চিঠি
ডাক পিয়ন' আর ডাক বাক্স
আইনুল
হোসেন সানু
[ কিছু'
কথা' না' বললেই নয়, কারণ
লিখা-টা পড়ে এক
শ্রণী' অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্ম' র মনে হতে
পারে নিছক শিবের গীত....
আর
হ্যাঁ,
এ'
লিখার মর্ম সেই শ্রেণী' ই শুধু বোধিবেন
যারা সেই চিঠি প্রচলন যুগের সময়-টা দেখেছেন উপলব্ধি
এবং ব্যবহার অর্থাৎ আদান প্রদান করেছেন!
ক্ষুদ্র
প্রয়াস, ফেলে আসা, ভুলে যাওয়া সেই সে' দিনের স্মৃতি' বিজরিত সময় কাল-কে ফের আর
এক বার চোখের সামনে আনা! যদি, কিঞ্চিৎ জাগে এ' মন..... ]
------
জানো'
কি'
সত্যি' করে,?
পারো
কি' বলতে কেউ !? তবে,
বলো
তো' ঠিক করে...?
হ্যাঁ,
একদা'
ছিলো যে
ডাক বাক্স ঐ
দেখতে
লাল রঙের, যাতে ফেলতো
সবাই
চিঠি আর
বহনের
কাজে ব্যস্ত সদা,
করতে
যে' চিঠি বিলি,!
হ্যাঁ,
সেই'
ডাক পিয়ন',
ছিলো
যারা প্রতি জীবনের তরে,....
আচ্ছা,...?
ওরা কি'
আদৌ এখন বেঁচে ...?
নেই
জানা
ঠিক আমার,
বহু দিন হয় পড়ে না
এখন
যে'
আর চোখে....?
............
বোধি,
ঠিক-ই আছে,...!
তবে,
লেখেনা
যে' চিঠি এখন
কেউ-ই মনের ভুলেও,
নেই ডাক, না
চিঠি
বিলি বন্টন এখন তাই আগের মত !
হয়ত,
বদলছে
কাজের ধারা,!
পেয়েছে
অন্য কাজ তারা নতুন
করে
এখন!
আর
ডাক
বাক্স গুলো'...?
বোধি',
নেই
প্রয়োজন
এখন
যে' আর ওদের ....
তাই,
...........
ক্বচিৎ
দু'
একটা
যাও
বা আছে,
রোদ
ঝড় বৃষ্টি-তে নিত্য ওরা
ভিজে
রং
হীন, বিবর্ণ বিচ্ছিরি দেখি কি-যে'
করুন
সাজে,
অযত্ন
অবহেলে দেখি রয়েছে
কেউ-বা বাঁকা হয়ে
অবহেলে ঝুলে...
তবে,
ছিলো
একদিন
তার
মাথাতেও মূকুট তাজ, দৃষ্টি নন্দন
দেখতে
ছিলো দারুন সাজ !
আর
সেই
ওরা আজ
যুবুথুবু
যেন' অবাঞ্চিত প্রাণহীন
করুন
দশা দেখতে বড্ড ভীষণ বাজে !
সন্তপর্ণে
একা
চুপ
দাঁড়ায় নির্জন গলির মুখে !
উঁকিঝুঁকি
দিই,
ঢিপ
ঢিপ শুনি হৃৎপিন্ডের ধ্বণি
নিজেই
নিজের কানে,!
ধায়
দ্রুত
কড়া
নজর চারপাশে
কেউ-কি ঘাপটি মেরে
বাক্সের
ধারে
কাছে ? দুরুদুরু বুক'
ধীর
পা'য়ে অনাহূত ভয়
ভুলে,
চেনা
জানা পরিচিত কোনো মুখ এই বুঝি' দেখে
ফেলে,!
ফের
থমকে
দাঁড়ায়
বুলায়
চোখ নিই দেখে চারপাশ
ফের
একটু, ভালো করে,....
বুকের
গহীনে
জমাট বাঁধা
মনের
না বলা কথার পাহাড়
ক্ষর
স্রোতধারা যেন' সবই উপচে পড়ে ! কত আর যায়
বলো তারে
আটকে
রাখা বুকে' ?...
স্বল্প
আলোয় রুদ্ধশ্বাসে
আড়ালে-বই-টা রেখে,
বর্ণে বর্ণ জুড়ে
মিলিয়ে
ছন্দ কাব্যিক মনে অস্পৃশ্য রং-এ নিবিড়
ধ্যানে কল্পিক ক্যানভাসে, নির্ঘুম চোখে ছিলো ব্যস্ত ছবি আঁকা, --
আহ্....
ভাবলে
আজও ভীষণ লাগে,
অনুমেয়
কাঁপা
হাতে,
কিছু'
ভুল বানান আর
বাঁকা
লাইন রোধে নিবিষ্ট মনে অক্ষর
বুনন
চলে,!
উচ্ছাসে
নিশি
জেগে
পংক্তির
মালা গাঁথা, ছিলো যে'
চিঠি
লেখা....
আচ্ছন্নে
ডুবে মন
কেবলই
বসে ভাবে, কখন পোহাবে রাত পৌঁছাবে চিঠি ঐ হাতে তার
উত্তর-টা কতক্ষণে...
