ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা।ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা 20 পয়েন্ট।ছাত্র সমাজ আদর্শ ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা class 8

প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ভূমিকা : ‘আমরা শক্তি আমরা বল

               আমরা ছাত্রদল।

               মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান

              ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল

              আমরা ছাত্রদল।’

                               (ছাত্রদল: কাজী নজরুল ইসলাম)

মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। এ সময় যেভাবে নিজেকে গড়ে তোলা হয়, সারা জীবন সে রকম ফল পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় প্রস্তুতির জীবন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনেই। সুতরাং বৃহত্তম জীবনের পটভূমিতে ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক।

ছাত্রজীবন: মানুষ সারা জীবন কিছু না কিছু শেখে। তাই বৃহত্তর অর্থে মানুষের গোটা জীবনটাই ছাত্রজীবন। কবি সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতার ভাষায়-

              “বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর

                      সবার আমি ছাত্র, 

                  নানাভাবে নতুন জিনিস

                      শিখছি দিবারাত্র।”

কিন্তু ছাত্রজীবন বলতে আমরা বুঝি- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনকে। জীবন গঠনের জন্য মানুষকে একটি বিশেষ সময়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়। মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের এই সময়টুকুই মানুষের ছাত্রজীবন।

ছাত্রসমাজের গুরুত্ব: ছাত্রসমাজ দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক। তারা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাই তারা মহৎ গুণের অধিকারী হবে এটাই প্রত্যাশিত। তাদের সৎ, আদর্শ, ন্যায়নিষ্ঠ, উদ্যমী, দেশপ্রেমিক, আত্মত্যাগী ইত্যাদি বহুবিধ গুণাবলির অধিকারী হতে হবে। যেকোনো জাতির সেরা সম্পদ তরুণসমাজ তথা ছাত্রসমাজ। একটি জাতির সমৃদ্ধি, সম্মান, আর মর্যাদার সঙ্গে ছাত্রসমাজই সম্পৃক্ত। জাতির গৌরব বৃদ্ধির সুমহান দায়িত্ব একদিন তাদের ওপর বর্তাবে। তাদের কৃতকর্মের সফলতার ওপরই নির্ভর করবে জাতির ভবিষ্যৎ। সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষা এবং দেশপ্রেমের আদর্শে আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে, নব নব আবিষ্কারের অফুরন্ত সম্ভাবনায় এই ছাত্ররাই পারে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় - 

‘আমরা রচি ভালোবাসার / আশার ভবিষ্যৎ

মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখায়/আকাশ ছায়াপথ।’

বস্তুত  দেশগঠনে যেকোনো দেশের ছাত্রসমাজ রাখতে পারে যুগোপযোগী বাস্তব ভূমিকা। M K Gandhi এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘The students are the future leaders of the country who could fulfill countries hopes being capable.’

ছাত্রজীবনের লক্ষ্য: ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ’-অধ্যয়নই হচ্ছে ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য অধ্যয়ন ও জ্ঞান অর্জন। ছাত্রছাত্রীদের কঠোর পরিশ্রম ও তপস্যার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার গুরুদায়িত্ব তাদের ওপরই অর্পিত হবে। সে গুরুদায়িত্ব বহন করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব: ছাত্রজীবনের দায়িত্বের দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে নিজের জীবনকে যোগ্য করে গড়ে তোলা, অপরটি হচ্ছে দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। নিজেকে যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই কল্যাণ হয়। ছাত্ররা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই দেশের জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অতীতে সংকটকালে ছাত্রসমাজই অগ্রবর্তী চিন্তার পথিকৃৎ হয়ে এগিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতেও জাতির সংকটে-সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার কাজে ছাত্রসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রত্যেক ছাত্রকেই মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা, পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করতে হবে। সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। শিক্ষক ও গুরুজনদের সম্মান করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

ছাত্রজীবনের কর্তব্য:

 জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগেই একজন ছাত্রের প্রধান কর্তব্য। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আরও অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। আর এভাবেই প্রকৃত জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানব-চরিত্রের নানাবিধ সৎ-গুণাবলিও অর্জন করতে হয়। যেমন-

১. চরিত্র গঠন: 

চরিত্র হচ্ছে মানবজীবনের মুকুট স্বরূপ।’ ছাত্রদের একটি প্রধান কাজ হলো চরিত্র গঠন। তাই এ সময় প্রত্যেক ছাত্রেরই সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, সহযোগিতা, পরোপকার, উদারতা, ধৈর্য, সংযম, দেশপ্রেম প্রভৃতি সদ্‌গুণ আয়ত্ত করতে হবে। সব রকম অসদ্‌গুণ ও বদভ্যাস থেকে দূরে থাকাও একজন ছাত্রের অন্যতম কর্তব্য।

