পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা।বিশ্বের সেরা প্রেমের কবিতা।বিখ্যাত প্রেমের কবিতা


পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা

এ জীবন আমার নয়
– মহাদেব সাহা

এ জীবন আমার নয়, আমি বেঁচে আছি
অন্য কোনো পাখির জীবনে,
কোনো উদ্ভিদের জীবনে আমি বেঁচে আমি
লতাগুল্ম-ফুলের জীবনে;
মনে হয় চাঁদের বুকের কোনো আদিম পাথার
আমি
ভস্মকণা,
ভাসমান একটু শ্যাওলা আমি;
এই যে জীবন দেখছো এ জীবন আমার নয়
আমি বেঁচে আছি বৃক্ষের জীবনে,
পাখি, ফুল, ঘাসের জীবনে।
আমি তো জন্মেই মৃত, বেঁচে আছি
অন্য এক জলের উদ্ভিদ-
আমার শরীর এইসব সামদ্রিক প্রাণীদের
সামান্য দেহের অংশ,
আমি কোটি কোটি বছরের পুরাতন একটি
বৃক্ষের পাতা
একবিন্দু প্রাণের উৎস, জীবনের
সামান্য একটি কোষ;
এ জীবন আমার নয় আমি সেইসব অন্তহীন
জীবনের একটি জীবন,
আমি বেঁচে আছি অন্য জীবনে, অন্য
স্বপ্ন-ভালোবাসায়।

পাগলী, তোমার সঙ্গে…
– জয় গোস্বামী

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।
অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।
মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।
এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।
দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।
কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।
নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।
দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।
সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।
এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।

অভিমান
---তসলিমা নাসরিন

কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে,
জেনো
দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি।
ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে
তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও।
জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে
নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি।
অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি,
আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর ?

আমার চোখে বৃষ্টি ভিজছে খুব
___ রুদ্র গোস্বামী।

.ভীষণ একলা হয়ে যাচ্ছি ,আরও দূর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর,
আয় একটিবার তুই সন্ধ্যা নামার আগে
আয় একটিবার তুই বুকের বারান্দায়
আয় একটি বার তুই অভিমানে রাগে
আয় একটিবার তুই বাকবিতন্ডায়
তোকে বুঝতে থাকার চেষ্টায়
আমি পেরুচ্ছি রোদ্দুর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর!
আমার চোখে বৃষ্টি ভিজছে খুব
ক্লান্ত পাতায় ঘুমের আফসোস
আয় একটিবার তুই স্বপ্ন দেখার রঙ
আয় একটিবার তুই ঠোঁটের শব্দকোষ
একলা আমার লাগছে ভীষণ ভয়
আমি নিজের কাছেই বাড়াচ্ছি বিস্ময়
তোকে ভুলতে থাকার চেষ্টা
আমার হারিয়ে দিচ্ছে সুর
আমি একলা হেঁটে যাচ্ছি সমুদ্দুর।।

“যেতে পারি,কিন্তু কেন যাবো”
___শক্তি চট্টোপাধ্যায়

ভাবছি,ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো
এতো কালো মেখেছি দু হাতে এত কাল
ধরে।
কখনো তোমার করে,তোমাকে ভাবিনি,
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে আয়,আয়,আয়।
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতা কাঠ ডাকে,আয়,আয়,আয়।
যেতে পারি,
যে কোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু,কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু,এখনি যাবো না
তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবো,
একাকী যাবো না অসময়ে।