অগোচরে
ছেড়ে
দীর্ঘশ্বাস
চুপি
সারে শ্বাস রোধে
স্ফিত
হেসে ছুঁইয়ে ঠোঁট তাতে
লজ্জায়
রাঙা মুখে পরিশেষে লিখা
সেই
চিঠি রঙিন লিফাপাতে ভরে বন্ধ
করে
মুখ নিঃশ্বাস টা ধীরে ছাড়ে....
দুরুদুরু
কাঁপে বুক',
মেলে
আবেশিত ছিলো তৃপ্তি ভরা পরম
কঠিন
সে' এক সুখ !
.....
না'
প্রতীক্ষা'
এখন চিঠির, না'
উত্তরের-ই আশে...
না'
ফেলতে চিঠি কেউ-ই এখন ছোটে
ঐ
বাক্সের
কাছে,...
ছিলো
অপেক্ষা'
শত
দিনান্ত
জুড়ে প্রতীক্ষা'
কত
প্রহর আর কত রাতের,
চিঠি
বিলি
শেষে ঘেমে নেয়ে আসবে ছুটে কতক্ষণে পিয়ন আমার কাছে,?
একাগ্র
চিত্তে দিনান্ত বসে ডাক বাক্স-টা
শুধু
ভাবে...
হায়,
খালি
করে বুক
নিয়ে
যাবে সুখ কাগজে লিখা
সুখ-দুখের বার্তা যত অপেক্ষা' রত
স্বজনের স্বহস্তে লিখা চিঠি পৌঁছে দিতে ঠিকঠাক মত ডাক পিয়ন
ঐ
প্রিয়'
প্রাপকের হাতে!
ভুলেছে
জানি'
গুনতে
প্রহর এখন, না'
আর
অপেক্ষা' এখন সে'দিনের মত,
না
কোনো কাজে কেউ-ই এখন আসে
আজ তার কাছে ....
গড়ালে
দুপুর পরন্তে আজ
না'
আর প্রতীক্ষা' করে এখন, না' কড়া নেড়ে চিৎকারে পিয়ন সেদিনের মত বলে,
চিঠি আছে...
চিঠি..........
বলি,.......কে' আছেন ?
যায় যে' বেলা...জলদি আসুন জলদি,....
এখনও
যে' অনেক
বিলি
বাকী....
.......
পিয়নের
সেই
হাঁক শুনে
ভাত
ঘুম গেলে ভেঙে
দেখে
না' ঘড়ি একটি বারও চোখ টা খুলে,!
খসে-পড়া
আঁচল
টা শুধু নেয় টেনে
কচলে
দু' চোখ ধীর ত্রস্ত পা'য়ে হাই
তুলে দ্বার-টা দেয় খুলে
!
জীর্ণ
দেহ,
বিবর্ণ
কোঁচকানো
গা'
য়ে খাকি কাপড়ের জামা,
আধ
ভেজা ঘামার্ত শরীর ক্লান্তির ছাপ চোখ-মুখে, সে-এক আচ্ছন্ন
বিবস সুখে,!
নির্ঝর
হাসি
মুখে
ঠাঁই
দাঁড়িয়ে পিয়ন
কাঁধে
তে ঝোলানো ব্যাগ
অপেক্ষা'য় স্থির যেন'
নির্জীব সে' চিঠি হাতে দিতে প্রাপকের হাতে !
বোতাম
হীন
অন্য
কাঁধের শোল্ডার-টা
কুঁচকে
রয়েছে ঝুলে, বিরুক্তি ভরে
নেয়
সে' চিঠি বাড়িয়ে হাত তাচ্ছিল্যে প্রাপক, কিঞ্চিৎ মেকি হাসে মুখে...
কেউ
তুলে
হাই
মেলে
চোখ দেখে চেনা হস্তাক্ষর
লিখা
প্রাপকের নাম ঐ লিখা রঙিন
লিফাপে-তে,
পলকে
তখন
ধক
করে ওঠে বুক'
নিমেষে
ঝলকে হাসির ঝিলিক বোধে
সে-এক ভিন্নতর সুখ,!
নিমেষে
টুটে ঘুম, চোখ মুখে-তে
শুধু
হাসে, শীতল পরশ তড়িৎ বেগে নামে শির দাঁড়-টা বেয়ে!
দূর
দেশে থাকা
স্বজনের
হাসি মুখ-টা শূন্যে
শুধু
ভাসে, বেদনের সুখে বুক'-টা ভরে
তবু
কিঞ্চিত হাসে...
প্রেমিক
প্রেমিকা
আর
সদ্য
পরিণয় নব বধু' রা
যত,
গুনে
দিনক্ষণ অপেক্ষায় কাটে প্রহর
চেয়ে
দূর পথপানে, পিয়ন
আসবে
কতক্ষণে'...
হঠাৎ
বাতাসে
আসে
ভেসে, ছোট্ট
দুটি
কথা' 'চিঠি আছে' !
শুনে,
বিদ্যুৎ
বেগে
আঁড়
চোখে চেয়ে চারিপাশ
উল্কার
বেগে ঈগলের মত ছোঁ মেরে
পলকে
নেয় চিঠি-টা লুফে...
ছলছল
চোখ
অভিমান
ভরা ক্ষুব্ধ শ্রান্ত মুখে,
খালি
করে বুক' ছেড়ে নিঃশ্বাস করুন দীর্ঘশ্বাসে, বহুদিন হয়, না' কোনো চিঠি তার নামে -তে আসে...
