কোটা নিয়ে কবিতা। কোটা আন্দোলনের কবিতা। কোটা নিয়ে ছড়া

ঘাড় কুঁজোর অন্তরে দোষ
জিরাফত হোসেন


সাধারণের চাকরি নাই দলের ছেলে আগে
বঞ্চিত ছাত্র সমাজ ঘুম থেকে সব জাগে।
পথে নেমে আন্দোলন করে অধিকারের দাবি
মানতে চাই না কিছুতেই সরকারের হাতে চাবি।
পুলিশ দিয়ে দমন করে ন্যায়ের আন্দোলন
গুলি খেয়ে ছাত্র মরে তাই ছাত্র জাগরণ।
দেশ জুড়ে পথে নামে ওরা রাজাকারের দল
প্রতিবাদে রাজপথ জুড়ে ছাত্রের নামে ঢল।
দমন পীড়নের মাত্রা বেড়ে সীমালংঘন করে
রক্তে ভাসে রাজপথ তরুণ তরুণীর রক্ত ঝরে।
স্বৈরাচারী শাসক মাপতে পারেনি ছাত্রদের শক্তি
কথা বলার সৌজন্য দেখায়নি ছিলনা মনে ভক্তি ।
কোটা আন্দোলনে হয়েছে ছাত্র সমাজের জয়
আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে করেনি প্রাণের ভয়।
দেশের জনতা কোটা আন্দোলনে দিলো যোগ
নিপীড়িত মানুষের গণ বিক্ষোভে  কষ্ট ভোগ।
কিছু ঘাড় কুঁজো মানুষ অন্তরে পুষে  রোষ
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনরোষ তাতেও খুঁজে দোষ ।
নানা রঙে কোটার ব্যাখ্যা করছে কিছু লোক
পুলিশ মারে ছাত্র মানুষ  তার বেলা নাই শোক।


কোটা প্রথা 
শওকত কামাল বাবুল 


বীরবিক্রম ওলী সুবেদার, 
বীর সন্তান দেশমাতৃকার। 
ছিলোনা দিবা ছিলোনা রজনী, 
যেখানে যুদ্ধ সেখানে তিনি। 
এলো যবে দেশে স্বাধীনতা, 
শুনেছি তাঁর মুখে কিছু কথা। 
শুধু মাটি মানুষের তরে, 
গিয়েছেন তাঁরা যুদ্ধ করে। 
দেশের মুক্তিযুদ্ধা গণ, 
বলেনি কোটার কথন। 
দাবী করেননি কোন ভাতা, 
ভাবনা মানুষেরই কথা। 
তাহলে কেন আসবে এখন, 
দেশে কোটার এই কথন। 
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা গণ, 
তালিকা ভুক্ত ছিল যে তখন। 
সাহায্যকারী ছিল কোটি কোটি। 
যদি তালিকা ভুক্ত হয় সেটি। 
যে করিয়েছেন একটু জলপান, 
তাকেও দাও তালিকায় স্থান।  
নাহলে উঠিয়ে দাও কোটা প্রথা। 
প্রাধান্য দিবে শুধুই যোগ্যতা।


