
শিশির আজম

শিশির আজম
Young Girl Eating a
Bird
আমার স্বপ্ন আমি দেখি তুমি দেখো না মাগরিত্তে
আমার স্মৃতি আমার কুয়ো
জমা করে রেখেছি
আমার আঙুলের তলিয়ে যাওয়া ঢেউয়ে
দীর্ঘ এক সপ্তাহ হাসপাতালে ঘুমিয়ে থেকে বাড়ি ফিরলাম
পেছনে প্রাগৈতিহাসিক ময়েশ্চার ট্রান্সফিউশান
আকাশের দিকে তাকাতে পারলাম না
হাসপাতালের আকাশ
আলোবাতাসের নুনে বেঁচে থাকাটাকে কি বলবে তুমি
একটা মথ একটা সূর্য
রাক্ষসের রক্তমাখা দরজা
আমার ছায়ার সংবেদনশীলতায় এদের সবার হাতে আগুন
আমরা এক বিশাল সমুদ্রজাতি
আমরা এক বিশাল সমুদ্রজাতি, এ কেউ অস্বীকার করে না, সমুদ্রের ফেনায় নির্মিত আমাদের সত্তা।
হ্যা, আমাদের ডানাই আমাদের সত্তা। হাজার হাজার বছর আমরা ভেসে চলেছি। কখনো হারিয়ে এসেছি আমাদের ডানা গভীর সমুদ্রখাঁতে, সবুজ শৈবালে মিশে তা আরও উজ্জ্বল।
আমাদের সন্তানগন সমুদ্রের ফেনার উচ্ছাস। তাদের আছে পাখির ডানা, অপরাধ করবার সাহস, মানুষের ভিতরের অবাধ কুশায়ায় সন্তরণস্পৃহা। গাছকে কী শাস্তি দেব ?
বলতে পার আমরা ভুলের সমাহার, রূপকথার অরণ্য। হ্যা, সত্যি। আমাদের ভাষা, আমাদের গান, আমাদের পার্বণ - রূপকথার সমাহার। আমরা তা সত্যি করেছি।
আমাদের নারীরা আমাদের আকাশ। কত কুয়াশা আসে, ঝড় আসে। নারীরা নক্ষত্রদের ডেকে এনে বসিয়ে দেয় শিশুদের কপালে। তখন শুরু হয় নবান্ন।
আমরা এক বিশাল সমুদ্রজাতি। ফিনিসীয় যুবাটি আমাদের সব গল্পই জানে। সে শুনেছে তার মায়ের কাছ থেকে। নির্জন প্রতিটি সত্তা গাঁথা একই সুতোয়।
স্বীকার করতে হবে, বারবার আমরা পথ হারিয়েছি, বারবার খুঁজে নিয়েছি পথ। দৈত্যদের দেশ থেকে সাত ভাই চম্পা উদ্ধার করেছে বোন পারুলকে।
আমরা এক বিশাল সমুদ্রজাতি। আমাদের মাথার উপর বিশাল আকাশ। তাকে পালাক্রমে পাহারা দেয় সূর্য আর চাঁদ।
গান্ধী আমার কবিতা পড়ুক
আমার গোটাকতক কবিতা গান্ধীর কাছে পাঠিয়ে দিও তো
তা উনি এখন কোথায়
উনি তো এখন ভারতবর্ষে নেই
মহান ভারতবর্ষে উনি নেই
তা বেশ
দরকার নেই আমার কবিতা উনার পড়বার
ওরা
ঐ কবিতারা
একেকটা কম বজ্জাত তো না
মসজিদ
আমার অনেক দিনের আকাঙ্ক্ষা মসজিদ নিয়ে একটা কবিতা লিখবো
হ্যা মসজিদ নিয়ে
হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে
মসজিদের যে আকর্ষণীয় ও বিস্ময়জাগানিয়া স্থাপত্যকর্ম
এর ওপর হাজার হাজার বই লেখা হয়েছে
আর সেসব আমরা পড়েছি
সেসবের ছবি দেখেছি
বিস্ময়াভিভূত হয়েছি
কিন্তু আমি শঙ্কিত
মোল্লারা কি এটা পছন্দ করবে
এটা
আমার এই কবিতা
ওরা তো কিছুই পছন্দ করে না
নাচ
গান
ছবি আঁকা
পহেলা বৈশাখ
লেনন
লেনিন
রোকেয়া
কিছুই পছন্দ না
হাসি না
কুয়াশা না
উদ্যান না
চুমু খাওয়া না
উটের গ্রীবার বিহ্বলতা না
ওরা কবিতাও পছন্দ করে না
কিন্তু আমি তো মসজিদ নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছি
হা মসজিদ
যেখানে আমি আমার আল্লাহকে পাবো
ভাসমান সুপার মার্কেটের যন্ত্রণা
নরম লাল জুতোর ওপর মেয়েটা ভেসে রয়েছে
সুপার মার্কেটে
যখন আমরা কথা বলছি আমাদের কথাগুলো
মহাশূন্যে ভেসে রয়েছে
বাগানের ধাবমান বাতাসে পাথরে গড়া মুখ আর কিছু ব্যথা
পৃথিবীতে শান্তি আসুক
আমার যদি বিশ্রাম থাকতো
নিশ্চিন্তে সেখানে বসিয়ে দিতাম
গ্রামের কাঠবিড়ালিটিকে
সে-ই ঢুকতে পারে বৃত্তটির ভিতর
সেখান থেকে জলের রাস্তায়
শান্তিময়তার দেশে আমাদের নিয়ে যাবে
সেখানে অন্য সব প্রাণী
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শিশির আজম
জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮
জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা :
এলাংগী, কোটচাঁদপুর
ঝিনাইদহ -৭৩৩০
বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থসমূহ :
ছাই (২০০৫)
দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮)
রাস্তার জোনাকি (২০১৩)
ইবলিস (২০১৭)
চুপ (২০১৭)
মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮)
মাতাহারি (২০২০)
টি পোয়েট্রি (২০২০)
সরকারি কবিতা (২০২১)
হংকঙের মেয়েরা (২০২২)
আগুন (২০২৪)
বিষ (২০২৩)
সম্পাদিত ছোটকাগজ : শিকড় (৫ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
সম্পাদিত কবিতার ভাঁজকাগজ : বাংলা (৩ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement এর উশকানিদাতা