মন্মথ হালদার এর কবিতা।মানবতার পক্ষের কবিতা

নিষিদ্ধ হোক ধর্ম
মন্মথ হালদার

কে বলেছে তুমি হিন্দু তুমি মুসলমান?

কে বলেছে তুমি শিখ বৌদ্ধ তুমি খৃষ্টান?

কে করেছে সৃষ্টি ধরায় এই প্রাণঘাতী ধর্ম?

কে পরিয়েছে মানুষের গলায় এই লৌহ বর্ম?

ধর্ম  গ্ৰাস করেছে মানুষের মানবিক সত্ত্বা

আছে কি ধর্মের আসলে কোন সারবত্তা?

স্রষ্টার আপন ধর্ম কিবা সবার তা অজ্ঞাত

স্রষ্টার কোন ধর্ম নেই ধর্ম তাই অনভিপ্রেত।

অজ্ঞাত সেই স্বর্গবাসী সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর

আপনি করেছেন কি ধরায় কোন ধর্ম প্রচার?

শতধা ছিন্ন ধর্মের বিভাজন যদি করতেন ঈশ্বর

নবজাতকের ললাটে থাকতো তার সীলমোহর।

অবতার পয়গম্বর ঈশ্বর পুত্র যীশু

সকলেই এই ধরার মাতৃগর্ভজাত শিশু।

সংসার যাত্রায় প্রতি পদে পদে সমস্যাসংকুল

সদা জর্জরিত আতংকিত রহে মানবকূল।

রয় দিশাহারা আত্মশক্তি হয় বিস্মরণ

সমাজের জ্ঞানী গুনী শক্তিমানের লয় শরণ।

মহাকালের গতিধারায় নানা লোককথায়

এরাই কালে কালে অতিমানব পয়গম্বর অবতার হয়।

তাঁদের জীবদ্দশায় নয় মৃত্যুর বহুকাল পরে

আপন কল্প মাধুরীতে ভক্তরা ধর্মগ্ৰন্থ রচনা করে।

আপন ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ আভ্রান্ত চির সত্য

অন্য সকল ধর্মই ভ্রান্ত কাফের ম্লেচ্ছ ব্রাত্য।

এই অনড় ধর্মবিশ্বাস হতে হয় ধর্মান্ধতা

ধর্মান্ধতা থেকে জন্ম নেয় সাম্প্রদায়িকতা।

সাম্প্রদায়িকতা হতে জন্ম নেয় মৌলবাদ

মৌলবাদের চরম পরিণতি হল সন্ত্রাসবাদ।

যার চরম পরিণতি ধর্ম বর্ণ দ্বেষ

চরমে ওঠে জাতি ধর্ম বর্ণ বিদ্বেষ।

মেতে ওঠে শিশুঘাতী নারীঘাতি বীভৎসায়

বসুধা প্লাবিত হয় অগনিত মানুষের রক্তধারায়।

পাশবিক প্রবৃত্তি বর্বরতা ওঠে জেগে

গনধর্ষণ খুন অগ্নিদাহ চলে দুর্বার বেগে।

স্মরণযোগ্য কালে এই ধরাতে

যুদ্ধে নয় বেশী মানুষ মরেছে ধর্মীয় সংঘাতে।

অবাক হতে হয় মানুষের পরিচয় মানুষ নয়

ধর্মই মানুষের একমাত্র পরিচয়।

আজ ডাক এসেছে  ভেঙ্গে ফেলি এই  ধর্মের কারা

জেগে উঠুক মানবিক চেতনায় জ্ঞানের আলোক

 ধারা।

বিশ্ব বিবেক হোক প্রতিজ্ঞায় দৃড়বদ্ধ

ধরার বুকে ধর্ম হোক চিরতরে নিষিদ্ধ।

মানুষ মানুষই এটাই তার একমাত্র পরিচয়

জগতের শ্রেষ্ঠ জীব সে আর কিছু নয়।


স্রষ্টা আসল পাপী
মন্মথ হালদা

পাপ কি শুধু মানুষে করে

স্রষ্টা পাপী নয়?