শোকে
তাপে বুক'
মরুময়
জীবন তৃষিত মন
ভাসে
দুঃখ শোকে, ভিতর-টা শুধু হাসে....
অপ্রত্যাশিত
পেয়ে
চিঠি-আজ মাত্র-ই
নিজ
হাতে, প্রতীক্ষার শত অবসান
ঘটে
তাতে ! সুখানুরাগে ভরে চোখ জলে, মৃদু অভিমানে শুধু একটু খানি হাসে,!
নিভৃতে
লুকিয়ে
চোখের জল
অভিমান
ভরা লজ্জাবনত মুখে!
আহ্,
কি'-যে' প্রসন্ন এক সুখে,
ব্যস্তভরে
পড়তে চিঠি দ্রুত গিয়ে ঘরে দরজায় খিল আঁটে...
রুদ্ধশ্বাসে
সেই
চিঠি পড়ে নিঃশ্বাস-টা চেপে,
প্রসন্ন
তায় গুনগুন মৃদু গুঞ্জন ওঠে মনে, এক-এক টা
লাইন পড়ে, এক
চোখে
তার সুখের অশ্রু ঝরে, চাপা
স্বরে
সে' নিরব নিভৃত মনে কাঁদে আর
অন্য
চোখে হাসে ...
আকূল
হয়ে
উচ্ছাসে
চিঠি পড়ে নিঃশব্দে একা
মৃদু
শব্দে খিল-খিলিয়ে হাসে,!
যেন'
চিঠি নয়
মুখোমুখি
বসে স্বজনের সাথে
কথা'
বলে আর লজ্জায় চিঠি
দিয়ে
বারবার
মুখ ঢাকে!
বিভোর
স্বপ্নে
সুখের
ডানা মেলে,
প্রিয়'
র হাত-টি ধরে দুখের
সমুদ্র
নিমেষে
দিচ্ছে পাড়ি স্বপ্নীল ডানা মেলে,
মাটি
ছেড়ে আকাশ ফুঁড়ে-শূণ্যে দূর
যাচ্ছে
যেন' উড়ে !
এমন-ই সুখ তার
মনে,
আজ
কার হিম্মত এ' সুখ নেবে
কেড়ে....?
হাঁস-ফাঁস মনে
সারা
রাত্রি একা শুধু-ই
এ'পাশ ও'পাশ করে,!
আসে না
ঘুম
আজ বিচ্ছিরি এক সুখে, বিরহী
মন উৎকন্ঠায় উথাল পাথাল বারবার
উঠে
কেঁপে !
ভাবে,
বুঝি
হয়নি
পড়া
চিঠি-টা তখন তড়িঘড়ি-তে
ঠিকঠাক
মনোযোগে,! এক লাফে-তে
বিছানা
ছেড়ে উঠে বের করে চিঠি ফের নিবিষ্ট মনে আরও একবার পড়ে !
এক
দুই
তিন,
এমনি
করে
বারবার,
কত বার যে' চিঠি-টা পড়ে,!
মনে
জমে থাকা শত অভিমান
অব্যক্ত
মনের কথা' প্রতুত্ত্যরে বলে! তবু
মেটে
না' মনের পিয়াস....
আবার
...
কেউ
চিঠি পেয়ে
একটু
খানিক পড়ে থমকে দু' চোখ অবিশ্বাসে থত্থরিয়ে কাঁপে অলক্ষে চিঠি-টা
হঠাৎ
হাত থেকে যায় পড়ে!
আটকে
গলার স্বর
দু'
হাতে মুখ ঢাকে, চাপাস্বরে
ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে' কাঁদে বুঝি' এক্ষুণি
বুক'
টা যাবে ফেটে !
দু'
চোখে-তে
আঁধার
ঘনিয়ে আসে,
নিঃশ্বেষিত
নিঃশ্বাস
রোধে শুধু একটি কথা' য় ভাবে, কার
আশে সে' বাঁচবে এখন একা
শূণ্য
এই ভবে...?
চোখের
জলে
ভিজে
বালিশ বুক'-টা যায় ভেঙে,!
দীর্ঘশ্বাসে
আনমনেতে বলে,
হায়,
ছিলো
এক
রত্তি সুখ
সে-ও সইলো না'
পোড়া
এই
কপালে,! বুকে' র কোণে
সাজানো
যত স্বপ্ন গুলো আজ
যেন'
দাঁত কেলিয়ে হাসে,! দুঃস্বপ্নের ঘোরে অচিন পরবাসে যায় দূরে-তে ভেসে....
........
বিষন্ন
মনে,
পাষানে
বাঁধে বুক' ---
ছিলো
দিনক্ষণ'
জুড়ে
প্রতীক্ষা
শত চিঠি র, তথা' ঐ
ডাক
পিয়নের তরে,!
কাটতো
সময়
কষ্টে
ভীষণ করে, সেকেন্ড
যেন'
মিনিট ঘন্টা গুলো দিন, মাস
গুলো
যেন' বছর সম আর বছর
যেন' যুগ, উদ্বেগে মন একা শত
উৎকন্ঠায় ভরে,...
সুখ
দুঃখের
প্রাপ্তির আঁড়ে
যেন'
আজ অপ্রাপ্তির-ই ভারে,
যোগ-বিয়োগ গুণ ভাগে মিলেমিশে
হতো
সব একাকার,....
