বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ২০ পয়েন্ট।বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ১০ পয়েন্ট

বাংলাদেশের ষড়ঋতু

বাংলাদেশ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের একটি দেশ। এদেশের প্রকৃতি তার ষড়ঋতুর মাধ্যমে নিজেকে নানাভাবে প্রকাশ করে। ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্য বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

 বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের ষড়ঋতু হলো: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। প্রতিটি ঋতুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়, যা বাংলাদেশকে করে তোলে আরও বেশি আকর্ষণীয়।

১. গ্রীষ্ম (আষাঢ়-জ্যৈষ্ঠ)

গ্রীষ্মকাল বাংলাদেশের প্রথম ঋতু। এ সময় প্রকৃতি রুক্ষ ও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সূর্যের তীব্র তাপে মাঠ-ঘাট, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। গাছের পাতা ম্লান হয়ে পড়ে, এবং মানুষ গরমে কাতর হয়ে ওঠে। তবে গ্রীষ্মের এই রুক্ষতায়ও কিছু মিষ্টি স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এ সময় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি মৌসুমি ফলের সমারোহ দেখা যায়। গ্রীষ্মের শেষ দিকে কালবৈশাখী ঝড় প্রকৃতির রুক্ষতা কিছুটা প্রশমিত করে।

২. বর্ষা (শ্রাবণ-ভাদ্র)

বর্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এ সময় আকাশ মেঘে ঢেকে যায়, এবং মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে। নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে ওঠে। কৃষকরা তাদের জমিতে ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়। বর্ষার স্নিগ্ধতা প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সবুজের সমারোহে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সাজে। তবে বর্ষার অতিবৃষ্টি কখনও কখনও বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৩. শরৎ (আশ্বিন-কার্তিক)

শরৎকাল বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঋতুগুলোর মধ্যে একটি। এ সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে, এবং সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়। শরতে প্রকৃতি যেন রূপসী বাংলার রূপ ধারণ করে। কাশফুল, শিউলি ফুলের সৌরভে চারদিক মম করে ওঠে। এ সময় নদী-নালা পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, এবং কৃষকেরা তাদের ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হয়। শরৎকাল বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

৪. হেমন্ত (অগ্রহায়ণ-পৌষ)

হেমন্তকালকে শান্তির ঋতু বলা হয়। এ সময় প্রকৃতি যেন কিছুটা স্তব্ধ হয়ে আসে। আকাশে হালকা কুয়াশা পড়ে, এবং শীতের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। হেমন্তে কৃষকেরা তাদের ফসল ঘরে তোলে, এবং গ্রাম বাংলায় নবান্ন উৎসবের আমেজ দেখা যায়। এ সময় প্রকৃতির রং কিছুটা ফিকে হয়ে এলেও, তার মধ্যে এক ধরনের শান্তি ও প্রশান্তি বিরাজ করে।

৫. শীত (মাঘ-ফাল্গুন)

শীতকাল বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতল ঋতু। এ সময় প্রকৃতি যেন কাঁপতে থাকে শীতের কনকনে ঠান্ডায়। সকালে ঘন কুয়াশায় চারদিক ঢেকে যায়। শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর সূর্যের আলো পড়ে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে। শীতকালে নানা ধরনের শাকসবজি ও ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এ সময় পিঠা-পুলির আয়োজন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে।

৬. বসন্ত (চৈত্র-বৈশাখ)

বসন্তকালকে ঋতুরাজ বলা হয়। এ সময় প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সাজে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, এবং ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারদিক। কোকিলের কুহুতানে প্রকৃতি যেন মাতে। বসন্তে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা ও বিভিন্ন রঙের ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এ সময় পহেলা বৈশাখের উৎসব বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।

ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ও প্রভাব:

বাংলাদেশের ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্য এদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। প্রতিটি ঋতুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়, যা বাংলাদেশকে করে তোলে আরও বেশি আকর্ষণীয়। ষড়ঋতুর এই পরিবর্তনশীলতা বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। কবি-সাহিত্যিকরা তাদের সৃষ্টিকর্মে ষড়ঋতুর সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

উপসংহার:

বাংলাদেশের ষড়ঋতু প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রতিটি ঋতুই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের জীবনে নতুন রং যোগ করে। ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্য বাংলাদেশকে করে তোলে অনন্য। প্রকৃতির এই নিয়মিত পরিবর্তন আমাদের মনে আশা ও আনন্দের সঞ্চার করে, এবং আমাদের জীবনকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।

