প্রবীর কুমার চৌধুরী এর কবিতা।কলকাতার জনপ্রিয় কবি এর কবিতা

প্রবীর কুমার চৌধুরী 

চিরন্তন একাকী
প্রবীর কুমার চৌধুরী

বড়  আজ একা নদীর কিনারায়

খেয়াপাড়ে দীর্ঘ  সময় প্রতিক্ষায় 

গোধূলি শেষে নিকষ গভীর তমসায়।

 

বৈভবহীনতা-নীরবে হাসো  আড়ালে !

প্রেম কী এক অজর, নিস্পন্দ ভালে -

নীরব মায়ার খেলা বেদনার অন্তর্জালে ?

 

হাসিরাসি, দিনরাশি লুকায়ে অতলে

আমি অন্বেষণে কালাতিপাতে ভূতলে 

ক্ষয়ে যায় জীবনের অনন্ত বসন্ত অতলে।

 

বসন্তহীন জীবন  নির্বাক স্তব্ধতায় 

বসে এখন  পরম তোমার- অপেক্ষায় 

বেলা যে বয়ে যাবে আর কত প্রতিক্ষায়?


(গদ্য কবিতা )

"প্রায়শ্চিত্ত
প্রবীর কুমার চৌধুরী
 

ঘুনধরা খিলান ,ভাঙ্গা নাটমঞ্চ ,শূন্য ঠাকুরদালান

আজ ধ্বংস দেউড়ির ইতিবৃত্তে নড়বড়ে সংসার।

তিন মহলার দোদন্ড প্রতাপ আর আর্তচিৎ্কারে -

ভরানো আছে নোনাধরা দেওয়ালে,সাক্ষী ইতিহাসের পাতা।

ঝুলের ঘেরাটোপে টাঙ্গানো অনুতপ্ত মুখ -

অনুশোচনার দগ্ধতায় অন্তরে  করুন  মর্মগাঁথা।

সেদিনের গঙ্গার বুকে কত শবযাত্রার মিছিল - আজও দম্ভ আর শোষনের কাহিনী শোনায় ছেঁড়া তমসুকে।

 

গুমঘরে রাত্রীনিশীথে কত অসহায় দ্রৌপদীর  বস্ত্রহরণ -

পনেরো থেকে পঁয়তাল্লিশ নিস্তারহীন কান্নায় ভরা।

রক্তাক্ত রাজপথ, বোবা প্রতিবাদের মিছিল ,ধরনা,

কৃষ্ণশূন্য মহাভারত আনে যা এখনও ভবিতব্য। 

হাসিশূন্য,অশ্রুসজল  বাধ্যতায় মেনকারা  আবরণশূন্য দেহে - ভরেছে অনীহার বীর্য

গুমখুন ঢেকেছে লজ্জার সত্য,অর্থের পদভারে ঘুমিয়েছে অনুশাসন।

আজ চাঁদ কলঙ্ক  মেখে,মেখে অভিশাপ হয়ে ফিরে আসে আত্মজায়।

কালো অতীত লেপটে আছে রক্তমাখা  সিংদুয়ারে ,

ক্ষমাহীন কর্মফল বুকে আজ দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট হতভাগ্য উত্তরাধিকার।

 

ভালোবাসাগুলো দুহাতে কুড়ায় ঝড়ে যাওয়া

 চাঁদোয়ার ভগ্নাংশ,

ভাঙা পালংকের নিচে সান্ত্বনা খোঁজে  মুছে যাওয়া সিঁদুরের হাহাকার ,

গুমঘরে সতীর মুখের অসতীর অট্টহাসিতে  ভীত-সন্ত্রস্ত যুবতী।

 

বাঈমহলে লোভের ঘুঙুর খুশীর ফোয়ারা ছোটায় অশরীরী-

আজও প্রতিহিংসার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অশৌচ হানা দেয় রাজপ্রাসাদে

যুগের অভিশপ্ত  বংশধর নিরুপায় -রক্তঋণ শোধ করে।

 