ফেলে
আসা
দিন
গুলো সব ছিলো যেন'
সে-এক মধুময় মধুক্ষণ',!
....
বিদেশ
বি-ভূঁই দূর
পরবাসে
বাস,! ছেড়ে
পরিজন
ছিড়ে নাড়ির বাঁধন,
অদৃশ্য
পাথর রেখে বুকে' সুখের আশে
দিত
পাড়ি একা ঐ দূর দেশে
----
ছেলে-মেয়ে আর
নাতি
পুতি র পেতে একটু
খবর
উদাসিন
মুখে উদ্গ্রীব সদা সুখের অপেক্ষা'তে অবিরত রোজ
ঝরতো চোখের জল ঐ ছানি
পড়া কত চোখে,!
কখনও
পড়ে
চিঠি লিখা ঐ খবরে
ভাঙতো কত বুক' স্বজন
হারানো শোকে....
আবার,
মায়ের
চিঠির সাথে
স্কুলে
তে সদ্য ভর্তি হওয়া
আদরের
ধন ছোট্ট সোনা মনি
ছোট
বড় আঁকা বাঁকা অক্ষরে-তে
কত
যত্নে লিখা কচি হাতের এক চিঠি
যা'
চিরকুট আকারে লিখা, তাতে হাজার বায়না ভরা,
বার-বার
বাবা
যত বার
সেই
চিঠি-টা পড়ে আর
ততো-বার চুমু খায় বুকে' তে জাপটে ধরে,
দু'
চোখ ভরে
সুখের
অশ্রু বাবা' র,
শুধু
অঝরে গড়িয়ে পড়ে ....
সে-ই
সে'
দিনের
কষ্টে
জড়ানো সুখ-দুঃখের পরশ
নেই
যে' সে' আর এখন আজ
চঞ্চল
এই
ভবে-তে,
জানি'
চাইলেও
আজ আর
তা
জুটবে না' এই' কপালে.....
এলে
অতিথি
স্বজন
বিদায়
বেলার কালে,
ভুলেও
এখন হয় না' বলা
আজ
সেই
দিনের তরে,! শোনো,
পৌঁছে
কিন্তু লিখবে চিঠি নিতে সবার খবর হোক' ছোট্ট করে-ই, কেমন ...?
না
এখন
অপেক্ষা'
আর চিঠি' র, না'
আজ
ডাক পিয়নের তরে, কারণ
মাধ্যম
যে' আজ প্রতি টি
ঘরে ঘরে,!
কাগজ
কলমে
লেখে
না কেউ-ই কাউ-কেই
এখন চিঠি
নিতে
কারো খবর ,!
বড্ড
অবহেলে
মুখ
থুবড়ে যে' তাই
আছে
পড়ে ডাকবাক্স গুলো যত, সব ঐ'
জি
পি ও 'র গুদাম
ঘরে...
.............
নিঃশ্বাসে
ভরি বুক
খালি
করি দীর্ঘশ্বাসে........
চলছে
জীবন
এখন
যেন' শুধু হিংসা ভরা মন আর
পেশী
শক্তির কৌশলে,
জানি'
পরাস্ত
আজ শোষণে-তে'
কাল-ফের বিপর্যয়ের হারে, সেও
উচ্চ
বাজার দরে,!
প্রথাগত
সময়
এখন অসম বর্তমান
বিত্তহীন
বৃত্তাকারে ঘূর্ণিয়মান চক্রান্তে
ব্যস্ত
রোজ ভুল সময় টা মেপে !
অস্পর্শিত
সুখ
সম যত খেলা
নেই
সুখময় বোধি অস্পর্শের প্রেমে,!
অনুভূতির
না'
বিন্দু ছোঁয়া এখন
হাতে
লিখা সেই চিঠি প্রাপ্তির ঘোরে,
নেই
প্রত্যাশা
বিন্দুও
এখন প্রিয়' জনের লিখা
বন্ধ
মুখের ঐ রঙিন লিফাপা-তে ভরে,...
না'
আপ্লুত
মন কভু
প্রতীক্ষিত
প্রতীক্ষার ঐ
সুখ
বেদনের ঘোরে,! অনুভবে
না'
কেঁপে ওঠে মন কভু, না'
আজ
সুখের
অশ্রু আসে এখন আর একটুও
কভু
দু' চোখ ঝেঁপে....
