মা,মাতৃভাষা ও প্রিয় জন্মভূমি
ইমরানুল হক বেলাল
মা,মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি এদের প্রতিটির সঙ্গে ওতপোতভাবে জড়িত আছে আমাদের জীবন ও অস্তিত্ব।
আমাদের সুখ -দুঃখ, আনন্দ -বেদনা -ইচ্ছা-অনিচ্ছা,আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের ভাষা আমাদের মাতৃভাষা।
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আমাদের পরম আশ্রয় আমাদের মাতৃভূমি। তাই মা,মাতৃভাষা ও মাতৃভাষার কথা ভাবলে আমাদের মন উথলে হয়ে ওঠে, গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাথা নত হয়ে আসে। সন্তানের কাছে মায়ের আসন যেমন অতুলনীয়, মায়ের কাছে সন্তানের ঋণও অপরিবোধ। মায়ের কাছে সন্তানের কোনো ভেদ নেই। দুঃখ ও যন্ত্রনা সয়ে, দৈন্য ও তুচ্ছতাকে বরণ করে মা হন সর্বহারা।
মায়ের কাছ থেকে আমরা যেমন পাই অনির্বচনীয় ভালোবাসা, তেমন প্রীতি দিয়ে অন্যকে আমরা ভালোবাসতে শিখি।
মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেমন আমাদের মন-প্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে, তেমনি ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীকেও আমরা আনন্দভূবনে পরিণত করতে পারি।
এই ভাষার মাধ্যমে মানুষ তার শৈশব থেকে ভাব বিনিময় করতে শেখে। এই ভাষার মাধ্যমেই মাতৃভাষাভাষী সমাজ পরিমন্ডলে মানুষ জ্ঞান,শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে।
মানুষের জীবনে ভাষা তথা মাতৃভাষার অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জার্মান মনীষী ভিলহেলম হমবোলট বলেছেন, -"মানুষের ভাষা হলো তার আত্মা, আর আত্মাই হলো তার ভাষা। "
পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালির জাতিগত বিকাশের ধারাকে নসাৎ করার জন্যে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলেছিল।
উর্দুকে করা হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা।
মাতৃভাষার বিরুদ্ধে এ হীন ষড়যন্ত্রকে তখন বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছে।
১৯৫২-সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রক্ত ও আত্মাহতির বিনিময়ে অর্জন করেছে বিজয়।
এমনিভাবে ১৯৬১-সালের ১৯ - মে ভারতের আসাম পদেশের শিলচর ষ্টেশনে অসমিয়া ও বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে শহীদ হয়েছে ১১ জন বাঙালি।
সারাবিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এ দুটি আত্মত্যাগের ঘটনা অনন্য ইতিহাস হয়ে আছে।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের একশ্রেণীর লোকের মনপ্রাণ বিদেশিয়ান আচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে,বিদেশি ভাষাই ওদের ধ্যান-জ্ঞান। তারা মা বলতে লজ্জা পান। মামি,ড্যাডি,আংকল বলাকেই এরা অভিজাতদের লক্ষণ মনে করেন। আসলে ওরা জানে না যে, বিদেশি ভাষা কখনো তাদের মন ও প্রাণের মুক্তি আনতে পারে না। বিদেশি ভাষার বড় কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি মধুসূদন।
সেই বৃথা স্বপ্ন ব্যর্থতার জন্যে মাইকেলের যে বুকভরা আক্ষেপ ও বেদনা সে ইতিহাস হয়ত এই সব বিদেশ-পাগলরা জানে না। আসলে তাদের জন্য দুঃখ হয়। কারণ, তারা এতটুকু বুঝা উচিৎ ছিল যে, সুখে-দুঃখে মাতৃভাষা বাংলা আমাদের বিশ্বস্ত ও নিত্য সঙ্গী।
সত্যিকার অর্থে,মাতৃভাষার মাধ্যম ছাড়া জাতীয় মানসের উন্নতি হতে পারে না-এ কথা ভুলে গেলে জাতির অকল্যাণ অবধারিত।
পৃথিবীর আলো বাতাস দেখার মুহুর্ত থেকেই মাতৃভূমির মাটিতে আমাদের বেড়ে ওঠা। মাতৃভূমির জল বাতাসে আমাদের জীবন বাঁচে। তাই মাতৃভূমির জন্যে আমাদের যে ভালোবাসা তা সহজাত
ও সাভাবিক।