উপেক্ষিত আদিবাসী নারী।আদিবাসী নারী প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।আদিবাসী নারী রচনা

উপেক্ষিত আদিবাসী নারী
নমিতা ঘোষ

   বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আজকের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু - আদিবাসী মেয়েদের সঙ্গে চলছে উপেক্ষা বা ছলনা , প্রেক্ষাপট হিসেবে "ছত্তিশগড় " !

শব্দটা "আদিবাসী" - শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে নম্র ,লাজুক , খর্বকান্তি নিরলস সরল মুখের ছবি। এক উপেক্ষিত অনাদৃত গোষ্ঠী ! এরাই বিশ্বের সব দেশেরই মূল জাতি। অথচ দেখা যায় সমগ্র বিশ্ব বা ভারতের অধিকাংশ জায়গায় আদিবাসী নয় , এমন যারা উচ্চবর্গীয় ,তারা ঘৃণা করে,উপেক্ষা ,  আদিবাসীদের বিশেষ করে মেয়েদের। তাদের কৃষ্ণ বর্ণের জন্য করে নানান কটূক্তি - হাসে , ব্যঙ্গ করে তাদের কুরুপ বা খর্ব কান্তির জন্য ! বিভিন্ন উক্তিতে ঠাট্টা করে তাদের ভাষা এবং চালচলনের বিষয়ে। আদিবাসীদের রীতি -রেওয়াজের কোন কিছুই এদের পছন্দ নয়। পছন্দ নয় আদিবাসীদের পোশাক পরিচ্ছদ বা পরিধানের স্টাইল। আদিবাসীদের এরা জংলী বা পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠী বলে উপেক্ষিত দৃষ্টি নিয়ে দেখে আর নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে ! উচ্চবর্গের অভিমানীরা আদিবাসীদের সব কিছুকেই অস্বীকার করে। এই ধরনের চালু ব্যবহার কটু সত্য , যেটা এই প্রবন্ধে উদাহরণে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। ধরা যাক এয়ারহোস্টের চাকরী পাবার কথা। উপেক্ষা এবং অনাদর স্পষ্টত সামনে আসবে - বিশেষতঃ সাঁওতাল ,কোল ভীল, গোর ইত্যাদি ছত্রিশগড়ের এই সকল আদিবাসী কন্যাদের ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রতীত হয়। সরকারী যোজনায় যারা এয়ারহোস্টেসের প্রশিক্ষণ নিয়েছে অথবা নিতে চলেছে। দেখা যায় এয়ার হোস্টেস করার নামে আদিবাসী কন্যাদের সঙ্গে মিথ্যে ছলনা করা হচ্ছে , এটা কটু সত্য। রাজ্যের আদিম জাতি কল্যাণ বিভাগ 2006 সালের পরিকল্পনা হাতে নেয়। উদ্দেশ্য এটা ছিল যে আদিবাসী এলাকার কন্যাদের আত্মনির্ভর করার জন্য এবং মোটামুটি ঠিকঠাক রোজগার পাওয়ার তাদের উপযুক্তভাবে তৈরি করা হবে। কিন্তু , পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আজ অব্দি একটি আদিবাসী কন্যা এয়ার হোস্টেসের চাকরি পায়নি ! ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স বিগত 10 বছর ধরে এয়ারহোস্টেসের নতুন চাকরির দরজা বন্ধ করে রেখেছে। যে সমস্ত প্রাইভেট কোম্পানিগুলি নতুন পদ স্থাপনা করেছে ,তাদের ফর্সা রং এর উপর চাহিদা ! আদিবাসীদের সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞের মতে দেশ এবং দুনিয়ার সমস্ত আদিবাসী এলাকার পুরুষ এবং নারীদের উচ্চতা কম হয় এবং আফ্রিকা সহ এশিয়ার আদিবাসীদের রং কালো। সেই কারণে এই সমস্ত দেশের উচ্চতা কম এবং রং কালো আদিবাসীদের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সে চাকরি পাওয়ার সম্ভবনা কম। যদিও বিশ্বের বা দেশের কোন আইনে বা মানবাধিকারের আইনে এর উল্লেখ নেই , যে কৃষ্ণবর্ণের মেয়েদের যোগ্যতা বা প্রতিভা থাকা সত্বেও এরা বঞ্চিত হবে। কিন্তু ,এটাও বাস্তব সত্য যে সুন্দর মুখশ্রী এবং ফর্সা এই সকল মেয়েরা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি পেতে বেগ পায়না। আদিবাসী কন্যাদের এয়ারহোস্টেস প্রশিক্ষণ কর্তাদের অভিমত হল - পরিকল্পনার সবথেকে বড় নেতিবাচক দিক আদিবাসী কন্যাদের চয়ন প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞ বলেন - আদিবাসী মেয়েদের ইংরেজী শেখানো অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার, এছাড়া মেয়েদের উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির কম হলে বা চেহারায় দাগ বা রং কালো হলে তাদের চয়নিয় হবার সম্ভাবনা নেই এটাই অলিখিত এক চালু নিয়ম বললেই চলে !

বিশ্লেষণে অভিজ্ঞ জনেরা স্বীকার করেছেন যে - মেয়েরা প্রশিক্ষণ নেবার পর এয়ার হোস্টেস হতে পারেনি ঠিক, কিন্তু , তারা কিছু  কিছু ক্ষেত্রে প্রবন্ধন সম্পর্কিত চাকরি পেয়েছে।

      একটি কন্যাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ 90 হাজার টাকা খরচ করে যে সংস্থাকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের অনুসূচিত জাতি এবং জনজাতির 90 টি মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। কিন্তু , 2006 থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র 40 - 42 জন মেয়েরাই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। যদিও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মেয়েরা আবেদন দিয়েছিল কিন্তু , প্রাথমিক পরীক্ষায় অধিকাংশ মেয়েদের চয়ন করা হয়নি। যে সমস্ত গরীব আদিবাসী মেয়েরা চয়নিত হয়েছিল ,তাদের মধ্যে অধিকাংশ আর্থিক সমস্যার কারনে প্রশিক্ষণ অসমাপ্ত রেখে বাড়ি ফিরে যাওয়া শ্রেয় মনে করেছে। কারণ, তাদের নিজ খরচে খাওয়া - থাকার ব্যবস্থা করতে হত। যারা ঘরে ফিরে গেছে তাদের ব্যাপারে বিভাগ বা ভারপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে কোন অনুসন্ধান করা হয়নি , কেন তারা বাড়ি ফিরে গেল ! আরও আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে - যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল অনেক কষ্ট সাধন করে , উপেক্ষা তো সেখানেও -  প্রশিক্ষণ উপরান্তে তাদের এয়ার হোস্টেসের চাকরি তো হয়ই নি বরং কয়েকজন এদিক - ওদিক হোটেল রিসেপসনিস্টের চাকরি করতে বাধ্য হয়েছে। কোন পরিকল্পনার সঠিক পরিণতি নির্ধারণ না করে কার্যকরী করা কতটা সঠিক ভেবে দেখা দরকার আবশ্যক।

                         ----------

Post a Comment