২. নিয়মানুবর্তিতা:

 শৃঙ্খলা ছাড়া মানবজীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারে না। এই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা ছাত্রজীবনেই অর্জন করতে হয়। এ গুণ অর্জনের ওপর তার ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ভর করে। ছাত্রজীবন নিয়মানুবর্তিতার একটি প্রকৃষ্ট প্রয়োগক্ষেত্র এবং উপযুক্ত সময়। ইংরেজিতে একটি কবিতা আছে- ‘Work while you work, play while you play and that is the way to be cheerful all day.’

৩. সময়ানুবতির্তা: 

সময়নিষ্ঠা একটি বড় গুণ। যে মানুষ সময়ের মূল্য দিয়ে জানে না, সে জীবনে উন্নতি করতে পারে না। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সময়নিষ্ঠার অভ্যাস করতে হবে, সময়ের মূল্য দিতে হবে।

৪. অধ্যবসায়: 

ছাত্রদের অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রমী হতে হবে। দেখা যায় অনেক মেধাবী ছাত্রও অলসতার কারণে পরীক্ষায় ভালো করতে ব্যর্থ হয়। আবার কম মেধাবী ছাত্র শুধু অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দ্বারা আশাতীত সাফল্য অর্জন করে চমক সৃষ্টি করে। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

৫. খেলাধুলা ও ব্যায়াম: 

প্রবাদে আছে, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’ সুস্থ শরীরে বাস করে সুস্থ মন। শরীর সুস্থ না থাকলে নিয়মিত লেখাপড়া হয় না। তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ছাত্রদের খেলাধুলা ও ব্যায়ামচর্চা খুব জরুরি। 

৬. সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: 

ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, গান, নাচ, অভিনয় ইত্যাদিতেও তাকে অংশ নিতে হবে।

উপসংহার: 

মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গঠিত হয় ছাত্রজীবনে। আবার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ছাত্রদের ওপর। তাই ছাত্রজীবনের কর্তব্য ও দায়িত্ব ঠিকভাবে উপলব্ধি করে তা যথাযথভাবে পালন করা প্রতিটি ছাত্রেরই উচিত। এতে সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং উন্নতি সাধন হয়। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য়ের ভাষায়-

‘ছাত্রসমাজ আর সমাজসেবা

ছাত্র ছাড়া করবে কেবা,

ছাত্রজীবন শিক্ষা জীবন

সমাজ সেবায় দাও গো মন।’

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা

2.ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

ভূমিকা:

সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, এবং সংস্কারমূলক গুণাবলি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। ছাত্রজীবন শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, বরং সঠিক চরিত্র গঠনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষার্থীকে তার আচরণে ও চিন্তাভাবনায় সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। 

নৈতিকতা: শিক্ষার্থীদের নৈতিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত। যা তাদেরকে সঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করে। নৈতিকতা ও আদর্শের মধ্যে নিহিত থাকে মানবতার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। 

সহানুভূতি: একজন ছাত্রকে মানবতার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। অন্যদের দুঃখ-দুর্দশায় তাদের পাশে থাকার মানসিকতা তাদেরকে মানবিক গুণাবলি অর্জনে সাহায্য করে।

নেতৃত্ব: ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। তারা যেন ভবিষ্যতে দেশের সঠিক পথের রূপকার হতে পারে, এজন্য তাদের দলবদ্ধভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

সামাজিক দায়িত্ব: ছাত্রজীবনে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ গঠন করা উচিত। সমাজের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা এবং অন্যদের সাহায্য করার মানসিকতা গড়ে তোলা অপরিহার্য।

ছাত্রজীবন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে শুধু বইয়ের পাঠ্যবস্তুর পরিবর্তে জীবনের নানা দিকগুলি শেখার সুযোগ থাকে। এভাবে ছাত্ররা নিজেদেরকে সামাজিক, নৈতিক, ও মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারে। 

উপসংহার: ছাত্রজীবন হলো প্রস্তুতির জীবন, যেখানে শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের মধ্য দিয়ে একজন ছাত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই সময়টুকু সফলভাবে ব্যবহার করে, তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

3.
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
অথবা, ছাত্রজীবন 
অথবা, জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

[ সংকেত : ভূমিকা; ছাত্রজীবনের মূল্য; ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য; ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য; পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য; শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন; জ্ঞানার্জন; পরিশ্রমী; চরিত্র গঠন; সুস্বাস্থ্য; স্বদেশপ্রেম; ছাত্র-জীবনের সার্থকতা; উপসংহার। ]