ভালবাসি, ভালবাসি
-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,রাত
জেগে পড়ার টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত
কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস
থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত..
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত
আমি তোমার হাত ধরে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু
চাপ দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শশব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি
বলি- ভালবাস?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি
উপর তপ্ত রোদ,বাহন
পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময় হঠাত
দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাস?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার
দিকে তাকিয়ে কাঁধে হাত
দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো শেভ করছ তুমি,গাল
কেটে রক্ত পড়ছে,এমন
সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত
হাতে নিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত
আমার গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল
গলায় বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো খুব অসুস্থ
তুমি,জ্বরে কপাল পুড়ে যায়,
মুখে নেই রুচি, নেই কথা বলার
অনুভুতি,
এমন সময় মাথায়
পানি দিতে দিতে তোমার
মুখের দিকে তাকিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম
শ্বাস আমার
শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে ভালবাসি
ভালবাসি..
ধরো যুদ্ধের
দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,প্রচন্ড
যুদ্ধে তুমিও অঃশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময়
পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাস?
ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যা
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস
দেবে,বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে
বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাস?
কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত
বুলাতে বুলাতে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি
ধরো প্রচন্ড
ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই
পৃথিবীতে,বাস
করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবা
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত
রেখে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..
ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার
করে বলি-ভালবাস?
চুপ করে থাকবে?নাকি সেখান
থেকেই
আমাকে বলবে ভালবাসি, ভালবাসি..
যেখানেই যাও,যেভাবেই
থাক,না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি..
দূর থেকে শুনব তোমার
কন্ঠস্বর,বুঝব
তুমি আছ,তুমি আছ
ভালবাসি, ভালবাসি........


বিদেশি পর্ব

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি
আলেক্সান্দার পুশকিন

 
লিলি, লিলি! আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি

হতাশায় আর আশাহীনতার অভিশাপে।

আমি ছিন্নভিন্ন আর আমি মরে যাচ্ছি,
আর আমার আত্মা তার দ্যুতি হারাচ্ছে,
কিন্তু আমার ভালোবাসা কোনো করুণার আহ্বান করে না:

তুমি আমাকে বেচারাই ভাবতে পারো।
হেসে যাও: তুমি সুন্দর

এমনকি যখন সহানুভূতিহীন তখনও।
 
আলেক্সাজান্দার সের্গেইভ পুশকিন  রোমান্টিক যুগের রুশ কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। এই মহান কবিকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক বলা হয়। পনেরো বছর বয়সে তার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় এবং কলেজে থাকাকালে সে কবি হিসেবে সবার নজর কাড়েন। জারের রাজনৈতিক পুলিশরা তার উপরে নজর রাখতো। এ সময়ই তিনি তার বিখ্যাত নাটক ‘বসি গুডোনভ’ রচনা করেন। তার উপন্যাস ‘ইউজিন অনেজিন’ কাব্যে লেখা। তার স্ত্রীকে ফুসলানোর চেষ্টা করলে পুশকিন একজন ফরাসি কর্মকর্তার সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং মারাত্মক আহত হন।
 
কাকে তুমি ভালোবাসো সবচেয়ে
শার্ল বোদলেয়ার

 
কাকে তুমি ভালোবাসো সবচেয়ে বেশি, হেয়ালি মানব? তোমার বাবা?
তোমার মা, তোমার বোন অথবা তোমার ভাই?
‘আমার না আছে বাবা, না আছে মা, না বোন, না ভাই’
‘তোমার বন্ধু?’
‘এখন তুমি এমন এক শব্দ ব্যবহার করছো যার অর্থ আমি এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি।’
‘তোমার দেশ?’
‘আমি জানি না কোন অক্ষাংশে তা অবস্থিত।’
‘সৌন্দর্য?’
‘আমি সানন্দে তাকে ভালোবাসতে পারতাম, দেবী আর অমরত্ব।’
‘স্বর্ণ?’
‘আমি এটাকে ঘৃণা করি যেমন তুমি ঈশ্বরকে করো।’
‘আচ্ছা, তাহলে কী তুমি ভালোবাসো, অদ্ভুত আগন্তুক?’
‘আমি ভালোবাসি মেঘেদের... ভাসমান মেঘেদের... ওইখানে... ওই উঁচুতে... ওই বিস্ময়কর মেঘেদের!’
 
