![]() |
মানিক পাল |
একটা নতুন সূর্য উঠুক
মানিক পাল
একটা নতুন সূর্য উঠুক নতুন আলোয় ভরে
নতুন একটা চন্দ্র উঠুক সবার আকাশ জুড়ে!
একটা নতুন সকাল আসুক বার্তা নিয়ে উল্লাসের
উদ্দীপনায় মাতোয়ারা প্রাপ্তি সুখের নিশ্বাসের!
একটা নতুন কুসুম ফুটুক সব মানুষের অন্তরে,
যাক্ ছড়িয়ে সুবাস টুকু নিশ্বাসে পাক্ প্রাণ ফিরে!
একটু শীতল বৃষ্টি নামুক শান্তি-সুখের সৃষ্টি হোক,
যাক ভেসে সব মলিনতা যাক ধুয়ে সব কষ্ট-শোক!
প্রচন্ড এক তুফান আসুক নিক্ উড়িয়ে হিংস্রতা
যাক উড়ে সব বিভেদ যত সকল হীনম্মন্যতা!
একটা নতুন আওয়াজ আসুক গড়ে উঠুক সাম্যতা
আমরা মানুষ,সবাই সবার দুঃখে সুখে ঐক্যতা।
একটা নতুন ভুবন গড়ার হোক আজিকে অঙ্গিকার,
যাক ভেঙে সব কুসংস্কারে ভরা যত রুদ্ধদ্বার।
একটা নতুন শপথ আসুক এবার নতুন বছরে,
মানবতা থাকুক বেঁচে সব মানুষের অন্তরে।।
বিভৎস সেই দিন গুলো
মানিক পাল
কোলাহল কেনো বাহিরে!
ওসব কিসের শব্দ?
পাড়ার সবাই বলছে কিসব
পথ ঘাট নাকি স্তব্ধ!
শহর জুড়ে কারফিউ জারি
হায়নার আনাগোনা,
অস্ত্র হাতে এখানে ওখানে
দিচ্ছে গিয়ে হানা!
নিচ্ছে ধরে--করছে গুলি
নারী আর পুরুষ কাতারে,
গর্ভের শিশু দেখেনি আলো
মরেছে মায়ের জঠরে!
আমার তখন কাঁচা বয়স
মাত্র ছিলো বারো
বুকটা যেনো দিবানিশি
কাঁপছে থরোথরো!
ফুটুস ফাটুস শব্দ শুনে
আঁতকে উঠে বুক,
মা আর বোনের চিৎকার শুনে
ভিজতো দুটি চোখ!
এক সকালে নির্জন মাঠে
বড় রাস্তার মোড়ে,
গাঁয়ের মানুষ হয়েছে জড়ো
কি জানি কাকে ঘিরে!
কৌতুহলে গেলাম ছোটে
সেই সে ভিড়ের কাছে,
চেয়ে দেখি লাল-রক্ত মাখা
রীনা আপু পড়ে আছে!!
মোদের গাঁয়ের ইসমত আলী
করতো ডাকাতি চুরি,
রাজাকারের দলে যোগ দিয়ে
রাতে--
নিয়ে এলো মিলিটারী!
রীনা আপু'র বাবাকে ধরে
নিয়ে গেছে সাথে করে,
মা-কে বেঁধে রেখে গেছে ঐ
বাহিরে গোয়াল ঘরে!
দিনে দিনে সব হিংস্র পশুরা
হয়ে গেলো উন্মাদ
লুটপাট আর রক্তের ঢল
মানলোনা কোনো বাঁধ!
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ব্যাপী
রক্তের হুলি খেলা,
রক্ত খেকোরা বসিয়েছে যেনো
বাঙালির লাশের মেলা!
পুড়লো বাড়ি কাতারে কাতারে
ত্রিশ লক্ষ লাশ,
রিক্ত হয়েছে কতো মা-বোন
করেছে সর্বনাশ!
ঘর ছেড়েছে আমার ভাইয়েরা
নিয়েছে অস্ত্র তুলে,
বাজি রাখে প্রাণ,দামালের দল
নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে!
মুক্তি সেনা-মিত্র বাহিনী
হানলো আঘাত জোরে
আকাশ বাতাস উঠলো কেঁপে
স্বাধীনতার সুরে-সুরে!
কত লাঞ্ছনা,ত্যাগের-পরে
উড়লো পতাকা আকাশে
বড় ব্যাথা পাই, যখন দেখি
স্বাধীনতার স্বাদ ফ্যাকাসে।
আমি সেই সুলতানা
মানিক পাল
এই আমি,ঐ শান্ত গাঁয়ের
ষোড়শী সুলতানা
আমার একটা সনদ আছে
আমি বীরাঙ্গনা!
বাবা আমার স্কুল মাষ্টার
ছিলাম আদরের মেয়ে
কোন দোষে আজ আমার ভুবন
আঁধারে গিয়েছে ছেয়ে?
একাত্তরের ভয়াল রাতে
রাতের খাবার খেয়ে,
মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে
ছিলাম আমি শুয়ে।
গভীর রাতে কারা যেনো
ডাকলো বাবার ঘরে,
এতো রাতে বাবা-দুয়ার
খুললো ভীষণ ডরে!
বাবা'র বুকে ধরলো ওরা
রাইফেলের ঐ নল,
বললো-এই মাষ্টার বেটা
শ্বশুর বাড়ী চল!
চিৎকার শুনে মা আর আমি
ছোটে যাই বাবার ঘরে,
চমকে উঠি,মুখ বেঁধে দেখি
বাপকে নিলো ধরে!
মা আর আমি চিৎকার করি
ডাকাত! ডাকাত!বলে,
অট্ট হেসে ওরা ক'জন
আসলো আবার চলে!
পাশের গাঁয়ের ফরমান আলী
সঙ্গে মিলিটারী,
রাইফেলের ঐ বাট দিয়ে মা'র
মাথায় দিলো বারি।
আমি তখন মা-মা বলে
লুটিয়ে পড়ি ঘরে,
গোঁফওয়ালা এক মিলিটারী
ঝাপটে আমায় ধরে!
জ্ঞান হারা সেই আমি যখন
জ্ঞান পেলাম ফিরে,
চেয়ে দেখি ঐ পশুরা মোর
সব নিয়েছে কেড়ে!
বিবস্ত্র আমি, সর্বাঙ্গে যেনো
শুকুনের ভয়াল ছোবল,
হয়ে গেছি তখন ক্লান্ত আমি
অচেতন দুর্বল।
মরতে গিয়েও হয়নি মরণ
দেয়নি বিবেক সায়,
অস্ত্র তুলে নিলাম হাতে
থাকিনিযে আর গাঁয়।
ক্ষান্ত হলো মুক্তি যুদ্ধ
স্বাধীন হয়েছে দেশ
বয়স আমার ঢের হলো যে
পেকেছে মাথার কেশ।
স্বাধীন দেশে স্বাধীন আমি
ফুটপাতে আস্তানা,
সান্ত্বনা মোর সনদ আছে
আমি বীরাঙ্গনা!
চেয়ে চেয়ে রোজ সনদ দেখি
এলো বুঝি ঐ সুখ,
বড় কষ্টে ছেড়া আঁচলে
চেপে রাখি দু্'টি চোখ।
হাজারো কষ্টে নিজেকে নিজেই
দিয়ে রাখি স্বান্তনা,
আমার একটা সনদ আছে
আমি এক বীরাঙ্গনা।