পর্দার বিধান সার্বজনীন
গাজী
আজিজুল হক
পর্দা
নামটা শুনলেই প্রায় সব মানুষের মাথায়
শব্দটার এমন প্রতিক্রিয়া হয় মনে হয়
যেন মুসলিমদের জন্যই শব্দটা ডিকশনারীতে বসানো হয়েছে। পর্দা বলতে মূলতঃ দেহের স্পর্শ কাতর অঙ্গ সমূহকে মার্জিত পোশাক দ্বারা আবৃত করে রাখা,এবং ইন্দ্রিয় শক্তি (চক্ষু,কৰ্ণ,নাসিকা,জিহ্ব,ত্বক,বাক,হস্ত,পদ,যৌনাঙ্গ,পায়ুপথ
ইত্যাদি) অঙ্গ সমূহ হেফাজাত করা। কতটুকু হেফাজাত করা দরকার?যে পরিমাণ করলে
মানুষের লোলুপ দৃষ্টি দেহের আকর্শনীয় স্থানে পড়বে না। কার জন্য পর্দা ? নারী -পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা। কেননা উভয়ই উভয়ের প্রতি অাকর্শনীয়। প্রশ্ন হতে পারে নারী পুরো শরীর আবৃত করবে আর পুরুষ আংশিক
করবে কেন? যার আকর্শনী বা আবেদনময়ী স্থান
যত বেশি তার ঢেকে রাখার প্রয়োজনীতাও তত বেশি। সে
ক্ষেত্রে নারী বেশি অগ্রগণ্য। প্রথম বাক্যটার জন্য আসলে দোষটা পর্দার না।পর্দা প্রথার মত মার্জিত বিধানটা
একঘরে করে রাখার পিছনে কিছু স্বার্থপর মানুষের হস্তক্ষেপ আছে। যারা ধর্মের কৃতিম ফল অনাথের হাটে
বিক্র করে ঘি মাখন খেয়ে
পেট বড় করে ঘুরে
বেড়ায়।আর ধর্মের কিছু স্পর্শকাতর স্থানে এমন ভাবে চাবি দিয়ে রেখেছে যে সেই চাবির
কল শত
সহস্র বছর ধরে চলছে আর চলছে। মিথ্যাই
হলো সে কলের জ্বালানী।
সেখানে অসত্য কথা গুলো বলতে বলতে সত্য রুপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এরা স্রষ্টার বিধান হতে স্বাধারণ মানুষকে দূরে সরিয়ে রেখে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করছে। এই মানুষ গুলো
সৃষ্টির শুরু থেকেই ব্যস্ত এজাতীয় কর্ম কাজে।
আমরা পর্দা নিয়ে আরও কথা বলার পূর্বে দেখি মহান স্রষ্টা পর্দার ব্যাপারে কী
বলেন। আমি রচনাটি সংক্ষেপ করার জন্য বিশ্বের প্রচলিত বড় তিনটি ধর্মের
মূল গ্রন্থের বহু পর্দার বাণী হতে একটা করে মোট তিনটি বাণী এখানে যোগ করতে চাই মাত্র।
(১)সনাতন(হিন্দু) ধর্মঃঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯
অধঃ
পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।মা তে কশপ্লকৌ দৃষান্তস্ত্রী
হি ব্রহ্মা বভুবিথ। অনুবাদ:
হে পুরুষ ও নারী তোমাদের
দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের
চলন হোক সংযত, দেহ হোক পোষাকে আবৃত, নগ্নতা হোক পরিত্যাজ্য।
(২)খ্রিষ্টিয়ান(বাইবেল) দ্বিতীয় বিবরণ ২২৫, ৫,
মহিলারা পুরুষদের পোশাক পরবে না এবং পুরুষরাও
মহিলাদের পোশাক পরবে না, কারণ যে কেউ এই
কাজ করে সে তোমাদের ঈশ্বর
সদাপ্রভুর কাছে ঘৃণার পাত্র।
(৩)মুসলিমদের (কোরআন মমাজিদ) সূরা আন-নূর:৩১-
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং
তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান,
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং
তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা
নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা
যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ,
তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
মহান
মালিকের এই বাণী সমূহ
দ্বারা প্রমান হয় যে,সর্বকালে
সর্ব ধর্মের নারী পুরুষের জন্যই পর্দার বিধান (হুকুম)সমান ভাবে বলবৎ অাছে। এখন প্রশ্ন হলঃ এর পরেও কেন
পর্দা সার্বজনীন হচ্ছে
না? কেন শুধু মুসলিমরাই পর্দার হুকুম ও প্রয়োজনীয়তা স্বীকার
করে ও গুরুত্ব দেয়?(যদিও কিছু মুসলিম গাফেল)। প্রথমতঃ "মুসলিমদের
ধর্মীয় বিধান(কোরআন মাজিদ) অবিকৃত ও উম্মুক্ত। সবার