রৌদ্রচিতায় দহীত পরাজিত  সময় ,শতাব্দীর অবসানেও জীবনের রং  ফিকে ,ফিকে ,

নিশিরাতে অতৃপ্ত আত্মারা আজও  বিক্ষুব্ধ মিছিলে প্রতিবাদ তোলে।

জেগে ওঠে যত গোপন জিঘাংসা ছাইচাপা আগুনে -

প্রতিশোধ স্পৃহায় কফিনে ঢাকা আত্মার আত্মজে। 

আজও ক্রোধানলে ছিনিয়ে নিতে চায় নিপীড়িত মহাকলরবে অধিকারের আন্দোলন

শতাব্দী অতীতের গলিত  দেহাবশেষ বয়ে বয়ে দিনান্তে ক্লান্ত ,যন্ত্রণাকাতর -

অবসান হোক জীবনের রঙ্গমঞ্চে অভিশপ্ত পদাবলী

ধুয়ে যাক   পঙ্কিলতার কষ্টিপাথর,

অবসান হোক জীর্ণ ধরায় ফেলা আসা পূর্বপুরুষের পাপস্খালন

 

প্রার্থনা 
প্রবীর কুমার চৌধুরী

দাও হে দাও  ফিরায়ে দাও

হে অনাদি - আদি কাল

হৃদিভরে যতনে , আপনারে-

প্রতিদানে না করি ফলাফল।

 

দাও হে দাও মনে প্রেম দাও

জগতের যেন ঘুচাই দীর্ণবেশ,

লোলুপহীনতা পরাকাষ্ঠা ত্যাগী

নতুনে জাগি যেন যামিনীর শেষ।

 

দাও হে দাও প্রাণে নব উল্লাস

বিলাতে দাও চেতনা শুদ্ধ  চিত্ত

হবো অহিংস,হবো দানিশ্রেষ্ঠ

চিত্ত না করে কামনা  অহম,বিত্ত।

 

দাও হে দাও দু চোখে মোর আলো

সেই হতে জ্বালিব  দীপ  যত নিভু,নিভু।

দুবাহু বাড়ায়ে অনাথে ধরিবো জড়ায়ে 

বিদায় বেলা প্রতিদান  চাহিব না কভু।

 

দাও হে দাও আরো কণ্ঠে  সুর দাও

মেতে থাকি যেন প্রেমকথা শ্রবণে 

বাতায়নে তুমি শুধু  রোহিবে দাঁড়ায়ে

তৃষ্ণা  মিটিবে মোর দুটি নয়নে,নয়নে

 

জর্জরিত সকাল 
প্রবীর কুমার চৌধুরী

অকল্পনীয় একটা জীবন এক চুমুকেই শেষ

সুখের আবেশে স্বপ্নরা ওড়ে পাহাড় শীর্ষদেশ।

তারই মাঝে তমস রাতে কামের আকুল আহ্বান

মিলন মেলায় - যন্ত্রণার আকুতিতে খান-খান।

 

এক জীবনে অনেক পাওয়া উষ্ণতার আবেশ

তোমার ওষ্ঠে, ওষ্ঠ চাপি উরুচাঁপা নিম্নদেশ।

সংগীতের অনুরণন,গর্ভ ধারণ আনন্দ উচ্ছল

সর্বনাশা মদির নেশায় মাতৃত্ব নিশান উজ্জ্বল।

 

পাহাড় থেকে উজিয়ে আশা সুখের অন্তমিল

নীরব শ্রোতার ভয়বিহ্বল অভিশপ্ত মঞ্জিল।

চায়ের কাপে ঝড় তুলে যায় অনন্ত জিজ্ঞাসা

অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায় মিথ্যা স্তুতির আশা।

 

একসকালে পেয়ালা হাতে তোমার শুভসকাল

সেই রইল আজীবন কাল ধর্মসাক্ষ্যে বহাল।

সব কিছুরই নীরব দর্শক, যৌনতা দখলের স্বাক্ষী

তোমার আঁচে সিদ্ধ হলাম, স্তব্ধ আমি এনাক্ষী।

 

