কুম্ভ মেলা কি
কুম্ভ মেলার প্রবর্তনের সঠিক ইতিহাস স্পষ্ট নয়, কারণ এটি প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ, যা অনেক শতাব্দী ধরে পালিত হয়ে আসছে। তবে, এর উৎপত্তি মূলত হিন্দু পুরাণ এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের সাথে জড়িত।
পৌরাণিক প্রেক্ষাপট:
কুম্ভ মেলার ধারণা হিন্দু পুরাণের সমুদ্র মন্থন কাহিনি থেকে আসে। দেবতা ও অসুররা অমৃত (অমরত্বের পানীয়) পেতে সমুদ্র মন্থন করেন। মন্থনের সময় অমৃতভর্তি কুম্ভ (কলস) নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং অমৃতের কয়েক ফোঁটা পৃথিবীর চারটি স্থানে পড়ে:
- প্রয়াগরাজ
- হরিদ্বার
- উজ্জয়িনী
- নাসিক
- এই চারটি স্থানে আজ কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি:
হিউয়েন সাঙের বিবরণ: ৭ম শতাব্দীতে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ প্রয়াগে (বর্তমান প্রয়াগরাজ) একটি বিশাল সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ পবিত্র নদীতে স্নান করতেন। এটি কুম্ভ মেলার একটি প্রাথমিক উল্লেখ।
আদিগুরু শংকরাচার্য: কুম্ভ মেলার প্রথাকে জনপ্রিয় এবং সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৮ম শতাব্দীতে শংকরাচার্য হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবনের জন্য বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের প্রচলন করেন, যার মধ্যে কুম্ভ মেলার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
কুম্ভ মেলার উৎপত্তি:
কুম্ভ মেলার ধারণা মূলত হিন্দু পুরাণের সমুদ্র মন্থন কাহিনি থেকে উদ্ভূত। পুরাণ অনুসারে, দেবতা এবং অসুররা অমৃতের কুম্ভ (কলস) পাওয়ার জন্য সমুদ্র মন্থন করেছিলেন। অমৃতের কুম্ভকে নিয়ে দেবতারা এবং অসুরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা ১২ দিন ধরে স্থায়ী হয়। এই দ্বন্দ্বের সময়, অমৃতের কয়েক ফোঁটা পৃথিবীর চারটি স্থানে পড়ে:
প্রয়াগরাজ (পুরানো নাম এলাহাবাদ)
- হরিদ্বার
- উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদী তীর
- নাসিকের গোদাবরী নদী তীর
- এই চারটি স্থানেই কুম্ভ মেলা পালিত হয়।
কুম্ভ মেলার সময়কাল:
- কুম্ভ মেলা ১২ বছরে একবার পালিত হয়, তবে প্রতিটি স্থানে এটি নির্দিষ্ট জ্যোতিষীয় গণনার ওপর ভিত্তি করে পালিত হয়। কুম্ভ মেলার চারটি প্রধান ধরন আছে:
- পূর্ণ কুম্ভ মেলা: ১২ বছরে একবার।
- অর্ধ কুম্ভ মেলা: ৬ বছরে একবার।
- মহা কুম্ভ মেলা: প্রতি ১৪৪ বছরে একবার (প্রয়াগরাজে)।
- অরণ্য কুম্ভ মেলা: প্রতি ৩ বছরে একবার।
মেলার মূল আকর্ষণ:
- স্নান বা ডুব: হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে কুম্ভ মেলার সময় পবিত্র নদীতে স্নান করলে পাপমুক্তি ঘটে এবং মোক্ষ লাভ সম্ভব।
- সাধুদের সমাগম: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধু-সন্ন্যাসীরা কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
- যজ্ঞ ও পূজা: ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং যজ্ঞ করা হয়।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সঙ্গীত, নৃত্য এবং ধর্মীয় আলোচনা।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কুম্ভ মেলার প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর বর্ণনায়, যিনি ৭ম শতাব্দীতে ভারতে আসেন। তিনি প্রয়াগে একটি বিশাল সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে কুম্ভ মেলা হিসেবে পরিচিত হয়। মধ্যযুগেও বিভিন্ন শাসক ও সাধুরা এই মেলায় অংশগ্রহণ করতেন, যা মেলার জনপ্রিয়তা ও ধর্মীয় গুরুত্ব বৃদ্ধি করে।
আধুনিক কুম্ভ মেলা:
বর্তমানে, কুম্ভ মেলা বিশাল আকার ধারণ করেছে এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাবেশগুলোর একটি। জাতিসংঘ (UNESCO) ২০১৭ সালে কুম্ভ মেলাকে "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
উপসংহার:
কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য উদাহরণ। এটি কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
কুম্ভ মেলা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়
- উত্তর প্রদেশ: প্রয়াগরাজ
- উত্তরাখণ্ড: হরিদ্বার
- মধ্য প্রদেশ: উজ্জয়িনী
- মহারাষ্ট্র: নাসিক