স্বামী স্ত্রী
লেখকঃ প্রতাপ রাকসাম
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। বিশ্বাস ও গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। দাম্পত্য সম্পর্কের চরম স্বার্থকতা পারস্পরিক স্বচ্ছতা। দুজন-দুজনার মনের কথা বুঝতে হবে, তবেই সম্পর্ক সঠিকভাবে এগিয়ে অটল থাকবে।
স্বামী স্ত্রী মানে দুটি মন এক আত্না ও সহযোগী, সহভাগি না হলে বৈরাগী। দুজন দুজনার সাথে মন, দেহ অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। কথাটি মাথায় রাখা প্রতিটি স্বামী স্ত্রীর অত্যন্ত জরুরি। সংসারে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে স্বামী স্ত্রী উভয়ে মিলে মতামত নেয়া অতি উত্তম। একক কোনো সিদ্ধান্ত সংসারে মঙ্গল বয়ে আসবেনা,বরং সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হবে। অশান্তির মূলকারণ হলো, একক ভাবে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। বেপরোয়া চলাফেরা স্বামী বা স্ত্রীকে অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। খেয়াল রাখা উচিত যে, সংসার কারো একার নয়; উভয়ের সমঅধিকার আছে। সুতরাং স্বামী স্ত্রী সম্মতিক্রমে কোনো সমস্যা সমাধান করলে সে সংসারে অবশ্যই শান্তি নেমে আসবে।
একটি প্রবাদ আছে, বিশ্বাসে
মিলায় বস্তু" তর্কে বহুদুর। স্বামী স্ত্রীর মাঝে যেন তর্ক না হয় সেদিকে সকল স্বামী ও স্ত্রীর নজর রাখা অতি জরুরি। প্রায় সংসারে দেখা যায় যে, সামান্য বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিশাল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। দুজনার মাঝে মান অভিমান এমন কি জেদ করে প্রতিহিংসায় পরিণত হয়। কলহের আগুনে পুড়ে কেউ কেউ সংসার ভেঙে দিতে দ্বিধাবোধ করেনা। তিলকে তাল করে সংসার ভাঙনের দৃশ্যত; মানব সভ্যতায় যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ সাংবিধানিক ভাবে কোনো বিধান নেই, তবুও বিচ্ছেদ ঘটে ঘটছে। আজকাল তো হরহামেশাই দেখা যায়। এই বিচ্ছেদ যদিও স্বামী স্ত্রী উভয়কে অশান্তির আগুন থেকে মুক্তি দেয় তথাপি সন্তানদের জীবনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অবুঝ শিশুদের জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অনাথ সন্তানের মতো লড়াই করে তাঁদের বাঁচতে হয়। বিচ্ছেদের পর কেউ কাউকে ছাড়া জীবন চলবে তা ঠিক, তবু হৃদয় কিন্তু কষ্টে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। সন্তান রেখে যারা বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন তাঁরা প্রকাশ্যে না হোক নিভৃতে চোখের জল ফেলে, অনুশোচনা করে। কেউ কেউ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আবার পূর্ণ মিলন হয়েছেন। আমার মতে সংসার হলো কাচের গ্লাসের মতই, পানি খাওয়ার সময় গ্লাসটি ঠিকমতো না ধরলে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সংসার হলো পবিত্র, ঈশ্বর হতে প্রদত্ত। কাজেই উন্নতির সাথে সংসার টিকিয়ে রাখতে ও শান্তিতে বসবাস করতে উভয়ের সর্বদা মননশীল হওয়া একান্ত বাঞ্চনীয়। স্বামী বা স্ত্রীর যে কারো সামান্য ভুলত্রুটি হবে হতেই পারে, তা খোঁটা না দিয়ে সহজভাবে মেনে নেওয়াই স্বামী স্ত্রীর প্রধান ভূমিকা। অবাক পৃথিবীতে সংসারে টিকে থাকা বড়ো কঠিন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে কখনো স্বামী স্ত্রী বিপরীত মুখী হয়! তাই বলে প্রতিপক্ষ ভাবা কখনো কাম্য নয়।স্বামী অভিমান করলে স্ত্রী মান ভাঙাবে, স্ত্রী রেগে গেলে স্বামী নীরবতা পালন করবে। এটাই শান্তির নিয়ম, আগুন জ্বললে পেট্রোল ঢেলে নয়, পানি দিয়ে নেভাতে হয়। প্রতিটি সংসারে ঝামেলা, অভাব কমবেশি থাকে। তাই বলে উত্তেজিত হলে চলবেনা, কিভাবে মীমাংসা করা যায় তা সুস্থ মস্তিষ্কে শত প্রতিকূলতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। রাগ ও জিদ করে সংসার ত্যাগ করা যায়, কিন্তু, নিজের যে ক্ষতি হবে তা কখনো পূরণ হবেনা। অসীম ধৈর্য্যের সাথে সংসারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকতে হয়। চিরদিন একি পথে চলা, ভালোবাসার বন্ধনে নিজেকে উৎসর্গ করার নামই হলো স্বামী- স্ত্রী ও সংসার। সুখে-দুঃখে একে অপরের পরিপূরক।