ধর্ষণ বন্ধ হোক
দেবাশীষ দাস
আমরা মানুষ, জগতের শ্রেষ্ঠ জীব। আমরা সভ্য, আমরা সামাজিক জীব। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে সভ্যতা ভুলে মানুষ ক্রমশ অসভ্য হয়ে উঠছে। মানব সমাজে ক্রমশ বাড়ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ। কিন্তু কেন ? মানুষের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতা বাড়ছে কেন ? মানবিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয় কেন ? ক্রমশ ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ কি- এই বিষয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। সমাজ বিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীদের উচিত এই বিষয়ে গবেষণা করা। আমরা যারা সমাজের সভ্য মানুষ। যারা এই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কলম ধরি। যারা মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল করি। মানব বন্ধন এবং প্রতিবাদ বিক্ষোভ করি। আমাদেরও উচিত শান্ত চিত্তে একবার ভেবে দেখা।
মেয়েদের পোশাক ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না। কিছু মানুষ ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে। এটা উচিত নয়। অপরাধীরা আত্মপক্ষ সমর্থনে কুযুক্তি হিসেবে মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে। কিছু মানুষ অপরাধীদের আড়াল করার জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে। কে কি পোশাক পরবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলা রুগ্ন মানসিকতার পরিচয়। কখনো কখনো খবরের শিরোনামে উঠে আসে দুই আড়াই বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যারা ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে তাদের কাছে প্রশ্ন, ছোট্ট শিশুটির কি পোশাক পরা উচিত ? যারা ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- ধরুন কোনো এক দোকানদার দোকানে বিস্কুট চকলেট চিপস্ প্রভৃতি সাজিয়ে রেখেছে। কোনো ক্ষুধার্ত শিশু এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে পালিয়ে গেল। শিশুটিকে ধরতে পারলে কি করবেন ? নিশ্চয়ই সবাই মিলে উত্তম মধ্যম দেবেন। তার বংশের সবাইকে গালি দেবেন। শাস্তি হিসেবে হয়তো শিশুটির মাথা ন্যাড়া করে দেবেন। কেউ কি দোকানদারকে দোষারোপ করবেন যে, এভাবে জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখলে চুরি তো হবেই ? তাহলে ধর্ষণের ক্ষেত্রে উল্টো মনোভাব কেন ? প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। নির্যাতিতার দিকে আঙুল না তুলে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সমাজ যতদিন অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করবে ততদিন ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
অপরাধ দমনে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন। ধর্ষণ বন্ধে প্রয়োজন কঠোর শাস্তি এবং দ্রুত বিচার। মেডিকেল টেস্ট এর মাধ্যমে শুধু এটা নিশ্চিত করা যে, অভিযুক্তরা আসল অপরাধী কিনা। অপরাধ প্রমাণিত হলে যত দ্রুত সম্ভব এদেরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা উচিত। যাতে করে পরবর্তী কালে কেউ ধর্ষণ করার আগে হাজার বার ভাবে শাস্তির ভয়ে। সেই সাথে ধর্ষকের পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে নির্যাতিতার পরিবারকে দেওয়া উচিত। তাহলে প্রতিটা পরিবার পরিবারের ছেলেদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। এটা সত্য যে, আইন প্রয়োগ করে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু আইন যখন কঠোর হবে তখন আইনের ভয়ে মানুষ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বর্তমানে শিক্ষা একটি প্রতিযোগিতার ময়দান হয়ে গেছে। সবাই শুধু নম্বরের পেছনে ছুটে। শিক্ষা ব্যবস্থাও শিক্ষার্থীরা কিভাবে সহজে বেশি নম্বর পাবে সেদিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যে যত বেশি নম্বর পাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তার তত ভালো সুযোগ। তাই সবাই নম্বরের পাগল। প্রাক্ প্রাথমিক থেকেই শুরু হয়ে যায় নম্বরের প্রতিযোগিতা। শিশুটি মানুষের মতো মানুষ হচ্ছে কিনা সেটা উপেক্ষিত থাকে। চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা স্কুল কলেজে বাধ্যতামূলক করা উচিত। যাতে করে একজন শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জনের সাথে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সুস্থ সমাজ গঠন। মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ যত বৃদ্ধি পাবে অপরাধের প্রবণতা তত হ্রাস পাবে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া খুব জরুরি আজ। কবি সাহিত্যিকদের কলম ধর্ষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক। কলম চলুক সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। প্রতিবাদ শুধু কলমে নয়। প্রয়োজনে সবাইকে পথে নামতে হবে। সম্প্রতি ঘটে গেল দুটি নৃশংস ধর্ষণের ঘটনা। একটি ভারতের উত্তর প্রদেশে এবং আরেকটি বাংলাদেশের সিলেটে। আজ আমরা যদি ঢাকা কলকাতা চট্টগ্রাম কিংবা আগরতলায় বসে ভাবি ওখানে হয়েছে তাতে আমাদের কি, তাহলে এটা মারাত্মক ভুল হবে। আজই প্রতিবাদে গর্জে না উঠলে অপরাধীদের সাহস বেড়ে যাবে। সমাজে অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড আরো বেড়ে যাবে। কাল হয়তো আমার আপনার শহর কিংবা গ্রাম এমন নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হবে। তাই সবাই প্রতিবাদে গর্জে উঠুন। আওয়াজ উঠুক আর নয় ধর্ষণ। ধর্ষণ বন্ধ হোক। ধর্ষণমুক্ত সুস্থ সুন্দর সভ্য সমাজ গড়ে উঠুক।