মহাবাণীর আলোকে ইশ্বরের পরিচয়। ঈশ্বরের পরিচয়। স্রষ্টা ইতিহাস



প্রবন্ধ

             * মহাবাণীর আলোকে ইশ্বরের পরিচয় *

                          (শব্দ সংখ্যা ৫০৫)

ইশ্বরের পরিচয় কিংবা অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়ের পরিসমাপ্তি আজও শেষ হয় নি। এ নিয়ে  দুটি কথা না বললেই নয়। আমাদের পুরো শরীরের এক একটি অংশ একেকটি দায়িত্ব বা কাজের জন্য নির্ধারিত। পায়ের কাজ যেমন হাত করতে পারে না, তেমনই চোখের কাজ কান করতে পারে না। তদ্রুপ ইশ্বরের আপন আপন শক্তি একেক গুণাবলীর ভিত্তিতে এক এক কার্য সম্পাদন করে। মহাবাণী ইশ্বরকে নির্দিষ্ট কোনও আকারে বা দেহধারী বিশিষ্ট অতুলনীয় কোনও প্রাণীর মত মনে করে না। তিনি মহাকাশের কোনও বিশাল এলাকায় এক সিংহাসনে বসে আছেন এবং সিংহাসনের একেকটি পা, একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ত্রিশলক্ষ  কোটি কিলোমিটার এমনটিও বিশ্বাস করে না। সিংহাসন বা আরশের চারিপার্শে অগণিত ফেরেশতা নামের জ্যোর্তিময় প্রাণী ইশ্বরের গুণগানে জিকির করতে করতে চক্কর দিচ্ছেন এমন কল্পনাও চিন্তাবিদ মানুষকে শান্তি দেয় না। ইশ্বরের হাত আছে কিংবা অগণিত চোখ রয়েছে যা উজ্জল নক্ষত্রের মত এমনটিও স্বাধীন চিন্তক ও গবেষকদের হৃদয়ে স্থান পায় না। মহাবাণী পুস্তক বলছে ইশ্বর হচ্ছেন সকল প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির অধিকারী এক ‘অদৃশ্য মহাশক্তি’। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে এই মহাশক্তি বলতে আমরা কী বুঝবো ? খুব সংক্ষেপে বললে বলতে হয়; 

যে শক্তির দ্বারা সমস্ত মহাবিশ্ব গঠিত হয়েছে, ‘যে শক্তি ডার্ক-মেটার বা অদৃশ্যবস্তু হিসেবে বিজ্ঞানের কাছে রহস্যময় হয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। যে শক্তির দ্বারা মহাকর্ষ বল, চুম্বকীয় বল, মহাজাগতিক রশ্মি  ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়েছে। যে শক্তির দ্বারা মহাবিশ্বের সমস্ত গ্যালাক্সি ও তারকারাজিসহ নানাবিধ গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। যে শক্তির গুণাবলীতে বৈচিত্রময় প্রাণী ও ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ইত্যাদি সৃষ্টি হতে পারে। যে শক্তির গুণাবলীতে সমস্ত  আলোর কণা, কার্বনকণা, পদার্থকণা ও রসায়নিক অণুকণা কিংবা বায়োলজিক্যাল অণূকণা নানা ফর্মে সংগঠিত হয়ে বিশেষ বিশেষ সূত্র মেনে চলতে বাধ্য থাকে।  এরকম ‘সম্মিলিত শক্তির সীমাহীন সক্ষমতা ও প্রভাব’ কে ইশ্বর বলা যায়। অতএব ইশ্বর প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষভাবে সর্বত্র বিরাজমান। অতএব হে মানুষজাতি! তোমরা জীবন ও প্রকৃতির যা কিছু নিয়ে চিন্তা করবে সেখানেই ইশ্বরের সংকেত পাবে। যেদিকে তাকাবে সেদিকেই মনের চোখে ইশ্বরকে দেখতে পাবে।  

বিজ্ঞান সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে পদার্থ বা বস্তু কি? সোজা কথায় যার ভর আছে, কিছুটা স্থান দখল করে, বল প্রয়োগ করলে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং যা আমরা আমাদের সকল ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করতে পারি তাই পদার্থ। এই পদার্থ তিন প্রকার কঠিন তরল ও বায়বীয় বা গ্যাসীয়। বাস্প কিংবা গ্যাসকে উচ্চ মাত্রায় [কমপক্ষে দশহাজার ডিগ্রী ফারেনহাইট] তাপ দিলে পদার্থের যে অবস্থা পাওয়া যায়, তা হলো  পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বা প্লাজমা। ইদানিং এই প্লাজমাকে চতুর্থ প্রকার পদার্থ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে। উল্লেখ্য যে প্লাজমাতে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা এবং ধনাত্মক আয়নের সংখ্যা প্রায় সমান। পদার্থকে ইংলিশ ভাষায় বলা হয় ম্যাটেরিয়েল। এই পদার্থ বা ম্যাটেরিয়েলের সংজ্ঞায় যা যা অন্তরভুক্ত করা যায়, তাই হচ্ছে ম্যাটেরিয়েলিস্টিক বা বস্তুগত।

পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্ম  ইশ্বরকে ম্যাটেরিয়েলিস্টিক বা বস্তুবাদ এর আওতাভুক্ত হিসেবে অনুমান করেছে কিংবা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করার জন্য নানাবিদ যুক্তি হাজির করেছে। যেমন; ইশ্বরের সিংহাসন আছে। তাঁর হাত আছে, চোখ আছে, তিনি বসতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাকে আবার সর্বত্র বিরাজমানও বলা হয়েছে। আবার উজ্জ্বল আলো বা প্রদীপের আলোর মতও বলা হয়েছে। এতদ্ব্যতীত যে কোনও মানুষ জাতির সমাজে এমনকি জীব-জন্তুর জগতে কিংবা প্রাকৃতিক জগতে যত প্রকার গুণাগুণ থাকা সম্ভব, [ব্যাকরণের ভাষায়] ওইসব গুণের অধিকারীও সেই মহান ইশ্বর, একথাটিও অত্যন্ত জোর দিয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু ‘মহাবাণীর আলোছায়া’ ইশ্বরকে কোনও ‘নির্দিষ্ট’ ম্যাটেরিয়েলিস্টিক বা  বস্তুবাদের সংজ্ঞায় আওতাভুক্ত করেনি এবং এটাই ধ্রুব সত্য।


Post a Comment