কম বেশি ধর্মজ্ঞান সম্পর্কে ধারনা আছে।এবং এই কোরআন মাজিদকে
সবার কাছে পৌছে দেবার জন্য বহু মানুষ সেচ্ছায় কাজ করছে, এবং ব্যপক ভাবে এই ঐশী বাণীর
চর্চা চলছে। এই ধর্মে মধ্যম
সত্তাভোগী নাই। কিন্তুু বাকি ধর্ম গুলো সু- সংরক্ষিত নয়।বরং বিতর্কিত
হয়েছে এবং জন-সাধারণের কাছে
উম্মুক্তও নয়। যাও আছে তা আবার বিকৃত রূপে, চর্চাহীন অবস্তায়
মধ্যম সত্তার হস্তক্ষেপপুষ্ট।যার কারণে সাধারণ জনগণ ধর্মের মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। যেটুকু পায় তা ঐ স্বার্থ
লোভি ধর্মগুরুদের মুখ থেকে আসা মনগড়া বাণীর নামমাত্র।প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নেই কোন ধর্মজ্ঞান চর্চার সুযোগ।সে কারণে তারা মহান স্রষ্টার প্রকৃত আদেশ নির্দেশ জানতেই পারছে না।
অসংখ্য
প্রাণী জগতের মধ্যে মহান স্রষ্টা একমাত্র মানুষকেই দান করেছেন বিচারিক গুণ,সততা,নিষ্ঠা,ন্যায়পরায়ণতা,দয়া-মায়া, ভালোবাসা, সংযম, লোভ,লালসা,ক্রোধ,কামপ্রবৃত্তি ইত্যাদি গুনাগুণ। বাকিরা সবাই অসহায় ও অপরিপক্ক।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ দোষে গুণে প্রবাহমান, তবে যত কলহ বিবাদের
উৎপত্তি হয়েছে তার মূলে বেশির ভাগ দায়ী ছিল লোভ,কামপ্রবৃত্তি। নারী ও পুরুষ উভয়ই
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দূর্বল বা আশক্ত।যার কারণে
এখানেই অধিকাংশ কলহের সৃষ্টি হয় ।কেননা মানুষ
সামাজিক জীব তাদের সম্মান ইজ্জত বলতে একটা অনুভূতি কাজ করে। পশুরা যেমন অবাদে নারী পুরুষ একতে বসোবাস করে তেমনি যৌনতায়ও নাই কোন লাজ শরমের বালাই। বীভৎস স্বাধীনতা । কিন্তুু মানুষ
তো সৃষ্টির সেরা জীব।
সে
কারণে আমি বর্তমান সমাজের সুশীল সমাজ ও সাম্যবাদিদেরকেও দায় কম
দিচ্ছি না। কারণ তারা পৃথীবির সব মানুষকে সমান
ভাবতে বলে, সবার আধিকার সমান, সবার রক্ত অভিন্ন ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তুু সবার শরম লজ্জা যে এক হতে
পারে, ব্যক্তি স্বাধীনতায় যে শালীনতা দরকার,
স্রষ্টার বিধান সবার জন্য সমান হতে হয় তা বলতে
/মানতে নারাজ।
কারণ
মানতে গেলে তাঁরা নোংরামির জগতে আর মহারাজ রূপে
থাকতে পারবে না।
সামাজিক
সভ্য প্রাণী আর হিংস বন্য
প্রাণীর মধ্যে যদি পার্থক্য করতে না পারি তাহলে
আমরা কেমন মানুষ হলাম?
বস্তুতঃ পুরুষগণ তার লজ্জাস্থান ভদ্রাচিত পোশাক দ্বারা আবৃত করা ও নিজের দৃষ্টি বিপরিত লিঙ্গের মানুষের প্রতি না দেয়া ও শালীন আচরণ করা অনুরুপ নারীগণ মার্জিত রুচিশীল পোশাক দ্বারা স্রষ্টার বিধান মতে শরীর আবৃত রাখা ও বিপরিত লিঙ্গের মানুষের প্রতি দৃষ্টি নতজানু করে শিষ্টাচার বজায় রাখার নামই পর্দা। হোক সে হিন্দু, খ্রিষ্টান বা মুসলমান।যেহেতু স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষের ধর্মগত ভাবে শারীরীক গঠনে কোন পার্থক্য নাই, সবার দেহ গঠন এক ও অভিন্ন সেহেতু পর্দার বিধান পালনেও পার্থক্য থাকার কথা নয়। মনে রাখতে হবে পর্দার আইন শারীরীক আইন। এ বিধান ধর্মীয়,পারিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করে না। বরং পর্দাহীনতা সর্বত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চন্দন কাষ্টের ভূমিকায় থাকে। অতএব সর্ব ধর্মে বর্ণিত বিধান/আইন পর্দার পক্ষে, পারিবার,সমাজ,রাষ্ট্র বিশ্ব, পর্দার সুফল ভোগী। তাই পর্দা হোক জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন। শান্তিও হবে স্রষ্টার পক্ষ হতে সার্বজনীন। জীবন ও সম্মান হবে নিরাপদ, দূর হবে বিদ্বেষ পূর্ণ মনোভাব। উদ্ভাসিত হবে নিরাপদ বিশ্ব।