নারী মানবজাতির এক অনন্য সৃষ্টি, যিনি মমতা, সাহস ও শক্তির প্রতীক। সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র গঠনে নারীর ভূমিকা অপরিসীম।
একজন মা হিসেবে তিনি সন্তানকে লালন-পালন করেন, একজন কন্যা হিসেবে পরিবারের আশার প্রদীপ হয়ে ওঠেন, আর একজন স্ত্রী হিসেবে জীবনসঙ্গীর পাশে দাঁড়ান। কর্মজীবনে নারীরা চিকিৎসা, শিক্ষা, রাজনীতি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নারী: আমার অভিধান
রফিক আজাদ
নারী
-কাজী নজরুল ইসলাম
সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।
নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’ করে নারী হেয় জ্ঞান?
তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
ক্লীব সে, তাই নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী, শষ্য-লক্ষী নারী,
সুষম-লক্ষী নারীওই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ
কামিনী এনেছে যামিনী শান্তি সমীরণ বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশিথে হয়েছে বঁধু
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্য ক্ষেত্র উর্বর হল,পুরুষ চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শষ্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল,সেই জল মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে
স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে অলঙ্কার।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে নর পেল কবি-প্রাণ
যত কথা হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুঢা,সুঢায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নি বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহান।
কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত বোন দিল সেবা
বীর স্মৃতি স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোন কালে একা হয়নি ক জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।
রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন, রাজারে শাসিছে রানী,
রানীর দরদে ধুইয়া গেছে রাজ্যের যত গ্লানি।
পুরুষ-হৃদয়হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে অর্ধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাদের যশ ধরে নাক, অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাদের স্মরণে, করি মোরা উৎসব
খেয়ালের বশে তাদের জম্ম দিয়েছে পিতা
লব কুশ বনে ত্যাজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা!
নারী, সে শিখাল শিশু পুরুষেরে, স্নেহ-প্রেম, দয়া-মায়া
দীপ্ত নয়নে পরল কাজল, বেদনার ঘন ছায়া!
অদ্ভুত রূপে পুরুষ পুরুষে করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে নিয়ে তারে চুমিল যে তারে করিল সে অবরোধ!
তিনি নর-অবতার-
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার!
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর-
নারী চাপা ছিল এতদিন,আজ চাপা পড়িয়াছে নর!
সে-যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক, নারীরা আছিল দাসী!
বেদনার যুগ,মানুষের যুগ, সাম্যর যুগ আজি,
কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি!
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা অই কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।
যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!
শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরিতে নারী!
করিল তোমা বন্দিনী, বল, কোন সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নৈপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পারনা; হাতে রুলি,পায়ে মল,
মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙ্গে ফেল ও শিকল!
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ঊড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ণ, ঐ যত আভরণ!
ধরার দুলালী মেয়ে
ফের না ত আর গিরিদরীবনে শাখী-সনে গান গেয়ে।
কখন আসল “প্লুটো” যমরাজ নিশিথ পাখায় উড়ে’,
ধরিয়া তোমায় পুড়িল তাহার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হতে আছ মরি’
মরণের পুরে;নামিল ধরায় সেই দিন বিভাবরী।
ভেঙ্গে যম্পুরী নাগিনীর মত আয় মা পাতাল ফূঁড়ি।‘
আধাঁরে তোমায় পতজ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুঁড়ি!
পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদিন শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।
সেদিন সুদূর নয়-
যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর ও জয়।
নারী তুমি
- আবদুল্লাহ্ আল-নিটাব খাঁন
নারী তুমি
পদ্মকলি রজনী-গন্ধা নাকি ফুটন্ত গোলাপ
তুমি শুধু প্ররাণের পিপাসা মিটানো প্রেমের মিষ্টি আলাপ
বকুলের মালা বেলীর সৌরভ কৃষ্ণ চূড়ার লাল
সূর্যমুখীর চেয়ে থাকা, শিল্পীর ছবি আঁকা, স্বপ্নের মহাকাল।
নারী তুমি
আমোদ আসরে, মিলন বাসরে, পূজারীর প্রতিমা
দিবা-নিশি ঘিরে হৃদয় মন্দিরে, নিত্য নব শান্তির পরিসীমা
কালের গর্ভে থেমে থাকা জীবনে তোল সুরের ঝংকার
হৃদয়াকাশে সুখে তারা হয়ে বাড়াও সুখের হাহাকার।
নারী তুমি
মৌচাকের মধু, প্রেমের যাদু,অসম আশার সমীকরন
সহস্র-কোটি জনতার মঞ্চে তুমি পুষ্প শোভিত মাল্য বরণ
তুমি অনন্যা, তুমি পাহাড়ী ঝর্না, তুমি সমুদ্রের কল্লোল ধ্বনি
হৃদয় ভুবনে বয়ে চলো গোপনে যেন তুমি অন্তহীন প্রবাহিনী।
নারী তুমি
প্রকৃতির সবুজ বৃক্ষরাজির মিলন মেলার শ্যামলিমা ছায়াছবি
স্বাধীনতার আকাশে উদীয়মান এক রক্তিম লাল রবি
তুমি জয়ন্তীর জয়, তুমি চির অক্ষয়, তুমি বাংলার স্বাধীনতা
তুমি নও উদ্বাস্তু, তুমি লেখকের বিষয়-বস্তু তুমি প্রেমময়ী কবির কবিতার খাতা।
নারী তুমি
আমার হৃদপিন্ডের একটি মহাখন্ড
তুমিহীনা এই জীবন যেন মহাপ্রলয়ের লন্ড-ভন্ড
তুমি লজ্জাবতীর লাজ, ফুলশয্যার সাজ, তুমি ধ্রুবতারার আলো
কোটি নক্ষত্রের মাঝে তুমিই শুধু আমার হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালো।
নারী তুমি
স্বয়ংবরা, প্রেমের জোড়া, সুখের চাবি-কাঠি
হ্নদয় মহলে বুকের অতলে শান্তির শীতল পাটি
তুমি গ্রাম বাংলা বধুর নকশী কাঁথার মাঠ
সুখ তারার দিশা তুমি, অনাবিল স্বপ্নের সাধ।
নারী তুমি
অন্ধের দৃষ্টি, বোবার ভাষা, বোধির শোনার অভিলাষ
প্রানের আকুতি, মনের মিনতী, সৃষ্টির মহা ইতিহাস
তুমি বেহুলার ভেলা,আনন্দ মেলা, তুমি স্বর্গের অপ্সরী
প্রিয়সী আমি, পিপাসার্থ মন, তোমার প্রতীক্ষায় মরি।
নারী তুমি
অবনীর বুকে যেন একটি গোলাপ ফুল
মোহনীয় সৌরভে মন মুগ্ধতায় আকুল
সমস্ত রূপের শ্রেষ্ঠ বাহার, নেই কোন ভূল
সত্যিই তুমি সদ্য ফোঁটা একটি গোলাপ ফুল।
নারী তোমার
ভুবন মোহিনী হাসিতে যেন মেঘেরাও থমকে তাকায়
হীরা-মুক্তা ঝরে পরে প্রতিটি হাসির কনায়
তোমার অভিসার অলৌকিত সিগ্ধতায় এই হৃদয় ছোঁয়ে যায়
অসহায় চিত্ত আমার স্বপ্নীন সন্ধানে বার বার তোমাতে হারায়।
নারী তুমি
নদী মাতৃক বাংলার পদ্মার মোহনা
তোমাতেই প্ররিলক্ষীত হয় স্বর্গ সুখের সূচনা
তুমি কক্স বাজারের সমুদ্র সৈকত, তুমি সুন্দরবনের মায়াবী হরিণী
কোহিনূর হীরার রূপ ভান্ডার তুমি, তুমি অনন্ত মায়ার অন্তহীন খনি।
নারী তুমি
শত ব্যস্ত তার মাঝে খানিক বিশ্রাম
বান্নান তাসের খেলায় তুমি, টেক্কা-কুড়ির-ট্রাম
যে জনমে ছিলেনা তুমি,সেতো জীবন নয় মরনেরই একাংশ-
তুমি মানব সৃষ্টির লগ্নে,আছো; তুমি সংযোজনে! তুমি থাকবে হয়ে অধাংশ।
নারী তুমি
তুমি মজনুনের পাগলামী, মাথিনের অপেক্ষা, দেবের হাতে মদের বোতল,
ফারহাদের সামনে বিশাল পাহাড়, হৃদয়ে তাহা কাটার কোলাহল
তুমি শাজাহানের গড়া তাজমহল, চন্ডির হাতে বরশির কাঠি
