শবে মেরাজ কবে সংঘটিত হয়
শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি মহিমান্বিত ঘটনা, যা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের আগে, নবুয়তের দশম বছরে, ২৭ রজব রাতে।
এই রাতে আল্লাহ তাআলার আদেশে জিব্রাইল (আ.)-এর সঙ্গে নবীজি (সা.)-কে বোরাক নামক বিশেষ বাহনে মক্কা থেকে মসজিদুল আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস) এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ পার হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনাকে মেরাজ বলা হয়, যার অর্থ হলো 'উর্ধ্বগমন'।
শবে মেরাজের এই রাত মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি শিক্ষার দিকনির্দেশনা দেয় এবং এটি ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
লাইলাতুল মেরাজ
ভূমিকা
লাইলাতুল মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। এ রাতেই নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। মেরাজ মুসলমানদের ঈমান, নামাজ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক চমৎকার উদাহরণ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
মেরাজ শব্দের অর্থ
আরবি শব্দ ‘মেরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গে আরোহণ। এটি এসেছে ‘উরূজ’ থেকে, যার অর্থ হলো ঊর্ধ্বে উঠা। কুরআনে মেরাজের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে সূরা বনি ইসরাঈল-এর প্রথম আয়াতে। সেখানে মহানবী (সা.)-এর কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় যাত্রার বর্ণনা পাওয়া যায়।
মেরাজের ঘটনা
মেরাজের ঘটনা ছিল দুই অংশে বিভক্ত— প্রথমত, ‘ইসরা’ বা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত সফর এবং দ্বিতীয়ত, ‘মেরাজ’ বা সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাত্রা। এ রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে মহানবী (সা.)-কে বিশেষ বাহন বোরাকে চড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়ে পূর্ববর্তী নবীদের নিয়ে জামাতে ইমামতি করেন। পরে ঊর্ধ্বাকাশে গিয়ে আদম (আ.), মুসা (আ.), ঈসা (আ.), ইবরাহিম (আ.)-সহ অন্যান্য নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং আল্লাহর সাথে কথা বলেন।
মেরাজের শিক্ষা ও গুরুত্ব
মেরাজের রাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। এই সফরে মহানবী (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের ওপর ফরজ হিসেবে নিয়ে আসেন। এটি শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের দৃঢ়তার প্রতীক। মেরাজের ঘটনা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।
বিভিন্ন মত
কিছু মুসলিম চিন্তাবিদ মেরাজকে দৈহিক যাত্রা মনে করেন, আবার কেউ কেউ আত্মিক যাত্রা মনে করেন। তবে মুসলমানদের অধিকাংশ মতেই এটি দৈহিক এবং জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছিল। মেরাজের রাতে উদযাপন করা উচিত কিনা তা নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে।
উপসংহার
লাইলাতুল মেরাজ মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ রাত। এটি শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, বরং একটি বিশ্বাস ও শিক্ষা যা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। মহানবী (সা.)-এর এই ঐশ্বরিক যাত্রা আমাদের নামাজের গুরুত্ব ও আল্লাহর প্রতি আমাদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়।