আমার দেখা একটি মেলা রচনা
বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর, বিভিন্ন স্থানেই মেলা আয়োজনের রীতি অনেক পুরনো। মেলা মানুষের জন্য আনন্দের ও বৈচিত্র্যময় এক উৎসব। আমি সম্প্রতি একটি মেলায় গিয়েছিলাম, যা আমার জীবনে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। সেটি ছিল আমার গ্রামের এক পুকুরপাড়ের মেলা, যেখানে ছোট-বড় নানা বয়সের মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
এটি ছিল গ্রাম্য এলাকার এক ঐতিহ্যবাহী মেলা, যা সাধারণত প্রতি বছর শীতের সময় অনুষ্ঠিত হয়। মেলা শুরু হয়েছিল একটি সাপ্তাহিক বাজারের দিন, তবে মেলার আকর্ষণ ছিল ভিন্ন। পুকুরপাড়ের চারপাশে সারি সারি দোকান সাজানো হয়েছিল, কোথাও জামাকাপড়, কোথাও পাটের ব্যাগ, কোথাও মিষ্টি আর খাদ্যদ্রব্য। আমি সেখানে পৌঁছতেই দেখলাম হাজারো মানুষ ঘোরাঘুরি করছে, হাসছে-গাইছে, আনন্দে মাতোয়ারা।
মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল তার সরলতা ও প্রাণবন্ততা। ছোট-বড় প্রতিটি দোকানে ছিল নানা রকমের জিনিসপত্র, যা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল। একজন দোকানদারের কাছে আমি গিয়ে দেখলাম, তিনি খাটের ওপর সুন্দর সুন্দর কাঁথা সাজিয়ে রেখেছেন, আর পাশেই আরেকজন দোকানি বিক্রি করছে মাটির হাঁড়ি। কিছুটা দূরে একটি খেলনা দোকানও ছিল, যেখানে রঙ-বেরঙের খেলনা দেখতে দেখতে আমার চোখে এক ধরনের শিশু-মনের আনন্দ জেগে উঠেছিল।
মেলা ঘুরতে ঘুরতে, হঠাৎ করেই এক পাশে সাপ-খেলা শুরু হয়ে গেল। সাপুড়ে মানুষজনের ভিড় জমাতে শুরু করল। সাপুড়ে সাপ বের করছিল এবং সাপটি লাঠিতে নাচাতে শুরু করছিল। একদিকে সাপের খেলা, অন্যদিকে ছোট্ট ছেলেমেয়েরা হো-হো করে হাসছে। আমি আরও কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে মেলার এক আনন্দঘন পরিবেশে নিমজ্জিত ছিলাম।
মেলায় আরেকটি চমক ছিল রকমারি খাবারের স্টল। নানা রকম মিষ্টি, ভাপা পিঠা, তেলেভাজা, পকোড়া, চটপটি—সবকিছুই ছিল এখানে। আমি আমার বন্ধুদের সাথে মিষ্টি খেতে বসেছিলাম, আর আমরা আড্ডা দিতে দিতে মেলার পরিবেশ উপভোগ করছিলাম। মেলার মাঝে একটি লটারি খেলারও আয়োজন ছিল, যার ফলে মেলার উত্তেজনা আরও বেড়ে গিয়েছিল।
মেলার এক পাশে একটি মঞ্চও ছিল, যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনও গান, নাচ এবং নাটক চলছিল। এলাকার অনেক মানুষ এসে সেখানে বসেছিল, এবং গানের সুরে সবাই এক হয়ে মেতে উঠছিল। এমন একটি পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল, যেন এক ছোট্ট উৎসবের মঞ্চ।
মেলা শেষ হতে দেরি হলেও, আমি খুবই খুশি ছিলাম যে এমন এক সুন্দর, আনন্দময় পরিবেশে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম। মেলার মধ্যে ছিল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ, একসাথে মানুষের মিলনমেলা। আর সেই মেলা ছিল আমাদের গ্রাম্য জীবনযাত্রার এক অমূল্য অংশ।
মেলায় গিয়ে আমি শিখলাম যে, আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আনন্দকে বড় করতে হলে, এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। একদিনের জন্য হলেও, মেলা আমাদের সব ধরনের দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে আনন্দের মাঝে একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়।
আমার দেখা একটি মেলা অনুচ্ছেদ
গত মাসে আমি গ্রামের একটি বার্ষিক মেলায় গিয়েছিলাম। এটি ছিল দুর্গাপূজার সময়, এবং মেলাটি স্থানীয় স্কুল মাঠে আয়োজিত হয়েছিল। মেলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট, খেলনা, মিষ্টি, পোশাক এবং হস্তশিল্পের স্টল।
মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল নাগরদোলা, যা শিশুদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় ছিল। আমি কিছু লোকশিল্পীদের নাচ ও গান উপভোগ করলাম। বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের গন্ধ মেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।
লোকজনের ভিড় থাকলেও মেলায় ছিল আনন্দঘন পরিবেশ। শিশুদের হাসি, মানুষের আনন্দ, এবং বিক্রেতাদের ডাক-চিৎকার মেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। এই মেলাটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মেলা থেকে আমি কিছু হস্তশিল্প ও একটি বাঁশি কিনে এনেছি। এই মেলায় যাওয়া সত্যিই আমার জন্য স্মরণীয় একটি অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।