দেবীপক্ষ
অমিতা দাস সরকার
আজ
কলম কথা শুনছেই না,সে লিখবেই।বললাম
কি আর হবে এসব
লিখে,যা যেমন তা
তেমনই থাকবে।শুধু শুধু কালি খরচা।কে কার কথা শোনে।কলম কালি ঢালল!
পিতৃপক্ষের
অবসানে দেবীপক্ষে মহালয়ার তর্পন হয়,প্রশ্ন হল
এই তর্পন,অর্থাৎ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান,তা পিতৃপক্ষেই হয়
না কেন?পিতৃপুরুষ বলতে কি বোঝায়?শুধু
নিজের বাপ-ঠাকুর্দা?নাকি বংশের সমস্ত পিতৃপুরুষ?আবার এক প্রশ্ন এসে
দাঁড়ায় বাপ-ঠাকুর্দার আগের পুরষদের নাম ক'জন জানে!?ঘাটে ভেজা জামাকাপড়ে দাঁড়িয়ে পুরোহিতের মন্ত্র পড়লেই নাকি সেই জল তাঁরা পেয়ে
যান..! তাই হয় নাকি!?
মাঝে
মাঝেই দেখি কুমারী পুজোর হিড়িক।ছোট মেয়েদের আসনে বসিয়ে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজো করা হয়,কিন্তু তারপর?তারপর হয়তো কোনদিন দেখা যায় সেই ছোট মেয়েটিই ধর্ষিতা হয়ে কোন প্যান্ডেলের পেছনে পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়।কত গরীব বাবা মায়ের সন্তান সমাজের নোংরা চালাকিতে দেবদাসী হয়ে পরিনত হয়েছে যৌনদাসীতে।সারাজীবন ঐ মন্দিরের আপামর
পুরোহিতদের যৌন লালসার নিবৃত্তি করে দিনভর হাজারো কাজের পর অবহেলায় অপুষ্টিতে
বয়স বেড়ে কঠিন রোগে ভোগে স্থান হয়েছে পথে,মর্মান্তিক মৃত্যূতে মিলেছে মুক্তি!!
ঘরে
ঘরে মেয়েরা পণপ্রথার বলি হয়েছে।দুর্গা,কালী,লক্ষ্মী পুজো সাড়ম্বড়ে করা হলেও গর্ভের কন্যাভ্রুন হত্যালীলায় মেতেছে পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে!রুপ-গুনের অনেকটা অধিকারী হলেও হয়েছে নারী দোষী,সে কারনেই আম্রপালীকে বাধ্য
করা হয়েছে বারবনিতা হতে।খনাকে কাটতে হয়েছে জিভ্!সহমরনে কোন পুরুষ নিজেকে পুড়িয়ে বিবাহ কথাটির দাম দেয়নি,দিতে হয়েছে নারীকেই।বয়সে তিনগুন বড় বৃদ্ধদের বিয়ের
শখের বলি হয়েছে কচি বয়সের মেয়েরাই।বিধবা হয়ে চুল কেটে সাদা থানে একবেলা নিরামিষ খেয়ে,মাদুরে শুয়ে সবরকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে মেয়েদেরকেই,কোন পুরুষ বৌ মরলে কখনো
বিধবা থুড়ি,বিপত্নীক হয়নি ,কোন শখ বর্জন করে
নি,পরেরদিনই আরো একটি বিয়ে করে ফেলেছে,নইলে চলবে কেন?সে যে পুরুষ!আসলে তারা ভুলেই যায় যে ঠিক একইরকম
সব চাহিদা সব মেয়েদেরও সমানভাবেই
থাকে।সর্বোপরি,তারা এটাও বেমালুম ভুলে যায় যে তাকে গর্ভে
রেখে জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে একজন মহিলাই।
তাই
আজ এই মহালয়ার দেবীপক্ষে
যারা 'মা','মা' বলে মা দুর্গাকে মর্ত্যে
আহ্বান করছেন তাদের উদ্দেশ্যেই কলমের এই বার্তা,ঘরের
মেয়ে বৌকে সম্মান না দিয়ে ,কচি
কচি শিশুদের সুরক্ষা না দিয়ে দেবী
পুজোর নামে নিজেকে আর হাস্যকর না
করাই ভালো।
সর্বশেষে
,স্বর্গে যখন অমৃতলাভ করে অসুরদল দেবতাদের নিধনে উন্মত্ত তখন মহামহিম পুরুষ দেবতারা ভয়ে এদিক ওদিক পালিয়ে গেল কেন?তারা তো দ্যাবতা,মহাশক্তির
আধার,তবে অসুরনিধনে এক মহিলার শরনাপন্ন
হতে হল কেন?কত
উর্বশীদের সাথে যাদের দৈহিক আরাম-বিরামের অঢেল ব্যবস্থা তাদের দ্বারা অসুরনিধন সম্ভবপর হল না কেন?
তাদের সর্বশক্তি কিঐ যৌনকর্মেই শেষ?তারা তবে দ্যাবতা হয় কি প্রকারে!?
অথচ
দুর্গা তাদের দেওয়া অস্ত্রে একাই মহিষাসুরের মতো এক ভয়ঙ্কর দানবকে
নিধন করে স্বর্গকে বিপদমুক্ত করল!
এদেশে
মহিলাদের পুজো করে,অথচ ঘরের বৃদ্ধ বাপ মাকে ভাতের বদলে মারধোর করে,কন্যাভ্রুণ হত্যা করে,মহিলাদের যথেচ্ছ অপমান ,ধর্ষন করে।ঘরে-বাইরে মহিলা বলেই অনেকভাবেই বঞ্চিত হতে হয়...।মেয়েরা দশমাস গর্ভে সন্তান পালন করে যথেষ্ট যন্ত্রনার সাথে, তারপর শীর্ণদেহে রাতের পর রাত জেগে,সন্তানের অসুখ-বিসুখে,কত কষ্টে লালন
পালন করে তাকে বড় করে,কিন্তু
সেই সন্তানের পরিচয় হয় তার বাবার
পদবীতে।সেই দেশে দূর্গা ,কালী,সরস্বতী,লক্ষ্মী,কুমারীপুজোগুলি কি আরো বেশী
অপমানকর নয়!?
এগুলি
আমার কলমের ভাবনা ও প্রশ্ন,আমার
নয়।সমাজের কাছে সে যথাযোগ্য উত্তর
চায়,যদিও জানি সে উত্তর পাবার
নয়।
যা দেবী সর্বভূতেষু
নারীরুপেন সমস্থিতা,
যা দেবী সর্বভূতেষু
সাধারনীরুপেন সমস্থিতা,
যা দেবী মাতৃরুপেন,কল্যাণীরুপেন সমস্থিতা,
যা দেবী শক্তিরুপেন,বিপদহন্তারুপেন সমস্থিতা,
নমস্তসৈ,নমস্তসৈ,নমস্তসৈ,নমো,নমাহাঃ.....।।