১৫
অগাষ্ট' ২০২৩
' অনন্যাsky '
চিঠি লিখো
বিকাশ রায়
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
লেখার
শুরুতে যেন থাকে ছোট্ট শব্দ প্রিয়,
কষ্টে
করে লেখা চিঠি ভুল ঠিকানায় লিখ না
হোক
না লেখার মাঝে একটু এলোমেলো,
মনের
মাঝে গোপনে রাখা কথাগুলো
হৃদয়ের
গহীনে লুকিয়ে পুষে রেখো না।
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
লেখার
শুরুতে যেন থাকে ছোট্ট শব্দ প্রিয়,
চিঠি
লেখা খামের গায়ে একটু মৃদু হাসি দিও
মুখ
গুমরা করে কালো মুখে চিঠি লিখ না।
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
মনের
যতো কথা আছে মনে করে লিখ,
হৃদয়ের
গহীনে অবহেলায় পুষে রেখো না
দক্ষিণা
বাতাসে মাথার চুল খুলে দিও বেধে রেখো না
বাতাসে
উড়তে দিও,তবুও আনমনে চিঠি লিখ না।
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
লেখার
শুরুতে থাকে যেন ছোট্ট শব্দ প্রিয়
লেখার
মাঝে তাড়াতাড়ি ইতি টেনো না।
যত
খুশি আমার দেহের গভীরে ব্যথা দাও
তবুও
আমায় একটু সুখ দিও
তবুও
তোমার কমলতার মাঝে ক্লান্তি রেখো না
পারলে
আমাকে ভালোবেসে মায়ায় ভরিয়ে দিও,
তবু
তোমার হাসি মুখটা মলিন রেখো না।
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
লেখা
শেষে একটা নাম দিও
তবুও
ভুল ঠিকানায় চিঠি লিখ না।
সাথে
দিন তারিখ লিখে দিও
সাথে
তোমার দুই' হাতের পরশ দিও,
তবুও
বিষাদের নিশ্বাস দিও না
ভালোবেসে
একটু সন্মান দিও,
বেঁচে
থাকার জন্য দুই হাত বাড়িয়ে দিও
তবুও
তোমার ঘাতক হৃদয়কে,
তোমার
মাঝে রেখো না।
ভালোবেসে
যত্ন করে একটা চিঠি লিখ
লেখার
শুরুতে যেন থাকে ছোট্ট শব্দ প্রিয়।
চিঠি
প্রিয়
বন্ধু আমার
তোমাকে
লিখবো লিখবো বলে কেটে গেল এতটা কাল, ঠিকানাও অজানা তবে লিখতে কি আর মানা?
যে ফুলের পূজারী ছিলে সুন্দরম সুন্দরম, সে সতত বেদনার
নীলে খাবি খাচ্ছে বিষম। মানুষের মগজে যে ঘুণ পোকার
চাষ, জাতীয় অবয়ব ধরে চলছে সে-ই সর্বনাশ।
বোধের জমিন ভাগাড়ে পর্যবসিত হলো, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অনাচার অবাধ স্বাধীনতা পেলো। তুমি স্বপ্ন দেখতে সৌহার্দ্রময় সাংস্কৃতিক একটি দেশ, সাংস্কৃতিক বিপ্লবে জয় হবে মানবতার সুখম সন্নিবেশ। বন্ধু সাংস্কৃতিক পাড়ায় এখন আর বিপ্লব নেই,
লেজুড় ধরার প্রতিযোগিতায় হারিয়েছে খেই। জাতীয় আরশি জাতীয় মনন তোষামোদি দরবার, বাংলা একাডেমিতেও পরিচয় ছাড়া হয় না কিছু আর।
তোমার সে স্বপ্ন আরো
হলো ধূসরিত, প্রজ্ঞায় অজ্ঞতা এসে দারুন পুলকিত। ছেয়ে গেছে দেশময় কি অদ্ভুত মিশন!
কণ্ঠনালী থরথরো কাঁপছে ভীষণ। কেউ বলে না জনতার কথা
অধিকারের কথা, দেশ জানে না! তার কোথায় কোথায় ব্যথা ? যে স্বপ্নে ঝাঁপিয়ে
পড়েছিলে গণতন্ত্র উদ্ধারে, সবখানেই সেটা প্রহসন অনাহুত চিৎকারে। বন্ধু মনে পড়ে
"যারা
মোর ঘর ভেঙ্গেছে স্মরণ
আছে
সে
আমার রক্তে ঝরা দিন
চেতনায়
হানছে আঘাত চেতনায় হানছে আঘাত
জাগ
জনতা দুরন্ত সঙ্গিন"।
স্বপ্ন
দেখতাম চেতনার পরিমার্জনে হাসবে দেশ, সে চাওয়ায় গুড়ে
বালি বিচ্ছিন্ন পরিবেশ। ব্রিটিশ তন্ত্র কাজে লাগিয়ে করছে শাসন, ভাগ করো শাসন করো ব্রিটিশ প্রজ্ঞাপন। তুমি চেয়েছিলে মুটে ও মজুরের মুষ্টিবদ্ধ
হাত, শ্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে গণতন্ত্র মুক্তি পাক। গণতন্ত্র পেষণ যন্ত্র হলো চেতনার বিলাসে, তাবৎ বুদ্ধিজীবী লেজ গুটিয়ে দারুন বাহাসে। এখন আর জমায়েত নেই
জমায়েত মানা, জমায়েত করলেই জুটে পুলিশি হানা। দেশটা নাকি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, সবাই মানিয়ে চলছে কেহ করেনা আপত্তি। তোমার অসাম্প্রদায়িকতায় সাম্প্রদায়িক বীজ, ভোটবাজার উৎরে দেখ আহাম্মকী তাবিজ। নীল আকাশে দেখতে তুমি সুনীল বেদনা, বামেও
যা ডানেও তা স্বার্থের অর্চনা।
তুমি হয়তো জানতে চাও এ পাড়ার কি
খবর? একনায়ক আর স্বৈরাচার সব
সময়ই দোসর। মননের দুর্ভিক্ষ রুচির দুর্ভিক্ষ একাকার হয়ে আজ, রাজপথে নামে না জনগণ দেখে
রণ রণ সাজ। মুক্তির
চেতনা নাকি এমনই ছিল বুঝিনিতো হায়, দেউলিয়াত্ব নিয়ে যমুনায় কত পানি বয়ে
যায়! দেখলে তুমি কষ্ট পেতে সবখানে হাইব্রিড, প্রতিষ্ঠানের কর্তা যারা হারামজাদা কালপিট।
ইতি
তোমার
আমির
২৯.০২.২০২৪,
পল্লবী
ঢাকা।
"ডাক পিয়নের চিঠি"
--রেশমা বেগম
কেয়ার
ভার্সিটির ক্লাস শেষ হয়েছে,
বাসায়
ফিরেই সে নিজের রুম
সংলগ্ন বারান্দায় এসে বাগানের ফুলগুলো দেখে এবং মনে মনে গাছের সাথে কথা বলে,গাছ,ফুলের অস্তিত্ব কেয়ার অস্তিত্বের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
কেয়ার
মা নুরুন্নাহার বেগম কিছুক্ষণ পরে'ই ডাকাডাকি করছে
টেবিলে এসে বিকেলের নাস্তা করার জন্য, সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই,এখন সে গুনগুনিয়ে গান
গাইছে।
কেয়া
ভালোলাগার মুহূর্তগুলোতে অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করতে একদমই নারাজ,সে এখন শঙ্খচিল
হয়ে ডানা মেলে হেমন্তের আকাশে উড়তে চায়, ছুটে বেড়াতে চায়--সত্যি অদ্ভুত এক জগৎ মানুষের
মন!