তুমি প্রেম নগরীর পরশ পাথর, তুমি কাশ্মীরের সোনা ঝরা মাটি।
নারী তুমি
অবনীর মাঝে শ্রেষ্ট অভিরাম মায়া
তোমাতে খুজে পাই যেন, ফুটন্ত গোলাপের ছায়া,
প্রেমের মিষ্টি গন্ধে সৌরভিত তুমি
তোমার রূপের রশ্মিতে, আলোকিত নরের হৃদয় ভুমি।
নারী তুমি
মেঘলা গগনে ভেসে উঠা নব পূনিমার চাঁদ
মৃদু প্রভঞ্জনে এক সোনালী প্রভাত,
মেদিনীর বুকে, তুমি যে মহা প্রেমের অর্ণব
নিশ্চয় নরের প্রাণ উতলা করো প্রীতি উৎসব।
নারী তুমি
নরের বুকে বয়ে চলা এক চঞ্ছলা নদী
পাল তোলা সুখের নাঁয়ের মোহনা অবধি,
সহস্র ক্লান্ত চিত্তে বিলাও শান্তির পরশ
মায়াবী আঁখির দৃষ্টি রেখায় কতো প্রাণ করেছো যে বশ।
নারী তুমি
কাংক্ষিত হৃদয়ের খোরাক, ব্যর্থ হৃদয়ের সফলতা
স্বপ্ন ভিবোর দিশাহারা জীবনে আনো হর্ষময় প্রফুল্লতা
ভীতু মনে সাহস যোগাও, দুর্বল মনে বল
তোমার অনুপ্রেরনায় বলীয়ান হচ্ছে সর্ব নরদল।
নারী তুমি
অন্ধকার আচ্ছাদিত ভূবনে ছড়াও উজ্বল আলোক রাশি
প্রিয়ার আকুলতায়, গভীর নিশিতে বাজানো তুমি বাঁশরীর হাতের বাঁশি,
তুমি প্রসব বেদনার মৃত্যু যন্ত্রনা শেষে, মায়ের বুকে জড়ানো শিশুর মায়া
হাশর প্রাঙ্গনে, দ্বাদশ রবির বহ্নি জ্বালায়, তুমি আরশের নিচে শান্তির ছায়া।
নারী তুমি
প্রবাসী যুবকের প্রিয়জনের নিকট লিখা প্রেম রোমাঞ্ছিত পত্রের শিরোনাম
প্রতিমার সম্মুক্ষে শির নত করে আবেগ মোহিত পূজারীর প্রনাম
তুমি মেশক্-আম্বরের সুভাস, তুমি নব বধূর যৌবনা অঙ্গ জুড়ে মোড়ানো লাল বেনারশী
তুমি রমজান শেষে পশ্চিমাকাশে উদিত ঈদের চাঁদের বাঁকা হাঁসি।
নারী তুমি
নিঃসঙ্গ আদমের বিপরীত মুখি সঙ্গী ও শান্তির গতিবেগ
তুমি লিও-নাদো-দ্যা বিঞ্ছির, দ্বি-খন্ডিত হৃদয়ের অতৃপ্ত আবেগ
তুমি পিতার আপন হস্তে, পুত্র ইসমাঈলের কোরবানীর উল্লাস
তুমি যুগ যুগ ধরে, মানবের জীবন তরে স্বর্নাক্ষরে লিখা প্রেমের ইতিহাস।
নারী তুমি
শান্ত যুবকের ক্লান্ত নয়নের অশ্রূ সিক্ত দুটি পাতা
তুমি চঞ্ছল যুবকের তন্দ্রায় ভরা-নিদ্রাহীন অজস্র নিষ্ঠুর রাত।
তুমি পরাজিত প্রেমিকের ঘুমের ঘরে কবরসম শূর্ণ্য শয্যা
তুমি ব্যর্থ যুবকের না পাওয়া বেদনায়, বিদ্রোহী চিত্তে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।
নারী তুমি
নব বরের জন্য শ্বশুরালয়ের আপ্যায়নের উৎসব মুখরিত সুবিশাল আয়োজন
তুমি কাংখিত স্বামীর বুকে, ঝড় তোলা ভালবাসার অভাব পূরণে নিত্য প্রয়োজন
তুমি ইউছুপ-জুলেখার সূপ্ত হৃদয়ের রহস্যময় গুপ্ত প্রেম-ভালবাসা
তুমি ভাস্কো-দা গামার নব দ্বীপ সন্ধ্যানে উচ্ছাসিত বিপুল আশা।
নারী তুমি
নজরুলের পারুলী, রবির গীতাঞ্জলী, জীবনানন্দের বনলতা সেন
তুমি থার্টিফাষ্ট নাইটের উল্লাস, তুমি চৌদ্দ ফেব্রুয়ারীর যুবক-যুবতীর ফাঁটা-ফাঁটি প্রেম
তুমি মহাকাশচারীর মহা বিশ্ব ভ্রমন জয়ে নিত্য নব অভিযান
তুমি যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামীর ফের-স্ব-সন্মানে মুক্তির নিশানা।
নারী তুমি
শীতের সকালে অঙ্গজুড়ে প্রাণ জোড়ানো মিষ্টি রোদের খেলা
তুমি ফাল্গুন মাসে প্রকৃতির বুকে সান্নিধ্যময় বসন্তের মেলা
তুমি চৈত্রের প্রাণ হারা মাটিতে, প্রাণ ফিরানো বর্ষার জল
তুমি টর্ণেডোর ক্ষতিগ্রস্ত চাষীর মাঠ ভরা ফসল, তার বধূর শুকনো ঠোঁটের কোণে হাঁসি ঝলমল।
নারী তুমি