সহজ,তবুও তো সহজ নয় প্রকৃত ভালোবাসা

রূপ,রংয়ের ছবিটা - আশায় বাঁধানো খাসা।

যাকে ছাড়া সময় শুধুই  ফাঁকা ফাঁকা লাগে

সেই সহসা যবনিকা টানে শুরুর হওয়ার আগে।

 

আমার বাবা
প্রবীর কুমার চৌধুরী


আমার বাবার বিদ্যে কম আপনভোলা লোক,

আপনপর জ্ঞানছিলো না শুধুই পেলো শোক। 

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাঁর দিনাতিপাত,

সবার পাতে ভাত জুগিয়ে তারই অল্প ভাত।

 

আমার বাবা মানুষ ভালো বুদ্ধি ছিল কম,

বিশ্বাসে ঠকতো কেবল বুঝতে অক্ষম।

সকাল ,সাঁঝে আপন কাজে কাটতো সারা দিন-

সুখ চাইনি, স্বার্থ বোঝেনি তাই দেখেনি সুদিন।

 

আমার বাবার একটি কথা কেউ কারো নয়,

কর্মের মাঝেই ধর্ম পালন,তাতেই হবে জয়।

আপন থেকে আপনার যে জন খুঁজতো সারাক্ষণ-

সব থেকেও বাবা নিঃসঙ্গ তাই একা অনুক্ষণ।

 

আমার বাবা বলতেন সকল ধর্মের মূলকথা-

ভালোবাস ওরে ভালোবাসা,দিসনা বুকে ব্যথা।

" যতমত ততপথ " একই ধর্মের বহুরূপ-

যে দ্বারেই দাওনা ফুল একই ধোঁয়ায় বহুধুপ।

 

আমার বাবার প্রার্থনা ছিল সবাই সুখে থাক,

সব হারানোর ব্যাথা ভুলে কাছের মানুষ পাক।

কাঁটাতারের বেড়াগুলোয় কিযে যাতনা, যন্ত্রনা-

দেশ হারানোর গভীরক্ষতে আছে কী কোন সান্তনা?

 

আমার বাবা হাসতো ভালো দুচোখে স্বপ্নের ছবি,

বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে হতেন ভাবুক কবি।

গান গাইতেন মধুরসুরে ,রবিঠাকুরে  মুখ গুজে

তাঁর অভাবে আনন্দের মেলা আর পাইনা খুঁজে।

 

আমার বাবা সকালবেলায় খুলে দিল দোর,

রোববারেতে ঘুমভাঙলো বিষাদে ভরা ভোর।

কাজের মেয়ে দেখলো হাসি মায়ের সাথে কথা-

ঘুমের মাঝেই বিদায় নিলেন জমিয়ে বুকে ব্যথা।

 

শব্দবীজের ছন্দ 
প্রবীর কুমার চৌধুরী


কাল সারারাত বৃষ্টি ঝড়েছে ভারি মিষ্টি,

তৃপ্তি এনেছে মননে প্রকৃতির শৈল্পিক সৃষ্টি।

সারারাত কবিতাকেই প্রেয়সী ভেবেছি-

বাতায়নে বসে হৃদয় জমিনে প্রেমরস পেয়েছি

 

ধুঁয়ে,মুছে গেছে দিনান্তের যত ক্লেদ,আবর্জনা-

শ্রাবনের বর্ষণে  শুধুই শুনেছি ছন্দের মূর্ছনা,

নয়নে নয়ন রাখি এঁকেছি  ভগ্ন হৃদয়ে আলপনা

থাক বেঁচে ভাঙা বুকে  মিথ্যার মধুর কল্পনা।

 

"অশান্ত জীবন"
প্রবীর কুমার চৌধুরী
 

 