যথারীতি
কোনো মানুষই তার ব্যতিক্রম নয়।
মামুনের
সাথে কেয়ার ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষেই পরিচয় পর্ব কিন্তু মামুন আকবর তার থেকে দু'বছরের সিনিয়র
ছিলো,অবশ্য তাদের সাবজেক্ট একই ছিলো- কেমিস্ট্রি, সেই সুবাদে মামুনের সাথে কেয়ার যোগাযোগ ছিলো সচারাচার।
ক্রমান্বয়ে
পরিচয় থেকে ভালোলাগা এবং পরবর্তীতে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিলো তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটি,উভয়েই উভয়ের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল,বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলো,তাদের ফ্যাকাল্টির অনেকই জানত তাদের এই প্রেম পর্ব
সম্পর্ক সমন্ধে।
অতএব
যথারীতি কেয়ার ভার্সিটিতে শেষ বর্ষে অধ্যায়নের দু'বছর আগেই
মামুনের ভার্সিটির পাট চুকে
গেছে
--- পরীক্ষার রেজাল্ট উচ্চমানের ভালো থাকার কারণে এক বৎসর প্রস্তুতি
পর্ব শেষ করে মামুন আকবর বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমায়।
বর্তমানে
কেয়াও ফাইনাল পরীক্ষার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে,পরীক্ষার সময় প্রায় কাছাকাছি ঘনিয়ে এসেছে,
সেও
পড়াশোনায় ব্যস্ত সময় পার করছে, অধ্যবস্যায়, প্রচেষ্টা থাকলে পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই ফলপ্রসু হবে,এই যুক্তিতে কেয়া
পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাসী।
আজ বাসায় এসে
রুমে তার টেবিলের উপর মামুনের চিঠি পেয়েছে,অবশ্য সেই কারণেই তার আজকের এই বিকেলটি বেশ
উচ্ছল,প্রাণবন্তভাবে কাটছে।
ভার্সিটি
লাইফের দীর্ঘ সময় তাদের এই চেনাজানা ও
সম্পর্কের কথা দুই পরিবারই মোটামুটি ভাবে জানে।
কম
করে হলেও মাসে দুটো চিঠি মামুন কেয়াকে পাঠায়,এভাবেই তাদের সম্পর্ক পত্রযোগে দিনে দিনে অত্যন্ত প্রগাঢ় হয়ে উঠেছে -----
প্রেম
পর্ব আসলে পত্র বিনিময় এর মাধ্যমে অন্যরকম
একটি সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে ওঠে,যা বেশ কিছু
কাল আগ পর্যন্ত আমাদের
সমাজেও তুখোর ভাবে প্রচলিত ছিলো।
বর্তমান
ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার,উপভোগ করার পরেও এই প্রেমিকদ্বয় চিঠির
ব্যাপারটি খুব আনন্দের সাথে আদান প্রদান করে --অভিলাসী মনের তৃপ্তি মিটায়।
কেয়ার ভাবনা এরকম- পরপারে গেলে তো আর চিঠি
আদান-প্রদান করা সম্ভব নয়! তাই পৃথিবীর দু'স্থানে দুজনের
অবস্থানে বাড়তি এই শখ-আহ্লাদ
মিটানো উচিত---
মামুনের
মনোভাব হচ্ছে-- আমি তো এই শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্যই দূর প্রবাসে একটু জোর করেই চলে এসেছি-- এরকম খুনসুটি ফোন আলাপে মাঝেমধ্যেই এই প্রেমিক যুগল
করে থাকে।
আজকের
চিঠি আসার পূর্বে প্রায় মাস দুয়েক মামুন চিঠি দেয়নি কেয়াকে,তাই চিঠি পাওয়ার পর্বটি তাকে বেশ উৎফুল্ল করে তোলে।
চিঠি কিন্তু কেয়া এখন পর্যন্ত পড়েনি,ভেবেছে নির্জন রাত্রিতে একাকী চিঠি পড়বে,যা মামুনের অস্তিত্বের
সাথে তার আত্মিক যোগাযোগ দৃঢ় হবে--