মহাগ্রন্থ প্রবিত্র আল-কোরানের লিপিবব্ধ সুরায়ে-নূর
তুমি ঐতিহাসিক রমনী রহিমার রূগ্ন স্বামীর সেবায় নিয়োজিত স্নেহ মধুর
তুমি মরিয়মের সত্বীত্ব, রাবেয়া বসরীর ত্যাগ তিতিক্ষাময় প্রভুর সনে প্রেম-প্রীতি
মাদার তেঁরেসার মহত্ব তুমি, তুমি প্রিন্সের ডায়নার সুনাম খ্যাতি।
নারী তোমার
রূপের নেশাতে মাতাল কতো বরেণ্য বীর
তোমার বিরহে মহাপ্রয়ান কেহ, কারো লোচনে নীর
কেউ হচ্ছে দেশ ত্যাগী, কারো জ্বলছে হৃদয়
তবুও তো সাঁজাও তুমি স্বর্গ সুখের নিলয়।
নারী তোমার
আকুল মায়া লুকিয়ে আছে মোর হৃদয় তলে
নারী তোমার মধু প্রেমেতে আমার রক্ত জ্বলে,
জানিনা, কিসের দহনে, কিসের বিরহে জ্বলে পুড়ে হই ছাই
স্বপ্নের রঙ্গে সাঁজিয়েছি বাসর, তুমি যে হেথায় নাই।
নারী তোমার
আগুন লাগা যৌবন উৎসবে হোকনা আমার অবগাহন
বল, তুমি বিহনে এই যৌবন জলতরঙ্গ, রুখিবে কোন জন,
তৃষ্ণা মিটাতে নয়, তৃপ্তি পেতেই শুধু, তোমাকে কাছে পাওয়া
জানি হাজার জনমেও হবে না পূরণ, এই কাংখিত চাওয়া।
নারী তুমিহীনা,
জগৎ সংসারে নর যে বড় অসহায়
জন্মের লগ্নে থেকে বেঁচে আছি তোমারী করূনায়
“জননী হইয়া গড়েছো জীবন, রমনী হইয়া সাঁজাও
দৃষ্টি চরাচরে, হৃদয় অগোচরে, জানিনা তুমি যে কি চাও”।
অনির্ণীত নারী
-হেলাল হাফিজ
নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল।
নারী কি বৃক্ষ কোনো
না কোমল শিলা,
নারী কি চৈত্রের চিতা
নিমীলিত নীলা।
দুঃখের আরেক নাম
-হেলাল হাফিজ
আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।
আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,
পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।
নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন,
মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি
নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।
তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,
আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ
পৃথিবীকে উপহাস করে।
একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা
আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে
পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে।
এখন তুমিই বলো নারী
তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো।
আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,
ব্যাকুল শুশ্রুষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো
নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,
এতোদিন নারী ও রমনীহীন ছিলাম বলেই ছিলো
দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।
নারী
-সোহানুর রহমান সোহান
নারী এক আকাশ মুগ্ধতার নাম
নারী নিয়ে কবিরা লিখে যায় কবিতা গান।
নারী নিয়ে সকল জল্পনা কল্পনা
নারীর মাঝে সব হারানোর বাসনা।
নারী আমার প্রেমিকা, নারী আমার মা বোন
নারীর মাঝে খুঁজে পাই সকল আপনজন।
নারী জীবনানন্দের বনলতা সেন
নারীরা সময়ে অসময়ে শান্তি দেন।
নারী মানে ছন্দ, শব্দ, বাক্য,উপমা
যা দেখে লিখতে লিখতে কবিরা হয় আনমনা।
নারী মানে পরনে নীল শাড়ী
হাতে থাকবে বেহিসাবী কাচের চুড়ি।
নারী মানে আঁচল ভরা মায়া
জীবনের তরে পড়ে তার ছায়া!
