ক্ষোভ নিয়ে প্রবন্ধ। ক্ষোভ নিয়ে রচনা। ক্ষোভ নিয়ে প্রতিবেদন

প্রবন্ধ:

ক্ষোভ 
আবদুল গনি ভূঁইয়া 

বাংলা সাহিত্য হচ্ছে একমাত্র বাংলাদেশের বাঙ্গালী জাতিসত্বার দাবিদার। বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা প্রকৃত বাঙ্গালী জাতিসত্বার গর্বকারী , অন্যকোনো দেশের বাঙ্গলা ভাষাচর্চার মানুষেরা নয়? বাংলা ভাষা, বাঙ্গালী্ত্ব, এবং বাংলাদেশ সম্পূর্ণ আমার দেশের বাঙ্গালীর। 

আজকাল কিছু বাংলায় কথা কয় এমন ভিনদেশী মানুষ বাংলাসাহিত্যের মূলধারার সত্তাধারী সেজেছেন। কথায় কথায় এদেশের বাংলা ভাষা সাহিত্যচর্চা ও সংস্কৃতির আসর গুলোকে দখল করতে বসেছেন। যেনো,উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো! 

ইদানিং সাহিত্যের আসরে গেলেই দেখি এই বিদেশীদের দখলদারিত্ব দৌরাত্ম এতোটাই বেশি যেনো আমরা যারা এদেশের বাংলাসাহিত্যের লেখক কবি সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক মানুষ আছি আমরা যেনো কিছুই না,আমরা শুধু তাদের ছাত্রছাত্রী হয়ে মঞ্চের সামনে স্রোতা হয়ে বসে থাকতে এসেছি! 

তাদের গুণকীর্তন আর বাংলাভাষার বাংলাভাষা চর্চার উপর পাণ্ডিত্য জ্ঞান গ্রহণ করে ধন্য হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপযুক্ততা নেই! বাংলাদেশের সাহিত্যের মঞ্চে তাদের এমন পদচারণা ও দৌরাত্ম দেখে আমি শঙ্কিত! 

বাংলাভাষাচর্চার এরূপ পাণ্ডিত্য জ্ঞানের উপর তাদের এমন জাহিরী,গর্ববোধ দেখে মনে হয় আগামী বাংলাদেশের বাঙ্গালীর সন্তানেরা ভাষাচর্চার তীর্থস্থান খুঁজতে ঐ ভিনদেশী বাঙ্গালী পন্ডিতদের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না! 

তাদের এইরুপ আধিপত্যে,অহংকার বোধের অহমিকা দেখে আমি শঙ্কিত আতঙ্কিত এবং নির্বোধ ও হতবাক হয়ে বসে থাকি! এদেশের সাহিত্য অনুষ্ঠানে প্রায় শতকরা পয়ষট্টি ভাগ সময় ঐ উড়ে আসা জুড়ে পড়া মানুষের দখলেই থাকে। আমাদের এদেশের লেখক-সাহিত্যিকদের জন্য কবিতা আবৃত্তি সাহিত্য বিষয়ক বিষদ কোন আলোচনার তেমন একটা সময় বরাদ্দ থাকে না ! 

ভিনদেশী বাংলাসাহিত্য চর্চার ঐ মানুষ গুলো বিনা দ্বিধায় যেনোতেনো নামধারী আয়োজকদের একটা টেলিফোন কলেই দারুণ অনায়েসে এদেশে চলে আসে বেশ কিছুদিন ঘুরে ঘুরে সাহিত্যের ক্রেস্ট ব্যাবসায়ীদেরকে ইনিয়ে বিনিয়ে পটিয়ে নানান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এদেশের কবিসাহিত্যিকদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

আমাদের আচার-আচরণ সভ্যতা কৃষ্টি সংস্কৃতির যে ভাবধারা তার ব্যাঘাত ঘটায়ে তাদের মতো বাঙ্গালী হতে প্রভাব বিস্তার করছে। কথায় চলনে বলনে আচার-আচরণে আমরা যেনো এক ভিনদেশী বাঙ্গালী হতে চলেছি। 

