বাবাকে নিয়ে অনূভুতি প্রকাশের জন্য একটি প্রবন্ধ লিখলাম, যদিও তা যৎসামান্যই...
বাবা
জগতের সবচেয়ে নিরলস প্রাণী। সন্তান,পরিবার,
স্ত্রীর জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে কখনো কার্পণ্য না করা মানুষটি নিজের জন্য কখনোই ভালো-মন্দের বিচার করে না। বাবারা এমনই হয় বুঝি, তাদের একমাত্র লক্ষ্যই থাকে সকলের দুঃখ-কষ্ট একার কাঁধে বহন করে এক জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দেয়া। কখনো কোনো অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ বাবাদের খুঁজে পাওয়া না। জীবনের অন্তিম সময়টুকুতেও সন্তান,প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে নিজের শেষ দুঃখটুকুও ভাগ করতে না রাজিই পরিলক্ষিত হয়।
বাবাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা কোনো সন্তানেরই পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠে না। বাবা হওয়ার বোঝা সন্তান কেবল বাবা হলেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়,ততদিনে বাবাও পাড়ি জমায় অন্য এক দুনিয়ায় নতুন জীবনের স্থায়ী আবাসে। বাবা নিরলস পরিশ্রম করে যাবেন,সংসারের সকল গ্লানি একলাই টেনে যাবেন শুধুমাত্র পরিবারের মুখে হাসিটুকু বজায় রাখার জন্য। বাবাদের সুখ বুঝা মুশকিল, যেখানে সন্তানদের চাহিদার তালিকাই ফুরায় না সেখানে বাবারা তালিকার একেকটি চাহিদা পূরণ করতে করতে সুখ খুঁজে নেয়।
একজন পুরুষের গুরু দায়িত্ব শুরু হয় বিবাহের পরবর্তী সময় থেকে। ইসলাম ধর্ম এমনই উপদেশ দেয় যেনো বিবাহযোগ্য সন্তানদের বিবাহ সম্পন্ন করে বাবা-মা তাদের দায়িত্ব পালন করেন,সেজন্য সন্তানকে বিবাহের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলাও বাবা-মায়েরই দায়িত্ব। একার হাতেই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা বাবারাই সম্পন্ন করে থাকে।
বিয়ের পরই শুরু হয় জীবনের অন্যতম সফর। কঠিন,কন্টকাকীর্ণ পথের অন্তিম যাত্রা। যে পথে সঙ্গী হিসেবে একমাত্র দ্বীনদার স্ত্রীই যোগ্য,যে পথে চলতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয় বহু কঠিন সত্যের,
লড়াই করতে হয় নিজের সাথে,নফসের সাথে, কখনোওবা সমাজ পিছে ঠেলে দিতে চাইবে,
আঁকড়ে ধরার মতো কোনো খুঁটি তখন খুঁজে পাওয়া যায় না,তবুও যেদিম ফুটফুটে চাঁদমুখী ছোট্ট সন্তান ঘর আলোকিত করে ধরায় আগমন করে সেদিন নীরব এক ভয় ঘাপটি মেরে চেপে বসলেও হৃদয়ে আনন্দের ফোয়ার বয়ে যায় বাবাদের মনে৷ পুরো বিশ্ব জয় করার স্পৃহা জন্মায় সন্তানের সাথে। শুরু হয়ে যায় নতুন লড়াই,
সন্তানকে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলার লড়াই,আগামীকাল সুন্দর করার লড়াই।
বাবাদের লজ্জা থাকে না,তবে আত্মসম্মান পুরোটাই সন্তানদের সামনে ধরে রাখে। বাবাদের চোখে কোনো কাজই ছোট হয় না। কেবল পরিবারের সুখটুকুই নিশ্চিত করতে পারলেই যেনো বাঁচে। পরিবার,সন্তানের সুখের জন্য যেকোনো কাজই অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মী কিংবা চুল কাটার নাপিত,ঘুরে ঘুরে বাসায় বাসায় বাথরুম পরিষ্কারের মেথর কিংবা জুতা সেলাই করা মুচি, দিনমুজুর কিংবা ঠেলাগাড়ির বাহক যেকোনো কাজই বিনা অভিযোগে করে যায় কেবল সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। বাবাদের কেবল একটাই চাওয়া সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে, কোনো দুঃখ যেনো ছুঁতে না পারে,অভাবের সংসারেও সন্তানের শখ পূরণে কমতি রাখে না,বাবাদের এই ঋণ কো সন্তানের পক্ষে কি পূরণ করা সম্ভব? মহান আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেনো সকল বাবাদের এই ইহকালের পরিশ্রমকে দ্বীনি উপায়ে কবুল করে আখিরাতে চির শান্তির জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
বাবা দ্বীনি হলে সন্তানও দ্বীনি পথের পথিক হবে এটা আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ৷ দ্বীনি শিক্ষা কিংবা জাগতিক শিক্ষার ভিত্তি পরিবার থেকেই গড়ে উঠে, সকাল সকাল মক্তবে যাবে নাকি ইংরেজি শিক্ষার স্কুলে যাবে এটাও বাবাদের উপরই নির্ভর করে,সচেতন বাবারা কখনোই সন্তানকে কুপথে পরিচালিত করতে চায় না। বাবা যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে জমায়েতের সহিত ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করে তাহলে সন্তানও একই কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এতে দুনিয়াবি কাজে যেমন বরকত আসে তেমনি আখিরাতেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ। পৃথিবীতে একজন সুসন্তান রেখে যাওয়া মানে সদকায়ে জারিহার একটি পথ সুপ্রসস্থ করে যাওয়া। বাবারা যদি শরিয়তের বিধান দিয়ে জীবন পরিচালনা করে তাহলে সন্তানও একই বিধানে দীক্ষিত হয়ে বাবার পথেই হাঁটবে আল্লাহ-রাসূল (সাঃ) কে পাওয়ার নেশায়।
বাবাদের সুখের মূহুর্তগুলো খুবই সামান্য হয়। মাস শেষে বেতন পেলেই সন্তানের জন্য কিছু কিনে বাসায় ফেরা, ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া,সন্তানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যা একটাও ব্যক্তিগত অর্জন নয়,তবুও এগুলোই যেনো বাবাদের সর্বোচ্চ সফলতা। আমার মনে আছে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় আমি খুব অসুস্থ ছিলাম,পরীক্ষা চলাকালীন বাবা-মা খুব দুশ্চিন্তা করতেন। তবে যেদিন ফলাফল প্রকাশিত হলো বাবাকে ফোনে জানালাম আশানুরূপ রেজাল্ট হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, বাবা অশ্রুসিক্ত নয়ন সেদিন দেখিনি তবে দরাজ গলার আওয়াজে বুঝতে পেরেছিলাম বাবা সুখের জোয়ারে ভাসছেন,আল্লাহ আমার বাবাকে কবুল করুন।
বাবারা সন্তানের জন্য খরচ করতে কখনোও কার্পণ্য করেননা। সন্তানের বিষয় যখন আসে তখন আর টাকার জন্য পরোয়া করেননা। সন্তানের ভালো ফলাফলে পুরো এলাকায় মিষ্টিমুখ করান।পকেটে টাকা না থাকলেও অসুবিধা নেই, রেজাল্ট তো বারবার দিবে না,তাই খরচ করতে চিন্তা করেননা। সন্তান যখনই কিছু চায় তখন বাবার খালি পকেট থেকেও যেনো টাকা বের হয়,কখনো বিরক্তবোধ কাজ করেনা।
মাহবুবুল হাছান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়