 "কোটা না কাটা"
  মহিদুর জামান


জীবন দিয়ে  যুদ্ধ করে, পেয়েছি প্রিয় স্বাধীনতা।
কোটায় কোটায় বিভক্ত জাতি,স্বাধীনতারনামে পরাধীনতা।
স্বাধীন দেশে বাস করি মোরা ,সকলের সমঅধিকার।
কোটা নামক কাটা বিঁধেছে গলায়,অধিকার চাইলেই রাজাকার।
সমান সুযোগ সমঅধিকার, কে না পেতে চায়?
যোগ্য ব্যক্তিগণ সুযোগ না পেয়ে,আড়ালেই রয়ে যায়।
প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন করলে, কোটার কেন প্রয়োজন?
কোটা হয়েছে  বিষের কাটা, গচ্ছা যাচ্ছে উন্নয়ন।
ডান হাতে করিলে দান বাম হাত না জানে
এই ধরনের নীতি কথা কয়জনে বা মানে।
যুগ যুগ ধরে কোটা নামক প্রথা এ দেশে বিদ্যমান
ধ্বংস হোক কোটার প্রথা- জেগে উঠার আহবান। 
সকল ক্ষেত্রে  কোটা নামক শক্তি করছে আজ দখল
মেধাবীর মেধা হচ্ছে না প্রয়োগ,  ধ্বংস জাতি সকল।
কে করিবে প্রশ্ন? দাঙ্গা - হাঙ্গামা কিংবা আন্দোলন
একটি জাতিকে করতেই খুশী কখনও হয়নি প্রয়োজন।
কোটা প্রথার বিলপ্ত চাই না শুধু দাবী সংস্কার 
শ্রেনীবৈষম্য নিপাত যাক, গর্জে উঠুক আর-একবার। 
কোথায় আছে কোটা প্রথা? যার প্রভাবে ধ্বংস জাতি 
কোটি চাই না, সংস্কার চাই?  ঘরে ঘরে সবুজ বাতি।
কোটার জোরে  মন্ত্রী-এমপি নামী দামী সরকারী চাকুরী  
অযোগ্য ব্যক্তিগণ করছে শাসন, সবকিছুতেই মাতবারী।
দেশ ও দশের উন্নায়ন চাইলে কোটার সংস্কার  চাই
যোগ্য ব্যক্তিগণ বসলেই আসনে ,সমান সুযোগ পাই।।
####


কোটা আন্দোলনে রক্তাক্ত প্রান্তর 
মোর্শেদা চৌধুরী এ্যানি


আমি ১৯৫২ দেখিনি কিন্তু শুনেছি তাঁর কত নির্মমতা
ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে তাইতো মাতৃভাষার অর্জন,
নিজ ভাষাকে ফিরিয়ে পেতে প্রাণ দিল ভাষা শহীদ
হাজারো বাঁধাকে স্তব্দ করলো ছাত্র ছাত্রীদের দর্শন। 
আমি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধটাও দেখিনি কিন্তু শুনেছি
স্বাধীন বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐ ৩০ লক্ষ-
শহীদের এক সাগরের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা
অর্জন করেছে তাই জাতি নিজের প্রতি এতটা ধন্য।
দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই বাংলার
উড়ন্ত লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনার স্বপ্নে,  
স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে সেই মুক্তিকামী জনগণ 
অমোচোনীয় কালি দিয়ে লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে !
আমি ২০২৪ খ্রি.এর (১৭-২৫) জুলাই মাস দেখেছি 
নির্মম ভয়ঙ্কর কত সহজ মৃত্যুর চিত্র ফুটে উঠেছে, 
আজ কতটা অনিরাপদ মায়ের কোলের সেই সন্তান 
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীরা মেতেছে।
তীব্র উপলব্ধি করতে পেরেছি মানুষ মানুষের প্রতি  
জঘন্যতম, সীমাহীন, তীব্র হিংস্রাংত্বকপূর্ণ মনোভাব, 
মানুষ কত সহজে প্রতিপক্ষকে ঘাঁয়েল করতে পারে
কতটা পাষন্ড-নির্লজ্জ, শোষণ-উৎপীড়নের স্বভাব?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কোটা আন্দোলনের কারীদের
প্রতি লাঠিচার্জ-অঙ্গহানী-বন্ধী-গৃহবন্ধী-কারাবন্দী- 
করতে পারতো সুষ্ঠু-নিরাপদ পরিস্থিতি মোকাবেলায়
কিন্তু, এভাবে হত্যা শুরু করে; সুশীল সমাজ স্তম্ভিত! 
কিন্তু, পশুসুলভ নির্দয় আচরণের মাধ্যমে এভাবে-
গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে শত ছাত্র-ছাত্রীদের?
দুই পক্ষের ন্যায্য অধিকারের মাঝে সংযুক্ত হলো
দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারদ্রোহী গুপ্ত সন্ত্রাসীদের। 
মীরজাফরের জিহাদী বাহিনীরা ক্ষত-বিক্ষত করে দিল
 খেয়ে না খেয়ে লালন-পালন করে বড় করা--
অভাগী মায়ের আদরমাখা তাজা নিঃস্পাপ প্রাণ 
স্নেহে গড়া ভাই-বোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা রেডিও টিভিতে
সম্প্রচার হতো, কিন্তু ২০২৪খ্রি.এর কোটা আন্দোলন,
সকল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো
কতটা অযৌক্তিক হতে পারে সেই নিরব ঘটনাচক্র !

Post a Comment