ঘুম দিয়ে বাক্য রচনা।ঘুমের প্রয়োজনীয়তা

ঘুম
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল

ঘুম এমন একটা দুই অক্ষরের শব্দ যা প্রত্যেকটা মানুষের একটা ওষুধ। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ সময় ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। আর এই তিন ভাগের একভাগ সময় যে ব্যক্তি সুষ্ঠুভাবে সুস্থভাবে ঘুমোতে পারে তার মতো সুখী এই পৃথিবীতে নেই। একদিন ঘুম না হলেই বোঝা যায় শরীরের ক্লান্তি, কষ্ট ।ঘুম শরীরকে ক্লান্তি মুক্ত করে মন কে ফুরফুরি করে ,শরীর কে তাজা রাখে।

বেশ কিছুদিন সুস্থভাবে ,সুস্ঠুভাবে কোন মানুষের যদি ঘুম না হয় মানুষের মনটা ভীষণ খিটখিটে হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয় ,মেজাজ ঠিক থাকে না। জীবনে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।। ঋণাত্মক চিন্তাভাবনা মানুষের ঘুম ব্যাহত করে ।অতিরিক্ত চিন্তাও মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়। শরীর ও মন সুস্থ রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। এক কথায় ঘুমের সাথে শরীর ও মনের অঙ্গাঙ্গীভাবে যোগ রয়েছে। শরীর ও মন সুস্থ থাকলে ঘুম ভালো হয়, আবার ঘুম ভালো হলে শরীর ও মনও সুস্থ থাকে।। এক কথায় ঘুম শরীর ও মনের অপরিহার্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই ঘুম কে কেউ কখনো কিনতে পারে না এই ঘুম কখনো কারোর বশেও আসে না অর্থাৎ ঘুম কে কেউ বশীভূত করতেও পারে না। প্রচুর অর্থ সম্পদ অর্থাৎ বৈভবে ও প্রাচুর্যে থাকলেও ঘুমকে বশে আনতে পারে না কেউ। স্বাভাবিক নিয়মে আসে ঘুম। কারো দাস নয়। তবে একটা কথা সত্যি  কায়িক পরিশ্রমী ,দরিদ্র মানুষের কাছে ঘুম যত তাড়াতাড়ি ধরা দেয় ,বৈভব ও প্রাচুর্যের কাছে ঘুম হার মানে। যার অনেক আছে তার কিন্তু সেসব আগলে রাখার ,ধরে রাখার জন্য বা উদ্ভট চিন্তাভাবনা থেকে ঘুমকে ডেকে আনতে পারে না। ঘুম পালিয়ে যায়। আর তখন ঘুমকে ধরে বেঁধে রাখার জন্য খেতে হয় ঘুমের ওষুধ ।

নরম বিছানা ,গদির বিছানা ,অট্টালিকা, ঘরের সৌন্দর্য জোরালো আলো ঘুমের আহ্বাহক হতে পারে না।

এক কথায় ঘুম বিলাসিতা চায় না। ঘুম  কায়িক পরিশ্রম চিন্তামুক্ত জীবন, শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি বিলাস বর্জিত জীবনে ধরা দেয়। আর এজন্যই গরিব মানুষ যেখানে সেখানে, কুঁড়েঘরে ,ফুটপাতে, মশারি ছাড়া ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

দীর্ঘদিন যাদের ঘুম হয় না তারা একটা সময় পরে মানসিক রোগী হতেও পারে। যত দিন যাচ্ছে মানুষের জীবন ততই স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠছে । সামাজিক মাধ্যমে বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই স্মার্টফোন ঘেঁষা হয়ে গেছে। শুধু ঘেঁষা নয়, নেশা হয়ে গেছে। ফলস্বরূপ অনেক রাত জাগছে ।ঘুম হচ্ছে কম। তার ফলে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হচ্ছে, অধৈর্য মনোভাবাপন্ন হয়ে যাচ্ছে।।  সবাইকে কিন্তু বলতে শোনা যায় ভালো ঘুম হচ্ছে না। তবে বেশি স্মার্ট ফোন ঘাঁটলে কিন্তু ঘুমের সমস্যা হচ্ছেই ।এটা আমার কথা নয় বিভিন্ন ডাক্তারের মত।

মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা এখনো স্মার্টফোনের দখলে আসতে পারেনি একমাত্র তারা কিন্তু নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছে। এটা কিন্তু পরীক্ষিত সত্য। ঘুমের ব্যাঘাত হয় বেশি স্মার্ট ফোন ঘাঁটলে। সেজন্য ঘুমের মধ্যে নানা রকম উদ্ভট স্বপ্ন আসে। গাঢ় ঘুম খুব কম মানুষেরই হচ্ছে।বেশিরভাগ মানুষ শিকার হচ্ছে, কম ঘুমের।

আগেই বলেছি ঘুম কেউ কিনতে পারে না। স্বাচ্ছন্দ্য , বৈভব ঘুমের বারোটা বাজায়।

ভালো ঘুমের জন্য ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে যা দাওয়াই পাওয়া যায় তা হল কায়িক শারীরিক পরিশ্রম, রাত্রে ঘুমাবার সময় ঘর অন্ধকার রাখা, রাত আটটা নটার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া। প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া। ঘুমাতে যাওয়ার আগে  তিন ঘন্টা আগে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ছেড়ে দেওয়া। জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড বর্জন করা । এবং বাড়ির স্বাভাবিক শাকসবজি সহ খাবার খাওয়া অবশ্যই জরুরি।

ঘুম মানুষকে যেমন সুখ দিতে পারে, দিতে পারে আনন্দ। আসুন আমরা  চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আট ঘন্টা কাজে যুক্ত থাকি, আট ঘন্টা নিজের স্বাভাবিক জীবনের জন্য রাখি। আর আট ঘণ্টা ঘুম দিই।এই দুষ্প্রাপ্য জিনিসটা অর্জন করতে শিখি। অন্তত নিজের জন্য, নিজেকে ভালো রাখার জন্য ঘুমাই।

Post a Comment