প্রেম যখন যন্ত্রনা ময়। প্রেম নিয়ে রচনা।প্রেম পত্র লেখার নিয়ম

প্রেম যখন যন্ত্রনা ময়
ছান্দিক (প্রেম দাস রায়)

         " সে তুমি বুঝবেনা "-- এই বোঝা না বোঝার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের হৃদয় তথা হৃদয় মাঝে লুকিয়ে থাকা তার গভীর প্রেম। কেউ তাকে বোঝে আবার কেউ তাকে বোঝেনা।অথচ এই বোঝা পড়ার

জন্য কতোনা হাসি কান্না রাগ অনুরাগ দুঃখ আনন্দ আর মান অভিমান

বিদ্বেষ হিংসা ঈর্ষা জাত মণি মানিক্যের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেনো এই বোঝাপড়া আর কিসের জন্যইবা বোঝাপড়া।।

         যে শিশুর অনাবৃত আবির্ভাবের কান্নায় মুখর আকাশ, আনন্দের

সুর ধ্বনিতে কল্লোলিত জীবনের স্রোতস্বিনী,তারতো বোঝাপড়ার কোনো

দরকার হয়না। মায়ের স্নেহ মাখা আঁচল যে তার -- একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় তা সে জানে। প্রেম ওতো খোঁজে সেই নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে সব অভিমান জল হয়ে বয়ে চলে জাহ্নবী ধারার মতো   তা হলে বোঝা

পড়ার এই কাঁকর বিছানো পথে কবে তার যাত্রা শুরু হলো?

             শিশু বড়ো হয় প্রেমের মুকুল ফুল হয়ে ফোটার অপেক্ষায়, যৌবন উঁকি মারে তার সাদা পাতার অলিন্দে অথবা শিশুর যৌবন যখন

ফুলের ডালি সাজিয়ে কড়া নাড়ে প্রেমের মন্দিরে পৃথিবীটাকে বড়ো সুন্দর বলে মনে হয়, কোথাও কোনো মালিন্য নেই,অবিলতা নেই আছে এক মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ। সে আকাশ কখনো লক্ষ তারায় পূর্ণ,  কখনোবা জোছনায ঝলমল। আবার কখনোবা জোছনায় ভেসে যাওয়া সেই আকাশ গঙ্গায়  দুয়েক টি তারা জীবন কে এলোমেলো করে দেওয়ার বাণী বাহক হয়ে ঝড় তোলে হৃদয়ে।এ ঝড়ের পূর্বাভাস তার জানা ছিলোনা আগে হঠাৎ ওঠা এইঝড়ে উড়িয়ে নেয়  ফুল সম্ভারে সাজানো তার নৈবেদ্যের ডালা হতে কখনোবা দুয়েকটি ফুল , কখনোবা উজাড় করে ডালা তার যেনো জানান দিয়ে যায় যোগ্য ' তুমি পূজার। ব্যাথায় কেঁদে ওঠে মন। ঝড়ের তীব্র আক্রমণ সবকিছু কেড়ে নিয়ে রেখে যায় শুধু একরাশ শূন্যতা।  যন্ত্রনা হয়ে যা হৃদয়কে করে তোলে তোলপাড়। বোঝা না বোঝার সরণী পেরিয়ে মনের মাঝে তখন--- একটাই প্রশ্ন শুধূ ঘুরপাক খায়" এইকিআমি চেয়েছিলাম? ।।

         জীবনতো এই রকমই তার পাওয়ার ঐশ্বর্য সম্ভারে না পাওয়ার বেদনা চিন চিন করে বাজে " এই যদি হায় চেয়েছিলে তুমি / তবে প্রেম দিলে কে্নো মনে ? " প্রেমের অভিসারি মন তো প্রেমেই খোঁজে তার সমাধান। এইযে না পাওয়ার বেদনা, অব্যাক্ত সেই ব্যাথার লহরীইতো হৃদয়কে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অজানার পথে,হৃদয়ের তটভূমিতেতো তারই

