কবিতা: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
কবিতা মানুষের অনুভূতির গভীরতম প্রকাশ। বাইরের জগতের রূপ-রস, শব্দ, স্পর্শ এবং মনের ভাবনা-বেদনা, অনুভূতি ও কল্পনা যখন শিল্পিত ও ছন্দোময় ভাষায় রূপ লাভ করে, তখনই তা কবিতা হয়ে ওঠে। কবিতা একদিকে ছন্দোবদ্ধ, অলংকারে সজ্জিত এবং ভাবপূর্ণ, অন্যদিকে পাঠকের মনে সৃষ্টির এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
কবিতা কী?
- কবিতার সংজ্ঞায় বিভিন্ন দার্শনিক ও কবি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দিয়েছেন।
- এস. টি. কোলরিজের মতে: “Best words in best order” অর্থাৎ, সেরা শব্দের সেরা বিন্যাসই কবিতা।
- ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন: “Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings.” অর্থাৎ, দুর্নিবার আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশই কবিতা।
- শেলি উল্লেখ করেছেন: “Poetry in the general sense may be defined as the expression of the imagination.” অর্থাৎ, কল্পনাশক্তির প্রকাশই কবিতা।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন: “নিজের প্রাণের মধ্যে, পরের প্রাণের মধ্যে ও প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাকেই বলি কবিত্ব।”
কবিতার প্রকারভেদ
কবিতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
মন্ময় কবিতা:
- এটি ব্যক্তিনিষ্ঠ কবিতা।
- কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও ভাবনা এতে প্রকাশ পায়।
- মন্ময় কবিতার অন্তর্ভুক্ত:
- গীতি কবিতা: আবেগঘন ও সুরেলা কবিতা।
- সনেট: নির্দিষ্ট কাঠামো ও ছন্দের মধ্যে লিখিত কবিতা।
তন্ময় কবিতা:
- বস্তুবিশ্ব বা বাইরের বিষয়বস্তুকে ঘিরে রচিত।
- কবির হৃদয় ও বস্তুবিশ্বের এক নিবিড় সম্পর্ক এতে ফুটে ওঠে।
- এতে আলংকারিক ভাষা, ছন্দের বৈচিত্র্য ও কল্পনার সৌন্দর্য বিদ্যমান।
কবিতার বৈশিষ্ট্য
কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য হল এর গভীরতা, অনুভূতি এবং শৈল্পিক রূপ।
- জীবনবোধ: কবিতায় মানুষের জীবনের গভীরতর অনুভূতি ও উপলব্ধি ফুটে ওঠে।
- নিত্য-নতুন শৈলী: কবিরা কবিতায় নতুন আঙ্গিক ও প্রকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
- অবচেতন প্রয়োগ: কবিতায় কবির মনের অবচেতন চিন্তা ও অনুভূতি সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়।
- গভীর ভাবনা: শব্দের অর্থসীমা ছাড়িয়ে কবিতায় একাধিক অর্থ ও তাৎপর্যের জন্ম হয়।
- অলংকৃত রূপ: কবিতায় অলংকার, রস, ধ্বনি ও ছন্দের প্রয়োগ থাকে যা কবিতাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে।
- মনের খোরাক: কবিতা মনকে শান্ত করে এবং নতুন চিন্তার জন্ম দেয়।
- ভাষা শেখা: কবিতা পড়ার মাধ্যমে ভাষার ওপর দখল বাড়ে।
- সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: কবিতা পড়লে সৃজনশীল চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- জীবনকে নতুন করে দেখা: কবিতা জীবনের বিভিন্ন দিককে নতুন করে দেখার সুযোগ দেয়।
উপসংহার
কবিতা মানুষের হৃদয়ের গভীর অনুভূতির প্রকাশ। এটি শুধুমাত্র ছন্দোবদ্ধ শব্দ নয়, বরং মানব মনের সৌন্দর্য, কল্পনা ও চিন্তার অনন্য রূপ। কবিতার মাধ্যমে কবি পাঠকের মনে এক অমলিন ছাপ রেখে যান।
কবিতা কাকে বলে?
কবিতা হলো একধরনের সাহিত্যিক শিল্প যা ছন্দ, উপমা, অলঙ্কার, ভাব এবং সৌন্দর্যের মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করে। এটি সাধারণত গদ্য থেকে ভিন্ন, কারণ এতে শব্দ এবং ধ্বনির সুষম বিন্যাস থাকে। কবিতা মানুষের আবেগ, অভিজ্ঞতা, কল্পনা এবং সৌন্দর্যকে প্রকাশের একটি শিল্পমাধ্যম।
কবিতার বৈশিষ্ট্য
- ছন্দ: কবিতায় একটি নির্দিষ্ট ছন্দ বা তাল থাকে।
- উপমা ও রূপক: কবিতায় চিত্রকল্প তৈরির জন্য উপমা, রূপক, ও অন্যান্য অলঙ্কারের ব্যবহার হয়।
- ভাবগম্ভীরতা: কবিতা সংক্ষিপ্ত হলেও গভীর অর্থবহ হয়।
- সৌন্দর্য: শব্দের সুরেলা ব্যবহার কবিতাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।
কবিতার প্রকারভেদ
কবিতাকে বিভিন্ন দিক থেকে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। প্রধানত এটি দুই প্রকার:
১. গীতিকবিতা
গীতিকবিতায় ব্যক্তিগত অনুভূতি, প্রেম, প্রকৃতি বা আবেগের বিষয় থাকে। এটি গানের মতো ছন্দময়।
উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "আমার সোনার বাংলা"।
২. বর্ণনামূলক কবিতা
এই কবিতায় কোনো ঘটনা, গল্প বা চরিত্রের বর্ণনা দেওয়া হয়।
উদাহরণ: মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদবধ কাব্য"।
অন্যান্য প্রকারভেদ
কবিতার আরও অনেক ধরনের ভাগ রয়েছে:
- অকবিতা: গদ্যের মতো কবিতা যা ছন্দহীন।
- অলঙ্কারধর্মী কবিতা: অলঙ্কারের ব্যবহার বেশি থাকে।
- প্রকৃতির কবিতা: প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে লেখা।
- ব্যঙ্গাত্মক কবিতা: সমাজ বা ব্যক্তিকে ব্যঙ্গ করে লেখা।
- ছোটদের কবিতা: শিশুদের জন্য সহজ ও ছন্দময় কবিতা।
প্রতিটি প্রকারে কবিতার ভাব, রূপ ও শৈলীর ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।