"ধর্ম কি উৎসব; ১লা বৈশাখ?"
যেমন ঈদের সময় ঈদ মোবারক, জুমার দিন জুমা মোবারক আর যেহেতু আমরা মুসলিমরা ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি সেখানে-ও দেওয়া যায়, নামাজ মোবারক। মোবারক শব্দটি আরবি। এর অর্থ হল বরকত বা সমৃদ্ধি বা বৃদ্ধি। তাহলে আমরা ঈদ মোবারক যদি বাংলায় বলি এর অর্থ দাড়াচ্ছে খুশি বৃদ্ধি। আবার প্রতিপক্ষকে হারালেও আমরা ঈদ মোবারক বলছি ইদানীং এটাও অর্থ অনুযায়ী ঠিক আছে। তবে, এটার সাথে ধর্মের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন জুমা বৃদ্ধি বা নামাজ বৃদ্ধি। কথাটা কেমন জানি বেখাপ্পা।
তবে, আমরা জুমা বা নামাজ বৃদ্ধি না বলে যদি নামাজ কবুল হোক এই টাইপের প্রার্থনা স্রষ্টার কাছে করতে পারি, তাহলে এটা 'নামাজ বৃদ্ধি' কথাটার চেয়ে বেহতর। কারণ, মানুষতো আর সারাজীবন বাঁচার জন্য দোয়া চাইতে পারে না। কারণ, মানুষ যেহেতু মরণশীল, সেখানে জুমাহ কিভাবে বৃদ্ধি করার দোয়া চাইতে পারে? এমন দোয়া চাওয়া বোকামি যা অসম্ভব বা হাস্যকর। তারপরও যদি আমরা এটাকে সামাজিক প্রথা হিসেবে ঠিক ধরি । কেননা , কিছু সামাজিক প্রথার অর্থ হয় না। এগুলো শুধু মনের আবেগ প্রকাশ। এতে আহামরি সমস্যা নাই।
কিন্তু সমস্যা হল কিছু মানুষ ধর্মকে উৎসব বলতে নারাজ। কারণ, ধর্মে থাকবে ভক্তি-শ্রদ্ধা আর উৎসব মানেতো আনন্দ। যদিও ঈদ মানে আনন্দ কিন্তু জুমাহ মানেতো আনন্দ না। আবার যেহেতু ঈদ আমাদের ধর্ম নামাজ-ও আমাদের ধর্ম। সুতরাং আমাদের নামাজ-ও উৎসব। অর্থাৎ ধর্ম আমাদের উৎসব।
ঠিক তেমনি পহেলা বৈশাখ যেহেতু হিন্দুদের ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সেহেতু এটা হিন্দুদের উৎসব। আর যেহেতু ১লা বৈশাখ বাঙালির বছরের ১ম দিন আর বাঙালি মুসলিম-ও বাংলাদেশে বসবাস করে সেহেতু এটা বাঙালির-ও উৎসব।
কিন্তু কথা হল: উৎসবের ধরনটা কেমন হবে? আমরা কি অন্য ধর্মের সংস্কৃতির মত করে উৎসব করবো নাকি আমাদের ধর্মের মত উৎসব করবো? এখানে বাঁধে আরো বিপত্তি! সেই ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কৃতির সংজ্ঞা জানতে হচ্ছে। সংস্কৃতি হল: ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষের কাজ-কর্ম, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছেদ এমনকি ধর্মীয় পদ্ধতিসহ সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে।
সুতরাং, যেহেতু মুসলিম আর হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংস্কৃতি আলাদা সেহেতু আমরা বাঙালি সত্তেও, আমাদের উৎসব অবশ্যই আলাদা। মুসলিমরা-ও পহেলা বৈশাখ পালন করার অধিকার রাখে তবে মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতির বিপরীতে কখনো করা সমীচীন হবে না।
এখন আসেন: নাচ-গান কি মুসলিমদের ধর্মীয় সংস্কৃতি? যদি মুসলিমরা মনে করে তারা সঠিক ইসলাম পালন করবে তাহলে মুসলিমদের ধর্মে নাচতো হারাম এমনকি অশ্লীল সুর এমনকি কথা-ও হারাম। কিন্তু মুসলিমরা যদি সৌদিকে ইসলাম মনে করে তাহলে সব জায়েজ এমনকি উলু ধ্বনি দেয়া-ও জায়েজ।
কারণ, মক্কা-মদিনায় হজ্ব করতে গেলে একটা বিশেষ মুসলিমগৌষ্ঠি আছে যারা সেখানে হিন্দুদের মত উলুধ্বনি দেয়। আর দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, পৃথিবীর মুসলিম সৌদিকে ইসলাম মানেনা মুখে স্বীকার করলে-ও, মুলতঃ অধিকাংশই সৌদিকেই অনুসরণ করে বলেই মুসলিমের ধর্ম আজকে জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। যেখানে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফহাল নয় সেখানে ১লা বৈশাখ পালনের ধরন নিয়ে মাতামাতি করা বেকারত্বের পরিচয়!
17/04/2024
Lecturer Miraj Uddin