ভূমিকা :  শিক্ষার কোনাে বয়স নেই। মানুষ আমৃত্যু  শিক্ষা লাভ করে। কিন্তু মানুষের সম্পূর্ণ জীবনটাকেই ছাত্রজীবন বলে না। জীবনের প্রথম দিকে যে সময়টা বিদ্যা শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবাহিত হয় তাকে ছাত্রজীবন বলে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যখন পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানাজনের জন্য কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থাকে তখন তাদের সেই জীবনকে ছাত্রজীবন বলা হয়। ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সঠিক সময়। ছাত্রজীবনের দায়িত্ব-কর্তব্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সুসম্পন্ন করতে পারলে ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতা অর্জিত হয়।

ছাত্রজীবনের মূল্য : ছাত্রজীবন মানুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের সর্বোত্তম সময়। তাই মানুষের সমগ্র জীবন পরিসরে এই জীবনের। মূল্য অত্যধিক। মানুষের জীবনটাকে যদি একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে ছাত্রজীবন হলো সেই বৃক্ষের মূল । একটি গাছের মূল যত শক্ত হবে বৃক্ষও তত মজবুত হবে। ঝড়ে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে গাছ উপড়ে পড়বে না। মানুষের জীবনও সেরূপ। ছাত্রজীবনে যে যত পরিশ্রম করবে ভবিষ্যৎ জীবনের ভিতও তার তত মজবুত হবে। জীবনের এ মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করলে ভবিষ্যৎ জীবনে দুঃখ, দুর্দশা ও হতাশা নেমে আসে। 

ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে জ্ঞানার্জন করে একজন আদর্শ মানুষ হওয়া। শুধু। পরীক্ষায় পাশ করে কয়েকটি সার্টিফিকেট বা সনদ অর্জন করলেই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য সফল হয় না। একজন সুযােগ্য ও মহৎপ্রাণ। মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার মধ্যেই ছাত্রজীবনের সার্থকতা নিহিত। চরিত্রবান, আত্মবিশ্বাসী, নম্র-ভদ্র, বিনয়ী, সমাজসেবী, প্রভৃতি গুণও ছাত্রদের অর্জন করতে হবে । আর এগুলাে কেবল কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য : আজকের ছাত্রই আগামী দিনে দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক । আজকের শিশু-কিশাের-কিশােরী অনাগত দিনে রাষ্ট্রের কর্ণধার । তাই জাতির ভবিষ্যতের যােগ্য ও কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের কঠোর সাধনায় ব্রতী হতে হবে। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে । ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। তবে শিক্ষা অর্জন ও চরিত্র গঠনই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান ও প্রথম কাজ।

পিতামাতার প্রাত দায়িত্ব ও কর্তব্য : পিতামাতা আমাদের গুরুজন । পিতামাতা আছেন বলেই পথিবীতে আমাদের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা সবসময় সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। তাদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে চলা প্রত্যেক ছাত্রের নৈতিক দায়িত্ব। তারা যা আদেশ করেন তা পালন করতে হবে, আর যা নিষেধ করেন তা মেনে চলতে হবে। 

শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন : শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শন করা প্রত্যেক ছাত্রের কর্তব্য। তাদের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলতে হবে। শিক্ষকরা হলেন পথপ্রদর্শক। তাদের নির্দেশিত পথে এগিয়ে যেতে পারলে জীবনে। সাফল্য লাভ করা সম্ভব। 

জ্ঞানার্জন : ‘ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ কথাটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অন্তরে সর্বদা জাগরুক থাকা উচিত । শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ । যে কোনাে জাতির উন্নতির চাবিকাঠি হলাে শিক্ষা। ছাত্র-ছাত্রীদের কঠোর পরিশ্রম ও তপস্যার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়ােগ করে পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে হবে। নিজেকে অসৎ সঙ্গ থেকে মুক্ত রেখে রীতিমতাে পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করতে হবে । দৈনন্দিন শিক্ষার বিষয়গুলাে আত্মস্থ করা প্রত্যেক ছাত্রেরই কর্তব্য। পাঠ্যপুস্তকের সাথে পাঠ্যতালিকা বহির্ভূত ভালাে বই ও খবরের কাগজ পড়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে । 