কেয়ার মা নুরুন্নাহার বেগম,বাবা মর্তুজা রহমানের বড় আদরে কন্যা কেয়া রহমান,পরিবারের সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মামুন দেশে ফিরলেই আল্লাহর হুকুম হলে চার হাত এক করে দেবে
তাঁরা।
রাতের খাওয়া দাওয়া,বাবা মাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পর কেয়া নিজের
রুমে প্রবেশ করেই চিঠিটি হাতে নেয় -যাক্ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা,অধীরতার সমাপ্তি ঘটলো; আকাঙ্ক্ষার সময় উপস্থিত।
বিছানায় গড়িয়ে আরাম করে চিঠিটি খুললো কেয়া রহমান,চিঠির লিপিকা এরকম--
প্রিয় কেয়া
বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো তোমাকে চিঠি লেখা হয়নি,আশা করছি ভালো আছো এবং পরিবারের সবাই ভালো,মঙ্গলময় রয়েছেন।
একটি
বিষয় সম্পর্কে তোমাকে অবগত করার জন্য আজকে আমার এই চিঠি লেখা
অধীর মনোভাব নিয়ে, আসলে সংবাদটি তোমাকে কেমন করে বলবো তাই ভাবছিলাম কিছুদিন ধরে,এদেশের স্থানীয় একটি মেয়ের সাথে, ( যার নাম এলিসা ) আমার মোটামুটি পরিচয় ছিলো অনেকদিন থেকেই,শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখলাম আমার সিটিজেনশিপ পাওয়ার ব্যাপারে অনেকটাই সহজ হবে আমাদের বিয়ে হ'লে।
গত
দু'সপ্তাহ পূর্বে আমাদের দু'জনার সর্বসম্মতিক্রমে
বিয়ে হয়ে গিয়েছে, এ বিয়েতে এলিসার
পরিবারের
সম্মতি
ছিলো বিধায় তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি,
সামাজিক,রেজিস্ট্রি উভয় বিধান মতে বিবাহ কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে।
তোমার
আমার সম্পর্ক এবং পরিণয়ের ব্যাপারটিও অনেক ভেবেছি,দূর প্রবাসে বিদেশ বিভূঁইয়ে অন্যরকম জীবন যাপনের অভ্যস্ততায় এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি জড়িয়ে পড়িয়েছিল,তোমার আমার বিয়ের ব্যাপারে আমি প্রায় অনিশ্চিত একটি গ্যারাকলে পড়ে গিয়েছিলাম।
প্রথম
প্রথম আমার পরিবার (বাবা, মা) আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে নিশ্চুপ থাকলেও বর্তমান সময়ে তাঁরা তাঁদের অসম্মতি প্রকাশ করেছেন আমার নিকট।
তাই
সমস্ত ঝঞ্ঝাল,সমস্যার ইতি টেনে আমি আমার জীবনের বর্তমান সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।
তোমার
নিকট আজকে ক্ষমা চাওয়া বা আর কোনো
বিশদ কৈফিয়তের প্রয়োজন নেই।
জানি এই ক্ষমার অযোগ্য
অপরাধের কোনো ক্ষমা কোনদিন হয় না,আঙ্কেল আন্টিকে
বলো শুধু আমাকে ঘৃণা করতে।
বাস্তবতা আজকে আমাকে এই পরিণতিতে বাধ্য
করেছে---
ইতি
মামুন আকবর ।
একটি
পৃথিবীর একটি আকাশ,কেয়া ভাবছে সেই আকাশটি আজ ভেঙ্গে চুরমার
হয়ে গেলো-- যে কিনা আমার
সত্তার খুব আপন ছিলো।
গভীর রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে আকাশের তাঁরা
গুনছে,আর চোখ তার
নোনা জলের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে রাতের নির্জনতায় চাঁদের বুকে---
অনুভূতির
জায়গা বলে যাচ্ছে একটি বিষাদময় জীবনের রঙ্গমঞ্চ শুরু হলো আজ থেকে কেয়া
রহমান
তোমার---!!