রচনা: ২

বাংলাদেশের ষড়ঋতু

ভূমিকা:
বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এক রূপসী দেশ। দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতু। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে চারটি ঋতু বিরাজমান হলেও বাংলার প্রকৃতিতে ছয়টি ঋতুর স্বতন্ত্র উপস্থিতি দেশকে অনন্য করে তুলেছে। ঋতুগুলোর ধারাবাহিক পালাবদলে প্রকৃতি নিত্য নতুন রূপে সেজে ওঠে। এমন অপরূপ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ খুবই বিরল। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাই গভীর ভালোবাসায় উচ্চারণ করেছিলেন:
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।

ষড়ঋতুর পরিচয়:
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুগ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বসন্ত। প্রতি দুই মাস পর পর ঋতু পরিবর্তন ঘটে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। প্রতিটি ঋতু বাংলার প্রকৃতিকে আলাদা সৌন্দর্যে সাজায়, আর জনজীবনে আনে নানান পরিবর্তন।

তাপদগ্ধ গ্রীষ্মকাল:
ঋতুচক্রের শুরু হয় গ্রীষ্ম দিয়ে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে এই ঋতু। প্রচণ্ড দাবদাহে খাল-বিল শুকিয়ে যায়, গাছপালা হয়ে পড়ে বিবর্ণ। সময় মানুষ প্রাণীকূল একটু ছায়া আর শীতল বাতাসের জন্য আকুল হয়ে ওঠে। তবে এই তপ্ত ঋতু নিয়ে আসে আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজসহ নানা রসালো ফল। গ্রীষ্ম তাই মধুমাস নামেও পরিচিত।

সজল বর্ষা:
গ্রীষ্মের শেষে আসে বর্ষা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসজুড়ে থাকে এর প্রভাব। সময় মাঠ-ঘাট প্রাণ ফিরে পায়, নদী-নালা ভরে ওঠে। অবিরাম বৃষ্টিতে প্রকৃতির রুক্ষতা দূর হয়। কৃষকের জীবনে এই ঋতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা ধান পাটের চারা রোপণ শুরু করে। কদম কেতকী ফুল বর্ষার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

শুভ্র শরৎ:
ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরৎকাল। বর্ষার বিদায়ের পর আকাশে ভাসে সাদা মেঘের ভেলা, আর প্রকৃতি সেজে ওঠে শিউলি ফুলের মাধুর্যে। নদীর দুপাশে কাশফুলের শুভ্রতা আর হালকা শিশিরে ভোরের সৌন্দর্য শরতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

ফসলের হেমন্ত:
কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে হেমন্ত আসে। এই ঋতুকে ফসলের ঋতু বলা হয়। সময় ধান পাকে, সর্ষে ফুলে হলুদ হয়ে যায় মাঠ। নবান্নের উৎসব ঋতুর অন্যতম আকর্ষণ। পাকা ধানের গন্ধে প্রকৃতি - করে।

উদাসী শীত:
পৌষ-মাঘ মাস নিয়ে শীতকাল। কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতি, কনকনে ঠাণ্ডা আর শুকনো গাছপালা এই ঋতুর বৈশিষ্ট্য। তবে শীতের সকালে খেজুরের রস, পিঠা-পুলি এবং শাক-সবজির সমারোহ ঋতুকে প্রাণবন্ত করে তোলে।

ঋতুরাজ বসন্ত:
ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে বসন্তকাল। সময় প্রকৃতি নবজীবন লাভ করে। কোকিলের ডাক, শিমুল-পলাশের লাল রং, আর আমের মুকুল বসন্তের সৌন্দর্যকে অনন্য করে তোলে। কারণেই বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়।

ষড়ঋতুর প্রভাব:
বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য কেবল প্রকৃতিতে নয়, বাঙালির জীবনযাত্রা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উৎসবেও গভীর প্রভাব ফেলে। ঋতুভেদে উদযাপিত হয় নানা রকম উৎসব মেলা। এই বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি শিল্পী, কবি সাহিত্যিকদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

উপসংহার:
বাংলাদেশের ষড়ঋতু প্রকৃতির অপার দান। তবে আধুনিক যান্ত্রিকতার ফলে শহরাঞ্চলে ঋতুবৈচিত্র্যের প্রভাব অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতন করতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা জরুরি। একমাত্র তবেই বাংলার এই অনন্য বৈশিষ্ট্য অম্লান থাকবে।

Post a Comment