ফরাসি কবিতায় শার্ল বোদলেয়ার এক সাহসী সম্রাট। কবিতাকে দিয়েছেন তিনি নতুন চেহারা ও মাত্রা। তার লে ফুল দ্যু মাল (শয়তানের ফুল) উনিশ শতকের প্যারিসের শিল্প-কারখানার বদল যেমন তুলে ধরে তেমনি নবতর নন্দন ভাবনাকেও চিত্রিত করে। বোদলেয়ারের শক্তিশালী এবং মৌল চিন্তাভাবনা পল ভেলেরি, আর্তুর র‌্যারো, স্টিফেন মার্লার্মে তথা ফরাসি কবিতাকেই প্রভাবিত করেছে।  আজকের আধুনিক কবিতার বিশ্বব্যাপী বিস্তারে তার ভূমিকা অনন্য। এমনকি সাহিত্যে আধুনিক শব্দটির (modernité) আনুষ্ঠানিক ব্যবহার এবং আধুনিকতার চর্চাও তার হাত ধরে সূচিত হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি তিনি প্রবন্ধ ও শিল্প সমালোচনাও করেছেন এবং এডগার এলান পো’র বহু লেখা অনুবাদ করেছেন।
 
যখন আমি 
পাবলো নেরুদা

 
যখন আমি তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না
আমি তখন তোমার পা দেখি।
ধনুকের হাড়ের মতো তোমার পা,
তোমার শক্ত ছোট্ট পা।
আমি জানি ওরা তোমাকে অবলম্বন দেয়
এবং তোমার মিষ্টি ওজন
ওদের উপর দাঁড়িয়ে থাকে।
তোমার কোমর আর তোমার বুক
দোহারা বেগুনি
তোমার স্তনবৃন্ত
তোমার চোখের কোটর
যা এই মাত্র দূরে উড়ে গেলো,
তোমার প্রসারিত ফলের মতো মুখ,
তোমার লাল বিনুনি
আমার ছোট্ট দূর্গ।
কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমার পা
কেবল এই কারণে যে ওরা হাঁটে
পৃথিবীর উপরে এবং
বাতাসের উপরে এবং জলের উপরে,
যতক্ষণ না আমাকে খুঁজে পায়।
 
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ভাষায় বলতে গেলে পাবলো নেরুদা হলেন ‘বিশ শতকের যে কোনো ভাষার মধ্যেই মহত্তম কবি।’ চিলির এই কবির আসল নাম হলো নেফতালি রিকার্ডো রেইয়ে বাসোআলতো। তিনি তার দেশের আরেক কবি জেন নেরুদা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের নাম পাবলো নেরুদা রাখেন। মজার বিষয় হলো, জেন নেরুদা তেমন পরিচিত বা সফল কবি নন। অথচ পাবলো নেরুদা তরুণকালেই খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে লেখা তার কাব্যগ্রন্থ ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েম আ সঙ অব ডিজেপায়ার’ পাঠকপ্রিয় হয়। তিনি সব সময় সবুজ কালি দিয়ে লিখতেন, বলতেন এটা তাকে প্রেরণা দেয়। অন্যদিকে তার কবিতাও চির সবুজের আশা-প্রেরণা-ভালোবাসা লক্ষ্যণীয়। ভালোবাসার কবিতা, পরাবাস্তব কবিতা, ঐতিহাসিক কিংবা রাজনৈতিক কবিতা- সকল ক্ষেত্রেই তিনি অসংখ্য সফল কবিতার জন্ম দিয়েছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন, কূটনৈতিক হিসাবেও কাজ করেছেন। ‘দ্য হাইট অব মাচুপিচু’ ‘১০০ লাভ সনেট’ ‘দ্য বুক অব কোশ্চেন’ ‘দ্য ইয়েলো হার্ট’ ‘স্টোনস অব দ্য স্কাই’ ‘অন দ্য ব্লু শোর অব দ্য সাইলেন্স: পোয়েমস অব দ্য সী’ ইত্যাদি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ।
 
যখন একজন মানুষ প্রেমে পড়ে
নিজার তৌফিক কাবানি

 
যখন একজন মানুষ প্রেমে পড়ে
তখন সে কী করে পুরনো শব্দগুলো ব্যবহার করবে?
একজন নারীর কি উচিত
প্রত্যাশা করা যে তার প্রেমিক
শুয়ে আছে
ব্যাকরণ আর ভাষাতত্ত্বে?
 