নিশিদিন দিশাহীন -

মিলনেও বিস্মরণ 

চাপা শোখ  অন্তহীন

পরাক্রমী কত রাবণ 

সরসীর অশ্রুর প্লাবন

 

চিতা আর কবরে কোথাও নাই শান্তি ,

মৃতদেহে খুঁজে পাবে অজস্র ক্লান্তি

হাসিগুলো মুছে গেছে, দৈন্যের ভোগান্তি  

অসহনীয় ঘরে-পড়ে নানান অশান্তি।

 

ভাই-ভাই ঠাই,ঠাই

ঘর ভাঙার বেদনা

মা-বাপের স্থান  নাই

ফুটপাথ-  ঠিকানা

ধিক্কার, ধিক্কার আধুনিক চেতনা

 

অপেক্ষার আঙিনায়
প্রবীর কুমার চৌধুরী

 

কিছু  অবশিষ্ট থাকবে কিনা জানা নেই

ভগ্নাংশ খুঁজতে, খুঁজতেই অন্তে পৌঁছায়  ভবিষ্যত

শুধু তুমি  হৃদয়ের নীচে লুকিয়ে রাখলে একবুক অভিমান।

 

মেপেছ কি কত বুকে জমে আছে টন, টন আবর্জনা

বুকের বিষাক্ত বাতাস ঝরছে নাকের ছিদ্রপথে 

সে দখিণার ফল্গুধারা নয় - মাখানো  শুধু জিঘাংসা।

 

তবুও বসেছি অপেক্ষার সিড়িতে , আঙিনার-

অর্গল খুলে, একবার যদি ফিরে আসো নিশীথে

আমার প্রাণ তুলে  দেবো তোমার দুহাতে।

 

চারিদিকে কত সুখছবি ,স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে 

হাসছে বিজ্ঞাপন দুইপা ছড়িয়ে প্রতারণার যাঁতাকলে 

" দেহ,মন সনে নট ",শ্মশানে কি শান্তির সামিয়ানায় ঘেরা?

 

চোখে  ভাসে কৈশোরের সে কল্পনার সহস্র জলছবি

যৌবন ঝড় সহসাই  ভেঙে দেয় সে স্বপ্নমগণ 

দুঃস্বপ্নের সাগরে ভেসে যায়  সাধের সে স্বর্ণালী সন্ধ্যা। 

 


" শীতের ছড়া "
প্রবীর কুমার চৌধুরী
 

 

হিমেল হাওয়া দিচ্ছে জানান কড়া নাড়ে শীত ,

পূর্ণিমা রাত রুপোয ধোয়া গাইছে খুশীর গীত

পাপযুক্ত ,শোকারুক্ত জীবনময় প্রভাব চিরন্তন -

এবার বুঝি বিদায় নেওয়ার এসেছে মাহেন্দ্রক্ষন

আকাশ আজ বাঁধনহারা নীল মেঘের ভেলা -

বনানী তাই দিচ্ছে হাসি ,পাখ-পাখালির খেলা

হৃদয়  আমার দিচ্ছে শীস কোন আকুলতা -

ষড়ঋতুর পঞ্চঋতুর  ভীষন ব্যাকুলতা ?

 

নবান্নের হাতটি ধরে আসছে শীতকাল ,

মাঠে মাঠে সোনার ফসল হাসি ভরা গাল

পৌষ পার্বণ ,খেজুর রস ,পাটালি ,পুলি- পিঠে -

প্রভাত রোদে পিঠ ঠেকিয়ে রসনায় জীবন  মিঠে

সকাল-সন্ধ্যা চাদর মুড়ে দিচ্ছে যেন উঁকি -

মিষ্টি সকাল ,রোদের কিরণ নাই জ্বলনের ঝুঁকি

হিমেল হাওয়ায় হিমের স্পর্শ -

শিশির ভেজা ঘাসের আগায় জাগায় বুঝি হর্ষ !

 

শীতের রাতে গরম চাদর আগুন পোয়ানোর ঢল -

এমন সুখের , খুশীর দিন কোথায় আছে বল ?