নারী মানে অবাক সুন্দর
যাকে ঘিরে কবির কল্পনা জগৎ!
নারী মানে ললাটে কালো টিপ
অধরে রামধনুর দীপ।
নারী মানে নয়ন জুড়ে কাজল
নারী মানে নীল শাড়ীর আঁচল।
নারী আমার ভূবণ
লজ্জা নারীর ভূষণ।
নারীই তো রমণী
নারীরাই কামিনী।
নারী কে কেউ ডাকে প্রেয়সী
কেউ ডাকে শ্রেয়সী।
নারী কারো কাছে প্রিয়তমা
কারো কাছে পূর্নিমা।
আমি বলি, নারী এক আকাশ মুগ্ধতা
যাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত লিখি কবিতা।
নারী আমার লেখার প্রেরণা
নারী আমার গভীর সাধনা।।
তুমি এমনই এক নারী
তুমি এমনই এক নারী,
যার চোখ দেখিলেই আমি ৷
শতশত বার ভাবি,
কোন বিধাতার সৃষ্ট আখি ৷
প্রেম যেনো তার উপচে আছে,
স্বর্গের প্রেমি ভুলে ৷
ভূগোলে সৃষ্ট নারী,
তোমার আখি তলে ৷
এমনই প্রেমের সুধা নারী ,
পিহিতে চায় না কোন প্রেমি ৷
অনন্তকাল বিষ পেয়ালায় ঢালি,
তোমার ঠোটে সৃষ্ট,বিধাতার প্রেম নারী ৷
মর্তের বিষ পেয়ালাও,
করিয়াছে স্বর্গের অমৃর্ত্য জ্যাম নব সঞ্জীবনী৷
নারীর অধিকার
- অধ্যাপক আব্দুস সালাম
ক্ষেত্র বিশেষ শ্রেষ্ঠ নারী ক্ষেত্র বিশেষ নর,
শ্রেষ্ঠত্বের গ্যড়াকলে দুষছে পরস্পর।
একটি পাখির দুইটি ডানা বিস্তারিয়া ওড়ে,
একটি ডানা নষ্ট হলে রইবে নীচে পড়ে।
নারী তবু পায়নি আজো সমানাধিকার ,
নরী কেন পাত্ না আজো মানবাধিকার?
একই সমান শ্রম দিয়ে সে পায়না সমান দাম,
এক সমাজে বসত তবু পাইলো সুনাম।
চলা ফেরায় পোষাক পরায় পায়নি স্বাধীনতা,
সব স্তরে নারীর পরে চলছে অধীনতা।
একই মায়ের গর্ভে থেকেও সর্বথা বঞ্চিত,
স্থাবর ও অস্থাবরে ভাই করে সঞ্চিত।
বিয়ের পরে স্বামীর ঘরে যৌতুকের হয় বলি,
জনম জনম নেই কো শরম আসছে প্রথা চলি।
প্রাণহানীআর মানহানীতে পায়না সে সুবিচার,
পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে এতই অত্যাচার।
ক্ষমতায়ন হচ্ছে নারী কিন্তু অসহায়,
মান সম্মান নিয়ে নারী পাচ্ছে না অসহায়।
ইচ্ছা ক’রে পুরুষ তারে করে নির্যাতন,
তাহলে আজ এই সমাজে কিসের বিবর্তন।
সভ্যতার এই স্বর্ণ শিখরে, বর্ণচোরা নর,
উন্নয়নের গল্প শুনে হয় যে শ্রুতিধর।
ডিজিটাল এ বাংলাদেশে প্রযুক্তি নির্ভর,
তবু কেন ধর্ষিত হয়? কয় কারে বর্বর?