ঈশ্বর কি মহাপাপী

জাগেনা মোদের চেতনায়।

যুদ্ধে পরান্মুখ অর্জনকে

যুদ্ধে উন্মাদ করতে,

গীতায় শ্রীকৃষ্ণের মহাবচন

রাখতে হবে স্মরণেতে।

'শোন অর্জুন গূঢ় তত্ত্ব

তোমায় আমি বলি,

পূর্বেই সব হত এরা

আমার বিধানে বলি।

কুরু পান্ডপ অর্ধকোটি

মহাযুদ্ধে নিহত,

জ্ঞাতি রক্তের প্রস্রবন

ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত?

স্রষ্টার ইচ্ছায় ঘটে সব

ধর্মের মূল কথা,

কোরাণ পুরাণ গীতা বাইবেল

বলে সার কথা।

ক্রুসেড চলে কয়েক শতক

ইতিহাস দেয় সাক্ষ্য,

মুসলিম খৃষ্টান দীর্ঘ লড়াই

ব্যাবিলন জয় লক্ষ্য।

দুই মহাযুদ্ধে ধরা ব্যাপী

আনবিক বিস্ফোরণ,

আবাল বৃদ্ধ বনিতা মিলে

আট কোটি মরণ।

ধর্মান্ধতার অভিশাপে

গুজরাটে জাতি দাঙ্গা,

বিধর্মী নিধন নারী ধর্ষণ

ভক্তের ত্রিশূল রাঙ্গা।

গাজা ইউক্রেন সারা বিশ্বে

নরমেধ যজ্ঞ ঘটে,

মানুষের নেই কোন পাপ

স্রষ্টাই পাপী বটে।

 

 


ধর্মের প্রিয়
মন্মথ হালদার


দ্রব্য মূল্যের উর্ধ গতি

কিবা তাহে ক্ষতি,

ধর্মে তোমার আছে মতি

রাম নামে সম্মতি?

জুটছে না আহার দুবেলা

ক্ষুধায় কাতর হও,

আছে সুধামাখা রামনাম

নাম চেটে খাও।

কারখানাটা বন্ধ তোমার

হারিয়েছ কাজ,

ষন্ড রাজা বেকার বানায়

শুধু জুমলা বাজ।

খুরে খুরে নৃত্য করে

যত ষন্ডের দল,

গোমাতার গোবর চোনা

মহৌষধি সম্বল।

দাঙ্গা কর দাঙ্গা কর

যবন রক্ত খাও,

ধর্ষণ করো মহোল্লাসে

নারী মাংস খাও।

শ্বাপদের প্রিয় পশু রক্ত

ক্ষুধা নিবৃত্তির তরে,

ধর্মের প্রিয় মানুষের রক্ত

বিধর্মী নিধন করে।

 

