চাকরি চুরির প্রেক্ষাপট
- হাসিম আব্দুল হালিম
এ এক আজব দেশর আজব কথা। নামটি তার চাকরি চুরির দেশ। যেমন নাম সত্যি তেমনি তার কাম। এই দেশে রমরমিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে দ্বিমুখি সাহেবি চৌর্যবৃত্তি। এই সাহেবি চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত সম্মানীয় চোরদের চৌর্যবৃত্তির আশীর্বাদে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। সমাজে এদের গগন চুম্বি সম্মান ও গুরুত্ব কারণ এরা অযোগ্যদের চাকরি সুনিশ্চিত করে দেয় কোনো এক অজ্ঞাত গোপন শক্তি বলে। এরা অযোগ্যদের ভগবান তবে যোগ্যদের জীবনে এক ভয়ঙ্কর স্বপ্নঘাতি অভিশাপ এবং দেশের প্রকৃত প্রগতির পথে এক চরম অন্তরায়। অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে অধিকাংশ সহজ সরল মানুষ এদের ভগবান বলেই মনে করেন কারণ এদের আশীর্বাদে তারা তাদের অযোগ্য সন্তান সন্ততিদের সরকারি চাকরির সপ্ন দেখে।
যাইহোক এই চৌর্যবৃত্তির দ্বিমুখি ধারা আছে। এর এক দিকে আছে সরকারি মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগন এবং অপর দিকে আছে সরকার বহির্ভূত কিছু ধান্ধাবাজ রাষ্ট্রীয় অভিশাপ রুপি চরম অর্থ পিপাসু আত্মকেন্দ্রিক কিছু সাধারণ মানুষ। প্রথম ধারাটি কাজ করে লিখিত চাকরি পরিক্ষার উত্তরপত্র ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে এবং অপর ধারাটি কাজ করে লিখিত চাকরি পরিক্ষা চলা কালীন বা তার একটু আগেই কোড ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে পরিক্ষা গৃহে অযোগ্য চাকরি পরিক্ষার্থীদের বিশেষ কৌশলে উত্তর দানের মাধ্যমে। অবশ্য এদের মধ্যে দ্বিতীয়টি অধিক ভয়ানক কেননা এই পন্থা অবলম্বন করে অতি মেধাশূন্য চাকরি চোর গুলোও MCQ রূপি ঘর কালি পরিক্ষায় এতটাই উত্তর টুকতে সক্ষম হচ্ছে যে মধ্যম মেধাবী এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ মেধাবী চাকরি প্রার্থীরাও তাদের একক ক্ষমতায় খুব ভালো প্রস্তুতি সত্তেও ওই চাকরি চোরদের ধারেকাছে কোনোভাবেই পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না।ফলত চাকরি গুলো তুলনামুলকভাবে কম যোগ্য বা অযোগ্য চাকরি পরিক্ষার্থীদের দখলে চলে যাচ্ছে আর বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত যোগ্য চাকরি পরিক্ষার্থীরা।
যাইহোক এই দুটো ধারায় এভাবে প্রায় দুই দশক ধরে অবৈধ কাজের মাধ্যমে দেশটির গুণ্ডা রুপি চরম প্রভাবশালী অর্থবান চাকরি চোরগুলো প্রতিনিয়ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানব সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রটির চরম ক্ষতি করে চলেছে। এই দ্বিমুখী অশুভ শক্তির চক্রবুহে প্রতিনিয়ত স্বীয় হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অগনিত যোগ্য মেধাবী অসহায় চাকরি প্রত্যাশী যুবক যুবতী। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনের কাঙ্ক্ষিত সপ্নগুলো। সর্বদা তারা লাঞ্ছিত আর উপেক্ষিত হচ্ছে সমাজে। এই উপেক্ষিত বঞ্চিত অসহায় মানুষ গুলোর বিষয়ে সমাজে আবার কিছু অনুতপ্ত মজার কথা প্রচলিত আছে। কথাগুলো নিশ্চয় আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে হয়তো? যাইহোক কথাগুলো হল - এই বঞ্চিতদের উদ্দেশ্যে মিথ্যে দয়া প্রদর্শন করে, হক মারা চাকরি বিক্রেতা ও চাকরি ক্রেতা ভদ্র চোর গুলো দয়ার সুরে বলে, "চাকরিটা তোমার ভীষণ দরকার। তোমার জন্য শুধু আল্লা আল্লা করছি। কবে যে তোমার চাকরিটা হবে, দাদা? মন দিয়ে চেষ্টা কর পেয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।"
যাইহোক বর্তমানে দেশটিতে প্রকৃত চাকরির হকদার শিক্ষত সমাজ চরম হতাশা ও সপ্ন হীনতার মাঝে পুনরায় আশার আলো দেখছে কারণ এক অতি শক্তিধর দেবতার অবতার রুপি শক্তি বলে ঐ চাকরি চোর ভগবানদের নিধন যজ্ঞ চলছে। এখন আপাতত সরকারি চাকরি চোর মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সনাক্ত করণ ও হাজতবাসের মহান কর্মযজ্ঞ চলেছে। আশাকরি অদূর ভবিষ্যতে সরকার বহির্ভূত ধান্ধাবাজ রাষ্ট্রীয় অভিশাপ রুপি চোরদেরও সনাক্ত করণ ও হাজতবাসের সুব্যবস্থা হবে এবং চিরতরে অবলুপ্তি ঘটবে সাহেবি চৌর্যবৃত্তির মত এক চরম অমানবীয় প্রগতির অন্তরায়ের। যতদিন এই দ্বিমুখি চৌর্যবৃত্তির ও চোরদের সম্পূর্ণ রুপে সমূলে বিনাশ না ঘটবে ততদিন ঐ রাষ্ট্রোটির প্রকৃত মানব প্রগতি ঘটবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে শিক্ষিত সত্যবাদি সাহসী ও প্রতিবাদি মানব সমাজের সক্রিয় সহযোগিতা পেলে দেশটি খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে পারে এই অভিশাপ থেকে। যাইহোক আমি আশাই রয়লাম দেশটির সৎ শিক্ষিত প্রতিবাদি সমাজের সহযোগিতার ও অতি দ্রুত চাকরি চুরির অভিশাপ মুক্তির। বাঁচুক দেশটি। বাঁচুক তার যোগ্য সন্তান সন্ততি। প্রগতির পথে এগিয়ে যাক আপন মহিমায় ন্যায় নীতির ছন্দে।