রস সিঞ্চন

             যৌবনের উথাল পাথাল হাওয়ায়, দিশেহারা হৃদয় যখন  কারও

উষ্ণ সান্নিধ্যের প্রতীক্ষায় থাকে ----প্রেম আসে সরমের আঁচল মাথায় একাকী গোপনে কিন্তু তস্করের মতো লুট করে নেয় সঞ্চিত পাথেয় প্রেমের এই আগ্রাসী আক্রমণে হৃদয় হারায় তার স্বাধীন অস্তিত্ব। প্রেমের

ভাবনা তখন অন্য সব ভাবনা কে অতল জলে ডুবিয়ে দিয়ে আকাশকে করে ঠাঁই। সে তখন ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় ওই দূর নীলিমায়। প্রেমিক বা প্রেমিকা উভয়ের ক্ষেত্রেই কথা সমান ভাবে প্রযোজ্য।।

            তাহলে গোপনতাই কি প্রেমের একমাত্র বৈশিষ্ট্য। দৃপ্ত ভঙ্গীতে সেকি জানান দিতে কুন্ঠিত তার স্বমহিম প্রকাশ ! না মোটেই তা নয় অবশ্য জানান দেয়,আর সেই প্রকাশ হৃদয়ে আনে সামুদ্রিক ঢেউ।

আর সে ঢেউয়ে ভেসে যায় মনের প্রতিটি অলিন্দ।  " গোপনতাই প্রেমের সৌন্দর্য " একথা  মনে রেখেও নির্দ্বিধায় বলা যায় প্রকাশ্য প্রেমের সৌন্দর্য কম নয় কোকিলের কুহু তান, ভ্রমরের গুঞ্জন বিহগের কলরব মূখর প্রকৃতির বাতায়নে প্রেমের রক্তিম অহংকার গোধূলির অনুপম সৌন্দর্য কেও ম্লান করে দেয়, কল্প ডানায় ভর করে প্রেমের অশ্ব মেধ ঘোড়া ছুটে চলে দিক হতে দিগন্তে তবু " ভরিলোনা মন " এর বিষন্ন অনুভূতি না থাকায় প্রেম যেনো তেমন করে স্পর্শ করেনা হৃদয়কে

          তবু মুখোমুখি এই প্রেমের মধ্য দিয়েই তো প্রেমিক প্রেমিকারা চিনে নেয় একে অপরকে তাদের ভালোবাসার রঙে রঙীণ হয়ে ওঠে দুনিয়া টা। মন বলাকার ডানায় ভর করে জীবন কে বাজি রেখে সে  উড়ে চলে দূর হতে দূরে কোনো কিছুই আর তার দুস্তর বলে মনে হয়না উপোসী মন উন্মুখ হয়ে প্রেমের নিবিড় সান্নিধ্যে সব কিছুকে জয় করার স্বপ্ন দেখে যেখানে দুঃখ কষ্ট ব্যাথা বা বেদনার কোনো জায়গা নেই যেনো এক সব পেয়েছির আসর।।

         কিন্তু সত্যি কি তাই ? লখিন্দরের বাসর ঘরের মতো কোনো ছিদ্র কি নেই সেখানে ? যেখান থেকে অতর্কিতে ঢুকে পড়া কাল নাগিনীর বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হতে পারে প্রেমের হৃদয় সাম্রাজ্য। অবশ্যই আছে, আর আছে বলেইনা পথ বড়ো দুর্গম সবার পক্ষে এপথ পাড়ি দেওয়া মোটেই সহজ সাধ্য নয়। প্রেম সম্রাজ্ঞী শ্রী রাধিকার প্রেম সেই ছিদ্র থেকে মুক্ত নয় এমন কি প্রেমিক কৃষ্ণ তার সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।