কবিতা

দেবতার নামে বঞ্চনা

মন্মথ হালদার

তাং ২৬//২৪

চারিদিকে আজ ঘন তমাসা

দুঃসময় আগত,

ধর্মোন্মাদনায় ভাসছে দেশ

ভক্তজন মোহিত।

রাম লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা

ভারতপতির করুণায়,

দুঃখ দারিদ্র্য দূরীভূত

প্রণতি রাম লালায়।

পতঙ্গের বেগে ধর্মোন্মাদনায়

ধায় অযোধ্যা পানে,

মৃত্যুর পরে স্বর্গ গমন

রামলালা দরশনে।

অন্নহীনে অন্ন পেল

দারিদ্র্য দূরীভূত,

রামের চরণামৃত পানে

প্রাণ পাবে মৃত।

যুগে যুগে ধর্মশেল

শাসকের মহা অস্ত্র,

মানুষের হয় চেতনা রুদ্ধ

সহায় ধর্ম শাস্ত্র।

মন্দির বানাও মসজিদ বানাও

পূজা এবাদৎ ভক্তিতে,

ধর্ম মদে বিভোর রাখো

উন্মাদ কর ধর্মেতে।

রাম চরণে নত থাকো

সারা বছর ধরে,

মহারাজ ঈশ্বর অবতার

প্রণত নতশিরে।

দুঃখ কষ্ট রোগ ব্যাধি

স্রষ্টার ইচ্ছায় ঘটে,

তোমার দুর্ভাগ্যের দায়ী তুমি

লেখা আছে ললাটে।

ধর্ম মহা শক্তিশেল

আঘাত করে মর্মেতে,

শক্তিশেল হয় ভক্তিশেল

মৃত্যু পরম শান্তিতে।

রাজা রাণীর সহায় ধর্ম

প্রজার বঞ্চনায়,

রামলালা জগন্নাথ মন্দির

সহায় প্রজার ছলনায়।

 

সৃষ্টি ছাড়া
মন্মথ হালদার


আমি সৃষ্টি ছাড়া সংসারে

তাই সাহস করে,

সে কথাটি জানিয়ে দেব

অতি উচ্চ স্বরে।

কেউ যদি আসে দুয়ারে

দুয়ারে দেয় নাড়া,

চুপটি করে বসে থাকি

দেইনা কভু সাড়া।

সবাই বলে সৃষ্টি ছাড়া

বলুক যা খুশি তাই,

বলবো আমি সৃষ্টি ছাড়া

আর কেউতো নই।

কিছুই আমার নেইকো চাওয়া

দাবী আমার নেইগো,

কামনা আমার নেই কিছু

কিছুই চাইনা গো।

সবাই আমায় পাগল বলে

সবাই ওঠে হাসি,

সৃষ্টিছাড়া নাস্তিক এক

সকল ধর্মে অবিশ্বাসী।

ধরা আমায় ভালোবাসে

দুঃখ কিবা মোর,

আকাশ আমায় ভালোবাসে

বাঁধে অলখ ডোর।

সেই বাঁধনে বাঁধা আছি

এই ধরা পরে,

বাঁধন যেদিন টুটবে সেদিন

হারাবো চিরতরে।

 


ঈশ্বর দর্শন
মন্মথ হালদার

শৈশব হতে মানব মনে

গাঁথা নানা তথ্য,

সাধু সন্ত মহাপুরুষের

ঈশ্বর দর্শন সত্য।

ঈশ্বর দর্শন লভেছেন তাঁরা

শুনেছেন তাঁর বাণী,

নানা রূপে দর্শন তাঁর

পান যোগী ধ্যানী।

দক্ষিনেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ

পান কালী দর্শন,

আপনি খেয়ে প্রসাদ পরে

কালী মাতার ভোজন।

রাম প্রসাদের কালী সাধন

চমকপ্রদ কাহিনী,

কন্যা রূপে বেড়ার বাঁধন

হাত বাড়ান শুনি।

ত্রৈলঙ্গ স্বামী পাগলা সাধক

অদ্ভূত তাঁর ভজনা,

নিজ মলমূত্র কলীকে খাওয়ান

এটাই নাকি সাধনা।

গীতা ভক্ত শ্রীঅরবিন্দ

বৃটিশ কারাগারে,

আত্ম মোহিত হন শুনি

শ্রীকৃষ্ণ দর্শনে।

প্রেম বিলান শ্রীচৈতন্য

যবন আচন্ডালে,

আত্মবিস্মৃত জগন্নাথ দর্শনে

ঝাঁপ দেন নীলাচলে।

জর্ডনে দীক্ষা যোহনের কাছে

যীশু ঈশ্বর পুত্র,

আকাশে শ্বেত পায়রা ঈশ্বর

লিখিত বাইবেল সূত্র।

হেরা পর্বতের গুহা মধ্যে

জেব্রাইলের দর্শন,

স্বর্গ দূত হযরত মহম্মদকে

আল্লাহর আদেশ বর্ণন।

বিজ্ঞান বলে এঁরা মনোরোগী

মস্তিষ্কে স্নায়ু বিকৃতি,

স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের নাম

চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃতি।

Post a Comment