আমাদের এদেশের কিছু সুবিধাভোগী অসাধু সাহিত্যের ক্রেস্ট ব্যাবসায়ী এদেরকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে মিজেরা লাভবান হতে যেয়ে এদেশের সহজ সরলমনা প্রকৃত সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি চর্চার লোকদেরকে ওদের দর্ষক হয়ে হলরুমে ভর্তি করতে নিয়ে উপস্থিত করছে।  

এনিয়ে বানিয়ে পটিয়ে অনুষ্ঠানে গিনিপিগ হিসেবে হাজির করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে আমাদের বাংলাভাষা চর্চায় আত্মনিমগ্ন বর্তমান কবিসাহিত্যিকগন নিজের আলোর জ্যোতি বিকশিত করতে কোন পরিচর্যার সুযোগ পাচ্ছে না।

রাষ্ট্রীয়ভাবেও পরিপূর্ণ সুযোগসুবিধা পাচ্ছে না এমনকি বেসরকারি ভাবেও না! এই দূর্বল অব্যবস্থার সুযোগে ভিনদেশী বাঙ্গালীরা আমাদের সাহিত্যের মানুষদের উপর গুরু সেজে বসেছে! 

বাংলাদেশের লেখক কবিসাহিত্যিক ও সংস্কৃতির কর্মীদের উপর এমন অবহেলা অবমূল্যায়ন অবিচার চলতে থাকলে সুসাহিত্যিক দূরের কথা প্রকৃত সাহিত্যকর্ম টা-ই হারিয়ে যেতে পারে। বাংলা সাহিত্যের আদি কালেও বহু কবিসাহিত্যিক অবহেলা,অমর্যাদা ও অবমূল্যায়নের শোক-দুঃখে রাজার রাজদরবারের চাকুরী ত্যাগ করেছে, নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে, মানবেতর জীবন যাপন করেছে, তিলেতিলে নিজেকে ধ্বংস করেছেন। 

আজও এর ব্যতিক্রম নয়, একজন অকবি সাহিত্য বুঝে না, কবিতা বুঝে-না শুধু টাকাওয়ালা ধনপতি সমাজপতি  হওয়ার কারনেই ক্ষমতাবান মানুষ হয়ে গেছে। তারা কবি ও কবিতার মঞ্চে এসে বিশেষ আসন গ্রহণ করেন। কবি'কে সনদ, উত্তরীয়, ক্রেস্ট, সম্মাননা দিয়ে অলংকৃত করেন। 

এরইমধ্যে কোন কবি যখন তার ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয় এবং মনের ক্ষোভে কিছু বলতে চান তখনই ঐ অসৎ ক্রেস্ট ব্যাবসায়ীরা সবাই মিলে তাকে হেনস্তা করার জন্যে তেড়ে আসেন,দস্তুরমত তাকে অপমান করেন। 

কি আশ্চর্য কবির মর্যাদার চেয়ে ঐ অকবির মর্যাদা রক্ষায় আয়োজক চাটুকারেরা কবিকে হেনস্তা করেন! মনের দুঃখে আবার কবির ভাষায় বলতে হয়, " হায়রে বাঙ্গালী তোরা মানুষ হবি কবে " ?  

জ্ঞানী গুণি কবিসাহিত্যিক অবহেলা করে কোনদিন কোন জাতি নিজেদের কে সম্মানিত করতে পারেনি। দুদণ্ড প্রতাপশালী শাসক গজনীর সুলতান মাহমুদের দরবারে ত্যাগ করে শাহনামা রচয়িতা কবি ফেরদৌসী সেকালে'ই কবিত্ব  বিসর্জন করেছেন তবুও মাথা নত করেন নি। 

এ-যুগেও এমন অসৎ ক্রেস্ট ব্যাবসায়ীদের কপালে লাথি মেরে বহু কবি আত্মাহুতি দিবেন কবি সত্তার বিসর্জন দিবেন  তবুও ঐ সব অসৎ সাহিত্যের ক্রেস্ট ব্যবসায়ীদে কাছে মাথা নত করবেন না। 

কুমিল্লা। 

০২/০৯/২০২৩

Post a Comment