পরিশ্রমী : জ্ঞান আহরণের জন্য প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে শ্রমশীল ও অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন। বস্তুত প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকা অপার সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হয় । পৃথিবীতে যারা অবিনশ্বর কীর্তি রেখে গেছেন, তাদের যে প্রতিভা ছিল তা প্রধানত কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল। শ্রমবিমুখ প্রতিভা বলতে কিছু নেই'- ছাত্র-ছাত্রীদের কথাটির প্রতি গভীর আস্থা রাখতে হবে । কঠোর শ্রম ও অধ্যবসায় সহজাত বুদ্ধিকে শানিত করে শিক্ষার্থীকে সফলতার পথে এগিয়ে দেয় । পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গুণে কম মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীও যথেষ্ট উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়। একজন ছাত্রকে কঠোর পরিশ্রম, আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিয়মিত জ্ঞান অনুশীলনের মাধ্যমে  শিক্ষা লাভ ও প্রখর বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগিয়ে তােলার জন্য ব্রতী হওয়া দরকার । তাহলে তাদের জীবনের সফলতা অর্জন সহজতর হবে। 

চরিত্র গঠন : ছাত্র-ছাত্রীদের অর্জিত জ্ঞানকে সার্থকভাবে প্রয়ােগ করার জন্য প্রয়ােজন উন্নত চরিত্র। তাই শিক্ষা লাভের সাথে সাথে উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য যত্নবান হওয়াও তাদের কর্তব্য । নিজেকে সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা, পরনিন্দা চর্চা, অন্যায় ও অসত্যের ঊর্ধ্বে রেখে নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ চিত্তের অধিকারী হওয়ার তপস্যায় আত্মনিয়ােগ করা তাদের কর্তব্য। যার মধ্যে বিদ্যা ও চরিত্র দুটির একত্র সমাবেশ ঘটে সেই প্রকৃত মানুষ । তার জীবনে সফলতা অনিবার্য । ছাত্র-ছাত্রীদের মধুর চরিত্র গঠনের জন্য গুরুজনদের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা, আল্লাহর প্রতি অনুরাগ, জীবে দয়া, সত্যবাদিতা, বিনয়, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণ অর্জন করতে হবে ।

সুস্বাস্থ্য : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কথাটি স্মরণ রেখে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মাবলি যথাযথভাবে পালন করে চলতে হবে । শারীরিক সুস্থতার ওপর মানসিক সুস্থতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। শরীর সুস্থ না থাকলে মনে প্রফুল্লতা থাকবে না এবং লেখাপড়াও করা যাবে না। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি পালনের দ্বারা সুঠাম দেহ ও সুস্থ জীবন গড়ে তােলা খুবই জরুরি। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের মূল্যবান সময়কে যথােপযুক্তভাবে কাজে লাগানাের জন্য সময়ানুবর্তিতা অর্জন করতে হবে। তাছাড়া নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবােধ অর্জন করাও আবশ্যক । এ সকল বিষয় ও গুণের ওপর জীবনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে । 

স্বদেশপ্রেম : ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজের প্রতিও দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক । তাদের জীবনে স্বদেশপ্রেমের দীক্ষা নেওয়ার উপযুক্ত সময়। এটা । আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা সমাজের অনেক কল্যাণকর কাজে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ লােকই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু সমাজ থেকে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার দূর করা তথা জনসাধারণকে খাদ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে তােলার জন্য তাদের দায়িত্ব রয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য মহামারির মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্ররা ছাত্র ব্রিগেড গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রভূত উপকার করতে পারে।

ছাত্র-জীবনের সার্থকতা : নিরলস সাধনা ও একাগ্রতা নিয়ে জ্ঞানার্জন, যাবতীয় মানবিক গুণাবলি চর্চার দ্বারা উত্তম চরিত্র ও সুস্বাস্থ্য গঠনের নিরলস সাধনার ভিতর দিয়েই ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে । সমাজের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন তথা স্বদেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের দীক্ষায় তারা উজ্জীবিত। উদারতা ও ত্যাগের চেতনায় তারা দীপ্ত । দেশ ও জাতীয় জীবনে তারা আশার আলাে, জীবন। যুদ্ধের ঘাত-প্রতিঘাতে টিকে থাকা তথা জাতীয় দুর্যোগ মােকাবিলায় তারা অপরাজেয় দুর্বার সৈনিক। 

উপসংহার : ছাত্রজীবন মানবজীবনের উৎকৃষ্ট সময় । মানবজীবনের জন্য যা কিছু কল্যাণকর, তা আয়ত্ত করার প্রকৃষ্ট সময় ছাত্র জীবন । এ সময়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করে ভবিষ্যৎ জীবনের সুদৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। তা হলেই জীবনের সাফল্য ও গৌরবের মুকুট অর্জিত হবে।

Post a Comment