শীতের রাতে কতই মজা যাত্রা পালা হবে -

স্কুলমাঠে মেরাপ বাঁধা সার্কাস পার্টি রবে

ঠান্ডারাতে সুখস্বপ্ন ,ঘুমের দেশে খেলা -

তাইতো মাগো ঘুম ভাঙতে আজ হয়েছে বেলা

নানান ফুলের জলসায় নীরব থাকে না মন ,

শিশির মাখানো স্নিগ্ধ ফুল সৌরভ ছড়ায় এখন

 

তোমরা বল মৃত্যু সময়,কেউবা  বলে নীরবতা ,

আমি বলি ভালোলাগা ,সুখ মেশানো অধীরতা

তাপ মুক্ত দিবস-রাতি  জাগায় বুকে প্রাণ ,

দরজা খুলে তাকিয়ে দেখি শীতের আহ্বান

 

পড়ন্ত বেলার কাব্য
প্রবীর কুমার চৌধুরী


বেলাশেষে কে যেন ডাকে,স্মৃতি জাগানো কথার ফাঁকে,

স্তব্ধ প্রহর,নষ্টদুপুর,বৃষ্টিপড়ে টাপুর-টুপুর।

স্বজনে খুঁজি - লুকিয়েছে বুঝি ,তবুও আছে  বুকের মাঝে,

আজও প্রেম আকুলতায় ভরে,শূন্যআঙিনা ব্যাকুল করে

 

আকুল করা আমার  আমি,অবুঝ বড়ই অভিমানী,

শেষবেলা বিষাদে ভরা,যাবার বেলায় পাগলপারা।

ছাড়ালে না ছাড়ে, কেবলি -সে শুধু মায়ায় বাড়ে,

ভালোবাসি এতো বিহবলে ,তবুও কেন সে আড়ালে!

 

এত স্মৃতি, একজীবনের বাঁধা সুরে সঞ্চিত  অমরগীতি-

সাঁঝের আকাশে আলোয় তরঙ্গীত,ওখানেও কি প্রেম অবারিত ?

পড়ন্ত বেলায় ভেঙে যায় অর্গল ,দুচোখে অশ্রুরাশি কেবল -

স্মৃতিগুলো কিছুতেই পিছু হটে না,যেতে তো হবেই-মন মানে না।

 

"যুগ পরিবর্তন
প্রবীর কুমার চৌধুরী
 

 

বিশ্বাস এখন খুঁজতে হয় তৈলচিত্রে,ইতিহাসের পাতায়

হৃদয়ের আঙ্গিনায় এখন অবিশ্বাসের দীর্ঘশ্বাস খেলা করে  

রাতের ঘুমগুলো দমবন্ধ , মিথ্যাস্বপ্নের  - 

বৈবাহিক চুক্তি এতই ঠুনকো যে প্রতিনিয়তভাঙছে আর ভাঙছে

জ্যোৎ্স্নার স্তন দুধহীনপ্রেম বিরহী

চাঁদের কলঙ্ক অসহনীয় থরে থরে , ভারে ভারে  

 

সুখী গৃহকোন ক্রমশ মলিনতায় কাঁদে

আস্তাহীন সমাজে অন্তহীন চাহিদা আর পরস্পরের দোষারোপ  

এখন সমাজের পাওনা মেটাতে  আমি হিমসিম, খেসারত

দিতে দিতেই  পৌঁছাই  শ্মশানের চিতায়। 

সন্দেহের্ পুষ্টি ধারণ করেছে শরীর

ক্ষোভ ,অখুশি ,অসন্তুষ্ট ,বাসা বেঁধেছে দেহ মন্দিরে

 

