শংকর ব্রহ্ম এর কবিতা।কলকাতার জনপ্রিয় কবি।নতুন প্রেমের কবিতা

শংকর ব্রহ্ম 

নির্বাচিত একগুচ্ছ কবিতা
শংকর ব্রহ্ম

১).

পুতুল জীবন
শংকর ব্রহ্ম


একদিন হয়ে যাবে সব অন্ধকার

               এই ধরে প্রাণখানি থাকবে না আর

জন্ম হয়েছিল বলেই মরতে হবে তাই    

                                 যা জেনেছি যা বুঝেছি        

কিছুটা যে তার জানিয়ে যেতে চাই

          মরণ এসে মাঝে মাঝে হানা দেয় মনে

সে কোথায় ঘাপটি মেরে আছে

                         খুঁজে দেখি এখানে সেখানে

নিজেকে সরিয়ে রাখি

                                 আমি তো ভীষণ ভাবে

আগ্রাসী মোহের থেকে দূরে

                           যুদ্ধ তো নিজের সাথে শুধু

 

দূর থেকে দূরে কাছে দূরে

                              বহু দূরে ঘুরে এসে শেষে

জীবনকে একান্তে ভালবেসে

                                          ঘরে ফিরে দেখি

অহেতুক অভিমানে ঘুণপোকা কুরে কুরে শুধু  অবশেষে,ভেঙে দেয় আমার এই পুতুল জীবন


২).


স্মৃতিকথা

শংকর ব্রহ্ম


                      কোন কথা বলিনি সেদিন

অথচ অনেক কথা বলেছি তোমাকে

                                    তুমি তা জান না

জানলে কি হত জানি না

                             লজ্জায় লুকাতে মুখ

নাকি আনন্দে হেসে উঠতে চোখে

 

তুমি কত কথা বলে গেলে গলগল করে,

কানে তা ঢোকেনি কিছুই

                               শুধু অপলক চেয়ে

কি দেখেছি নিজেই জানি না

 

এরপর ফিরেছি যে যার ঘরে

                        সত্যিই ফিরে গেছি নাকি

সেখানেই রয়ে গেছি আজও

                       ঘরে ফেরা হয়নি এখনও

 

 

৩).

 

রে ফেরা
শংকর ব্রহ্ম

 

অবশেষে তার সাথে দেখা হল কথা হল

অথচ যা হবার কথা ছিল হল না কিছুই

                      কোন কথা বলিনি সেদিন

সত্যিই বলিনি কি

নাকি অনেক কথাই বলেছি যে তাকে

                                      সে তা জান না

জানলে কি হত জানি না

                            লজ্জায় লুকাতো মুখ

নাকি আনন্দে হেসে উঠতে চোখে

 

কত কথা বলে গেল সে গলগল করে

কানে তা ঢোকেনি কিছুই

                               শুধু অপলক চেয়ে

কি দেখেছি নিজেই জানি না

 

এরপর ফিরেছি যে যার ঘরে একা

                        সত্যিই ফিরে গেছি নাকি

সেখানেই রয়ে গেছি আজও

                       ঘরে ফেরা হয়নি এখনও


৪).

 

মৃত্যুগামী
শংকর ব্রহ্ম


যে কোন জন্মই মৃত্যুর দিকে ক্রমশই ঠেলে দেয়

                                                          টেনে নিয়ে যায়

প্রতিদিন জীবন থেকে একটু একটু করে প্রাণ কেড়ে নেয়

তবুও মানুষ থাকে প্রত্যাশার ক্ষীণ আলো জ্বেলে রাখে মনে

                       সব প্রাপ্তি পেতে চায় তার একার জীবনে

 

গাছ জানে ফুল ফল জানে জীবনের নেই কোন মানে

তাই তারা নির্দিধায় ঝরে যায়

                                    আসলে তারা ঝরে যেতে জানে

তবুও মানুষ তার বিচিত্র জ্ঞানে

                                   জীবনের মানে খুঁজে হয়রান হয়

যে কোন জন্মই মৃত্যুর দিকে ক্রমশই ঠেলে দেয়

                                                         টেনে নিয়ে যায়

 

 

৫).

 

ফেরা
শংকর ব্রহ্ম
 

কত কথা বলে গেলে গলগল করে

 ঢোকেনি তা কানে

শুধু অপলক চোখে দেখেছি কি

নিজেই জানি না

                   কোন কথা বলিনি সেদিন

আসলে অনেক কথা বলেছি তোমাকে

তুমি তা জানো না

জানলে কী লজ্জায় নত হতো মুখ

       নাকি আনন্দে হেসে উঠতে চোখে

 

তারপর ফিরে গেছি ঘরে

                        সত্যিই ফিরেছি নাকি

সেখানেই রয়ে গেছি আজও

                   এখনও হয়নি ফেরা ঘরে

 

 

৬).

 

সুখের আশা

শংকর ব্রহ্ম

 

 

আমাদের রক্তের ভিতরে খেলা করে            

রক্তচাপ  বিপন্ন সুগার

এরপর নিজ পায় দাঁড়াবার

ইচ্ছে থাকে কার

 

দুঃখ ঝরে যায় যদি

অবিরাম বৃষ্টি ধারার মতো 

তবু কবি বসে থাকে

সুখের আশায় যতো

জানিনা কেন যে তার এমন স্বভাব

পৃথিবীতে নেই যেন রোদের অভাব

 

সুখ সুখ করে কেটে যায় বেলা

সুখ তো আসে না আর

ফুরিয়ে আসে যে বেলা

শেষ হয়ে যায় জীবনের ছেলেখেলা

 

 

৭).