আবার অন্য দিক দিয়ে দেখতে গেলে এই সন্দেহ টুকু আছে বলেইনা তাকে আঁকড়ে ধরার এই আকুল প্রয়াস।এই সন্দেহ থেকেই জন্ম নেয় এক অব্যাক্ত যন্ত্রনা যে যন্ত্রনায় জ্বলতে থাকে সারা শরীর। যন্ত্রনা ছাড়া প্রেম হতে পারেনা। যন্ত্রনা হীন প্রেম এক অলীক কল্পনা। শ্রী রাধিকার মধ্যেও রয়েছে সেই যন্ত্রনা, তার এই যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ফুটে ওঠে তার অসহায় তা তেমন অন্য দিকে এই যন্ত্রনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রেমের মাধুর্য ছুঁয়ে  যায় লক্ষ হৃদয়কে।।

     এই যন্ত্রনা থেকেই তো বাঙ্ময় হয়ে ওঠে এক অভিসারি অভিমান--

" কোনো দিনও কি বুঝতে চেয়েছো ? " এতো প্রেমের ভাষা ভাষা আপন বৈদগ্ধে ভাস্বর। এর মধ্যে নিহিত আছে যে তীব্র অভিমান, সেই অভিমানের মান ভাঙাতে ইতো মানিনী রাধিকার চরণ দুখানি কে মাথায় তুলে নিতে হয়েছিলো প্রেম সম্রাট কৃষ্ণ কে। প্রেমের কি অপূর্ব অবনবন অধিকার ? আসলে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা কেউ কাউকে বুঝতে পারেনা এই না বোঝার অতল তলে তলিয়ে থাকে এক তীব্র যন্ত্রনা।

যে কথা বলতে চায় মন সেকথা  বলতে  না পারার যন্ত্রনা। অথচ মনের অলিন্দে সে কথা কতোনা ঘুরপাক খায় প্রেমিক বা প্রেমিকার হৃদয়ে। একাকী একান্তে সে কথার কতোই না অনুশীলন চলে অদৃশ্য সেই প্রেমিক বা প্রেমিকা কে উদ্দেশ্য করে।।

আমাদের লৌকিক ভাবনা প্রেমের মিলন পরিণতির অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু মধুর প্রেমের কোনো পরিণতি হতে পারেনা। যন্ত্রনা ময় অভিব্যক্তিতে তার নিঃশব্দ প্রকাশ প্রেমে যন্ত্রনা থাকবেনা এতো সোনার পাথর বাটি। সোনায় খাদ না থাকলে অলঙ্কার হবে কি করে ? যন্ত্রনা আছে বলেই না প্রেম এতো সুন্দর। প্রেমের যন্ত্রনার কথা শুনতে শুনতে প্রেমিক বা প্রেমিকা তার আপন যন্ত্রনা কেও লীণ করে দেয় সেই অনন্য সুন্দর প্রেম কথায় ।।

" যন্ত্রনার কি শেষ নেই ?" না নেই যন্ত্রনা শেষ হলেতো সব শেষ। প্রেম শেষ ভালোবাসা শেষ। কবি যখন বলেন " সখি ভালোবাসা কারে কয় / সেকি কেবলি যাতনাময় ?" তার উত্তরে বলা যায় হ্যা যাতনাময়। এই যন্ত্রনা ইতো কবিকে কবি বানায়। সুর স্রষ্টার কন্ঠে ঢেলে দেয় ব্যাথার লহরী। গল্প কারের গল্প কথায় তার নিঃশব্দ পদ সঞ্চার শিল্পীর ক্যানভাসে রেখায়িত হয় যন্ত্রনা বিদ্ধ নায়ক নায়িকা। আর এই সবকিছুর উৎস আপন মনের মধ্যে ওঠানামায় ঘূর্ণায়মান সেই প্রেমের যন্ত্রনা।।

" প্রেম এসেছিলো গোপনে " হ্যা ঠিক ইতো প্রেমের অভিসারি যাত্রার পথতো গোপনতার কুয়াশায় আচ্ছন্ন। চির গোপন তার পদ সঞ্চার ।সরবে কখনো প্রেম হয়না। বৃষ্টি পিছল তিমির রাত্রির কৃষ্ণ আঁধারে আরো গোপন তার কুন্ঠিত অভিসার। খোল করতালে নয়। নয় অর্কেস্ট্রায়ও। প্রেমের সুর বাজে কেবল একাকী নির্জন একতারাতে।