প্রতিটি প্রভাতে হাঁড়িকাঠে ঝোলে বিশ্বাসের প্রেম, প্রীতি , লোভেরা জল্লাদের বেশে

একবিংশ শতাব্দীর বাবার হাতে ধর্ষিত মেয়ে,  

কন্যাসম ছাত্রীর শ্লীলতাহানী  করে শিক্ষক

কলির কল্কে মুখে নীরব অত্যাচারের মহড়া।  

জন্মদাতা চোখের জলে ভাসে রাজপথ

সন্তানের হাতে নিগৃহীতা মা, সম্পদের লোভ গিলেছে ভালোবাসাবিশ্বাস। 

 

আমি আরশিতে দেখি

নেশা ছড়িয়ে দিশা দেখায় অপাংতেয় ভবিষ্যত

বিবেক বেঁচে খায় মনুষ্যত্বহীন দুপেয়ে প্রানী  

গভীর রাতে মধুচক্রের উৎসব , নীলআলোয়  লেংড়ে  লেংড়ে  চলে শতাব্দী   

দাগা এখন তাগার মতো হাতে ঝুলছে

মিথ্যাগুলো সত্যি হয়ে মাদুলির মতো অন্ধ  বিশ্বাসের পরিণয় গোধূলি  

ক্ষমতার কাছে নতমস্তকে মানবতা , শঠতাআত্মপ্রবঞ্চনা সুর্যের আলোর মতোই স্পষ্ট

 

মাঝে  মাঝে বিস্ময়ে থমকে দাড়াই

হাসি পায় দেবতার করুন মুখের ছবি ভেবে

আপন সৃষ্টির কাছে  পদানত , ভঙ্গুর , ক্ষমতাহীন

আর আমি যে বেঁচে আছি

সেটাই পরম আশ্চর্যের .....

 উন্মত্ত কালবৈশাখী
প্রবীর কুমার চৌধুরী


ওই ধেয়ে আসে উন্মত্ত কালবৈশাখী-

বিদ্যুৎঝলক,বজ্রনিনাদ, শিহরণে মুদে আসে আঁখি।

ভেঙে যায় বাসা,ভূলুণ্ঠিত বৃক্ষ, ঢেকে যায় রবি,

এস,সৃষ্টি বুকে নিয়ে লিখে যাও নির্ভীক কবি।

ধ্বংসের ত্রাসে বুক করে দুরু দুরু ভুলে যায় দম্ভ,

পৃথিবীর বাহুবলি পদানত, ভেঙে দেয় অহংকারের স্তম্ভ।

 

প্রকৃতির ভয়াল রুদ্রমূর্তি নিষ্ঠুরতার নিশান-

যেন সকল পাপের ঔদ্ধত্য পদাঘাতে করবে শ্মশান।

চারিদিকে অন্ধকার,অসহায়, দিশাহারা প্রাণ-

থেমে যায় কোলাহল,শত গৃহবন্দি শোনে মৃত্যুর আহবান।

লণ্ডভণ্ড জনজীবন,ভগ্ন যেন তাসের ঘরবাড়ি,

চোখের জলে হাতরে খোঁজে হারানো ভাতের হাঁড়ি।

কালবৈশাখী ফিরে যায় রেখে যায় ধ্বংসের স্তুপ,

মৃত্যুশোকের মিছিল চলে পৃথিবী নিশ্চুপ।

 

ক্রোধশেষে দিয়ে যায় হেসে কতই না আশীর্বাদ,

ধরণীর তীব্রদহনে ফাটাচৌচির ক্ষেতে শুরু হয় চাষ আবাদ।

যত ধূলিকণা আর আবর্জনা সরিয়ে, তীব্র দহন জ্বালা-

বৃষ্টিধারায় জুড়ায় প্রাণ শুরু হয় নব সৃষ্টির পালা।

খরার পালা কাটিয়ে ধানের গোলা ভরিয়ে

-সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, গাছে ফুল,ফল,পাতা ফলিয়ে-

কালবৈশাখী দেয় কত সুখ,শান্তি ছড়িয়ে।

বয়ে যায় দখিনা বাতাস,নির্মল আকাশ মনে প্রেম রাঙিয়ে।


Post a Comment