পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা class 10।পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা
“এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল,
এই মেঘ, এই রৌদ্র, কি বাতাসের উপভোগ।
আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি।”

পরিবেশ মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছপালা, পশুপাখি, বায়ু, মাটি, জল, শব্দ—সব মিলিয়ে তৈরি হয় আমাদের চারপাশের পরিবেশ। এটি আমাদের জন্মদাত্রী এবং পালনকর্ত্রী। কিন্তু সভ্যতার ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসতর্ক ও লোভী কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশ আজ দূষিত হয়ে পড়েছে। এর ভয়াবহ প্রভাব শুধু মানুষের জীবনেই নয়, পুরো পৃথিবী জুড়েই পড়েছে।

পরিবেশ দূষণ
পরিবেশ দূষণ হলো প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, যা মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে ঘটে। দূষণের জন্য মানুষের লোভ ও অসচেতনতা বড়ো অংশে দায়ী। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর জৈবিক ও প্রাকৃতিক চক্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পরিবেশ দূষণকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়—
১. বায়ুদূষণ
২. জলদূষণ
৩. মাটিদূষণ
৪. শব্দদূষণ
৫. মনস্তাত্ত্বিক দূষণ।

১. বায়ুদূষণ
বায়ুদূষণ বর্তমানে এক মারাত্মক সমস্যা। যানবাহনের ধোঁয়া, কারখানার বিষাক্ত গ্যাস, বনজঙ্গল ধ্বংস, এবং ফ্রিজ-এসি ব্যবহারের ফলে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে এবং পৃথিবীর উষ্ণায়ন দ্রুত বাড়ছে।

২. জলদূষণ
কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, গৃহস্থালির ময়লা, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক নদী, পুকুর ও সমুদ্রে মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে। এর ফলে পানীয় জল সংকট বাড়ছে এবং জলজ প্রাণীরা ধ্বংস হচ্ছে।

৩. মাটিদূষণ
কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে মাটিতে রাসায়নিক সার ও বর্জ্য পদার্থ মিশে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন কমছে এবং জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

৪. শব্দদূষণ
যানবাহন, কারখানা, বাজি ফাটানো, উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর ফলে শব্দদূষণ সৃষ্টি হয়। এটি মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৫. মনস্তাত্ত্বিক দূষণ
সামাজিক অপসংস্কৃতি, বেকারত্ব, অনৈতিক বিনোদন এবং কুরুচিপূর্ণ প্রচার মাধ্যমের কারণে মনস্তাত্ত্বিক দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি সমাজে অপরাধ প্রবণতা এবং নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও সচেতনতা। এর জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে—

বায়ুদূষণ রোধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে।
জলদূষণ ঠেকাতে শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
মাটিদূষণ কমানোর জন্য রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে এবং জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ রোধে সামাজিক সংস্কার, শিক্ষার বিস্তার এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
“গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান” শীর্ষক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

উপসংহার
পরিবেশ দূষণ রোধ করা আমাদের দায়িত্ব। “পৃথিবী বাঁচান, জীবন বাঁচান” শ্লোগানের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পারি। শুধু আইন বা প্রকল্প নয়, ব্যক্তিগত সচেতনতাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতোই আমাদের প্রত্যয় ঘোষণা করতে হবে—

“এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য
করে যাবো আমি,
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

Post a Comment