প্রেমের মরণ বাঁচণ জিয়ন কাঠি থাকে কেবল তার একার হাতে।।।

প্রেম তো এক বোবা কান্নার ইতিহাস। প্রেমের কান্না কখনো শাব্দিক যন্ত্রনায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠেনা সে কাঁদে একাকী তার দয়িতের বা দয়িতার জন্য, নিঃশব্দ সে কান্নার সুর- ঝর্নায় একাকী প্রেমিক প্রেমিকা এক মগ্ন বিষন্নতায় মনের অতল তলে ডুব দিয়ে খুঁজে ফেরে কোথা ভুল তার? উত্তর খুঁজে না পাওয়ার এক অবুঝ বেদনা জুড়ে থাকে তার সর্ব অঙ্গ।

" কতো কথাই তো বলার ছিলো ,কিছুই হলোনা বলা " গভীর প্রেমের এই

অপূর্ণতা অনুপম সুষমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে তাদের অচঞ্চল সাক্ষাতে। কল্পনায় যে শব্দের মালা গাঁথে প্রেমিক বা প্রেমিকা, বাস্তবে সে মালা দোলে না কার কন্ঠে প্রেম এমন এক প্রহেলিকা যে তার রহস্য উদ্ঘাটন করা অসম্ভব।।

এইযে প্রেমের যন্ত্রনা, সেকি কেবলি যন্ত্রনা ? কোনো আনন্দ ইকি  অভিষিক্ত করেনা সে যন্ত্রনা কে ? অবশ্যই করে। আর সে আনন্দ দেখার

নয় একাকী বোঝার। জাহ্নবী ধারায় প্রবাহিত আপন উপলব্ধি জুড়ে। প্রেমিক প্রেমিকার শিরায় শিরায় ফল্গুর মতো প্রবাহিত সে আনন্দ ধারা।মিলন নয় বিরহ তাই হয়ে ওঠে মহৎ প্রেমের শ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য।।

" সেযে এসেছিলো '/ আর কি আসিবে সে ?" এই দ্বান্দ্বিক সন্দেহ প্রেম কে গভীর করে। যন্ত্রনা ছড়িয়ে পড়ে তার আচরণে। সবকিছু কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে যায়। আবার সেই কন্ঠে যখন উচ্চারিত হয় " যদি না আসিবে সে / তবে কি হবে উপায়/ আমি ছাড়া যে তার / কেউ নেই কেউ নেই।" তখন কি মনে হয়না কি অদ্ভুত এই প্রেমের দ্বৈত বিচরণ। একদিকে অবিশ্বাস তো আর একদিকে গভীর আস্থা। তবুও কি তার যন্ত্রনার শেষ হয়? আর সেই যন্ত্রনা যখন নিজের অস্তিত্ব কে বিপন্ন করে তোলে,তখন ইতো তার কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হয় সেই ব্যাথা দীর্ণ মর্মান্তিক অভিশাপ " আমার পরাণ যেমতি করিছে/ তেমতি হৌক সে " এই ভয়ংকর অভিশাপের মধ্যেই তো নিহিত রয়েছে এক তৃষ্ণার্ত অভিমানী জ্বালা। আগ্নেয় লাভার মতো সে জ্বালায় সে একা কেনো জ্বলবে জ্বলুক সেও। এইখানে প্রেম পৌঁছিয়ে যায় এমন এক উচ্চতায়

অনিন্দনীয় সৌন্দর্যে যার পরিসমাপ্তি। এই জ্বালা যার মধ্যে নেই,তার পক্ষে প্রেম সাগরের তীরে পৌঁছানোতো দূরের কথা, প্রেম সম্পর্কে ভাবার

অধিকার তার নেই।।

##################

কিছুক্ষণ---

#######

Post a Comment