তৈমুর খানের চারটি কবিতা । কলকাতার জনপ্রিয় কবি

তৈমুর খান 

চারটি কবিতা 

তৈমুর খান 



 ১ 

লিখিনি কোথাও এই প্ররোচনা



সব বাঁধন আলগা হয়ে যাচ্ছে

কোনও কোনও কিশোরীবেলা ভিজছে একা একা

আমরা শুধু অন্ধকারকে কোকিল ভেবেছি

আর সিঁড়ির নিচে শুয়ে শুয়ে যাপন করেছি বসন্তকাল


আমাদের গার্হস্থ্য নদীগুলি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে

অবৈধ যাত্রায়

কোথাও সমুদ্র ছিল না, শুধু মহাসমুদ্রের কল্পনায়

আমাদের বিশ্বাস সহ্য করেছিল চিত হওয়া এবং উবুড় হওয়া


তারপর বহুদিন পর জ্যোৎস্না আর আনন্দ

জটিল অরণ্য প্রান্তরে বাবলাফুল হয়ে ফুটে উঠেছে 

 কাঁদো আত্মা, কাঁদো—

 আয়ু কিনতে এসেছি আজ এই পার্থিব  দোকানে!


  ২ 

আপেল



আপেলগুলি গড়ে আসছে 

                          গড়ে গড়ে আসছে 

                   লাল ঠোঁট মুগ্ধতা নিয়ে চলে যায় 

দেখতে দেখতে বাগান পেরিয়ে যাই 

    হরিণেরা শিং ঘষে নেয় ডালে 

    লাল সূর্যের আলো চুপচাপ বসে আছে                                                   

পাতার ফাঁকে ফাঁকে 

              এক একটা অলৌকিক নদীর মতো 

যদিও মায়াবনে আছি 

         যদিও গার্হস্থ্য বিষাদে পোড়া মন 

                   তবু হরিণীর মতো আমারও তীব্র এক ভাষা জেগে ওঠে 

        ভাষারা প্রকাশ হতে চায় 

আপেলগুলি চেয়ে থাকে 

                 সিঁদুরে আভাস চোখে মুখে — একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি? 

কে দেবে অনুমতি? 

      বিবাহিত জীবন জুড়ে নষ্ট মধুমাস 

        আচ্ছন্ন আঁধারে শুধু ব্যর্থ কোলাহল.....




 ৩

আগুন 


আগুন ছুটে আসছে 

কত দূর যাব আর ? 

বাঁচানো যাবে না কিছুতেই 

দুইপাশে সন্ধ্যামণির বাগান 

ছোটো ছোটো ঘর 

জানালা থেকে আলো আসছে 

সাপের মতন ফণা তুলে আছে স্বপ্নেরা সব 

লম্বা সরু হাতগুলি প্রণয়ের গলা ধরে ঝুলে আছে 

আকাঙ্ক্ষার দেশ ভরে আছে নতুন জাতকে 

আর হাওয়ায় মেশাচ্ছে স্বর বাসন্তী বৈরাগী 

আগুন আসছে দাউদাউ 

নিজের ক্লান্তির ছায়ায় দাঁড়িয়েছি 

আমার পার্থিব আচ্ছাদন টুকু নির্বেদ প্রহর গোনে…



   ৪

সমস্ত দিন শিকারির উল্লাস 


জল উঠছে না জল নামছে ? 

নিজস্ব সংশয়ের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকি 

পাখি মরে যায় 

আজ শিকারির দিন 

আবেগে ঝাপটে ধরি জলের নকশাকে 

কিছু নরমুণ্ড দিব্যি গড়ায় 

কথা বলতে থাকে, দুর্বোধ্য কথারা সব 

আদিম গুহার নিরিবিলি থেকে বেরিয়ে আসে 

দম নিতে থাকি। এরই নাম বাঁচা  ? 

পোশাক খুলে ফেলতে ইচ্ছে করে 

জোয়ার না ভাঁটা? 

ভেজা কুসুমের মতো রমণীর গাল 

মনে মনে সারারাত চাটি—

তাতেও কি স্বাদ আছে? 

বিষাদ এসেছে সব ঘরের চৌকাঠে 

আর রোদ্দুর মাখা হাসপাতালে 

নার্সদের মসৃণ ত্বকের উল্কি আঁকা প্রেরণায় 

আমারও জাগরণ পায় 

এখানেই বিহ্বলতা নাচে 

নরম কোনও অন্যমনস্কতার ভেতর 

আত্মদ্রোহের বাজনা শুনতে থাকি 

বিশ্বাস হয় না জল ওঠানামা করে 

মুকুন্দ ফুলের বাঁশির আয়োজনে 

বসন্তের জানালা খুলে যায় 

দেখতে দেখতে খণ্ড খণ্ড মানব জমিনে 

শস্য ঘ্রাণ ওঠে 

বাতাসে উড়ন্ত গান, স্বধর্ম বিলাস 

সমস্ত দিন শিকারির উল্লাস…

Post a Comment