিংবা ৭ই ন‌ভেম্বর - কি দি‌য়ে‌ছে আমা‌দের?

এ প্রশ্নের জবাব লেখা আ‌ছে আমার নিভারন জননীর ছেড়া কাপ‌ড়ের ভা‌জে,

লেখা আ‌ছে অনাহার ক্লীষ্ট অকাল বিধবা বো‌নের অর্ধ উলঙ্গ শরী‌রের পর‌তে পর‌তে,

লেখা আ‌ছে ক্ষুধার যন্ত্রনা মেটা‌তে আস্তাকু‌ড়ে কুকুর মানু‌ষে কাড়াকা‌ড়ি নারকীয় দৃশ্যপ‌টে আর কলাপাতার কাফ‌নে আবৃত আমার সন্তা‌নের নি‌র্লিপ্ত ঘৃনাকাতর চো‌খের আখ‌ড়ে।

দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রম আর ত্রিশ লক্ষ শহী‌দের র‌ক্তের ফসল দাবী করা হ‌লো যে স্বাধীনতা‌কে-

সেই র‌ক্তের দাগ মুছ‌তে না মুছ‌তেই দেশ শাস‌নের না‌মে বুভুক্ষ জনতার মু‌খের গ্রাস কে‌ড়ে নি‌য়ে রাতারা‌তি বিত্তশালী হ‌য়ে উঠ‌লো-

যারা গণতন্ত্র আর সমাজত‌ন্ত্র প্রতিষ্ঠার শপথ বাক্য উচ্চারন ক‌রে‌ছিল ভার‌তের কা‌ছে স্বাধীনতা বন্ধক রে‌খে।

যখন বঙ্গভু‌মির সাত কো‌টি নিরন্ন মানু‌ষের ভাগ্য লি‌খিত হয় সাম্রাজ্যবা‌দের দেয়া ভিক্ষার খাতায়,

যখন গ্রাম বাংলার কো‌টি কো‌টি ব‌ুভুক্ষ মানু‌ষের ছিন্ন ভিন্ন না‌ড়ি টে‌নে ছি‌ড়ে খায় সম্প্রসারনবাদী ভয়ঙ্কর শুকু‌নেরা-

তখন তারা নগ‌রে পাশ্চাত্য সংস্কৃ‌তি চর্চায় নিমগ্ন থা‌কে।

আ‌মি হতবাক হইনা জয়নু‌লের দু‌র্ভি‌ক্ষের চিত্র দে‌খে,

ব্য‌থিত হইনা বাসন্তীর জাল দি‌য়ে সম্ভ্রম লু‌কি‌য়ে রাখা দে‌খে,

আ‌মি থ` ব‌নে যাই খন্দকার ই‌লিয়াস সা‌হে‌বেরা যখন জাতির পিতার গুণ কির্তন ক‌রে বিশাল গ্রন্থ রচনার মধ্য দি‌য়ে।

আতঙ্কগ্রস্থ হই সিরাজুল আলম খান সা‌হে‌বেরা যখন দিল্লীর দরবা‌রে দস্তখত দি‌য়ে এ‌সে স্বাধীন বাংলার মা‌টি‌তে বৈজ্ঞা‌নিক সমাজতন্ত্র কা‌য়ে‌মের সানাই বাজায়।

আগষ্ট বিপ্লব বা ৭ই ন‌ভেম্বর কম হাসায়‌নি, কম কাঁদায়‌নি!

সদ্য স্বাধীন ব‌াংলা‌দে‌শে একজন নি‌র্লোভ সৎ জিয়ার রুশ-ভারত বি‌রোধী বিপ্লব বিপ্লব খেলার মা‌ঝে যে মশকরা ছি‌ল, তাও আর গোপন থা‌কে‌না।

যখন দে‌খি জিয়া সা‌হে‌বের বিপ্লবী পোষা‌কের ধুম্র ছায়ার অন্তরা‌লে স্বাধীনতা বি‌রোধীরা জা‌তির কা‌ছে ক্ষমা না চে‌য়েই দেশ উদ্ধা‌রের স্বপ্ন দে‌খে।

ব্য‌থিত হই যখন দে‌খি সংস‌দ অ‌ধি‌বেশ‌নে পি‌ছি‌য়ে পড়া জন‌গো‌ষ্ঠির কথা না ব‌লে কেবল নেতা‌দের গুণ গান গে‌য়েই সময় পার ক‌রে।

এক মি‌নিট অ‌ধি‌বেশন চ‌ললে যেন কত খরচ?

গোট‌া জা‌তির ভাগ্য নি‌য়ে ছি‌নি‌মি‌নি এমন খেলায় চিৎক‌ার ক‌রে বল‌তে ই‌চ্ছে ক‌রে এই শৃংঙ্খ‌লিত স্বাধীনতা আমরা চাই‌নি।

(বিঃদ্রঃ ক‌বিতা‌টি স্বাধীনতা পরবর্তী সম‌য়ের উপর ভিত্তি ক‌রে লেখা।)

অস্ত্র সমর্পণ
হেলাল হাফিজ 

মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।

Post a Comment