আমি কিছুই বলিনি
আমার ভালোবাসার নারীকে
কিন্তু জড়ো করেছিলাম
ভালোবাসার সব বিশেষণ একটা স্যুটকেসে
এবং তারপর ভাষা থেকে উড়াল দিয়েছিলাম।
 
নিজার তৌফিক কাবানি একই সঙ্গে সিরিয়ার একজন কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কবি এবং প্রকাশক। তার কবিতায় খুব সরলভাবে প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা, নারীবাদ, ধর্ম এবং আরব জাতীয়তাবাদ উঠে আসে। বিংশ শতকের আরবী সাহিত্যে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। নিজার কাবানি’র বয়স যখন ১৫ তখন তার ২৫ বছরের বোন আত্মহত্যা করে। ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে না-পারাই এর কারণ। বোনের জানাজায় দাঁড়িয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। তাকে বিপ্লবী বলা হলে তিনি বলেন: ‘‘আরব বিশ্বে ভালোবাসা হলো কারাবন্দী, আমি তাকে মুক্ত দেখতে চাই। আমি আমার কবিতা দিয়ে আরবের আত্মা, বোধ আর শরীরকে মুক্ত করতে চাই। আমাদের সমাজে নারী পুরুষের সম্পর্কটি স্বাস্থ্যকর নয়।’ তার সময়ের অন্যতম প্রাজ্ঞ এবং গভীর নারীবাদী হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করেন কেউ কেউ। ১৯৬১ সালে আরব-ইসরাইলের যুদ্ধ তাকে প্রভাবিত করে। তিনি তীব্র রাজনীতি সচেতন কবিতা লিখতে থাকেন।
 
ভালোবাসা
সাফো

 
ভালোবাসা আমার হৃদয় ঝাকাচ্ছে,
যেমন পাহাড়ি বাতাস
যন্ত্রণা দিচ্ছে ওক গাছগুলোকে।
 
সমালোচকদের বিবেচনায় সাফো (৬৩০-৫৭০ খ্রিস্টপূর্ব) বিশ্বের প্রথম নারী কবি। কিন্তু তাকে বিচার করার এটিই প্রধান বিষয় নয়। বরং কবি হিসেবেই সাফো বিশ্ব কবিতায় এক বিশাল ব্যতিক্রম ও নিজস্ব কণ্ঠস্বর হিসেবে বিবেচ্য। গ্রীসের লেসবস দ্বীপে তার জন্ম। লেসবস সে সময় গ্রীসের জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিলো। লেসবস দ্বীপের অধিবাসীদের লেসবিয়ান বলা হয়। সাফোর কারণেই পরবর্তী সময়ে ‘লেসবিয়ান’ শব্দটির ভিন্ন মানে দাঁড়ায়। নারী সমকামীকে লেসবিয়ান বলা হয়। সাফো তাই ছিলেন বলে অনেকের ধারণা। তার কবিতাতেও নারীর প্রতি তীব্র প্রেম ও কামনা লক্ষ করা যায়।
 


ভালোবাসা যমজ
উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম 

ভালোবাসা যমজ, সে একাকি নয়,
সোনা আর রূপা একত্রে মেশানো,
মিলেছে আসক্তি আর বেদনায়
ঝলমল করে চিরকাল সাজানো।
ঠিক বেদনা এটা নয়; হয়তোবা কিছুটা করুণা,
আকস্মিক যন্ত্রণা, সেও মরে যায় কিংবা পালায়
আসক্তি এটা নয়, অন্যায় কিছু কিংবা যথার্থই দৃঢ়তা
একজন তাৎক্ষণিক জন্মায়, আরেকজন তাৎক্ষণিক মরে যায়।
ভালোবাসা সে তো যমজ, সে তো একাকি নয়,
সোনা আর রূপা মিলেমিশে একত্রে রয়,
মিলে সে আসক্তি আর বেদনায়
ঝলমল করে চিরকাল সাজানো শয্যায়।

আধুনিক এবং চিত্রবাদী মার্কিন কবি উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম কবিতার পাশাপাশি চিত্রকলাকেও গুরুত্ব সহকারে চর্চা করেছেন। তার কবিতায় চিত্রকলার প্রভাব পাওয়া যায়। তিনি কবিতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন, ইউনাইটেড স্টেটস পোয়েট লরিয়েট সম্মানও পেয়েছেন।

Post a Comment