-----সমাপ্ত-----
ছোটগল্পটির
সর্বস্বত্ব
সংরক্ষিত
গুগলে,
ঢাকা,বাংলাদেশ। ---
"অনামিকার চিঠি"
রেশমা বেগম
অনামিকা
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো মুক্ত আকাশের নিচে,বায়ুর প্লাবন তাকে স্বস্তি দিচ্ছিলো যন্ত্রণাময় বুকে ---সঙ্গে ছিলো একমাত্র
ছোট
ননদ।
দুর্বল
কন্ঠে রিকশা ডেকে টিকাটুলির বাসায় রওনা দিলো,পথঘাট মোটামুটি শুনশান নীরব-- চলাচল কম,দেশময় একটি
উত্তাল ঢেউ উঠেছে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের গণঅভ্যুত্থান,প্রেক্ষাপটে ছাত্র অসন্তোষ,আপামর জনগণও সার্বিক দাবি নিয়ে
সম্পৃক্ত
হয়েছিলো।
রাহাতকে
খুব মনে পড়ছে অনুর,আজ তারই অনামিকার
পাশে থাকার কথা ছিলো কিন্তু সবকিছুই নিয়তির উপর নির্ভরশীল,অনেক এলোমেলো ভাবনা অনামিকার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে রিকশায় চলা অবস্থায়। এক সময় বাসার
সামনে রিকশা থামলো, অনেক পরিচিত বাড়িটা তার কাছে অন্যরকম হয়ে ধরা দিলো,হয়তো এর বৃহৎ ব্যাখ্যা
বিশ্লেষণ
রয়েছে--
মৃত
সন্তানের জন্ম দিয়ে অনামিকা খুবই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে,রাহাত ৬৯ এর গণআন্দোলনের
পাকাপোক্ত শিরা-উপশিরার সাথে নিবিষ্ট ভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে,তাই কখনো,কখনো তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে ---
এহেন
পরিস্থিতিতে বন্ধুবান্ধব,আত্মীয়-স্বজন দু'চারজন ছাড়া
কেউই তেমন কোনো খোঁজখবর,সহযোগিতা বা সঙ্গী হয়ে
কাছে ভিড়ছে না,মন খারাপ
হওয়ারও যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই, যেহেতু দেশময় একটি অন্যরকম আবহা,পরিস্থিতি বিরাজমান।
স্বামীর
বাড়িতে শাশুড়ি,ননদ-দেবর এর সাথে তার
বর্তমান বসতি,সবার মনের অবস্থাই দুর্বিষহ, প্রথম বংশধরের আশায় বুক বেঁধেছিলো যারা আজ তাদের চোখের
পানিও শুকিয়ে গিয়েছে --
দেশের
জন্য রাহাতের দেশপ্রেম এবং যৌক্তিক মনশীল অবস্থানের জন্য একদিকে যেমন অনামিকা,রাহাতের মা এবং সবার
গর্বের শেষ নেই,অন্যদিকে প্রতিকূল কষ্টদায়ক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে দিনে দিন। রাহাত মাঝে মাঝে বাসায় আসে এবং সবার সাথে দিন যাপন করে, এভাবেই চলছে তাদের ৬৯ এর গণআন্দোলনের
পঞ্জিকার দিনগুলি।
সময়ের
শেষ দিকে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের
গণঅভ্যুত্থানের
পর রাহাতের আর কোনো খোঁজ
পাওয়া গেলো না,কোনো গভীর
রাতে দরজায় এসে নৈ:শব্দে টোকা
দিলোনা রাহাত আর। অনামিকার শুরু হলো নিজের জীবনের সাথে নিজের অন্যরকম আত্মযুদ্ধ!
ভালোবেসে
বিয়ে করেছিলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাহাত চোধুরীকে,সংসার জীবনে প্রবেশ করার সাথে সাথে অনিবার্য পরিস্থিতির সাথে জীবন প্রবাহের সঙ্গী হলো তারা ;
পিছন
ফেরার সুযোগ নেই অনুর,বাবা মায়ের সংসারে পারতো ফিরে যেতে কিন্তু তার বিবেক,ব্যক্তিত্ব কোনো কিছুই এই চেতনাকে সায়
দেয়নি।
লেখাপড়া
জানা ছিলো,তাই সরকারি অফিসে কোনরকম একটি কাজ জোগাড় করে নিলো,এভাবেই যাপিত জীবন অনাগত দিনের অপেক্ষায় চলছিলো।
১৯৭১
সাল, মহানমুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাংলার আপামর জনসাধারণ জনদরদি বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে --
দেশপ্রেমিক
অনামিকা শুরু থেকে সংগ্রামের এক সমুদ্র পাড়ি
দিচ্ছিলো ---
বাস্তবতা
এবার তারই নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে দিলো,
আগাস্ট
মাসের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে দীর্ঘ
চিঠি লিখে গভীর রাতে গৃহত্যাগ করলো অনামিকা চৌধুরী, দেশমাতার
গর্বজ্জ্বল পতাকার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য।
চিঠির
মর্মকথা এমনই ছিলো-" দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীকার আদায়ের লক্ষ্যে আমার জীবন সর্বস্ব সবকিছুই সম্মতিক্রমে মহান ত্যাগে সমর্পণ করেছি-- এখন আর আমার তুচ্ছ
একটি প্রাণ নিরাপদ হেফাজতে রাখার কোনো মানে হয় না,নিজের বিবেকের
ধংশনে প্রতিনিয়ত খণ্ডিত হচ্ছি,বিবেকের তাড়নার থেকে রেহাই পাবার জন্য আপনাদের সাথে দেখা না করে দেশমাতৃকার
জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগে বলিয়ান হয়ে অকুতোভয় দুঃসাহসী সৈনিকের আদর্শে মুক্তি সেনার দলে যোগ দিলাম।
জানি
আমার অনুপস্থিতিতে সংসারটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে,তারপরও আমার করার আর বিকল্প কিছু
ছিলো না,পারলে সবাই
আমাকে ক্ষমা করে দিও--- তোমাদেরকে অনিশ্চিত জীবনে ভাসিয়ে দিয়েছি এটা সত্যিই আমার একটি অন্যায়!
চিঠি
দীর্ঘ না হলেও পারিবারিক
সাংসারিক কথাবার্তাও ছিলো জীবনের গতি প্রবাহের জন্য।
----সমাপ্ত---