 

ফাঁকি

শংকর ব্রহ্ম

 

 

                                           কিছু কিছু কবিতার গভীরে

একান্ত ভাবে ডুবে যেতে যেতে

                  দিকহারা মানুষের মতো দিশেহারা হয়ে পড়ি

আমি আর কিছুতেই পারি না বেরোতে

            এমন আসক্তি মোহ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে

 

এমন আসক্তি,যদি কোনদিন ঈশ্বরের প্রতি হোতো

                                 এতদিনে,হয় তো বা ঈশ্বর পেতাম

ঈশ্বর ছেড়ে আমি কবিতার গভীরে শুধু

                                                           ডুবে যেতে থাকি

তবু সে দেয় না ধরা কিছুতেই যেন

                                          কেবল আমাকে দেয় ফাঁকি

 

 

৮).

 

শীতের টান

শংকর ব্রহ্ম

 

 

বাতাসে শীতের টান এসেছে ফিরে

অভিমান থাকবে তবু তোমাকে ঘিরে

কথারা মুক্তি খোঁজে ছন্দে সুরে

তুমি কি রাখবে শুধু আমাকে দূরে

 

শূন্যের পাশে যদি এক এসে বসে

শূন্য তবে মান পায় তার শেষে

এক যদি পাশ থেকে সরে যায় দূরে

শূন্য তবে অর্থহীন হয়ে খসে পড়ে

 

তুমি তো জান না কিভাবে গন্ধ এসে

অভিমান ভুলে ফুলে জুড়ে বসে

গন্ধ যদি ঝরে যায় ফুল পড়ে খসে

বাতাসে হীমের স্বাদ এসেছে ফিরে

আমাকে তুচ্ছ আর অর্থহীন করে

তুমি কি রাখবে শুধু নিজেকে দূরে

 

 

৯).

 

গোপনে সন্ধ্যায়

শংকর ব্রহ্ম

 

 

                               আজ যাও ভালবাসা

কাল এসো কনেদেখা আলো মুখে মেখে

      কাল ঠিক দেখা হবে গোধূলী বেলায়

বাতাস এসে বলে যাবে তোমার দু'কানে

ফিসফিস করে তোমাকে লাগছে খুব ভাল

 

ভূমধ্যে এখন রোদ বাতাসের হাহাকার রব

পৃথিবীর বহু রস শুষে নিয়ে মেঘ হয়

মেঘ থেকে ধ্বনি

ধ্বনি থেকে শব্দময় চরাচর

মুছে যায় ছায়াপথ সব

                        কেঁপে ওঠে পৃথিবীর বায়ু

কিছু বাস্প উষ্ণতায় ফেটে পড়ে মায়াময়

পুনরায় পৃথিবীর বহু রস শুষে নিয়ে

মেঘ হয় মেঘ থেকে বৃষ্টিজল

 

ভালবাসা আজ নয় আজ যাও

       কাল ঠিক দেখা হবে গোপনে সন্ধ্যায়

 

 

১০).

 

শূন্যতা

শংকর ব্রহ্ম

 

 

এত যে রক্তপাত ঘটে যায় ভিতরে বাহিরে

তা যদি বৃষ্টি হত ফসলের মাঠ ভরে যেত

এত যে অশ্রুপাত ঘটে নিয়মিত

          কারণে বা অকারণে বাহিরে ও ঘরে

যদি তা  শিশির হতো

                       সব ফুল ফুটে উঠত ভোরে

 

বাগানে ফুলেরা ছিল পুলকিত

                       গাছে গাছে ছিল কত পাখি

বাতাস উতলা ছিল স্বাভাবিক

                     মেঘেদেরও ছিল ডাকাডাকি

 

যা যা সব থাকবার কথা

                            সবই ছিল চরাচর জুড়ে

শুধু তুমি ছিলে না বলেই

                          বুক জুড়ে ছিল না কিছুই

 

 

১১).

 

নিশাচর

শংকর ব্রহ্ম

 

 

চারিদিকে এত যে আঁধার

              চোখে তো কিছু দেখছি না আর

এখানে শিয়াল খোঁজে আবার

                    সুযোগ বুঝে নিজের খাবার

 

রাত্রিবেলা উদাস মনে

                    তাকিয়ে থাকি আকাশ পানে

বাতাস ডাকে বাউল সুরে

                       আয় না,যাবি এখানে ঘুরে

আকাশ ঘুরে এলে পরে

                          আবার না হয় অন্ধকারে

আলো দিয়ে আসব তাকে

                              অন্ধকারে যারা থাকে।

 

 

১২).

 

আত্মভোলা

শংকর ব্রহ্ম

 

 

জিরাফ যখন ধর্ম সেজে

                             গণ্ড বাড়ায় গন্ডি ছেড়ে

ধর্ম তখন মূল্য হারায়

                        দেশের গরীব মানুষ মেরে

নতুন কথা বলব কি আর

                             বিপদ বাড়ে মানবতার

ধর্ম থাকে মনের ভিতর

                        ভুলতে শেখায় আপন-পর

ধর্মেও আছি জিরাফে আছি

                             বলতে পারেন শক্তিধর

আমরা যারা আত্মভোলা

                     শাঁসটা ফেলে চিবোই খোলা

 

----------------------------------------------------------------

Post a Comment