মা আদর্শ শিক্ষক। মা নিয়ে রচনা।মা নিয়ে অনুচ্ছেদ

মা আদর্শ শিক্ষক
সাদিয়া আফরিন মুক্তা

মা শব্দটি অতি ক্ষুদ্র একটি শব্দ হলেও এর বিশেষত্ব কিন্তু বিশাল আকাশ সমান বিস্তৃত। মা হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব।শিশু জন্ম নিয়ে প্রথম পৃথিবীতে  আসে মায়ের কোলে।সে মা তাকে স্নেহ,মায়া,মমতা সবটুকু আদরসোহাগ দিয়ে লালন-পালন করে বড় করে তুলেন। শিশু মায়ের কাছ থেকেই পৃথিবী নামক ভূখণ্ড সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। শিশু পরিবার থেকে শেখে আদব-কায়দা, নম্র-ভদ্র,আচার-আচরণ, বড়দের সম্মান করা,ছোটদের স্নেহ করা,শিক্ষক গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা,সামাজিকতা,মূল্যবোধ,নৈতিকতা, ভাল-মন্দের পার্থক্য ইত্যাদি। এজন্যে পরিবারকে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল বলা হয়।আর এই শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক হলেন মা।মায়ের হাতেই সন্তানের শিক্ষার হাতেখড়ির সূচনা হয়।এক কথায় বলা যায় মা সন্তানের ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেন।মায়ের এই যাদুকরী ক্ষমতার সম্পর্কে বলতে গেলে টমাস আলভা এডিসনের কথা না বললেই নয়।যার মায়ের বুদ্ধিদীপ্ত একটা মিথ্যাতে যে সাধারণ শিশুটি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে অসাধারণ বিশ্বখ্যাত এক বড় বৈজ্ঞানিক। মা সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তি বলেন,মায়ের শিক্ষাই ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, মা- হচ্ছে শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যাপীঠ।বুখারী শরীফ হতে বর্ণিত,মা হচ্ছে সন্তানের আদর্শ বিদ্যানিকেতন।মায়ের আদর অতুলনীয়। মা হতে গিয়ে যে মারা যায় ইসলামে তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছে।যে মা যত বেশি শিক্ষিত,তার সন্তান সার্বিক দিক থেকে তত বেশি এগিয়ে থাকে।এবং সহজে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। উদাহরণ -একজন শিক্ষক ক্লাসে যে পাঠ দান করেন,ঘরে এসে তা রিয়েলাইজ বা পুনরাবৃত্তি করার সময় দেখা যায় অনেকেই তা ভুলে যায়।এক্ষেত্রে মা যদি শিক্ষিত হয় তাহলে সন্তান তা সহজেই গলধঃকরণ  করতে পারে।অপরপক্ষে মা যদি অশিক্ষিত বা মূর্খ হয় তাহলে তা কোনভাবেই সম্ভবপর হয় না।এসকল দিক বিবেচনা নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বিজ্ঞানী নেপোলিয়ন বলেন,তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।শিশুরা স্বভাবজাতভাবে অনুকরণ প্রিয়, সে যা দেখা তাই শেখে। এক্ষেত্রে  একজন মা শিশুকালে তার সন্তানকে যেভাবে গড়ে তুলেন,শিশু সেভাবেই গড়ে ওঠে।অর্থাৎ প্রশিক্ষণ ভালো হলে ফলাফল ভালো, আর যদি প্রশিক্ষণ খারাপ হয় তাহলে ফলাফল খারাপ।আব্রাহাম লিংকন বলেন,যার মা আছে সে কখনই গরীব নয়।হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন,মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক,যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসুদে অকৃত্রিম ভালবাসা।মায়ের ধৈর্য্য বা স্নেহের তুলনা পৃথিবীর কারোর  সঙ্গে হয় না।তাই আমরা সন্তানেরা মায়ের নিকট চিরকাল চিরঋণী।মা যদি সঠিক সময়ে সঠিক শিক্ষাদানে আমাদের শিক্ষিত করে গড়ে না তুলতেন তাহলে আমরা থেকে যেতাম জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেকহীন প্রাণী বা জড়পদার্থের মতো এবং আমরা বিপথগামী হতাম।মা জ্ঞান, বুদ্ধি,আচার-আচরণ, নৈতিকতা,  কৌশল,মানবতা,মূল্যবোধ ইত্যাদি পৃথিবীর সকল প্রয়োজনীয় দ্বীপশিখা আমাদের ভেতর জ্বালিয়ে দিয়ে আমাদের অন্যসকল প্রাণীর থেকে আলাদা পরিপূর্ণ   মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বাবার চেয়ে  মায়ের অবদান অপরিসীম। অতএব বলা যায়, মা যেমন একদিকে স্নেহময়ী,মমতাময়ী,করুণার আধার, অপরপক্ষে তেমনি  একজন আদর্শ শিক্ষকও বটে।

Post a Comment