কিশোর অপরাধ এবং আমাদের দায়। কিশোর অপরাধ রচনা। কিশোর অপরাধ প্রবন্ধ

কিশোর অপরাধ এবং  আমাদের দায়
সাদিয়া আফরিন মুক্তা 

অপরাধ মানেই শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয়।মানুষ সমাজ থেকেই অপরাধ রপ্ত করে। কেউ বংশগত অপরাধী নয় বা পৃথিবীতে কেউ জন্ম থেকে অপরাধী হয়ে আসে না।সামাজিকীকরণ যেমন মানুষকে আদর্শ ও নীতিপরায়ন করে তোলে তেমনি পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কিছু মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে। তেমনি একটি অপরাধের নাম হচ্ছে কিশোর অপরাধ। কিশোর-কিশোরীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে বলে কিশোর অপরাধ। ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ছেলে কিংবা মেয়ের দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলে।বিজ্ঞানী বিসলার বলেছেন, কিশোর অপরাধ হলো প্রচলিত সামাজিক নিয়মকানুনের উপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের অবৈধ হস্তক্ষেপ। বিজ্ঞানী বার্ট বলেছেন, কোনো শিশুকে তখনই অপরাধী মনে করতে  হবে,যখন তার অসামাজিক কাজ বা অপরাধ প্রবণতার জন্য আইনগত ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে।বাংলাদেশের কিশোর অপরাধকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-শহর এলাকার কিশোর অপরাধী,গ্রাম এলাকার অপরাধী,নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোর অপরাধী ও উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোর অপরাধী। এসকল কিশোর অপরাধগুলোর মধ্যে যে ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলো:জুয়া খেলা,চুরি-ডাকাতি,পকেটমার, ছিনতাই,নেশা করা,মারামারি, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, খেলার মাঠ বা বিদ্যালয়ে মারামারি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা,বাস,ট্রেন বা সিনেমা হলে বিনা টিকিটে যাওয়া ইত্যাদি।আধুনিক সভ্যতার ফলশ্রুতিতে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে সমাজে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া পারিবারিক   অস্থিতিশীলতা,সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ, বাবা-মায়ের বহুবিবাহ,অর্থনৈতিক দূরাবস্থা, সঙ্গদোষ, অপসংস্কৃতি কুপ্রভাব,ফেইসবুক, ইন্টারনেটের অপব্যবহার ইত্যাদি। এছাড়া যেসব পরিবারের বাবা-মা উভয়েই চাকুরী করেন এবং সন্তান বাসায় একা থাকে তারা অপরাধ  ভাবনার জন্যে অনেক সময় পায়,আবার বাবা-মায়ের অতিরিক্ত আদরস্নেহ,খাদ্য,বস্ত্র,শিক্ষা,স্বাস্থ্য  ইত্যাদি মৌলিক অধিকার বঞ্চিত  শিশুরা সহজেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে এবং মারাত্মক সব কাজ করে থাকে।শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। আর শিশুদের উপরই নির্ভর করে ভবিষ্যতের উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বাঙ্গনে অবয়ব।শিশুরা যদি সঠিক শিক্ষা ও পরিচর্যায় বেড়ে উঠে তাহলে  তারা সঠিকভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ পরিচালনা করতে সক্ষম হবে,জাতিকে উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে,সর্বোপরি দেশ পাবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ, যোগ্য ও সুদক্ষ পথপ্রদর্শক।অন্যথায় শিশুরা যদি কম বয়সেই অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে তাহলে সমাজে নেমে আসবে মহাবিপর্যয়,বিশৃঙ্খলা, রাস্তাঘাটে  ছিনতাই-হাইজ্যাকারের ফলে মানুষ হারিয়ে ফেলবে সামাজিক নিরাপত্তা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার পরিবেশ শান্তিশৃঙ্খলা হবে বিনষ্ট, বাড়িতে শিশুদের অশুভ আচরণে পারিবারিক শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হবে।আজকাল এখানে-সেখানে সচরাচর যা দেখতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়,দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে।তাই শিশুদের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মা-বাবাকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে,তারা যাতে বিপদগামী না হয় সে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।এবং যেসব শিশু-কিশোর মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তাদের চিহ্নিত করে যথাসম্ভব সকল চাহিদাপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।তাদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের জন্য গঠনমূলক পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকাতে কিশোর অপরাধ সম্পর্কে বিশেষ অনুষ্ঠান ও প্রচারণা চালু করতে হবে এবং কিশোর আইনব্যবস্থাকে আরো জোরদার ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে ইত্যাদি। এগুলো যদি আমরা সকলে সঠিকভাবে পালন করতে পারি  তাহলে সমাজ ও দেশ থেকে কিশোর অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব। অতএব,কিশোর অপরাধকে ছোট করে দেখলে হবে না, বরং এর গঠনমূলক সমাধানকল্পে সকলকে সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ কিশোর অপরাধকে প্রশ্রয় নয়,

বরং এর নির্মূলকার্যে সকলকে স্ববান্ধবে এগিয়ে আসতে হবে অবশ্যই।

Post a Comment